মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -৪৮+৪৯+৫০

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৮
সেদিনের ঘটনার পরেরদিনই সবাই বাংলাদেশ ব্যাক করল।ওমন মনমানুষিকতা নিয়ে কি আর ঘুরাঘুরি করা যায়?তাই চলে যাবার সিদ্ধান্তটাই সঠিক মনে করল ওরা।বাংলাদেশে আসতেই রুদ্রিকদের যেন দম ফেলবার সময় নেই।সামনে অনার্স ফাইনাল ইয়ার এক্সাম।তাই পড়াশোনায় পুরোপুরি মনোযোগি হয়ে উঠল ওরা।
অনিক আর কখনও সিয়ার কাছে যায়নি ভালোবাসার আবদার নিয়ে।সিয়া তো অনিককে এখন দেখতেই পারে না।সেদিনের সেই কথাগুলো খুব বাজেভাবে আঘাত করেছে ওকে।যা সিয়া কোনোদিন ভুলবে না।
তবে সিয়ার সাথে এখন সেদিনের মাস্ক ম্যানের সাথে প্রায়ই কথা হয়।আজ পর্যন্ত লোকটার চেহারা দেখতে পায়নি সিয়া।সেদিন চা খেতে নিয়েও লোকটা দোকান থেকে সরে অন্ধকারে গিয়ে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছিলো।আর মাথার হুডিটা এতোটাই বড়ো ছিলো যে মুখের অর্ধেকটাই ঘোরা ছিলো তাই দেখেনি।
এদিকে রিয়ান দিন যতো যাচ্ছিলো ততোই আসক্ত হয়ে পরছিলো সিয়ার প্রতি।সেদিনের পর থেকে সিয়াকে সে কোনোভাবেই ভুলতে পারেনি।সিয়ার মায়াময় চেহারাটা ওকে সর্বদা জ্বালাতন করে বেড়ায়।কি হচ্ছে ওর সাথে?ও তো আগে এমন ছিলো নাহ?এখন রিয়ান অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।হ্যা সে মানছে একটা সময় সে প্রচুর খারাপ ছিলো।কিন্তু মেয়েদের সাথে কখনও অসভ্যতামো করেনি। মেয়েদের সাথে অহেতুক কথাও বলত না।হ্যা সে অথৈর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলো তা নিত্যন্তই সে রুদ্রিককে দেখতে পারে না এইজন্যে।কিন্তু রিয়ান এতোটাও খারাপ না।সে কাউকে খু*ন করতো না।সে তো নিত্যন্তই জেনির জেদের কাছে হার মেনে সে মেঘালয় গিয়েছিলো।কিন্তু ওর নিয়ত ছিলো অথৈকে কিডন্যাপ করত।এরপর রুদ্রিককে ব্লাকমেইল করতো।ভয় দেখিয়ে জেনিকে বিয়ে করার জন্যে জোড় করত।কিন্তু এখন আর এসব নিয়ত ওর নেই।সে ভালো হতে চায়।এতোদিনে বুঝেছে জোড় করে কখনও ভালোবাসা আদায় করা যায় না।আর ভালোবাসার মানুষদের আলাদা করা যায় না।যতোই চেষ্টা করুক।

যেদিন বাংলাদেশে আসল।জেনি তখন রাগে নিজের হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো।সে অথৈকে মারার জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছিলো।রিয়ান ওকে বুঝিয়েছে।নিজের সবটা দিয়ে।যে জোড় করে কোনো কিছু পাওয়া যায় না।রুদ্রিক যদি ওর ভাগ্য থাকতো তাহলে রুদ্রিক ওরই হতো যেকোন মূল্যে।কিন্তু এখন আর রুদ্রিক আর ওর হবে না।জেনি সেদিন অনেক কেঁদেছিলো।তারপর রিয়ানকে বলে সে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।রিয়ান বোনের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।এখান থেকে চলে গেলে জেনির মন ভালো হবে।সব পিছুটান ছেড়ে দিবে।তাই কয়েকদিনের মধ্যেই জেনিকে লন্ডন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে অনিকের অবস্থা দিন দিন অনেক খারাপ হচ্ছে।ও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরেছে।তাই রুদ্রিক বাকিদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।অনিকের সাথে সব ঠিক করে নিবে।নাহলে একাকিত্ব অনিককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে।সে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।এভাবে ছেলেটা নিজের জীবন নষ্ট করে দিলে হবে না।তাই সিদ্ধান্ত নিলো অনিকের সাথে খোলাখুলি কথা বলার।

তাই পাঁচ বন্ধু আজ এক জায়গায় হয়েছে।মারিয়াকে বলেছে সিয়াকে নিয়ে আসতে এখানে।আজ দুজনকে মুখোমুখিভাবে বসিয়ে এই বিষয়ে একটা হেনস্তা করতে হবে।নীল আর ইহান অনিককে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে।
পাঁচজন এক জায়গায় হতেই অনিক প্রশ্ন করে,
‘ তোরা আমাকে এখানে এনেছিস ক্যান?’

রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে,
‘ কি চাচ্ছিস তুই?কি হাল করেছিস নিজের?এমন ছন্নছাড়া হয়ে আছিস কেন?’

অনিক তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
‘ যেখানে আমার গোটা জীবনটাই ছন্নছাড়া। সেখানে আমার বাহিরের দিকটা ছন্নছাড়া দেখে তোরা এমন রিয়েক্ট করছিস কেন?’

রুদ্রিক বিরক্ত হয়ে বলে,
‘ ফাউল কথা বলিস না অনিক।তুই আন্টি আংকেলের একমাত্র সন্তান।এটা ভুলে যাস না।তোর কিছু হলে উনাদের কি হবে একবার ভেবেছিস?’

অনিক কোনো শব্দ করল নাহ।রুদ্রিক ফের বলে,
‘ তুই মনে করছিস এমন দেবদাস হয়ে ঘুরলেই সব ঠিক হয়ে যাবে?তুই সিয়াকে সেদিন যা নয় তাই বলেছিস।একবার তো মেয়েটার কথা শুনে দেখতি।ও কি বলে?হ্যা ও তো তোর উপর অভিমান করে আছে।তোকে হয়তো প্রথমে বলতে চাইতো না।কিন্তু ভুলে যাস না।এই মেয়েটাই তোকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে।তাই তোর কাছে আবার কিছু লুকোচুরিও করত না।’

অনিক ছলছল চোখে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।ধরা গলায় বলে,
‘ আমি সেদিন অনেক বড়ো পাপ করে ফেলেছি দোস্ত।আমাকে এর বিনিময়ে যেই শাস্তি দিবি সব মেনে নিবো।তবু দোস্ত আমার সিয়াকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না দোস্ত। আমি এই কয়টাদিন যাবত যেই মরন যন্ত্রণা ভোগ করছি।তা বলে বোঝানো যাবে না।আমার নিঃশ্বাস আটকে যায়। আমাকে বাঁচা রুদ্রিক।আমার সিয়াকে আমার কাছে এনে দে।আমি দরকার পরলে ওর পা ধরে ক্ষমা চাইবো।ও যা বলবে তাই করবো।তারপরেও আমার কাছে ফিরে আসতে বল।’

রুদ্রিক দ্রুত পায়ে এসে অনিককে জড়িয়ে ধরল।অনিকের এই হাহাকার দেখে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে।ও একটু হলেও বুঝতে পারছে অনিকের কষ্টটা।রুদ্রিক বলে উঠে,
‘ যাকে এতোটা ভালোবাসিস তাকে কেন সেদিন ওমন কথাগুলো বললি অনিক।একটা মেয়ের কাছে চরিত্রহীনা উপাধিটা শোনা যে কতোটা যন্ত্রণাদায়ক তা বলে বোঝানো যাবে না।সিয়া আমাকে সব বলেছে।সেদিন রুটব্রিজ যাওয়ার পথে ও পরে যেতে নিয়েছিলো নাহ?তখন একটা লোক ওকে সাহায্য করেছিলো।লোকটাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যে লোকটার সাথে এক কাপ চা খেয়েছিলো।ব্যস এইটুকুই।আর শোন অনিক। একটা সম্পর্ক কখনও বিশ্বাস ছাড়া টিকিয়ে রাখা যায় না।বিশ্বাস হলো একটা সম্পর্কের মেইন খুটি।আর তুই সেই বিশ্বাসটা করতে পারিসনি।’

অনিক কান্না করে দিলো।
‘ আমি জানি রে আমি ওকে অবিশ্বাস করে সবচেয়ে বড়ো পাপ করেছি।আমি সেই পাপের প্রায়েশ্চিত্ত যেকোনো মূল্যে করতে রাজি আছি।ওকে একবার বলনা আমার কাছে ফিরে আসতে।আমি সত্যি বলছি আমি অনেক ভালো হয়ে যাবো।এতোটা ভালো হবো যে ও আর কোনো অভিযোগ করতে পারবে না।ও যেভাবে চাইবে।যেমনভাবে চাইবে।আমি সেইভাবেই সব করব।তবুও ওকে আমার হতে বল।আমি ওকে হারাতে পারবো না।ও তো আমার প্রাণ বল।নিজের প্রাণকে হারিয়ে কি কেউ কখনও বেঁচে থাকতে পারে?’

ইহান অনিকের কাধে হাত রেখে বলে,’ কাঁদিস না দোস্ত।সিয়া তোর ভাগ্যে লিখা থাকলে ও তোরই হবে।আমরা ওকে এখানে ডেকেছি।মারিয়া ওকে নিয়ে এই আসল বলে।তুই তোর সবটা দিয়ে চেষ্টা করিস।ওকে বোঝাস যে তুই সেদিন যা করেছিস আর বলেছিস।রাগের মাথায় বলে ফেলেছিস।’

অনিক চোখ মুছে বলে,’ ও এখানে আসবে?’

ইহান মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।ওরা সবাই অপেক্ষা করতে লাগল।এর মধ্যে সবাই অনিককে নানান কথা বলে ওর মনোবল শক্ত করল।একটু পরেই দেখা গেলো সিয়া আর মারিয়া আসছে।সিয়া মাথা নিচু করে আছে।অনিক একধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটাকে সেদিন কতো কষ্টটাই না ও দিয়েছে।কতো খারাপ কথা বলেছে।ওই মেয়েটা ওকে সবটা উজাড় করেই ভালোবাসল।কিন্তু এর বিনিময়ে ওর কাছ থেকে শুধু অপমান আর লাঞ্চনাই পেয়েছে।আজ কিভাবে সিয়ার দিকে তাকাবে অনিক?কিভাবে সিয়ার চোখে চোখ মিলাবে?
মারিয়া সিয়াকে নিয়ে সবার সামনে দাঁড়ালো।সিয়া একপলক অনিককে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।অনিক তা দেখে কষ্ট পেলো।সিয়া শক্ত কণ্ঠে বলে,’ আমাকে এখানে কেন এনেছিস মারিয়া?’

রুদ্রিক সিয়ার মাথায় হাত রাখল।নরম গলায় বলে,
‘ সিয়া দেখ আমার কথা মন দিয়ে শোন।সব পরিস্থিতি সবসময় এক থাকে না।ভবিষ্যতে কি হবে? না হবে?কেউ-ই আমরা বলতে পারিনা।সেদিন অনিক যা করেছে রাগের মাথায় করেছে।আমি বলছিনা তুই খারাপ।কিন্তু একবার অনিকের জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাব।এমনভাবে রাতের অন্ধকারে যদি অনিককে তুই অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখতি তোর কি খারাপ লাগতো নাহ?রাগ হতো না?’

সিয়া কোনো ভণিতা করল না।সোজাসাপটা বলে ফেলল,
‘ হ্যা আমার খারাপ লাগতো।রাগ হতো প্রচুর।কিন্তু তাও আমি নিজেকে সামলে নিতাম।আগে ওর কাছ থেকে পুরো বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাইতাম।কিন্তু ও কি তা করেছে?’

সাফাত বলল,’ হ্যা এটা অনিকের অনেক বড়ো একটা ভুল।যে অনিক তোকে আগে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।কিন্তু সিয়া দুনিয়াতে সবাই এক হয় না।হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন এক হয় না।তেমন সব মানুষের রাগ,জেদ,আবেগ,ভালোবাসা এক হয় না।তুই নিজেও এটা বুঝতে পারছিস যে অনিক তোকে প্রচন্ড ভালোবাসে।কি মানিস কিনা মানিস না সেটা বল?’

সিয়া চুপ করে রইলো।কি বলবে সে আর?হ্যা সে জানে অনিক বদলে গেছে।আগের সেই অনিকের সাথে এই অনিকের মধ্যে কোনো মিল নেই। আগের অনিক ওকে ভালোবাসতো না।আর এই অনিক ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে।কিন্তু অনিকের করা ব্যবহারগুলোও এ ভুলতে পারছে না।সিয়া কি করবে? কোন দিক দিশা পাচ্ছে না।

নীল বলে,’ সিয়া ভালোবাসা জীবনে একবার আসে বার বার না।তবুও তোকে জোড় করবো না।তোর মন যা চায়।তুই সেটাই কর।’

সিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগল।হঠাৎ অনিক এসে সিয়ার হাতদুটো ওর হাতের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে।ধরা গলায় বলে উঠে,
‘ সিয়া প্লিজ সিয়া আমাকে ক্ষমা করে দে।আমি এইবার সত্যি সত্যি বলছি আর কোনোদিন তোকে কষ্ট দিবো না।কোনোদিন না।আমাকে একবার মাফ করে দে সিয়া।আমি তোকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখব।অনেক অনেক ভালোবাসব।যে আমার ভালোবাসায় তুই কোনো খাদ খুঁজে পাবি না সিয়া।আমাকে ফিরিয়ে দিস না সিয়া।আমি তাহলে পাগল হয়ে যাবো সিয়া।তোকে ছাড়া আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে সিয়া।’

অনিকের একেকটা বাক্যে যেন সিয়াকে হারিয়ে ফেলার তীব্র হাহাকার উপলব্ধি করতে পারছে সিয়া।অনিকের এই অবস্থা ও সহ্য করতে পারছে না। হাজার হোক সত্যি তো এটাই যে ও অনিককে ভালোবাসে।সেই ভালোবাসার মানুষটার এমন বিধ্বস্ত রূপ কিভাবে সহ্য করবে?কিন্তু চাইলেও অনিককে জড়িয়ে ধরে বলতে পারছে না।যে ‘ অনিক তুমি চিন্তা করো না।আমি আছি তো।আমি সবময় তোমার পাশে থাকব।’ অনিকের কাছে এগিয়ে যেতে নিলেই অনিকের বলা সেদিনের ‘ চরিত্রহীন!’ উপাধিটা বার বার কানে বাজে।বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই একটা কারন।

চরিত্রহীন এই একটা শব্দ বার বার কানে বাজতে থাকে সিয়ার।সিয়ার সারা শরীর কেঁপে উঠে।ফট করে অনিকের হাতের থেকে হাতদুটো ছাড়িয়ে নেয়। তারপর পিছু ফিরে যায়।মুখে হাত চেপে কান্না করে দেয়।এদিকে সিয়ার এইভাবে ঘুরে যাওয়ায় যেন অনিকের কলিজায় কেউ ছুরি দ্বারা আঘাত করে দিলো।

অনিক পাগলের মতো বলতে লাগে।
‘ সিয়া আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিস না এভাবে।আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি।আমাকে এইভাবে জিন্দা লাশ বানিয়ে দিস না।আমি মরে যাবো সিয়া।আমি মরে…..!’

হঠাৎ অনিকের কথা থেমে যায়।সাথে সকলের চিৎকার ভেসে এসে কানে লাগল সিয়ার।

‘ অনিককককককককককক!’
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৯
হাসপাতালের করিডোরে কেউ বসে আছে।কেউ বা দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।কেউ যেন বুঝতেই পারল না।তখন কথা বলার মাঝে অনিক হঠাৎ করেই বুকে হাত চেপে মাটিতে বসে পরে।সবাই রুদ্রিক আর ইহান ওকে ধরতেই রুদ্রিকের কোলে অনিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তৎক্ষনাত অনিককে নিয়ে ওরা হাসপাতালে চলে আসে।ইহান অনিকের বাবা মা’কে ছেলের এই অবস্থা সম্পর্কে জানালে অনিকের বাবা দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন।অনিকের মা তো অনিকের মা তো ছেলের অবস্থা শুনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।তাই তিনি আসতে পারেননি।এদিকে সিয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।দৃষ্টি তার মেঝেতে নিবদ্ধ।কি হলো এটা?কেন হলো?ও তো এমনটা চায়নি।তবে ওর কারনেই আজ অনিকের এই অবস্থা?হ্যা ওর জন্যেই তো।ওই তো আজ অনিকের এই অবস্থার জন্যে অপরাধি।এতোটা কঠোর ও না হলেও পারতো।অনিক ওর কাছে বার বার করে ক্ষমা চেয়েছে।তাও নিষ্ঠুর ও মনকে পাথরে পরিনত করে রেখেছিলো।নাহলে অনিকের বলা প্রতিটা কথা এতোটাই করুন ছিলো যে যে কোনো মানুষের হৃদয় গলে যাবে।ও এতো পাষাণ হলো কি করে?যেই মানুষটাকে নিজের সবটা দিয়ে ও ভালোবাসে।তাকে এতোটা কষ্ট দিলো কি করে?অনিকের ওই অবস্থার কথা চিন্তা করতেই যেন সিয়ার নিশ্বাস আটকে আসছে।কিন্তু ওই বা কি করত?একটা মেয়ের কাছে তার আত্মসম্মানবোধ যে কি তা বলে বোঝানো সম্ভব না।সিয়া যে ওদের সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার কোনো চেষ্টা করেনি।এই দোষ তো কেউ দিতে পারবে না। কোনোদিন পারবে না।সিয়া কতোবার অনিকের কাছে গিয়েছিলো।পাগলের মতো বলেছিলো অনিককে ওর কাছে ফিরে আসতে।আজ অনিক যেভাবে বলেছিলো ঠিক সেইভাবেই বলেছিলো।কিন্তু অনিক কি করেছিলো?তার প্রেমিকাকে নিয়ে ওকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছিলো।তারপরেও সিয়া সব ভুলে ওর কাছে গিয়েছিলো।অনিক যা বলবে তাই করতে চেয়েছিলো।অনিককে যখন জড়িয়ে ধরে ওর ভালোবাসার কথা বলছিলো।ওর কাছে ফিরে আসার কথা বলছিলো।তখন অনিক ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলো।সিয়া অনেক ব্যথা পেয়েছিলো। ওর হাত ছুলে গিয়ে রক্ত ঝরছিলো।তাও অনিক ফিরিয়েও তাকায়নি সেদিন।এইতো অপমান আর লাঞ্চনা সহ্য করার পর এই দুনিয়াতে কি কোনো মেয়ে আছে?যে আবার ফিরে যেতো অনিকের কাছে?নিজের আত্মসম্মানবোধ খুইয়ে আবার সম্পর্কে জড়াতে?অন্যসব মেয়ে হলে সেদিনের অপমানের পর আত্মহত্যা করত।ও নিজেও করেছিলো।কিন্তু ওর ভাগ্যে হয়তো অন্যকিছুই লিখা ছিলো।তাই তো বেঁচে ফিরে এসেছিলো।ওর আত্মহত্যার কথা শুনেও অনিক একবারও আসেনি ওকে দেখতে।এই এতোসব কিছু কি একনিমিষেই ভুলে যাওয়া যায়?তাও তো ভুলতে চেয়েছিলো।কিন্তু সেদিন মেঘালয়ে অনিক আবারও ওকে অপমান করে।
সিয়া আর কি করবে?সিয়া এখন মন চাচ্ছে মরে যেতে।ও মরে গেলেই বোধহয় এইসব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে।ওএ ভাগ্যটাই খারাপ।নাহলে দুনিয়াতে ওর সাথেই কেন এসব হবে?আর সহ্য করতে পারল না সিয়া।দুহাতে মুখ ঢেকে বুক ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙে পরল।সিয়া এহেন কান্নায় যেন সবাই চমকে উঠল।সে কি আর্তনাদ সিয়ার।রুদ্রিক দ্রুত সিয়ার কাছে যায়।সিয়াকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে।রুদ্রিক সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,’ হুশ,কাঁদছিস কেন?একদম কাঁদবি না।অনিক ঠিক হয়ে যাবে।কিচ্ছু হবে না ওর।’

সিয়া হাউমাউ করে কেঁদে বলছে,’ কেন রুদ্রিক?কেন আমার সাথেই এমন হয়?আমি তো কারও ক্ষতি করিনি কোনোদিন।তবে আমার সাথেই কেন?অনিক আমাকে চায়নি।আমি এতোবার ভালোবাসার দোহাই দিয়ে ওর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও তো আমার ভালোবাসার কোনো দাম দেয়নি।তবে আজ কেন ও আবার আমার কাছে ভালোবাসার কথা বলতে আসল।কি জন্যে আসল?আজ কেন নিজেকে এতোটা কষ্ট দিচ্ছে।আমি তো সরে এসেছিলাম রুদ্রিক।ও যাতে সুখে থাকে তাই সরে গিয়েছিলাম ওর জীবন থেকে।তুই তো জানিস বল?তুই তো জানিস ওর জন্যে আমি কি না কি করেছি।নিজেকে কতোটা ছ্যাছড়া বানিয়ে দিয়েছিলাম।শুধুমাত্র ওকে ভালোবেসে।তবে আজ কেন ও নিজের এই অবস্থা বানালো।’

রুদ্রিক বলল,’ তোর কোনো দোষ নেই।তুই যা করেছিস ঠিক করেছিস।তাই নিজেকে একটুও দোষারোপ করিস না।।তবে আমি শুধু একটা কথাই বলব।সেদিন যেই অনিক তোর ভালোবাসাকে অপমান করে তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।সেই অনিক আর নেই।অনিক বদলে গেছে।তুই যেমনটা চাইতি।ঠিক তেমনটাই আজকের অনিক।যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।যেমনটা তুই ভালোবাসিস অনিককে।আজ দেখ তোর প্রত্যাখান ও সহ্য করতে না পেরে হার্ট স্ট্রোক করেছে।তাহলে বুঝ ঠিক কতোটা ভালোবাসে তোকে ও।কিন্তু তবুও আমরা কেউ তোকে কোনো কিছুতে জোড় করব না।তোর মন যা চায় তুই তাই করবি।তোর সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নিবো।কারন জোড় করে কিছু হয় না।দেখা যাবে আমাদের কথায় আর জোড়াজুড়িতে তুই অনিককে মেনে নিলি।কিন্তু মন থেকে তো আর মানতে পারলি না।তা দিয়ে কি হবে?দিনশেষে তোরা দুজনের একজনও শান্তিতে থাকতে পারবি না।তাই বলব তোর মন যা চায় তুই তাই কর।আমরা আগেও ছিলাম তোদের পাশে,এখনও আছি আর ভবিষত্যেও থাকব।’

সিয়া কিছুই বলছে না শুধু কাঁদছে।এমন সময় রুদ্রিকের মুঠোফোনটা শব্দ করে বেজে উঠল।রুদ্রিক মারিয়াকে চোখের ইশারায় সিয়াকে সামলাতে বলল।রুদ্রিক উঠে যেতেই মারিয়া এসে আগলে নিলো সিয়াকে।
রুদ্রিক একপলক সিয়ার দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করল।অথৈ ফোন করেছে।অপাশ থেকে অথৈ সালাম দিলো।রুদ্রিকও সালামের জবাব নিলো।রুদ্রিকের গলার কণ্ঠটা কেমন যেন শোনালো অথৈয়ের কাছে।অথৈ প্রশ্ন করল,’ হ্যালো?শুনছেন?আজ তো অনিক ভাইয়া আর সিয়া আপুকে প্যাচ-আপ করানোর উদ্দেশ্যে আপনারা গিয়েছিলেন।তো কাজটা কি হয়েছে?’

রুদ্রিক চুপ করে থাকল।কি জবাব দিবে ও?রুদ্রিকের কোনো সারাশব্দ না পেয়ে।অথৈ ফের বলে,’ কি হলো বলছেন না কেন?’

রুদ্রিক এইবার আর চুপ রইলো না।অত্যন্ত শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে,’ অনিক হার্ট স্ট্রোক করে করেছে।ওকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে এসেছি।ডাক্তার এখনও বের হয়নি।তাই আপাততো কিছু বলতে পারছি না।’

রুদ্রিক যে এহেন একটা কথা বলবে অথৈ ভাবতেও পারেনি।ও যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারলো না।অথৈ কাঁপা গলায় বলে উঠে,’ কি বলছেন এসব?অনিক ভাইয়া….’

অথৈয়ের যেন গলা ধরে আসল।খবরটা শুনে ওর নিজেরই তো কতো কষ্ট হচ্ছে।না জানি রুদ্রিক ঠিক কতোটা কষ্টে আছে।অথৈ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,’ কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন?ঠিকানা দিন।আমি আসছি।’

রুদ্রিক অথৈয়ের কথা শুনে রেগে গেলো।পাগল নাকি এই মেয়ে?এখন বাজে রাত নয়টা।অথৈদের বাসা থেকে হাসপাতাল বেশ দূরে।আসতে আসতে কমপক্ষে চল্লিশ মিনিট তো লাগবেই।রুদ্রিক ধমকে উঠল,’ মাথা ঠিক আছে তোমার?এতো রাতে তোমার আসা লাগবে না।রাত নয়টা বাজে।কতো বড়ো সাহস এতোদূরে একা আসবে।’

অথৈ বলে,’ একা আসব না তো।সত্যি বলছি।আহিদকে নিয়ে আসব।প্রমিস। প্লিজ না করবেন না। আমি আসতে চাই।’

রুদ্রিক হার মানলো শেষমেষ অথৈয়ের জোড়াজুড়িতে।রুদ্রিকের অনুমতি পেয়ে অথৈ দ্রুত আহিদকে ফোন করে।বিষয়টা বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলে।আহিদের মাধ্যমে পিহুও জেনে যায়। পিহুও আসতে চায়।আহিদ ওকে বারণ করে।এমনিতেই হাসপাতালে অনেক মানুষ।আর ভীড় করা ঠিক হবে না।পিহুও বুঝে তাই ও আর গেলো না।তারপর আহিদ দ্রুতই অথৈকে নিতে চলে আসে।অথৈ পিক করে নিয়ে ঝটপট অথৈকে নিয়ে চলে আসে।অথৈ রুদ্রিকের থেকে সব আগেই জেনে নিয়েছিলো।অনিককে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।কয়তালায়।তাই আর সমস্যা হয়নি।অথৈ আর আহিদ গিয়ে দেখে সেখানে রুদ্রিকের বন্ধুমহলের সবাই আছে।অথৈ আর আহিদ এগিয়ে যায়।সিয়াকে কাঁদতে দেখে অথৈয়ের কান্না পায়।ও সিয়ার কাছে গিয়ে।সিয়ার পায়ের কাছে বসে পরে। ভেজা কণ্ঠে বলে,’ আপু?কেঁদো না প্লিজ।অনিক ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু তুমি এভাবে কাঁদলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে অনিক ভাইয়া অনেক কষ্ট পাবে।প্লিজ আর কেঁদো না।’

সিয়া অথৈ কণ্ঠ শুনে। সোজা হয়ে বসে।অথৈ গালে হাত রেখে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে,’ তুমি এতো রাতে আসতে গেলে কেন?’

অথৈ সিয়ার হাত ধরে বলে,’ আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি আপু।আমার কথা বাদ দেও।তুমি আর কেঁদো না প্লিজ।আমারও কিন্তু কান্না পাচ্ছে আপু।প্লিজ আপু।’

অথৈ সিয়ার ভেজা দু চোখ দুহাতে মুছে দিলো।সিয়ার যেন হৃদয় জুড়িয়ে গেলো।অথৈকে যেন নিজের ছোটো বোন মনে হচ্ছে।যে বড়ো বোনের কান্না দেখে বলছে,’ আপু তুমি কাঁদলে, আমিও কাঁদব।’

সিয়া মাথা দোলালো।
‘ আচ্ছা কাঁদব না।’

ওদের আলাপের মাঝেই ডাক্তার বেরিয়ে আসে। সিয়া দৌড়ে যায় ডাক্তারের কাছে।অনিকের বাবা অস্থির হয়ে বলতে লাগলেন,’ ডাক্তার সাহেব।আমার ছেলে?আমার ছেলে কেমন আছে?বলুন না ডাক্তার সাহেব?’

ডাক্তার সাহেব শান্ত কণ্ঠে বলে,’ একটুর জন্যে তিনি অনেক বড়ো ক্ষতির থেকে বেঁচে ফিরেছেন।তিনি কিন্তু অনেক গুরুতরভাবে হার্ট স্ট্রোক করেছেন।যা অতিরিক্ত মানুষিক চাপের কারনে হয়ে থাকে।তিনি দীর্ঘদিন যাবত মানুষিক অশান্তিতে ভুগছেন।কোনো কিছু নিয়ে প্রচন্ড ডিপ্রেসড ছিলেন।আর সেই কারনেই আজ উনার এই অবস্থা।আপনারা তাকে সঠিক সময়ে তাকে হাসপাতালে এনেছেন।তাই উনি এখন ঠিক আছে।তবে উনাকে এই মানুষিক চাপ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।এমন চলতে থাকলে উনি আবারও হার্ট স্ট্রোক করতে পারেন।যতোটা সম্ভব উনাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।আশা করি তাহলে আর সমস্যা হবে না।আপাততো তিনি ঘুমোচ্ছেন।তিনি জাগলে তখন দেখা করতে পারবেন। তবে সবাই না।মাত্র দুজন।তাও আলাদা আলাদাভাবে যাবেন।উনার প্রচুর বিশ্রামের প্রয়োজন।’

বিস্তারিতভাবে সব বলে ডাক্তার চলে গেলেন।সবটা শুনে যেন সিয়ার মনে হলো কেউ ওর ক’লিজা বরাবর ধা’রালো ছু’রি দ্বারা আঘাত করেছে।এতোটা তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করল।ডাক্তার যা যা বলল তাতে স্পষ্টভাবেই সিয়া বুঝতে পেরেছে।অনিক এতোদিন খুব তীব্র মানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে।সিয়া জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল।হঠাৎ ওর হাতজোড়ায় কারো হাতের স্পর্শ পেতেই সিয়া চোখ তুলে তাকায়।তাকাতেই দেখতে পায় অনিকের বাবাকে।যে ভেজা ভেজা চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সিয়া অবাক হলো অনিকের বাবার কাছে।কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই অনিকের বাবা কান্নাভেজা গলায় বললেন,’ আমি সব জানি মা।সব জানি।আমার ছেলেটা তোমার সাথে বড়ো অন্যায় করেছে মা।এর বিনিময়ে ক্ষমাও চাওয়া যাবে না।কিন্তু মা আমি তো বাবা বলো।সন্তান হাজার অন্যায় করুক।বাবা, মা কখনও নিজের সন্তানকে দূরে ঠেলে দিতে পারে না।আমার ছেলেটা ভালো নেই।একদম ভালো নেই।আমি আর ওর মা প্রতিনিয়ত ওকে গুমড়ে গুমড়ে মর‍তে দেখেছি।প্রতিনিয়ত নিজেকে তিলে তিলে শেষ হতে দেখেছি।মা আমার ছেলেটা বাঁচবে না।ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে মা।তুমি আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিও না।তাহলে ওকে আর আমরা বাঁচাতে পারব না।আমার একটাই সন্তান।ওর কিছু হলে আমি আর ওর মা’ও ম’রে যাবো।তুমি আমার অনিককে মেনে নেও। এই বাবা তোমার কাছে আমার ছেলের জীবন ভিক্ষে চাইছি মা।আমার ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দেও।’

সিয়া অনিকের বাবার এহেন কান্ডে স্তব্ধ হয়ে যায়।দ্রুত হাত সরিয়ে এনে বলে,’ ছি ছি আংকেল আপনি আমার বাবার বয়সি।আপনি এসব কি বলছেন?এসব বলে আমাকে ছোটো করবেন না আংকেল।’

‘ আমি আর কি করব বলো তাহলে?এছাড়া আমার করার কিছু নেই।’

সিয়া কেঁদে ফেলে।এই এতো এতো যন্ত্রনা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।সিয়া বলে,’ আমিও ওকে ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।ওর এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছি না।আমি আর ওকে কষ্ট দিবো না।সত্যি বলছি।আমি সব ভুলে যাবো সব।সমাজ আমাকে আত্মসম্মানহীন বলুক।অনেক তো হলো।ওর জীবনের বিনিময়ে আমার আত্মসম্মান বড়ো হয়ে যায়নি।যাকে ভালোবাসি তার জন্যে সব ত্যাগ করতে পারব। ওকে সুস্থ হয়ে গেলে।আমরা সব ঠিক করে নিবো।আমার পক্ষে আর সম্ভব না এসব নেওয়া।আমি একটা স্বাভাবিক জীবন চাই।যেই জীবনে আজকের অনিকটার মতোই অনিক চাই আমি।যেই অনিক আমাকে অনেক ভালোবাসে।আর সেই অনিককেই আমি ভালোবাসি।’

সিয়া নিজের মনের কথাটাই মেনে নিলো।কি হবে আর?এই এতো এতো যুদ্ধ করে৷ নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি হবে?শেষ মেষ আজ অনিকের এই অবস্থা।যাকে ভালোবাসে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে কিভাবে আর?এটা কিছুতেই মানতে পারবে না।সবাই এতে যদি সিয়াকে খারাপ ভাবে।তো ভাবুক।

মারিয়া সিয়াকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর সিয়াকে পানি খাইয়ে দিলো।সাফাত এসে সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,’ তুই তোর মনের কথা শুনেছিস।এতে আমি এবং আমরা সবাই খুশি হয়েছি।শোন সিয়া,ভাগ্যে কার জন্যে কি লিখা থাকে তা আমরা কেউ জানি না।তবে মাঝে মাঝে নিজেদের কারনেই আমরা নিজেরা নিজেদের ভাগ্যকে নষ্ট করে ফেলি।তাই তো সবসময় বলা হয় ভেবে কাজ করো।আশা করি তুই ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। তোরা দুজনেই আমাদের বেষ্টফ্রেন্ড।তোদের কাউকেই আমরা হারাতেই চাই নাহ।মানুষের জীবনটাই কতোটুক বল?আজ আছি তো কাল নেই।যেটুকু সময় বেঁচে থাকি।সেটুকু সময় প্রাণ খুলে বাঁচতে পারাটাই সর্বসুখ।আমি বলছি তোর আজকের এই সিদ্ধান্তে তুই আর পস্তাবি না।সুখি হবি সিয়া। ‘

রুদ্রিক হালকা হেসে বলে,’ আর আমরা আছি তো।ওই অনিক সালা আবার তোকে কষ্ট দিলে ওর হাড়-গোড় ভেঙে দিবো।’

সিয়া কান্নাভেজা চোখেই হেসে ফেলল।সবাই সিয়াকে নানান কথা বলে ভড়সা দিলো।
প্রায় ঘন্টাখানিক পর খবর আসে অনিকের জ্ঞান ফিরেছে।সবাই যেন সস্তি পেলো এই কথাটা শুনে।অনিকের বাবা গেলেন আগে।তিনি ছেলের সাথে অল্পখানিক কথা বলেই বের হয়ে আসলেন।অনিকের বাবাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।বেচারা বয়স্ক মানুষ। এতোরাত পর্যন্ত এখানে থাকা ঠিক হবে না।তাই সবাই জোড় করে উনাকে রাজি করালেন বাড়িতে চলে যাবার জন্যে।তিনি সহজে রাজি হচ্ছিলেন না।সবার জোড়াজুড়িতে রাজি হলেন।এখন কে দিয়ে আসতে যাবে।আহিদ নিজেই আগ বাড়িয়ে বলে,’ আমাকে বাড়ি যেতে হবে রুদ্রিক ভাই। বাবা কাজের সূত্রে সিলেট গিয়েছেন।বাড়িতে মা আর পিহু একা।তাই আমি চাচ্ছিলাম বাড়ি চলে যেতে।আমিই নাহয় আংকেলকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসব।’

রুদ্রিক বলে,’ তোমার কোনো সমস্যা হবে না তো?’

আহিদ হেসে বলে,’ আরে না না ভাই।আংকেল যেই ঠিকানা দিয়েছেন।সেই অনুযায়ী।আমার বাসার কয়েকটা বাসার পরেই উনার বাসা।আমি উনাকে নামিয়ে দিয়ে আবার ব্যাক চলে যাবো।এটুকুতে কিচ্ছু হবে না।’

ইহান সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’ তাহলে তো হলোই।তবে যাও আহিদ।সাবধানে যাও।’
‘ আচ্ছা আসি।’

আহিদ অনিকের বাবাকে নিয়ে চলে গেলো।সিয়া অনিকের সাথে দেখা করার ছটফট করছে।জ্ঞান ফিরে আসায় ডাক্তার অনিককে চেক-আপ করছে।একটু পর ডাক্তার চেক-আপ করে বেড়িয়ে আসল।জানালো অনিক এখন কোনো কথা বলতে পারে না।সাময়িক সময়ের জন্যে সে কথা বলতে পারবে না।তবে খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।এইতো দু,তিন সময় লাগবে।সিয়া কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নিলো।ডাক্তার তো বলেছে যে অনিক ঠিক হয়ে যাবে।তাই আর কাঁদল না।সবাই সিয়াকে অনিকের কাছে যাওয়ার জন্যে বলল।সিয়া চলে গেলো অনিকের সাথে দেখা করতে।
এদিকে অথৈ সেদিকে তাকিয়ে চোখের কোনের জলটুকু মুছে নিলো।ভালোবাসা কি না পারে।এক নিমিষেই কেমন করে এতো বছরের রাগ,খোপ,অভিমান ভেঙে গুড়িয়ে দিলো।সত্যি ভালোবাসা সুন্দর, অদ্ভুত সুন্দর।
রুদ্রিক এসে পাশে দাঁড়ায় অথৈয়ের।অথৈ তাকায় রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক অথৈয়ের হাতটা শক্ত করে আকঁড়ে ধরল।অথৈ মুচঁকি হাসল।রুদ্রিক বলল,’ আমাদের সম্পর্কে আমি কোনোদিন এমন দিন আসতে দিবো না প্রমিজ।তোমাকে কোনোদিন অসম্মান করব না।এমন কোনো কাজ করব না যাতে তুমি কষ্ট পাও।আর আমার থেকে দূরে চলে যাও।আমি এটা মানতে পারব না।’

অথৈ হালকা হেসে বলে,’ আমি জানি আপনি আমার সাথে সারাজীবন থাকবেন।এই যেমন এখন আছেন আমার কাছে,আমার পাশে।ঠিক এইভাবেই।আর আমিও প্রমিস করলাম।আপনি কষ্ট পাবেন এমন কোনো কাজ আমিও কোনোদিম করব না।আপনাকে সম্মান করব।মানে আমরা দুজন দুজনের কাছে কিচ্ছু লুকোবো না।সবটা সেয়ার করব। প্রমিস?’
‘ হুম প্রমিস।’

অথৈ হাসল।বিনিময়ে রুদ্রিকও হাসল।রুদ্রিক ফিসফিস করে বলল,’ এইভাবে আর থাকা যাবে না।আমি এতো বছর অপেক্ষা করতে পারব না অথৈ। তোমাকে সবসময়ের জন্যে আমার কাছে চাই। খুব করে, অনেক কাছে চাই।তাই খুব শীঘ্রই তোমাকে পার্মান্যান্টলি আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো।আমার এক্সামটা শেষ হোক শুধু।অপেক্ষা আর কয়েকটা দিনের মাত্র।’

অথৈ প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলো রুদ্রিকের কথা শুনে।পরপর রুদ্রিকের প্রতিটা কথা মন থেকে অনুভব করেছে।যার ফলে ওর পুরো চেহারা রক্তিম আভায় ছেঁয়ে গেছে।আর রুদ্রিল মুগ্ধ হয়ে তা অবলোকন করেছে।
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫০
সিয়া মুখে হাত চিপে কাঁদছে।আর অনিক দূর্বল নয়নে তার প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে আছে।সিয়ার কান্নারত মুখখানা আর হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করছে।মেয়েটা এভাবে কাঁদছে কেন?অনিকের খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে যে,সিয়া তুই কাঁদিস না।আমি একদম ঠিক আছি।
কিন্তু চাইলেও বলতে পারছে না।কারন সে তো কথা বলতে পারছে না।অনিক অনেক কষ্টে হাতের ইশারায় সিয়াকে ওর কাছে যেতে বলল।চোখে তার আকুলতা ভড়পুর।অনিকের ইশারা পেতেই সিয়া গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় অনিকের দিকে।টুলটা টেনে বসে পরল সেখানে।অনিক চোখের ইশারায় ওকে কাঁদতে বারন করল।সিয়া অনিকের হাতটা স্পর্শ করল।ধুকড়ে কেঁদে উঠে বলে,’ কেন নিজেকে এতো কষ্ট দিলে?তোমার ভালোর জন্যেই তো আমি সরে গিয়েছিলাম।তবে আজ কেন তোমার এই অবস্থা অনিক।আমি সহ্য করতে পারছি না।’

অনিকের কষ্ট হলেও হাতটা উঠিয়ে সিয়ার চোখের পানি মুছে দিলো।চোখের ইশারায় বুঝালো যে ও ঠিক আছে।

সিয়া ভেজা কণ্ঠে বলে,’ বেশি প্রেসার নিও না।তোমার এখন রেস্টের প্রয়োজন।এখন ঘুমাও।’

অনিকের বেশ ভালো লাগছে।সেই আগের মতো সিয়ার মুখে ওকে তুমি করে ডাকাটা।এই ডাকটা বড্ড মিস করছিলো অনিক।তবে কি সিয়া ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে?মেনে নিয়েছে ওকে?অনিক অস্থির হয়ে উঠল।প্রশ্ন করতে চাইলো অনেক কিছু।কিন্তু পারলো না।এর মধ্যেই ডাক্তার আসল।অনিককে মেডিসিন দিবে।আর ঘুমের ইঞ্জেকশন দিবে।ঘুমালে অনিক দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।সিয়া উঠে দাঁড়ালো।যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালে অনিক সিয়ার হাত ধরে আটকে দেয়।সিয়া পিছনে ফিরে তাকায় অনিকের দিকে।অনিকের ব্যাকুলতা বুঝতে পারে।হালকা হেসে বলে,’ কোথাও যাবো না আমি আর।কোনোদিন যাবো না।এখানেই আছি,আর সারাজীবন থাকব।তুমি ঘুমাও।নিশ্চিন্তে ঘুমাও।’

অনিক যেন খুশিতে ফেটে পরল।সিয়ার এইটুকু কথাতেই যেন ওর সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলো।সিয়া অনিককে শান্ত করে বাহিরে চলে গেলো।আর ডাক্তার অনিককে চেক-আপ করতে লাগল।ইঞ্জেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অনিক ঘুমিয়ে গেলো।আজ যেন বহুদিন পর শান্তির ঘুম দিচ্ছে অনিক।আরামের ঘুম।
_____________
রাত অনেক হয়ে গিয়েছে।চেয়ারে বসে বসে ঢুলছে অথৈ।রুদ্রিক আর ইহান নিচে গিয়েছিলো খাবার আনতে।সবাই তো না খাওয়া।এসে অথৈয়ের এই অবস্থা দেখে ইহান রুদ্রিকের হাত থেকে দুটো খাবারের প্যাকেট বাদে সব খাবারগুলো নিয়ে বলে,’ তুই ওর কাছে যা।আমি সবাইকে খাবার দিচ্ছি।’

রুদ্রিক সম্মতি দিয়ে এগিয়ে গেলো অথৈয়ের কাছে।অথৈয়ের পাশে বসে পরল।রুদ্রিকের অস্তিত্ব টের পেতেই সজাগ হয়ে সোজা হয়ে বসে অথৈ। আলতো হেসে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,’ এসেছেন।’

অথৈয়ের কপালে কিছু ছোটো ছোটো চুল এলোমেলো হয়ে আছে।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের চুলগুলো গুছিয়ে ওর কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলে,’ হুম।তোমার ঘুম পাচ্ছে?’

অথৈ মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ মিথ্যে বলছ কেন?একটু আগেই তো দেখলাম ঘুমে ঢুলছ।’
‘ ও তো এমনিই।’
‘ হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবে না।খাবার এনেছি।নেও খেয়ে নেও।’
‘ আপনি খাবেন না?’
‘ হ্যা আমিও খাব।’

রুদ্রিক অথৈয়ের হাতে খাবারের প্যাকেটটা খুলে তারপর দিলো।বিরিয়ানি এনেছে ওরা।অথৈ আর রুদ্রিক খাবারটুকু খেয়ে নিলো। খাবারের পালা শেষ হলে রুদ্রিক বলে,’ চলো যাওয়া যাক। ‘

অবাক হয়ে অথৈ বলে,’ কোথায় যাবো?’
‘ কেন বাড়ি যাবে না?নাকি এখানেই থাকার প্লানিং আছে?’
‘ না মানে।আপনিও তো থাকবেন।’
‘ অথৈ তুমি ছোটো না।আমি থাকা আর তুমি থাকা এক না।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসব।এভাবে হাসপাতালে থাকা ঠিক না।’

গম্ভীর কণ্ঠে বলল রুদ্রিক।অথৈ আর কথা বাড়ালো না।সে জানে রুদ্রিক যা বলছে ঠিক বলছে।তবে হালকা অভিমান করল।এভাবে বলার কি আছে?সুন্দর ভাবেও তো বলা যেতো।অথৈ উঠে দাঁড়ালো।পা বাড়াবে তার আগেই রুদ্রিক অথৈয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে আগলে নিলো নিজের হাতের মাঝে।তারপর এগিয়ে গেলো বাকিদের কাছে।রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে,’ কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল দিস।আমি ওকে বাড়িতে পৌছি দিয়েই ফিরে আসছি।আর নীল তুই কি মারিয়াকে দিয়ে আসবি?নাকি ও আমার সাথে যাবে?’

নীল বলে,’ সমস্যা নেই তুই যা।আমিও মারিয়াকে এখনই বের হব।ওকেও বাসায় পৌছে দিবো।’

মারিয়া এতে সহমত হতে পারল না। ও বলে,’ সিয়া এখানে একা একটা মেয়ে কিভাবে থাকবে?কোনো দরকারও তো হতে পারে তাই নাহ?আমি যাবো না।’

সবাই কথাটা যুক্তি সংযত মনে করল।আসলেই এতোগুলো ছেলের মাঝে একা সিয়া থাকবে।সিয়ারও তো কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা হতে পারে।তখন ও কার কাছে বলবে?মারিয়ার যুক্তির কাছে সবাই হার মেনে মারিয়াকে এখানে থাকতে দেওয়া হলো।এতোগুলো মানুষ থাকার দরকার নেই।কিন্তু কেউ যেতে চাইছে না।রুদ্রিক,ইহান,নীল,সাফাত,সিয়া আর মারিয়া।ছ’জন সবাই থাকবে।কেউ আর জোড়াজুড়ি করল না।রুদ্রিক কথাবার্তা শেষ করে অথৈকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসল।অথৈ রুদ্রিকের হাত ধরে মাথা নিচু করে ওর সাথে সাথে হাটছে।অথৈকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও উঠে বসল রুদ্রিক।আঁড়চোখে অথৈয়ের দিকে তাকালো।তার মনপাখি যে অভিমান করে আছে তা বেশ বুঝতে পারল। কিন্তু তবুও কিছু বলল না রুদ্রিক।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো।পথে কোনো কথা হলো না ওদের মাঝে।এতে যেন অথৈয়ের অভিমান আরও গাঢ় হয়েছে।লোকটা এতো খারাপ কেন?একটাবার ওর দিকে তাকালও না।ও যে অভিমান করে আছে তা কি লোকটা বুঝতে পারছে না?মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো অথৈ। গাড়িটা অথৈয়ের বাড়ির সামনে থামতেই অথৈ নিজের সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামার প্রস্তুতি নিলো।যেই না গাড়ির দরজা খুলতে যাবে তার আগেই রুদ্রিক ওর বাহু আঁকড়ে ধরে অথৈকে টান দিলো।আকস্মিক টানে অথৈ হুমড়ি খেয়ে পরে রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক সাথে সাথে দুহাতে অথৈয়ের কোমড় পেচিয়ে ধরে।একদম শক্ত করে নিজের সাথে বক্ষস্থলে আগলে নেয়।অথৈ ছটফটিয়ে উঠে।ছাড়া পেতে চায় রুদ্রিকের কাছ থেকে।ওর এমন মোচড়ামুচড়ি দেখে রুদ্রিক আরও শক্ত করে ধরে।শেষে না পেরে অথৈ বলে, ‘ কি করছেন?নিশ্বাস আটকে মেরে ফেলবেন নাকি?’

রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ এভাবে তো তোমায় মারব না সুন্দরী।তোমাকে মারার পদ্ধতি তো ভিন্ন।যেদিন একেবারে আমার বাড়িতে পার্মানেন্টভাবে নিয়ে যাবো।সেদিন বোঝাব কিভাবে মারব তোমায়।’

রুদ্রিকের কথার মানে বুঝতে পেরেই লজ্জায় অথৈয়ের কান গরম হয়ে গেলো।রুদ্রিকের বুকে দুহাতে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,’ ছাড়ুন আমায় অসভ্য লোক।’

রুদ্রিক এইবার একহাত রাখল অথৈয়ের গালে।আলতো স্পর্শ করে বলে,’ রাগ করেছ?’

অথৈ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,’ না রাগ করব কেন?’
‘ রাগ না করলে ওইদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে কেন?আমার দিকে তাকাও।’

অথৈ তাকালো।অথৈয়ের সেই অভিমানি দৃষ্টি দেখে রুদ্রিক মুচঁকি হাসে।অতঃপর মাথা ঝুকিয়ে আনতেই অথৈ চোখ বন্ধ করে নিলো।রুদ্রিক অথৈয়ের দুচোখের পাতায় চুমু খেলো।আবেশে রুদ্রিকের শার্ট খামছে ধরে অথৈ।রুদ্রিক আবার চুমু খেলো অথৈয়ের দুগালে,থুতনিতে।তারপর কপালে চুমু খায়।স্বামির ভালোবাসাময় স্পর্শে দেহ আর মনে শিহরণ বয়ে যায় অথৈয়ের।রুদ্রিক নেশাময় চোখে তাকায় চোখ বন্ধ করে থাকা অথৈয়ের দিকে।ধীর আওয়াজে বলে,’ তাকাও অথৈ। ‘

অথৈ ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়।রুদ্রিকের দিকে তাকালে রুদ্রিক বলে,’ অভিমান কমেছে?নাকি আরও আদর লাগবে?’

লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয় অথৈ। কোনো জবাব দেয় না।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে ফের মুখোমুখি করে অথৈকে।বলে,’ আমার দিকে তাকাও মেয়ে।এদিক ওদিক কি?’
‘ উফ,আমার লজ্জা করে না বুঝি?’

হেসে ফেলে রুদ্রিক অথৈয়ের এহেন বাচ্চামো কথায়।
‘ আচ্ছা?’

ফের বলল,’ তাহলে আরেকটু লজ্জা দেই?’
‘ যাহ!’

অথৈ সরে আসতে নিলেই রুদ্রিক আবার ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।হাত দিয়ে অথৈয়ের ঠোঁট স্পর্শ করলে কেঁপে উঠে অথৈ। রুদ্রিক ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে,’ কতোদিন হলো বলো তো?তোমার এই নরম ঠোঁটজোড়ায় স্পর্শ পাই না।সেইযে মেঘালয়ে চুমু খেয়েছিলাম।সেখান থেকে এসেছি আজ কতোদিন হলো বলো তো?চুমুর অভাবে আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।সেই খেয়াল কি তোমার আছে?’

তাজ্জব বনে যায় অথৈ। চুমুর অভাবে মানুষ আবার অসুস্থ হয় কিভাবে?এই লোকের কাছে যতো আজগুবি কথাবার্তা। আর তা ওর সামনেই বলে লোকটা।অথৈ নাক মুখ কুচকে বলে,’ চুমুর অভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায় এই প্রথম শুনলাম।’
‘ আরেহ তুমি দেখছি কিছুই জানো না।এইযে আমি দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছি।কেন শুকোচ্ছি জানো?এইযে আমার একটা বউ আছে।বউ থাকতেও আমি বউকে প্রতিদিন চুমু খেতে পারছি না।এই চুমুর অভাবেই তো আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।আর শুকিয়ে যাচ্ছি।যেই দেখে সেই বলে,আরেহ রুদ্রিক তুমি এতো শুকোচ্ছ কেন?এখন তো আমি আর বলতে পারি না তাদের।যে বউ আমাকে প্রতিদিন চুমু খেতে দেয় না তার ওই গোলাপি ঠোঁটজোড়ায়।এইকারনেই আমার এই অবস্থা।অবশ্য আমার কোনো সমস্যা ছিলো না বলতে।কিন্তু তুমি তো লজ্জায় আমার সামনেই আসবে না।চুমু খাওয়া তো দূরে থাক।তোমার কথা ভেবেই বলি না।’

অথৈ হা করে রুদ্রিকের এই বেহুদা কথাগুলো সব শুনল।সব যেন অথৈয়ের মাথার এক হাত উপর দিয়ে গিয়েছে।কি থেকে কি বলল এই লোক?পাগল টাগল গয়ে গেলো নাকি আবার?না জ্বর এসেছে?অথৈ হাত বাড়িয়ে রুদ্রিকের গালে কপালে স্পর্শ করল।জ্বর এসেছে নাকি চেক করতে।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ আরেহ কি করছ?’
‘ চেক করছি।আপনার জ্বর টর এলো নাকি আবার?নাহলে এমন আবল তাবল বকছেন কেন?’

রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে বলে,’ কোনো জ্বর আসেনি আমার।আমি একদম ঠিক আছি।তবে আমার এখন একটা ডিপলি লিপ কিস লাগবে।ঝটপট আমার ঠোঁটে একটা চুমু খাও তো।’

লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো অথৈয়ের।এ কোন পাগলের পাল্লায় পরল ও।অথৈ রুদ্রিকের হাত কোমড় থেকে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,’ ইশ,ছাড়ুন তো।আমি কোনো চুমু খেতে পারব না।বাড়ি যাবো আমি।’
‘ তা তো হচ্ছে না সুন্দরী।তুমি চুমু না দিলে কি হবে। আমারটা আমিই আদায় করে নিতে পারি।’

কথাগুলো বলতে দেরি রুদ্রিকের অথৈয়ের অধরে অধর মিলিয়ে দিতে দেরি নেই।অথৈ বিড়ালছানার ন্যায় গুটিয়ে গেলো রুদ্রিকের বুকের মধ্যে।এভাবে কতোক্ষণ সময় অতিবাহিত হলো কেউ বলতে পারল না।দীর্ঘ ওষ্ঠচুম্বনের সমাপ্তি ঘটিয়ে সরে আসে রুদ্রিক অথৈয়ের কাছ থেকে।রুদ্রিক সরে আসলে লজ্জায় অথৈ আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না।গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে চলে যায় বাড়ির ভীতরে ঠোঁট কামড়ে হেসে দেয় রুদ্রিক।অথৈ নিজের রুমে গিয়ে রুদ্রিককে মেসেজ করে দেয় সে রুমে এসেছে।মেসেজটা পেয়েই রুদ্রিক গাড়ি ঘুরিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চলে যায়।এদিকে বারান্দায় আড়াল করে দাঁড়ানো অথৈ রুদ্রিকের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে থাকে লাজুক হেসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here