#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১২
রিপা অনেক কষ্ট করে বাসায় আসলো। মনে হচ্ছে গায়ে কোন জোর নেই। হাটার মতো কোন শক্তি নেই। মনের দিক থেকে একেবারে দূর্বল হয়ে পড়ছে। বাসায় ঢুকে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলো।
ওয়াশরুমে ঢুকে এক টানে গায়ের কাপড় খুলে ছুরে মেরে শাওয়ারের নিচে বসলো। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে তার। কষ্টে চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে।
বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করতে থাকে। প্রায় ঘন্টা খানেক ভিজে টাওয়ালটা কোন রকমে প্যাঁচিয়ে রুমে আসলো সে। জামা কাপড় পড়ে বিছানার উপরে চুলগুলো মেলে দিয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের কার্যকলাপের কথাগুলো মনে পড়লে দমটা বন্ধ হয়ে যায়। ভাবতে ও পারছেনা সে কীভাবে এমন একটা নোংরা মানুষের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। তবে ভুলটা ভাঙলো সবটা শেষ করে।
হঠ্যাৎ তার চোখ পড়লো ওয়াডড্রবের উপরে। মোবাইলটা সেখানে পড়ে আছে। কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে পাওয়ার বাটনটা অন করতেই স্কীনের উপরে ভেসে উঠলো
40 Missed calls….017*********
এতগুলো মিসড কলড দেখে ভয়ে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে কে জানি গলাটা শক্ত করে চেপে ধরেছে। দেরী না করেই ঐ নাম্বারটাতে কল ব্যাক করলো রিপা।
কয়েকবার রিং বাজার পরে অবশেষে কলটা রিসিভ করলে,,,,,
-“আসসালামু আলাইকুম। (রিপা)
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন??
-“আমাকে গতকালকে এই নাম্বার দিয়ে অনেকবার কল করা হয়েছিলো। আমি স্টেশনে ছিলাম না কিন্তু ভুলে ফোনটা বাসায় রেখে গিয়েছিলাম। যদি বলতেন কেনো কল দিয়েছিলেন তাহলে একটু ভালো হতো।
-“জ্বি হ্যাঁ। ইমরান আপনার কী হয়???
-“ই……ই…..ইমরান।
-“জ্বি।
-“আমি উনার ওয়াইফ।
-“তাহলে আপনি কী দাঁড়িয়ে আছেন??? যদি দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে আশেপাশে যদি বসার কিছু থাকে তাহলে প্লিজ সেখানে বসে পড়েন। কারণ আমি যেটা বলতে যাচ্ছি সেটা শোনার পরে যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে।
রিপা ফ্লোরে বসে পড়লো। যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কথা বলতে পারছেনা।
ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করতে থাকলো।
অবশেষে রিপা বললো,,
-“আপনি বলেন আমি বসে পড়েছি।
-“আপনার স্বামীর গতকালকে এক্সিডেন্ট হয়েছে এখন সে হসপিটালে ভর্তি আছে। তার মানিব্যাগে আপনার নাম্বারটা লেখা ছিলো তাই এই নাম্বারটাতে কল দিয়েছি।
কিন্তু আপনি তো ধরেননি। পরে তার ফোনে কল আসলে আমি তাদেরকে জানিয়ে দেই আর তারা এসে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করেন।
-“ইমরানের অবস্থা কেমন???
-“এখন মোটামুটি আছে। তবে জ্ঞান ফেরেনি। মাথায় ভারী আঘাত পাওয়ার কারণে অনেকটা ব্লিডিং হয়েছে। আমি রাতে বাসায় এসেছি সকালে আর যাইনি। এখন আবার হসপিটালে যাবো।
-‘আচ্ছা ভাই আপনি ওর খেয়াল রাখবেন। আর আমি আজকেই রওনা দিচ্ছি।
-“ঠিক আছে আপনি এসে পড়েন। আপনাকে এখন তার খুব জরুরী। আচ্ছা রাখছি হসপিটালে যাবো।
-“হুম। রিপা কলটা কেটে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কী হয়ে গেলো আমার??? স্বামীকে ঘৃণা করে আরেকজনকে ভালোবেসিলাম সে তো আরেকটা প্রতারক বের হয়েছে। আমার কপালটা কী এভাবেই যাবে????
.
ভাবতে ভাবতেই রিপার মোবাইলটা বাজতে লাগলো।
চোখটা মুছে নিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো।
স্কীনের উপরে রাহাতের নামটা ভাসতে লাগলো।
রাহাতের নামটা দেখেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
তবুও কলটা রিসিভ করে বললো,,,
-“হ্যালো রাহাত। আমি জানাতাম তুমি কল করবে কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো। আর তুমি প্লিজ বলো তখন যেটা বলেছিলে সেটা মিথ্যে ছিলো। তুমি আমার সাথে ফান করেছো।
-“কী বলতে চাও তুমি???
-“ঐ যে তখন তুমি বলেছিলে তুমি বিবাহিত। প্লিজ বলো কথাটা মিথ্যা ছিলো।
-“অট্টহাসিতে মেতে উঠলো রাহাত। তুমি কী পাগল নাকি! তোমার কী মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি?? একদম না। আমি বিবাহিত। সব থেকে বড় কথা হলো আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। তাই তো ওর সাথে কিছু করা যাবেনা বলেই তোমাকে চয়েজ করা। তাছাড়া তোমার ফিগারটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। প্রথম যেদিন পার্টিতে দেখলাম সেদিনই তোমাকে আমার মনে ধরে গেছিলো। কিন্তু এটা ভাবিনি যে তোমাকে এত তাড়াতাড়ি আমার কাছে পাবো। পরে যেদিন ফাস্ট সেক্স করলাম তখন তো আমি ফিদা হয়ে গিয়েছিলাম। তাই তো তোমাকে বুদ্ধি করে আমার রুমে ডেকেছিলাম। আমি জানতাম আজ না হয় কাল তো তুমি আমার সত্যিটা জানতে পারবে। আর আমি তোমাকে হারাতে চাইনি। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আর সেদিন সেই সুযোগটা পেয়ে গেলাম।
-‘রাহাতের কথাশুনে অবাক হয় রিপা। কী বলছো তুমি??? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-“একটু ওয়েট করো বুঝতে পারবে।
-“মানে কী?? যা বলার সরাসরি বলো।
-“তোমার ভিডিও আমার কাছে। তাই আমি যা বলবো আজ থেকে তোমাকে সেটাই শুনতে হবে। না হলে আমি ভাইরাল করে দিবো।
রিপা কোন কথা বলেনা। কী শুনছে সে?? নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ভাবনার অতুল সমুদ্রে ভাবতে ভাবতে গভীর থেকে গভীরতায় চলে যায় সে। কিন্তু তবুও নিজের মনকে কিছুতেই মানাতে পারছেনা।
-“রাহাত তুমি এসব কী বলছো??? কীসের ভিডিও??
-“হোহোহো। তুমি কী বাচ্চা নাকি?? তোমার আর আমার সেদিনের সমস্ত ভিডিও আমি আমার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রেখেছি। তুমি আমার বাসায় আসার আগেই আমি সব কিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম।
রিপার গলার স্বরটা নিচু হয়ে গেলো। আমতা আমতা করতে করতে বললো,,,রাহাত ভিডিওটা তুমি ডিলিট করে দাও। তোমাকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম আর তুমি???
-“বিশ্বাস! এই শব্দটার মানে জানো তুমি?? একদম না। কারণ যে মেয়ে নিজের স্বামীকে ধোঁকা দিয়ে অন্য একটা অচেনা পরপুরুষের সাথে ফিজিক্যাল রিলিশনে জড়তে পারে তাকে কে বিশ্বাস করবে?? তোমার কী মনে হয় ?? তুমি বিশ্বাসের যোগ্য??? তোমাকে কী বিশ্বাস করা যায়???
রিপা নিশ্চুপ।
-“শোন কথা বাড়াতে চাচ্ছি না। তুমি রাতে বাসায় আসবে এটাই ফাইনাল। যদি না আসো তাহলে তো বুঝতেই পারছো কী হবে??
-“এমন করো না তুমি। আমি ঢাকায় ইমরানের কাছে যাবো। ও এক্সিডেন্ট করেছে ওর পাশে থাকাটা আমার খুব জরুরী।
-“আমি এসব বুঝিনা। তুমি আমার কাছে রাতে আসবে আর এটাই ফাইনাল বলেই কলটা কেটে দিলো রাহাত।
.
রিপা রাহাতের কথাশুনে হতবাক হয়ে গেলো। রাহাত কেমন করে এমনটা করতে পারলো। এতদিনের কথার সাথে আজকের কথা পুরোই ব্যাতিক্রম। ওর প্রতিটা কথায়ই আজ বেশ ওজন আছে বলে মনে হচ্ছে।
বিকেল গড়িয়ে গেছে। সূর্যটা প্রায় ডুবুডুবু। রিপা একাকী ঘরের জানালার পাশে বসে আছে। রিপা ভাবছে গভীর মনোযোগের সাথে। রাহাতের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।
রিপার মুখটা যেনো বিষাদে ভরে যায়। চোখের কোণে ঈষৎ জল ছলছল করে ওঠে।
সন্ধ্যা ৭ টা……
রিপা চুপচাপ বিছানার সাথে হেলান দিয়ে রুমে বসে আছে। অনির্দিষ্ট ভাবনা মাথার ভিতরে।
হঠ্যাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। স্কীনের উপরে রাহাতের নাম্বার দেখে আৎকে উঠলো রিপা। ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো।
কয়েকবার রিং বাজার পরে কলটা রিসিভ করলো।
-“হ্যা……হ্যালো।
-“কী সমস্যা?? তোমার এত সময় লাগলো কেনো রিসিভ করতে??? আমি অপেক্ষা করছি তুমি জলদী আসো।
-“রাহাত এভাবে ব্লাকমেল করো না প্লিজ। যেটা হয়েছে ভুলে যাও।
-“না একদম না। আমি তোমাকে ভুলতে পারবোনা। তুমি তাড়াতাড়ি আসবে নাকি ভাইরাল…….!
-‘ওয়েট প্লিজ। আমি আসছি ভাইরাল করোনা।
-“যাক অবশেষে বুঝতে পারলে।
কলটা কেটে দিয়ে রিপা রেডী হয়ে বাসা থেকে বের হলো। এদিকে ইমরান এখন সুস্থ হয়নি। আর রিপা ইমরানের কাছে যেতে পারছেনা। মনটা অস্থির লাগছে।
.
প্রায় ৩০ মিনিট পরে রাহাতের বাসায় পৌছালো।
.
দরজাটা খোলাই ছিলো। রিপা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে তাকতেই দেখে রাহাত বিছানায় বসে বসে।
-“ওয়েলকাম মাই জান। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।
-“রিপা এগিয়ে গিয়ে বললো,,,রাহাত ভিডিওটা কোথায়??
-“আরে এত ব্যস্ত হচ্ছো কেনো?? আছে তো।
-“আগে ভিডিওটা ডিলিট দাও।
-“দিবো কিন্তু এখন না। আগে আমাকে খুশি করো তারপরে করবো।
-‘প্রমিজ করো যে করবে।
-“ওকে প্রমিজ।
.
রিপার ভয়ে গলটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কষ্টের ঢোক গিলছে বার বার। ভাবছে ভিডিওটা ডিলিট করে রাহাতের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ইমরানের কাছে মাফ চেয়ে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিবে।
.
ভাবার আগেই রাহাত রিপার শাড়িটা এক টানে খুলে ফেলে বিছানার উপরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। তারপর নিজে ও রিপার উপরে শুয়ে পড়ে ওর হাত দুটো চেপে ধরেছে। হাতের চুড়িগুলো ভেঙে হাতের ভিতরে বিঁধলো। হাত গড়িয়ে রক্ত টপটপ করে পড়ছে। রিপার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। সমস্ত শরীর বিষের ন্যায় ব্যাথা করছে। হাত পা পুরোই অবশ হয়ে যাচ্ছে।
তবুও রাহাতের হাত থেকে বাঁচতে পারছেনা।
দমটা ও একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
সুযোগ পেয়ে আজকে সে পশুর মত ক্ষেপে উঠেছে। রিপা বারবার নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে তবুও ব্যর্থ সে। হাজারো কাকুতি মিনতি করছে রিপা কিন্তু রাহাতের কানে সেই শব্দ পৌছাচ্ছেনা।
একটু বাদে রিপাকে ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা মেরে বিছানা দিয়ে নামিয়ে দিয়ে বললো,,
-“এখন বাসায় যা। আর যখন ডাকবো তখুনি চলো আসবি। কোন অজুহাত শুনবোনা।
.
রিপা বিরক্তির সুরে বললো,,, আবার আসবো মানে??
-মানে তো সোজা। যখন ডাকবো চলে আসবি। তারপর তোর মাঝে ডুব দিবো।
-“তার মানে তুমি ভিডিও ডিলিট করবে না??
-“পাগল নাকি?? ভিডিও টা ডিলিট দিলে তো আর তোমাকে পাবোনা। আমি কী বোকা নাকি! তোমাকে আমার দরকার।
.
রিপা কোন কথা বলছেনা। ভাবছে সে পুরোই ফেঁসে গেছে। এখন কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
চলবে……………