“সালা,বা**।মাইয়া দেখলেই খাবলা মারতে মন চায়।হাত চুলকায়?হাতটা ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দেবো।খবিশের বাচ্চা।”
একটা মেয়ের মুখ থেকে পরপর এমন গালি শোনার পরে ফুটপাত দিয়ে হাটা প্রায় সকলেরই ভ্রু কুঁচকে গেলো।কেউ কেউ হাটতে হাটতে কয়েকবার ফিরে তাকালো। যার উদেশ্য করে কথাগুলো বলা সেই মধ্য বয়স্ক লোকটা তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। বন্যার চোখে তখনো আগুনের ঝলক,রাস্তায় থু থু দিয়ে কেউ তাকে দেখছে কিনা এসব তোয়াক্কা না করেই বললো,
“সালার,বা লের জীবন লইয়া দুনিয়ায় আসলাম,চারদিকে পুরুষ না মনে হয় কুত্তা হাটতাছে,কুত্তার মতো তাকাইতাছে।আজকের দিনটাই শেষ;সালা ***।”
বন্যা দ্রুত পায়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়।চোখে মুখে ঘৃণার ছড়াছড়ি।হাত দিয়ে ববকাট চুল পেছনে ঠেলে,ডোলা শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে সামনের দিকে হাটতে থাকে।
একটা মেয়ের মুখে পরপর এমন বিশ্রী গালি শুনে তাহসান থমকে যায়।ভ্রু জোড়া আপনা-আপনি কুঁচকে আসে,চোখ মেলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,’এমনো মেয়ে হয়?কি সহযে গালি দিয়ে দেয়।আজব তো!’
তাহসান তার বন্ধু বাপ্পির জন্য অপেক্ষা করছিলো।রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে ফুটপাতের কিনারায় দাঁড়িয়ে মোবাইল স্কল করছিলো তখনি শিশার মতো উত্তপ্ত কিছু বাক্য তার কানে আসে।ঘাড় ঘুরিয়ে প্যান্ট শার্ট পরা মেয়েটাকে দেখে বিরক্ত হয়।অতি ভদ্র তাহসানের ভাষ্যমতে মেয়েদের মুখে গালি মানায় না তাছাড়া সে নিজেও কখনো গালি দেয় না।তখনি তার বন্ধু রাব্বি চলে আসলে সে তাকে নিয়ে গন্তব্যে চলে যায়।মেয়টার মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর থেকে মাথাটা দপদপ করছে।সে গান প্লে করে গানে মনোযোগ দিতে চায় কিন্তু কানে গানের পরিবর্তে মেয়েলি গলায় সালা সালা কথাটিই রিপিট হচ্ছে।ভালো য.ন্ত্রণা তো!
বন্যা ভার্সিটিতে এসে চারদিকে চোখ ভুলায়,গাছের নিচেই তার দুই পরিচিত মুখগুলোকে দেখা যাচ্ছে।ব্যাগ থেকে ক্যাপ বের করে মাথায় পরে দুজনের দিকে এগিয়ে যায়।রাতুল আর তন্নি বসে বাদাম খাচ্ছিলো।বন্যা রাতুলের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে বললো,
“সালা;প্রেমিকা নিয়ে বাদাম খাইবা পার্কে তুমি ভার্সিটিতে কি করো?”
আচমকা পিঠে কিল পড়ায় রাতুল বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।বন্যাকে দেখে আবারো তন্নির গা ঘেষে বসে বললো,
“প্রেমিকা কাছে থাকলে সব জায়গায় প্রেম করা জায়েজ আছে।কথায় কথায় মা’রবিনা।”
বন্যা তন্নির আরেক পাশে বসতে বসতে বললো,
“আমার বান্ধুবীর সাথে প্রেম করোস তরে মা/রবো,কাটবো,লাত্থি দেবো,মাঝে মাঝে মন চাইলে কবরেও রেখে আসবো।তর সাথে এসব জায়েজ আছে।”
রাতুল নাক ফুলিয়ে বললো,
“কি সাংঘাতিক মেয়ে।”
বন্যা দুজনের দিকে তাকায়,মনে পড়ে যায় বন্ধুত্বের দিনের কথা,,,
“তন্নী,রাতুল আর বন্যা ভার্সিটির প্রথম থেকেই বন্ধু।ছেলেদের মতো লাগামছাড়া কথা,চালচলন দেখে বন্যার সাথে কেউ না মিশলেও একটা ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতুল আর তন্নী বন্যার আপন হয়ে গেছে।ঘটনাটি হলো,
তন্নী ভিষণ বড়োলোক বাবার মেয়ে,আর দেখতেও ভিষণ সুন্দরী।একদিন ভার্সিটির সামনে এক লোক ইচ্ছে করেই তন্নীর গায়ে হাত দিয়ে না বুঝার ভঙ্গিতে বলে,’সরি আপু খেয়াল করিনি।’
স্পর্শটা ভিষণ খারাপ ছিলো তন্নী বুকে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।রাতুল ভার্সিটিতে প্রবেশ করছিলো,হঠাৎ চোখের সামনে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় সে কাছে এসে বলে,
“আপনি ইচ্ছে করেই ধাক্কা দিয়েছেন।আমি সবটা দেখেছি।”
লোকটা চোখ পাকিয়ে বললো,
“তো কি হয়েছে?রাস্তাঘাটে চলতে গেলে এমন একটু আকটু ধাক্কা খেতেই হয়।”
তারপর তন্নীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি ম্যাডাম!মজা না?”
রাতুল ভদ্র ঘরের সন্তান।বহু কষ্টে তার বাবা তাকে পড়ালেখা করাচ্ছে।কোনোভাবেই প্রথমদিন ঝামেলা করা যাবেনা তাই শান্ত গলায় বললো,
“ভদ্রভাবে কথা বলেন।ভদ্রতা শিখেননি নাকি?”
লোকটা তন্নীর দিকে ঝুঁকে বললো,
“এই আপু চাইলে ভদ্রতা শিখাতে পারেন।কি আপু শিখাবেন নাকি?”
বন্যা এতোক্ষণ যাবত সবটা দেখছিলো।তার স্বভাবের চেয়েও আজকে বেশী শান্ত সে কিন্তু লোকটার এমন কাজের পরে আর নিজেকে আটকাতে পারে না।লম্বা পা ফেলে লোকটার গালে থাপ্পড় মে,রে বললো,
“ভদ্রতা শিখবেন নাকি?আসেন আমি শিখাই,এটা বলে আরেক গালে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে তন্নী আর রাতুলকে বলে,
” এই সালাদের এমনি ভদ্রতা শিখাতে হয়,সব যায়গায় মিউ মিউ করলে চলে না।”
থাপ্পড় খেয়ে সামনের লোকটা তখন রেগে গেছে।বন্যার দিকে তেড়ে এসে বললো,
“তোকে দেখে নেবো।”
বন্যা ববকাট চুলে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে নির্লিপ্ত গলায় বললো,
“আচ্ছা।”
এই ঘটনার পর থেকেই তিনজন বন্ধু হয়ে যায়।আর তারপর তন্নী আর রাতুলের বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়।বন্যা ভাবনা থেকে ফিরে টোকাই’র হাতে টাকা দিয়ে কোকাকোলা আনতে পাঠায়,প্রচন্ড রোদে গলা শুকিয়ে গেছে।তখনি এক সহপাঠী এসে বললো,
“তন্নী আজকে নতুন স্যার জয়েন করবে বিধায় প্রিন্সিপাল দশ মিনিট আগেই উপস্থিত হতে বলেছে।”
তন্নী আর রাতুল সামনে হাটলেও বন্যা পেছনে পেছনে হাটছে।ক্লাসে ঢুকার আগে নতুন শিক্ষকের উপর মেজাজ চটে গেলো।তার তো কোকাকোলা খাওয়া হয়নি।দাঁতে দাঁত চেপে বেশ জোড়ে জোড়েই বললো,
“কোথাকার না কোথাকার স্যার মার্কা সালা আসছে এই জন্য আমার কোকাকোলা দিয়ে গলা ভেজাতে পারলাম না।শিট।শিট।”
দরজার কাছে গিয়েই বন্যার মুখের ভাব পরিবর্তন হয়ে গেলো কেনোনা দরজার সামনেই একটা নতুন মুখ দাঁড়িয়ে আছে।বন্যা বুঝতে পারলো ইনিই নতুন শিক্ষক।মাত্র বলা কথাটা শুনে ফেলেছে কিনা বুঝতে পারছেনা,শুনেছে বোধহয় উনি কেমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
তাহসানের সামনে রাস্তার সেই গালিওয়ালা মেয়টা দাঁড়িয়ে।এমনকি মাত্র সে এটাও শুনেছে মেয়েটা তাকেও সালা বললো।ভার্সিটিতে আজকেই প্রথম জয়েন করেছে আর আজকেই এমন এক উদ্ভট মানুষের সাথে দেখা যে কিনা কথায় কথায় সালা বলে।মেয়েটার দিকে পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বললো,
“সালা মানে কি?মানে সালা কাকে বলে?”
বন্যা হঠাৎ করে প্রশ্ন করায় থমকে যায়।স্যার যে কিছুক্ষণ আগে বলা কথাগুলো শুনতে পেয়েছে বুঝতে পারে।আস্তে করে বললো,
“বউয়ের ভাইকে সালা বলে।”
তাহসান মাথা মেড়ে বললো,
“তো;আপনি মেয়ে নাকি ছেলে?
বন্যা নিজের পোশাক পরিচ্ছেদ দেখে আস্তে করে বললো,
“মেয়ে।”
তাহসান কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“তাহলে আপনার নিশ্চয়ই সালা নেই।”
বন্যা মাথা নেড়ে না করে।কিন্তু বিরবির করে ঠিকি নতুন স্যারের উদেশ্যে বলে,
“সালা;আমার সালা না থাকলেও তুই আমার সালা,প্রথমদিনেই আমাকে শায়েস্তা করা!”
তারপর স্যারকে শুনিয়ে বললো,
“স্যার;ভেতরে যাবো?”
মেয়েটার বিরবির করে বলা কথাও তাহসানের কর্ণগোচর হয় আর তাতেই তার ঠোঁট ফাঁকা হয়ে যায়।কড়া চোখে বন্যার দিকে তাকিয়ে বললো,
“বেয়াদব!যাও ভেতরে যাও।”
প্রথমদিন বলেই বন্যা ছাড় পেলো,তা না হলে তাহসান খুবই কড়া মেজাজের মানুষ।প্রথমদিন জয়েন হয়েই উগ্র মেজাজ দেখালে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের খা,রাপ মনোভাব তৈরি হতে পারে।রাগে কপালে হাতের দুই আঙুলের দ্বারা ঘষে নেয়।
বন্যা পেছনের সিটে গিয়ে তন্নীর পাশে দপ করে বসে পড়ে।তন্নী আর রাতুল তার দিকে জিজ্ঞাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে।তন্নি ফিসফিস করে বললো,
“এই!স্যার কি বললো তোকে?”
বন্যা ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
“কিছুনা?”
রাতুল বললো,
“মিথ্যা বলিস না।স্যার কি চেনা কেউ?কি হয় সেটা বল।”
বন্যা দাঁত দেখিয়ে ঝলমলে হাসে।তারপর ঝুঁকে বেঞ্চের উপরে এসে বললো,
“সালা দুলাভাই।”
দুজনে একসাথে বললো,
“মানে?”
“মানে আমাদের সালা দুলাভাই এর সম্পর্ক।মানে আমি দুলাভাই আর উনি আমার সালা।”
রাতুল সোজা হয়ে বসে বললো,
“মাথাটা পুরাই গেছে।পা/গল!”
তাহসান সবাইকে নিজের পরিচয় দেয়।শ্যামলা গায়ের উঁচু লম্বা ছেলের নাম তাহসান।মেয়েরা স্যারের উপরে চোখ গোল গোল করে তাকায়।তাহসান সবার চোখেই মুগ্ধতা দেখছে শুধুমাত্র ওই বেয়াদব মেয়েটা ছাড়া।এসব সে পাত্তা দিলো না।
রাতুল ফিসফিস করে বললো,
“কিরে দুস্ত!হালায় তোর দিলে এমনে তাকায় ক্যান?”
বন্যা স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো,
“স্যার না তাকাতেই পারে।সবাই তোর মতো লাইন মা,রে না।”
#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
(কপি করা নিষেধ।কোনো পেজ,গ্রুপ,ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউবে দেয়া যাবে না।)
(নতুন গল্প।সবাই লাইক কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।)