মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -৫৪ও শেষ

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫৪
রিধি লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছে।ইহান ওকে যেই থ্রেড দিয়েছে।না লুকিয়ে উপায় আছে?ইহানকে দেখতে পেলেই।এই কতোক্ষন অথৈয়ের পিছনে লুকোচ্ছে তো আবার পিহুর পিছনে।নাহলে আবার আহিদ আর প্রিয়ানের পিছনে।ওর এমন লুকোচুরিতে বেজায় বিরক্ত সকলে।আহিদ দাঁত কিরমির করে বলে উঠে,
‘ তুই যদি একবার এই কেঁউচ্ছার (কেঁচো) মতো এর পিছনে ওর পিছনে চিপকাস ?তাইলে আমি নিজে তোরা টাইন্না নিয়া ইহানের ভাইয়ের কাছে দিয়া আসমু।সত্যি কইতাছি।’

রিধি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো আহিদের দিকে।বলে উঠল,
‘ তুই না আমার জিগরি দোস্ত।তুই এমন কথা কইতে পারলি আমারে? ‘
‘ তুই যেই কির্তি করতাছস না কইরা উপায় নাই।’

পিহু হেসে বলে,
‘ কি এমন থ্রেড দিয়েছে ভাইয়া?যে তুই এমন ভয়ে আছিস?’

রিধি দুঃখী দুঃখী ফেস করে বলে,
‘ আর বলিস না।সেদিন হাসপাতালে একটু দুষ্টুমি করেছিলাম।এরজন্যে সে আমাকে টেক্সট করে থ্রেড দেয়।আমাকে নাকি বাগে পেলে নাকি কঠিন শাস্তি দিবে।’

অথৈ ঝুকে আসল রিধির কানের কাছে।দুষ্টু হাসি ওর ঠোঁটের কোণে।ফিসফিস করে বলে,’ শাস্তিটা কিন্তু মিষ্টিও হতে পারে।যেমন ধর ভাইয়া তোকে কিস টিসও করতে পারে।ইয়্যু হ্যাভ টু ট্রায় ইট রিধি।’

রিধি খুকখুক করে কেশে উঠল।হতভম্ব চোখে তাকায় অথৈয়ের দিকে।বলে,
‘ তোর কি লজ্জা শরম নেই?বড়ো ভাইকে নিয়ে এসব মন্তব্য করিস কিভাবে?’
‘ ভাইয়া কি এখানে আছে?নেই তো।তাহলে আমি লজ্জা পাবো কেন?আর তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড।আর বেস্টফ্রেন্ডের কাছে কোনো কথা বলার সময় লজ্জা পায় না।’

অথৈ চোখ টিপে দিলো রিধিকে।রিধি অথৈ মনে মনে সাংঘাতিক গালি দিলো।বিরবির করে বলে,
‘ দুই ভাই বোনই সেম।অসভ্য কোথাকার।’

পরক্ষনে অথৈয়ের কথা মনে পরে গেলো।তাতেই রিধি লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলো।আচ্ছা অথৈয়ের কথাই যদি সত্যি হয়ে যায়?তবে কি করবে রিধি?ও তো মনে হয় মরেই যাবে ইহানের স্পর্শ সহ্য করতে না পেরে।
পিহু নিজের কাঁধ দ্বারা রিধির কাঁধে ধাক্কা দেয়।চোখের ইশারায় সামনে তাকাতে বলে,
‘ সামনে তাকা।তুই যার ভয়ে নিজেকে লুকাচ্ছিলি।সে তোকে পেয়ে গিয়েছে।এখন কোথায় লুকাবি?’

রিধি চোখ বড়ো বড়ো করে সামনে তাকালো।রুদ্রিক,ইহান ওরা সবাই এদিকেই আসছে।রিধি ‘ আল্লাহ্ গো।’ বলে উলটো দিকে দৌড়।এদিকে রুদ্রিকরা অথৈদের কাছে আসতেই রিধিকে এমন দৌড়ে পালাতে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়।নীল অবাক হয়ে বলে,
‘ এই রিধি এইভাবে দৌড়ে পালালো কেন?’

সাফাত বলে,
‘ হ্যা আসলেই।কি হয়েছে ওর?অসুস্থ নাকি?’

অথৈ হেসে বলে,
‘ আরে না ভাইয়ারা তেমন কিছু না।ওর কিছু একটা মনে পরে গিয়েছে।সেইটা আনতেই দৌড় লাগিয়েছে।’

এদিকে ইহান মনে মনে হাসছে।মেয়েটা আসলেই পাগল।নাহলে দূর থেকে ওকে দেখেই এইভাবে দৌড় দিতে পারে?নাহ,অনেক হয়েছে।দুজন যেহেতু দুজনকেই ভালোইবাসে।তাহলে আর লুকোচুরি নয়।আজ ইহান নিজের মনের কথা বলে দিবে রিধিকে।তাইতো কাল রিংও কিনে এনেছে রিধির জন্যে।ইহান রুদ্রিককে ধীর স্বরে বলে,
‘ দোস্ত নার্ভাস লাগছে।যাবে এখন?’

রুদ্রিক শান্ত গলায় বলে,
‘ নার্ভাসন্যাসের কিছুই নেই।রিধির কাছে যাবি।ভালোবাসি বলে রিংটা পরিয়ে দিবি।ব্যস সিম্পল বিষয়।’
‘ তোর কাছে সিম্পল লাগলেও আমার কাছে না।’
‘ এমনভাবে বলছিস যেনো আমি এই অধ্যায় পার করে আসিনি।লিসেন তোর বোনকে ভালোবাসি বলতে গিয়ে কোনো জড়তা কাজ করেনি আমার মাঝে।ওকে জিজ্ঞেস করে দেখ।’

রুদ্রিকের কথা শুনে ইহান নাক মুখ কুচকে বলে,
‘ সালা মাথা খারাপ তোর?বড়ো ভাই হয়ে ছোটো বোনের কাছে এসব জিজ্ঞেস করব?’
‘ আমি তো জাস্ট বললাম।জিজ্ঞেস করবি কিনা সেটা তোর বিষয়।এখন যা রিধির কাছে।সময় নষ্ট করিস না।’

ইহান সম্মতি জানালো।তারপর চলল রিধির কাছে।
এদিকে রিধির ভার্সিটির পিছনে।বড়ো কড়ই গাছটার নিচে বসে আছে।ও পণ করেছে আজ ও এখান থেকে একপাও নড়বে না।এখানে সচরাচর কোনো মানুষ আসে না।তাই এই জায়গাটাই সেফ মনে করে রিধি এখানে লুকিয়ে পরেছে।
রিধি বিরবির করছে,
‘ হুহ আমাকে থ্রেড দেয়।আমাকে নাকি শাস্তি দিবে।কচু দিবে।আমি আগে খুঁজে পাক না আগে।আর তাছাড়া আমি উনাকে ভয় পাই নাকি?আসুক একবার।কলম দিয়ে গুতো দিয়ে দিবো।’
‘ গাছের নিচে বসে বসে এসবই প্লানিং করো বুঝি?তা নেও স্বয়ং আমি নিজেই এখানে হাজির।গুতো দিয়ে দেখাও।’

আচমকা ইহানের কণ্ঠস্বর কানে এসে লাগতেই রিধি চমকে যায়।হরবর করে দাঁড়িয়ে পরে।দ্রুত পিছনে ফিরেই ইহানকে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।ইহান বাঁকা হেসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।এইবার ইহান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। একপা একপা করে আগাতে থাকে রিধির দিকে।রিধিও পিছাতে থাকে।একসময় আবারও পিছনে ঘুরে দৌড়ে পালাতে যাবে।তার আগেই ইহান বড়ো বড়ো পায়ের ধাপ ফেলে এগিয়ে এসে রিধির হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।তারপর দেয় টান।টান দেওয়াতে রিধি নিজেকে সামলাতে না পেরে ইহানের বুকের মাঝে এসে ঠায় নেয়।ইহান রিধির কোমড় পেচিয়ে ধরে।রিধিকে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে।আরেকহাতে রিধির গাল স্পর্শ করে।ইহানের হাতের শীতল স্পর্শে রিধির দেহ কেঁপে উঠে দৃশ্যমান রূপে।বুক কাঁপছে রিধির।ইহান গাঢ় চোখে রিধির দিকে তাকিয়ে আছে।ওই চোখের চাহনী যে রিধি সহ্য করতে পারে না।রিধির অন্তর সহ পুরো শরীর শিরশিরানি অনুভূতিতে ছেঁয়ে যায়।রিধি শুকনো ঢোক গিলল।দৃষ্টি নিচের দিকে নিতে নিলেই ইহান রিধির গাল চেপে ধরে শক্ত করে।মুখটা ওর মুখোমুখি করে উঁচু করে ধরে।ইহান শীতল কণ্ঠে বলে উঠে,
‘ কি?সব সাহস ফুস হয়ে গেলো?তুমি না বললে তুমি আমাকে ভয় পাও না।তবে পালাচ্ছিলে কেন তাহলে?’

রিধির এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে।কাঁপা গলায় বলে উঠে,
‘ আ..আমি এমন কি..কিছু বলিনি।আপ..আপনি ভুল শুনেছেন।’
‘ আচ্ছা মানলাম আমি ভুল শুনেছি।কিন্তু হাসপাতালে যে আমাকে নিয়ে মজা করেছিলে?সেটা মনে আছে তো?এইবার শাস্তির জন্যে প্রস্তুত হও।’

রিধি আমত আমতা করে বলে,
‘ ওই কথাটাকে এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কি আছে আজিব?আমি তো এমনি একটু দুষ্টুমি করেছিলাম।’

ইহান গাঢ় স্বরে বলে,
‘ কিন্তু আমি যে তোমার সব কথাই সিরিয়াসলি নিয়ে নেই বেবিগার্ল।’

ইহানের বলা ‘ বেবিগার্ল।’ সম্বোধন শুনে রিধির যেন শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো।পরক্ষনে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগল ইহানের কাছ থেকে।কিন্তু পারলো না তো কিছুই।উলটো ইহান আরও শক্তি প্রয়োগ করে ধরল।সহ্য করতে না পেরে রিধি বলে,
‘ ব্যথা পাচ্ছি।’
‘ তো ছোটাছুটি করছ কেন?’
‘ আর করব না!’

ইহান এইবার একটু আস্তে করে ধরল রিধিকে।তবে ছাড়লো না।ইহান বলে,
‘ শাস্তির জন্যে প্রস্তুত তো?’

রিধি ভয়ে ভয়ে বলে,
‘ ক..কি শাস্তি?’
‘ সেটা একটু পরেই দেখতে পাবে।এখন চোখ বন্ধ করো।’

রিধি চোখ বন্ধ করার বদলে আরও বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায়।ইহানের হাসি পেয়ে গেলো।তাও হাসল না।যথাযথভাবে মুখটা গম্ভীর করে রাখল।এদিকে রিধি ভাবছে।লোকটা তাকে চোখ বন্ধ করতে বলছে কেন?
ওকে কি মেরে ফেলবে নাকি?ও চোখ বন্ধ করল আর লোকটা যদি ওকে গুলি করে দেয়?অথবা সামনে যেই নদীটা আছে সেখানে যদি ছুরে মারে?ও তো সাতার জানে না।এখন কি করবে রিধি?রিধি আতঁকে উঠে,
‘ নাহ প্লিজ।আমাকে পানিতে ফেলবেন না।আমি সাতার জানি না।’

রিধির এমন আগামাথা ছাড়া কথায় ইহান তাজ্জব বনে গেলো।পরক্ষনেই বুঝতে পারল মেয়েটা ভয়ের কারনে উল্টাপাল্টা ভাবছে।ইহান এইটার একটা সুযোগ নিলো,
‘ চোখ বন্ধ করে ফেলো ঝটপট তাহলে নদীতে ফেলব না।’

রিধি চোখ পিটপিট করল,
‘ সত্যি বলছেন?নদীতে ফেলবেন নাহ?’
‘ তুমি যদি আর একটা কথা বলো তাহলে এইবার সত্যি সত্যি ফেলে দিবো।’
‘ নাহ, নাহ।করছি তো বন্ধ।’

রিধি দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিলো।একটু পর অনুভব করল ইহানের স্পর্শগুলো আসতে আসতে ওর কাছ থেকে সরে যাচ্ছে।রিধি ঠোঁট কামড়ে ধরল।এই লোক কি করতে চাইছে কে জানে?হঠাৎ ইহানের ভারি কণ্ঠস্বর শোনা গেলো।
‘ বা-হাতটা সামনের দিকে বাড়িয়ে দেও রিধি।’

রিধি কোনো দ্বিমত করল না।ভদ্রভাবে সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।দেখা যাবে কিছু জিজ্ঞেস করলে সত্যি সত্যি নদীতে ছুরে মারবে।নাহ বাবা তা দরকার নেই।এর থেকে ভালো ইহান যা বলছে তা চুপচাপ মেনে নেওয়া।
হঠাৎ রিধি অনুভব করল তার হাতের অনামিকা আঙুলে কিছু একটা পরানো হচ্ছে।রিধি অনুমান করতে পারছে সেটা কি হতে পারে।রিধির সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।তবে কি এতোদিন পর ওর ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে?রিধির বন্ধ চোখের পাতা ভিজে যায় চোখের জলে।
ইহান ফের বলে,
‘ এইবার চোখ মেলে তাকাও রিধি।’

রিধি আস্তে আস্তে এইবার চোখ খুলে তাকায়।তাকাতেই দেখতে পায় ইহান এক হাটুতে ভড় দিয়ে বসে আছে।আর ইহানের হাতে রিধির বামহাতটা।আর সেই হাতের অনামিকা আঙুলে জ্বলজ্বল করছে স্বর্ণের আংটি।রিধি ডানপাতে মুখ চেপে ধরে কেঁদে ফেলে।ইহান হাসল।সে জানে রিধির এই কান্না দুঃখের নয়।বরংচ সুখের কান্না।তাইতো আটকালো না।কাঁদুক না একটু সুখের কান্না।ইহান কোমল গলায় বলতে লাগল,
‘ আই লাভ ইয়্যু রিধি।আজকের জন্যও তোমাকে ভালোবাসি, আগামীকালের জন্যও তোমাকে ভালোবাসি, চিরকালের জন্যও আমি তোমাকেই ভালবাসবো।
আমি চাই আমার জীবনের প্রতিটি সময় তোমার সাথে কাটাই, প্রতিটি সেকেন্ড আমি তোমার জীবনের সাথে ভাগ করতে চাই।তুমি কি আমার হবে রিধি?আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ।যার কাছে আমি আমার সুখ,দুঃখ,আনন্দ,বেদনা সব ভাগ করে নিতে পারব।আমার সহধর্মিণী, আমার বউ হবে রিধি?’

এতো সুন্দর করে কেউ যদি মনের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে।তবে কি তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়?আবার যদি সেই মানুষটা হয় তারই ভালোবাসার মানুষ।রিধিও পারে না।ধুঁকরে কেঁদে উঠে মেয়েটা।সেই না বুঝা বয়স থেকে ইহানকে ওর প্রচন্ড ভালালাগতো।বড়ো হতে হতে সেই ভালোলাগা বদলে যে কবে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছিলো নিজেও জানে না।এই দিনটার জন্যে কতো অপেক্ষা করেছে রিধি।আজ তা পূরণ হলো।খুশিতে রিধির মন চাচ্ছে মরে যেতে।রিধি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আমিও আপনাকে ভালোবাসি।আই লাভ ইয়্যু সো সো মাচ ইহান।’

ইহান ঠোঁট প্রসস্থ করে হাসল।তারপর উঠে দাঁড়ালো।ইহান উঠে দাঁড়াতে দেরি।আর রিধির ওর উপর ঝাপিয়ে পরতে দেরি নেই।ইহানের বুকের মাঝে একদম লেপ্টে গিয়েছে মেয়েটা।দুহাতে খামছে ধরেছে ইহানের পিঠ।কাঁদছে অবিরত।চেয়েও কান্না থামাতে পারছে না।এতো প্রতিক্ষার পর আজ ইহান আর ও এক হয়েছে।ইহান হাসল রিধির পাগলামিতে।দু হাতে রিধিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।তারপর পর পর তিন চারটা চুমু খেলো রিধির চুলের ভাজে।রিধি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ কেন এতো দেরি করলেন?কেন? আমি এই দিনটার জন্যে বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি ইহান।অনেক অপেক্ষা করেছি।’

ইহান ধীর স্বরে বলে,
‘ আমি বোকা ছিলাম রিধি।তুমি যে আমার জন্যে সীমাহিন ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছ তা বুঝতে পারতাম না।তোমার চোখের গভীরতা বুঝতাম না।যে গভীরতায় আমার জন্যে এক সাগর ভালোবাসা ছিলো।আমি দুঃখিত জান।আমাকে মাফ করে দেও।’

রিধি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ইহানকে।ইহান হেসে বলে,
‘ তবে কি জানো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়।’

রিধি পিটপিট করে ইহানের দিকে তাকায়।ইহান ফট করে রিধির কপালে একটা চুমু দিয়ে দেয়।রিধি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে।এই ভালোবাসার স্পর্শটুকুর জন্যে সে বছরের পর বছর কাঙালের মতো ছিলো।আজ যেন এক ঝটকায় সব পেয়ে গেলো।রিধি চোখ মেলে ইহানের দিকে তাকায়।ভেজা চোখেই হেসে ফেলে।সাথে হাসে ইহানও।

হঠাৎ কয়েকজোড়া করতালির আওয়াজে ইহান আর রিধি চমকে উঠে।এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে রুদ্রিক,অথৈ,নীল,মারিয়া,প্রিয়ান,পিহু,সিয়া,অনিক,আহিদ,সাফাত ওরা সবাই এখানে হাজির।আর ওরাই হাত তালি দিচ্ছে।রিধি বড়ো বড়ো চোখে তাকায়।পরক্ষনে হুশ আসে ও ইহানের সাথে চিপকে আছে।দ্রুত সরে আসে ইহানের কাছ থেকে।ইহান বিরক্ত হয়ে তাকায় ওদের দিকে বলে,
‘ দিলি তো সব নষ্ট করে।এখনই একটু রোমান্টিক মুডে ট্রান্সফার হচ্ছিলাম দুজনে।কাবাবে হাড্ডি হতে চলে এসেছিস সবগুলো।’

রিধি ইহানের এমন লাগামছাড়া কথায় লজ্জায় লাল হয়ে যায়।গালগুলো ফুলে ফেঁপে উঠেছে লজ্জায়।অথৈ এগিয়ে যায় রিধির কাছে।রিধির কানে কানে দুষ্টু হেসে বলে,
‘ বাহ বাহ বাহ।এই আমার ভাইকে দেখে দৌড়ে পালালি।আর এখন এসে দেখি একদম ফ্যাবিকলের মতো চিপকে আছিস।’

পিহু চিল্লিয়ে উঠল,
‘ ওই অথৈ তুই ফুসুরফাসুর করে কি বলছিস?হ্যা?’
‘ এদিকে আয়!’

অথৈ ডাকে পিহুকে।পিহু যেতেই অথৈ পিহুকে বলে কথাটা।তা শুনে পিহুও হেসে ফেলে।এদিকে রিধি লজ্জায় শেষ।
এইবার একে একে সবাই অভিনন্দন জানালো ইহান আর রিধিকে।আর সবাই ওদের দুজন থেকে ট্রিটও চাইলো।ইহান আর রিধিও রাজি হয়ে যায়।ট্রিট দিবে ওদের।
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#অন্তিম_পর্ব
দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে অনেকদিন।রুদ্রিকদের অনার্স ফাইনাল ইয়ার এক্সাম শেষ।সবাই এখন পড়ালেখা থেকে কিছুদিনের বিরতি নিয়েছে।বেশ ভালোই কাটছে দিনকাল।তবে ভালো নেই সাফাত।ওর মনটা বেশ কয়েকদিন যাবত কেমন যেন অস্থির হয়ে থাকে।মাথায় শুধু আরহাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খায়।সেদিন মেয়েটার বলা প্রতিটি কথা যেন খুব গভীরভাবে দাগ কেটেছে ওর মনে।সাফাত বিছানায় এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে।একদৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আরহার মুখশ্রীটা শুধু চোখের সামনে ভাসছে।কি করবে সাফাত?নানান চিন্তায় পাগল পাগল লাগছে ওর।এমনসময় সাফাতের ফোন বেজে উঠে।সাফাত হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে দেখে রুদ্রিক ফোন দিয়েছে।লম্বা শ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করল সাফাত।ওপাশ হতে রুদ্রিকের কণ্ঠস্বর,
‘ হ্যালো সাফাত?’
‘ হু!’
‘ কি করছিস তুই?’
‘ কিছু না শুয়ে আছি।’
‘ তুই ঠিক আছিস তো?’

রুদ্রিক চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করল।সাফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনের কথাটাই বলল,
‘ আমি ঠিক নেই দোস্ত।আমার ভালো লাগছে না কিছু।ওই মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে আমার।এমনটা কেন হচ্ছে দোস্ত?শুধু কয়েকবার মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছে।আর কিছু কথা হয়েছে।মেয়েটার লাইফের সম্পর্কে সব জেনে আমার কেন এতো খারাপ লাগছে,কষ্ট হচ্ছে দোস্ত? আমি কি করব?পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।আমি ওকে নিয়ে কেন ভাবব?আমি তো অন্য একজনকে ভালোবাসি, বল?’

সাফাতের সব কথা।মনোযোগ দিয়ে শুনল রুদ্রিক।শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল,
‘ মেয়েটা কি আরহা সাফাত?’

সাফাত কোনো ভণিতা করল না।সোজাসাপটা জবাব দিলো,
‘ হু!’

রুদ্রিক বলল,
‘ আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন।আমি জানি তুই অথৈকে ভালোবাসতিস,মানে এখনও ভালোবাসিস।আমার যদি সাধ্য থাকত আমি অথৈকে তোকে দিয়ে দিতাম সাফাত।কিন্তু মেয়েটা যে আমার অস্থিত্বে জুড়ে গিয়েছে।ওকে নিজের থেকে আলাদা করার কথা চিন্তা করলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।’

সাফাত প্রথমে অবাক হলো।যে রুদ্রিক সবটা জানে যে ও অথৈকে ভালোবাসি।পরক্ষনে রুদ্রিকের সব কথা শুনে বলে,
‘ বিশ্বাস কর আমি জোড় করে হলেও অথৈকে নিজের করে নিতাম।যদি না অথৈ তোকে ভালোবাসত।কিন্তু এই একটা জায়গায় আমি অসহায়।আমার সাধ্য নেই অথৈকে জোড় করার।কারন অথৈ তোকে ভালোবাসে।আর সবচে বড়ো কথা তোরা দুজন স্বামী,স্ত্রী।এখানে আমি কিভাবে জোড় জবরদস্তি করি বল?আমি পারিনি।অথৈ তোর সাথে অনেক সুখী রুদ্রিক।আর ওর সুখ দেখে আমি সুখী।’

রুদ্রিকের ভীষণ খারাপ লাগছে সাফাতের জন্যে।কিন্তু ওর হাতে যে করার কিছু নেই।অথৈয়ের জন্যে যদি পৃথিবীর সবাই ওকে স্বার্থপর বলে।তবে বলুক! অথৈয়ের জন্যে রুদ্রিক স্বার্থপর,ভীষণ স্বার্থপর।
রুদ্রিক বলে,
‘ সাফাত জীবন এভাবে চলবে না।তোকে লাইফে এগোতে হবে।আন্টি,আংকেলের কথা চিন্তা কর একবার দোস্ত।আর এইভাবেই কি তুই সারাজীবন থাকবি?আজ নাহয় কাল তোকে বিয়ে করতেই হবে।কাউকে না কাউকে তো তোর জীবনসঙ্গী করতে হবে, তাই নাহ?তাহলে সেই মানুষটা আরহা হলে সমস্যা কোথায়?মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে সাফাত।আমি মেঘালয় থাকতেই বুঝেছি ওর মনে তোর জন্যে অনুভূতি আছে।ওকে কাছে টেনে নে সাফাত।তোর লাইফটাকে সুন্দর করার জন্যে আল্লাহ্ তায়ালা আরহাকে তোর কাছে পাঠিয়েছেন।ওকে ফিরিয়ে দিস না।আমি আরহার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি।মেয়েটা ছোটোবেলা থেকেই কষ্টে বড়ো হয়েছে।মেয়েটা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল।তুই শুধু একটুখানি ভালোবেসে এককদম ওর দিকে বাড়িয়ে দেখ।মেয়েটা নিজের সবটুকু ভালোবাসা তোর কাছে উজাড় করে দিবে।ও দশ কদম তোর কাছে এগিয়ে আসবে।ওকে আপন করে নে সাফাত।তুই যদি নিজেকে এইভাবে তিলে তিলে কষ্ট দিস।তাহলে এইজীবনে আমি অথৈকে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারব না।সারাটাজীবন আমায় অপরাধবোধ নিয়ে থাকতে হবে।আর এই কারনে অথৈ কষ্ট পাবে।আমার কথাটা ভেবে দেখ সাফাত।ভালোভাবে ভেবে দেখ।এখন রাখছি। নিজের যত্ন নিস।আল্লাহ্ হাফেজ।’

রুদ্রিক ফোন কেটে দিলো।এদিকে সাফাত কয়েক মিনিট থম মেরে বসে রইলো।সত্যিই তো রুদ্রিক যা বলছে সব ঠিকই তো বলছে।ও যতোই না করুক।মা,বাবা পরিবারের চাপে পরে হলেও ওকে বিয়ে করতে হবে।তবে সেই বিয়েটা আরহার সাথে হলে ক্ষতি কি?দুনিয়াতে কতো মানুষ আছে যাদের এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়। সম্পূর্ণ অপরিচিত দুটি মানুষ।পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। এরপর দুজনের মনে যেই প্রগাঢ় ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।তা আর বলতে?আর আরহা ওকে ভালোবাসে।আর আরহার সাথে থাকলে একসময় সেও বাধ্য হবে আরহাকে ভালোবাসতে।সে বলবে আরহাকে, যেন আরহা এমন কিছু করে যাতে ও আরহাকে ছাড়া যেন এক সেকেন্ডও না থাকতে পারে।সাফাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ।অনেক হয়েছে পিছুটান।অতীতের দিকে আর ফিরে তাকাবে না।ভবিষ্যত ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।আর সাফাত সেই হাত আঁকড়ে ধরতে প্রস্তুত।সাফাত ফোন বের করে আরহা নাম্বারে কল লাগালো।একবার,দুবার,তিনবারের সময় কল রিসিভ হলো।ভেসে আসল আরহার মিষ্টি কণ্ঠস্বর,
‘ হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম কে?’

সাফাত চোখ বন্ধ করে নিলো।মেয়েটা বোধহয় ঘুমোচ্ছিলো।সদ্য উঠা ঘুমজড়ানো আরহার ভাঙা গলার স্বর সাফাতের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিলো।সাফাত ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে,
‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। নাম দেখে কল রিসিভ করোনি?’

আকস্মিক সাফাতের কণ্ঠস্বর কানে আসতেই তড়াক করে উঠে বসে আরহা।কান থেকে ফোন সরিয়ে ফোনের দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো।বার কয়েক চোখের পলক ফেলল।নাহ,সে ভুল দেখছে না।সাফাতই তাকে ফোন করেছে।আরহা আবারও ফোনটা কানের সামনে নিলো।ওমনি সাফাতের কণ্ঠস্বর,
‘ স্বপ্ন ভেবোনা।আমি সত্যিই তোমায় কল করেছি।’
‘ কে..কেন কল করেছেন?’
‘ যদি বলি তোমাকে আমার প্রয়োজন ভীষণভাবে। তাই কল করেছি।’

আরহা মলিন হেসে বলে,
‘ তাই তো বলি মি.সাফাত কেন আমায় ফোন করেছেন।তো বলুন কি সাহায্য করতে পারি আপনাকে?’
‘ আমাকে বিয়ে করবে আরহা?’

এমন একটা কথার আশা করিনি আরহা।খুক খুক করে কেশে উঠলো ও।বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলে সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে পান করে নিলো।বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে আরহা বলে,
‘ একটু আগে আপনি যা বলেছেন।তা আমি ভুল শুনেছি তাই নাহ?আর নাহলে আপনি আমার সাথে ফাইজলামি করছেন?’

সাফাত হালকা হাসল।সে জানে আরহা বিশ্বাস করেনি ওর কথা।তাই সাফাত বলে,
‘ আমি সত্যি বলছি আরহা।আমি অনেক ভেবেছি।আর সবশেষে এটাই পেয়েছি যে আজ হোক কাল হোক আমায় বিয়ে করতে হবে।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি তোমাকেই বিয়ে করব।আরহা তুমি জানো যে আমি একজনকে ভালোবাসতাম।ইনফেক্ট এখনও তার জন্যে আমার অনুভূতি আছে।কিন্তু তাকে পাবার আশা আমি করিনা।সে এখন অন্য একজনের স্ত্রী।সে সুখে আছে।আরহা তুমি কি পারবে আমার এইসব সত্যি জেনে আমাকে আপন করা নিতে?আমার একান্ত প্রিয় মানুষ হবে আরহা?যার কাছে আমি নির্দ্বিধায় নিজেকে সপে দিতে পারব?যে আমায় সবসময় আগলে রাখবে।আরহা তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে তোমার করে নেও আরহা।আমি তোমার হতে চাই।প্রমিস করছি আরহা কোনোদিন তোমাকে অভিযোগের সুযোগ দিবো না।আমার স্বর্বষ দিয়ে তোমায় সুখে রাখাইন চেষ্টা করব।আমরা হ্যাপিলি ম্যারিড কাপল হবো।আমায় বিয়ে করবে আরহাম?’

সাফাতের অনুভূতি মিশ্রিত কথাগুলো শুনে হু হু করে কেঁদে দিলো আরহা।সে চায় সাফাতকে।অনেক চায়।নিজের ভালোবাসা দিয়ে সাফাতকে সবসময় আগলে রাখবে।আরহা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আপনি মানুষটা আমার হয়ে যান।এই দুনিয়ায় আমার আর চাওয়ার কিছুই নেই।’
‘ আমি তোমারই আরহা।এই আমিটাকে তোমার কাছে সপে দিলাম।এখন থেকে এই আমিটার উপর সম্পূর্ণ অধিকার তোমার।’

আরহা ভেজা চোখে হেসে দিলো,
‘ আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।’

সাফাত বাঁকা হেসে বলে,
‘ দ্রুতই বিশ্বাস করবে।তৈরি থেকো মিস আরহা থেকে মিসেস আরহা হবার জন্যে।আমি আসছি খুব দ্রুত।’

এই বলে সাফাত ফোন রেখে দিলো।আর আরহা খুশিতে সারাঘর লাফাতে লাগল।অবশেষে, অবশেষে সাফাত আর ওর বিয়ে হচ্ছে।নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পাবার থেকে সুখ আর দ্বিতীয়টি নেই।আরহা দৌড়ে গেলো ওর ভাবির কাছে। ওর ভাই আর ভাবি দুজনেই জানে আরহা সাফাতকে ভালোবাসে।ভাবির কাছে সব বলবে।আর ওর ভাবি ওর ভাইকে বলবে।

এইভাবেই মাঝে কেটে গেলো দুটোদিন।দুদিন পর সাফাত এলো আরহাদের বাসায়।সাথে আছে রুদ্রিক,অথৈ,ইহান,রিধি,নীল,মারিয়া,অনিক,সিয়া,প্রিয়ান,পিহু, আহিদ আর মাইশা।আর সাথে ওর বাবা, মা।আরহা যেন টাস্কি খেলো।ও ঠিক কি রিয়েকশন দিবে ও জানে না।আরহা জানতে পারল আজকেই নাকি ওদের বিয়ে পরানো হবে।ঘরোয়াভাবেই বিয়েটা হবে।আর আজকেই আরহাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে।সবাই সবটা জানতো।ওর ভাই আর ভাবিও।শুধু ও জানতো না।ওকে সার্প্রাইজ দেওয়ার জন্যে কেউ জানাইনি।আরহা হা করে সাফাতের দিকে তাকালে।সাফাত ওকে চোখ মেরে দেয়।আরহা ভড়কে যায়।তারপর দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে যায়।সাফাত ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠে।মেয়েরা সবাই মিলে আরহাকে বউ সাজিয়ে আনে।কাজি আর হুজুর একটুপরেই এসে পরে।অতঃপর সাফাত আর আরহার বিয়েটা ঘরোয়াভাবেই সম্পূর্ণ হয়ে যায়।বিদায়ের পালায় আরহা অনেক কাঁদে।কিন্তু এটাই যে নিয়ম মেয়েদের বিয়ের পর নিজের বাড়ি ছেরে স্বামির বাড়ি যেতে হই।
অবশেষে আরহাকে নিয়ে ওরা সাফাতের বাড়ি পৌছালো।সবনিয়ম পালন করে। আরহাকে বাসর ঘরে দেওয়া হলো।আরহা ভীষণ নার্ভাস।আবার ভালোও লাগছে।অবশেষে ও সাফাতের বউ।এটা ভাবলেই শরীরে শিহরণ বয়ে যায়।বাহিরে চিল্লাপাল্লা হচ্ছে।টাকা ছাড়া সাফাতকে ভীতড়ে যেতে দিবে না।অবশেষে সবাইকে শান্ত করে সাফাত বাসর ঘরে প্রবেশ করে। আরহা উঠে এসে সালাম দেয় সাফাতকে।সাফাত মুচঁকি হেসে সালামের জবাব দেয়।তারপর আরহাকে বলে ওজু করে আসতে।আরহা কথামতো তাই করে।সাফাতও ওজু করে আসে।তারপর দুজন দুজনে নামাজ আদায় করে নেয়।নামাজ শেষে সাফাত আরহাকে বলে শুয়ে পরতে।আরহা গিয়ে শুয়ে পরলে।সাফাত ওর পাশে বেশ দূরুত্ব বজায় রেখে শুয়ে পরে।
সাফাত চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।কিন্তু ভীতরে ভীতরে ও অস্থিরতায় ফেটে পরছে। হাজার হোক ও একজন পুরুষ মানুষ।নিজের পাশে এমন সুন্দরী একজন মেয়ে থাকলে সবারই মনে কামুকতা জাগবে।আর যদি হয় মেয়েটা তার স্ত্রী।একটু পর সাফাত অনুভব করল কেউ ওর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে ওকে।সাফাত আস্তে আস্তে চোখের উপর থেকে হাত সরালো।হাত সরাতেই দৃষ্টিগোচর হয় আরহা মায়াবী মুখশ্রী।ড্রিম লাইটের আলোতে বঁধু সাজে আরহাকে ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে। শুকনো ঢোক গিলল সাফাত। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,
‘ এইভাবে কি দেখছ?’

আরহার সরল গলায় উত্তর,
‘ নিজের স্বামীকে।যে চোরের মতো আমার কাছ থেকে নিজেকে লুকানোর জন্যে ঘুমানোর ভাণ ধরছে।’

সাফাত হা হয়ে গেলো আরহার কথা শুনে।
‘ কিসব বলছ?’
‘ ঠিকই বলছি।নাহলে পাশে এমন সুন্দরী বউ রেখে কেউ কিভাবে ঘুমোতে পারে?’
‘ তো এখন তুমি কি চাইছো?আমি উঠে বসে থাকবো সারারাত।’

আরহা সাফাতের বুকের উপর শুয়ে পরল।সাফাতের চোখে চোখ রেখে অনুভূতিপ্রবণ কণ্ঠে বলে উঠে,
‘ জানেন না আমি কি চাই?আমি আপনাকে চাই।আর আমি আপনার হতে চাই।সম্পুর্ণভাবে আপনার হতে চাই।আমাকে নিজের করে নিন সাফাত।ভালোবাসা চাই আমি।অনেক অনেক ভালোবাসা।আমি বড্ড ভালোবাসার কাঙাল সাফাত।এই দুনিয়ায় আমার আপন মানুষ বলতে শুধু তিনজন ব্যক্তিই আছে।তাকে আমি খুব করে নিজের করে আগলে রাখতে চাই।আমাকে এই সুখ থেকে আলাদা করবেন না।’

আরহার চোখ থেকে একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরল।সাফাত হাত বাড়িয়ে সেই চোখের জল মুছে দিলো।বলল,
‘ কাঁদবে না।তোমাকে নিজের করে এনেছি কান্না করার জন্যে না।আমি তোমার জন্যেই নিজেকে সংযত করে রেখেছিলাম আরহা।তোমাকে কয়েকটাদিন সময় দিতে চেয়েছিলাম।’

থামলো সাফাত।পর পর চোখে মুখে দুষ্টুমি আভা ফুটিয়ে তুলে বলে,
‘ কিন্তু আমার বউটা যে এতো অধৈর্য তা জানা ছিলো না।তা বউ সামলাতে পারবে তো এই আমিটাকে?’

আরহা ভীষণ লজ্জা পেলো সাফাতের কথায়।লজ্জা লুকিয়ে অনেকটা সাহস জুগিয়ে সাফাতকে ওইসব কথা তো ঠিকই বলে ফেলল।কিন্তু এখন লজ্জায় চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।আরহা সাফাতের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইলে সাফাত আরহাকে দুহাতে শক্ত করে ধরে।তারপর হুট করে উলটো ঘুরে সায়।আরহাকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে আরহার উপর শরীরে ভড় ছেরে দেয়।সাফাত বাঁকা হেসে বলে,
‘ পালাচ্ছ কোথায় সুন্দরী?তোমায় আজ ছারছি না।আগুন জ্বালিয়ে যেহেতু দিয়েছ।এখন নিভানোর দায়িত্বও নেও।’

আরহা দুহাতে সাফাতের গলা জড়িয়ে ধরে।লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে,
‘ আমি তো আপনারই।কোথায় পালাবো বলেন।’

সাফাত ঝুকে গিয়ে চুমু খায় আরহার কপালে।সাফাতের দেওয়া প্রথম ভালোবাসার স্পর্শে আবেশে চোখ বন্ধ করে দেয় আরহা।চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পর সুখের জল।
সাফাত কপাল থেকে সরে আসে।কয়েক মিনিট আরহার মুখের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।আরহা যেই তাকাতে নিবে।তার আগেই সাফাত আরহার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।আরহার চোখজোড়া আবারও বন্ধ হয়ে যায়।দুহাতে খামছে ধরে সাফাতকে।সাফাতের উষ্ণ ভালোবাসায় সিক্ত হতে থাকে।ভালোবাসার সমুদ্রে পারি জমায় দুজন।
—————–
ফ্লাইটের টিকিট হাতে নিয়ে বসে আছে রিয়ান।কাল সকাল সন্ধ্যা সাতটায় ওর ফ্লাইট।হ্যা সে চলে যাচ্ছে এই দেশ ছেড়ে।পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিলো রিয়ান।ওয়ালপেপারে সিয়ার একটা হাস্যজ্জ্বল ছবি।এই ছবিটা সেদিন মেঘালয়ে নিজের অজান্তেই তুলেছিলো রিয়ান।কেন তুলেছিলো এই ছবি?সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর পায়নি রিয়ান।তবে আজ স্পষ্ট উত্তর আছে ওর কাছে।সে ভালোবেসে তুলেছিলো ছবিটা।তবে আফসোস ছবিটা ওর কাছে ঠিকই আছে।কিন্তু ছবির মানুষটা ওর না।রিয়ান বুঝতে পেরেছে সৃষ্টিকর্তা ওর পাপের শাস্তি দিয়েছে ওকে।কিন্তু এই এতো বড়ো শাস্তি কিভাবে ভোগ করবে রিয়ান?সারাটাজীবনের জন্যে ওকে কষ্টের সাগরে ডুবিয়ে দিলো।ভালোবাসা না পাওয়ার এই আক্ষেপ কিভাবে মিটাবে রিয়ান?আদৌ কোনোদিন মিটবে এই আক্ষেপ?এই ক্ষত?জীবনের প্রথম কাউকে ভালোবাসল রিয়ান।আর তাকেই পেলো না ও।কিভাবে পাবে?মানুষটা যে অন্য কাউকে ভালোবাসে।জোড় করে আর যাই হোক ভালোবাসা আদায় করা যায় না।যার মনে আগে থেকেই কেউ আছে সেই মনে ও কিভাবে ঠাই নিবে?জীবনে অনেক পাপ করেছে রিয়ান।এখন দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করে আর পাপ করতে চায় না রিয়ান।তাই তো চলে যাচ্ছে এখান থেকে।সবকিছু ছেড়েছুড়ে দূরে চলে যাচ্ছে।ভালো থাকুক সিয়া ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে।সিয়া একদিন রিয়ানকে ফোন করে বলে দেখা করবে।রিয়ানও রাজি হয়ে যায়।ভালোবাসার মানুষটিকে কেইবা না দেখতে চাইবে।রিয়ানের ক্ষেত্রেও তাই হলো।রিয়ান জানতো অনিক আর সিয়া রিলেশনশিপে ছিলো।আর তাদের তো ব্রেক-আপ হয়ে গিয়েছিলো।তাই তো সিয়াকে নিজের করে পাবার আশা জন্মেছিলো।কিন্তু কে জানতো সেদিন সিয়া ওকে অনিকের সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসবে?
তারা যে আমার এক হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি রিয়ান।সেদিন বহু কষ্টে ওদের সামনে স্থির হয়েছিলো রিয়ান।কোনোরকম কথাবার্তা বলে কাজের বাহানা দিয়ে চলে এসেছিলো রিয়ান।বাড়িতে এসে অনেক কান্নাকাটি করে।তারপরেই সিদ্ধান্ত নেয় ও নিজেও জেনির মতো এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে।আর সেই অনুযায়ী আগামীকাল ও চলে যাচ্ছে লন্ডন।

অনিক ফোনে দুটো মেসেজ টাইপ করল।একটা পাঠালো সিয়াকে আর একটা রুদ্রিককে।তারপর ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো।এটা না খেলে রাতে যে ঘুম আসে দুচোখের পাতায়।
————
‘ আমায় ক্ষমা করে দিস ভাই।অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে।তোর সাথে হিংসে করে জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলেছি।এখন যেটুকু আছে তাও খোয়াতে চাই না।আল্লাহ্ তায়ালার হয়তো আমার উপর দয়া হয়েছে।তাই তো আমার মনটা নরম করে দিয়েছেন।বুঝিয়ে দিয়েছেন আমি এতোদিন যা করছিলাম পাপ করছিলাম।আমাকে মাফ করে দে ভাই।অথৈ ভাবিকে নিয়ে সুখে থাকিস।তোদের জন্যে অনেক অনেক দোয়া রইলো।আর হ্যা আমার জন্যেও দোয়া করিস।আমি দূরে চলে যাচ্ছি।এই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।মামা,বড়ো ভাইয়া,বড়ো ভাবি আর দাদুকে বলিস।আমি তাদের ভীষণ ভালোবাসি।তোকেও ভালোবাসি ভাই।ক্ষমা করে দিস আমায়।’

মেসেজটা পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল রুদ্রিক।চোখ বন্ধ করে বিরবির করল,
‘ ভালো থাকিস তুই রিয়ান।অনেক অনেক ভালো থাকিস।তোর সব কষ্ট মুছে যাক।সুখী হো ভাই।’

_________
‘ সেই মেঘালয় থেকে আমাদের পরিচয়।একটা অপরিচিত মেয়েকে পরে যাওয়ার থেকে বাচিয়েছিলাম।আর সেই মেয়েটা আস্তে আস্তে কিভাবে যে আমার এতো ভালো বন্ধু হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।তোমাকে কোনোদিন ভুলব না সিয়া।তুমিও আমায় ভুলো না।তোমার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।তোমার একট আবদার পূরণ করতে না পারার জন্যে।আমার মুখটা তুমি অনেক দেখতে চেয়েছিলে কিন্তু আমি দেখায়নি।তার জন্যে দুঃখিত।কিন্তু কি জানো?কিছু কিছু জিনিস আড়ালে থাকাই ভালো।তাহলে সবাই ভালো থাকে।যেমন আমার চেহারাটা না দেখাতেই তোমার ভালো।সুখে থেকো সিয়া।ভালো থেকো।অনিক আর তোমার জন্যে অনেক অনেক দোয়া রইলো।আমার জন্যেই দোয়া করিও।আমি বিদেশ চলে যাচ্ছি একেবারের জন্যে।দোয়া করিও সিয়া।ভালো থেকো।আল্লাহ্ হাফেজ।’

মেসেজটা পরে ভীষণ খারাপ লাগল সিয়ার।লোকটা অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলো ওর।অনিকের সাথে দেখাও করিয়েছিলো লোকটার সাথে।সিয়ার যখনই মন খারাপ হতো লোকটা ম্যাজিকের মতো ভালো করে দিতো।
কিন্তু এতো ভালো বন্ধত্বও হওয়া সত্ত্বেও লোকটা কোনোদিন তার চেহারা দেখায়নি।অনেক জোড়াজুড়ি করেও লাভ হয়নি।তবে লোকটার নামটা অনেক সুন্দর।
আবরার।মূলত রিয়ানের পুরো নাম আবরার রিয়ান।রিয়ান আবরার নামটাই সিয়াকে বলেছে যাতে সিয়ার মনে কোনোরূপ কোনো সন্দেহ না জাগে।
সিয়া কল করল রিয়ানকে।কিন্তু রিসিভ হলো না ওপাশ থেকে।দু তিনবার দিলো তাও রিসিভ হয়নি। শেষে সিয়া একটা মেসেজ পাঠালো,
‘ ভালো থেকো আবরার।বিদেশ গিয়ে আমাকে ভুলে যেওনা।আমিও তোমায় ভুলব না।নিজের কন্টাক্ট নাম্বারটা দিও টেক্সট করে।আর হ্যা নিজের যত্ন নিও।হ্যাভ আ সেফ জার্ণি।’

মেসেজটা করে সিয়া ফোনটা রেখে দিলো।অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমানো প্রয়োজন।
———-
হাসিখুশি আনন্দ উল্লাসে কেঁটে গেলো কয়েকটা মাস।রুদ্রিকদের অনার্স ফাইনালের রেজাল্টও আউট হয়েছে।কয়েকদিনের মধ্যেই ওরা মাস্টার্সে ভর্তি হবে।সবার রেজাল্টই ভালো এসেছে।
রুদ্রিক আর অথৈয়ের পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।মাস্টার্সে ভর্তির আগেই দ্রুত মির্জা বাড়ির পুত্রবধূকে মানে অথৈকে নিয়ে যেতে চান।সবাই রাজি এই সিদ্ধান্তে।
গতকাল গায়ে হলুদ গিয়েছিলো।গায়ে হলুদটা একসাথেই হয়েছিলো রুদ্রিক আর অথৈয়ের।একটা কমিউনিটি সেন্টারে।
আর আজ ওদের বিয়ে পরানো হলো।রুদ্রিক আর অথৈ আবারও তিন কবুলের মাধ্যমে নিজেদের স্বামী স্ত্রী রূপে গ্রহন করে নিলো।বিয়ে পরানো শেষ। এখন বিদায়ের পালা।আরাবী তো যাবেই না।কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার অবস্থা খারাপ।অথৈয়ের বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।তাকে একটা রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।অথৈয়ের মা মেয়েকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রুদ্রিকের হাতে তুলে দিলো।তারপর স্বামীর কাছে চলে গেলেন।না যেয়েও তো উপায় নেই।লোকটা অসুস্থ।এদিকে অথৈও কাঁদতে কাঁদতে হাপিয়ে গিয়েছে।মাথা ব্যথায় যেন ছিরে যাচ্ছে।কেমন যেন ঢুলছে আর হেচঁকি দিয়ে কাঁদছে।রুদ্রিক দুহাতে অথৈকে বক্ষস্থলে আগলে নিলো।ইহান এসে অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।অথৈয়ের বন্ধ চোখের থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।তা যত্নসহকারে মুছে দিলো।ধরা গলায় বলে,
‘ আমি তোকে একটা কথাই বলব রুদ্রিক।আমার বোনটাকে আগলে রাখিস।ওকে কোনোদিন কষ্ট দিস না।’

রুদ্রিক ইহানের হাত ছুঁয়ে বলে,
‘ আমি ওয়াদা করলাম অথৈকে কোনোদিন কষ্ট দিবো না।আমার সবটা দিয়ে ওকে আগলে রাখবো।তুই চিন্তা করিস না।’

অতঃপর ইহান বিদায় জানালো নিজের কলিজার টুকরো বোনকে।
মির্জা বাড়ি এসে পৌছাতেই।রোজা নববধূকে বরন করে নেয়।টুকাটাকি যা নিয়মকরন ছিলো তা পালন করা হয়।অতঃপর অথৈকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসে রোজা,মারিয়া,সিয়া আর আরহা মিলে।দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে অথৈকে লজ্জা দিতেও ছাড় দেয় না তারা।অথৈয়ের সারাশরীর কাঁপছে।অদ্ভূত অনুভূতি কাজ করছে মনের মধ্যে।অথৈ পুরো ঘরটায় চোখ বোলালো।ভীষণ সুন্দর রুদ্রিকের ঘরটা।সোনালী পেইন্টিং করা পুরো রুমটায়।সারা রুমটা ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে।বেলি,রজনীগন্ধা,গোলাপ,জারবেরা আরো অনেক রকম ফুল দিয়ে ভড়পুর।মোমবাতী জ্বালানো রুমটায়।এতে যেন আরও মোহনীয় লাগছে ঘরটা।একটু পরেই খট করে দরজা খোলার শব্দ হলো।অথৈ নড়েচড়ে বসল।রুদ্রিক যতো ওর কাছে আসছে অথৈয়ের হৃদস্পন্দন ততো বেড়ে যাচ্ছে।রুদ্রিক এসে বসল অথৈয়ের পাশে।ও পাশে বসতেই অথৈ ধীর স্বরে সালাম জানায়।রুদ্রিকও সালামের জবাব দেয়।মুগ্ধ চোখে অথৈয়ের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে।তারপর বলে,
‘ অনেক সুন্দর লাগছে বউ।অবশেষে তোমাকে নিজের বউ করে নিজের কাছে এনেছি।

অথৈ মৃদ্যু হাসে।রুদ্রিকও হাসল। একটু পর ফের বলে রুদ্রিক,
‘ফ্রেস হয়ে ওজু করে নেও।নামাজ পরতে হবে।’

অথৈ মাথা দুলিয়ে উঠে দাঁড়ায়।তারপর আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে নিজের ব্যাগ খুঁজতে থাকে।নাহ, কোথাও নেই।এখন অথৈ কি করবে?’

‘ কি কিছু খুঁজেছ?’

আকস্মিক কানের কাছে রুদ্রিকের কণ্ঠস্বর বাজতেই ভয় পেয়ে যায় অথৈ। রুদ্রিক নিজেও অবাক। অথৈ যে এভাবে ভয় পাবে ভাবেনি।রুদ্রিক বলে,
‘ রিলেক্স এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা আমি।আর কিছু কি খুঁজছ?’

অথৈ মাথা দোলালো,
‘ হ্যা, আমার কাপড়ের ব্যাগ?’
‘ সেটা দিয়ে কি করবে?ওটার দরকার নেই।’

অবাক অথৈ,
‘ তাহলে আমি পরব কি?’

রুদ্রিক এগিয়ে গেলো আলমারির কাছে।তারপর আলমারিটা খুলতেই অথৈয়ের চোখ কপালে উঠে গেলো।এতো এতো মেয়েলি জামা-কাপড়ে আলমারি ভর্তি।রুদ্রিক সেগুলো দেখিয়ে বলে,’
‘ এখান থেকে তোমার যেটা ইচ্ছে পরে নেও।’

অথৈ হা করে আছে।রুদ্রিকের কথা শুনে বলে,
‘ এতো জামা-কাপড় এগুলো কার?’

অথৈয়ের বোকা বোকা কথায় হেসে ফেলল রুদ্রিক।বলে,
‘ তুমি আসলেই বোকা।এতোটুক কমনসেন্স নেই।আমাদের রুমে মেয়েলী জামা-কাপড় তোমার ছাড়া আর কার হবে?’
‘ কিন্তু এগুলো এতো জামা-কাপড় মানে?’

অথৈ কি বলতে চাইছে বুঝল রুদ্রিক।ও এগিয়ে যায় অথৈয়ের কাছে।অথৈয়ের গালে আলতো স্পর্শ করে বলে,
‘ আমাদের বিয়ে যখন হয়েছিলো।এরপরের থেকেই আমি তোমার জন্যে নিজে পছন্দ করে এসব কিনেছি।যখনই শপিংমলে যেতাম।সেখানে যা পছন্দ হতো তোমার জন্যে কিনে নিয়ে আসতাম।এইবার বুঝেছ?’

অথৈ মুচঁকি হাসল রুদ্রিকের কথায়।লোকটা আসলেই পাগল।নাহলে এমন কেউ করে?
রুদ্রিক সরে আসলেই অথৈ গিয়ে আলমারি থেকে একটা কালো সুতি শাড়ি নিয়ে নেয়।কালো রঙটা রুদ্রিকের অনেক পছন্দ।অথৈ গিয়ে ফ্রেস হয়।ওজু করে বের হয়ে আসলে।রুদ্রিক গিয়ে ফ্রেস হয়ে ওজু করে আসে।তারপর দুজন একসাথে নামাজ পরে নেয়।নামাজ পরা শেষ হতেই অথৈ জায়নামাজ দুটো ভাঁজ করে যথা স্থানে রেখে দেয়।ওর কাজ শেষ হলে রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে দেয় অথৈয়ের দিকে।আলতো স্বরে বলে,
‘ মিসেস আরিহান রুদ্রিক মির্জা?আমার সাথে জোৎস্নাবিলাস করবেন?’

অথৈ হাসে।ঝলমলে হাসি।হাত বাড়িয়ে আঁকড়ে ধরে রুদ্রিকের বাড়িয়ে দেওয়া হাত।বলে,
‘ মিস্টার আরিহান মির্জা এমন ভাবে ডাকলে কি তাকে মানা করা যায়?’

রুদ্রিক হাসল।তারপর দুজন চলে গেলো বারান্দায়।রুদ্রিক গিয়ে দোলনায় বসে পরল।পাশে বসল অথৈ। অথৈ রুদ্রিকের কাধে মাথা রাখল।অথৈয়ের দৃষ্টি ওই দূর আকাশের দিকে আর রুদ্রিক সে তো দেখতে ব্যস্ত তার নিজেস্ব চাঁদকে।দুজনের মনের মধ্যে প্রখর অনুভূতিরা দাপাদাপি করছে।রুদ্রিকের ঘোরলেগে যাচ্ছে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে।চাঁদের আলো অথৈয়ের গায়ে পরায় মেয়েটাকে যেন আরও সুন্দর লাগছে।মোহনীয় লাগছে,আবেদনময়ী লাগছে। রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের উন্মুক্ত কোমড় আঁকড়ে ধরে।কাছে টেনে নেয় অথৈকে নিজের।অথৈ কেঁপে উঠে রুদ্রিকের ছোঁয়ায়।শিরশির করে উঠে সর্বাঙ্গ।রুদ্রিক অথৈয়ের গলায় নাক ঘষছে।অথৈ হাত বাড়িয়ে রুদ্রিকের চুলগুলো খামছে ধরে।রুদ্রিক ঘোরলাগা গলায় বলে,
‘ আমার #মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না অথৈ,অনুভব করে দেখো সে আমি কতোটা চাই।তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি অথৈ। তুমি কি আমার হবে অথৈ?সম্পূর্ণ আমার?’

অথৈ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।রুদ্রিকের এহেন কথায় লজ্জায় দ্রুত ঘুরে গিয়ে রুদ্রিককে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মুখ গুজে দেয় রুদ্রিকের বক্ষস্থলে।কিয়ৎক্ষণ এভাবেই কেটে যায়। অতঃপর অথৈয়ের খুব ধীর স্বর ভেসে আসে,
‘ আমি তো আপনারই রুদ্রিক।আমি পুরোটাই আপনার।’

রুদ্রিক হাসে। তৃপ্তির হাসি।অথৈয়ের সম্মতি পেয়ে এক সেকেন্ডও দেরি করে না।ঝট করে অথৈকে কোলে তুলে নেয়।অথৈ দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে রুদ্রিকের।অথৈয়ের সর্ব মুখশ্রী লজ্জায় লাল হয়ে আছে।রুদ্রিক দুষ্টু হেসে বলে,
‘ এতো লজ্জা পেওনা সুন্দরী।লজ্জা পেলে আমার ভালোবাসাটা দ্বিগুন হয়ে যাবে।তাতে তোমারই কষ্ট হবে।সামলাতে পারবে তো তখন?’

রুদ্রিকের লাগামছাড়া কথায়।অথৈ যে আরও লজ্জার সাগরে ডুবে গেলো।’ ধ্যাৎ ‘ বলে মুখ লুকালো রুদ্রিকের বুকে।রুদ্রিক শব্দহীন হাসল।বিছানার কাছে এসে অথৈকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর নিজের গায়ের টি-শার্টটা খুলে দূরে ছুড়ে মারল।নিজেও অথৈয়ের পাশে শুয়ে পরে।তারপর কাত হয়ে তাকায় অথৈয়ের দিকে।অথৈ চোখ বন্ধ করে আছে।রুদ্রিক এইবার অথৈয়ের দিকে পুরো ঝুকে যায়।অথৈয়ের গালে আঙুল দ্বারা স্লাইড করতে থাকে।অথৈ কেঁপে কেঁপে উঠছে রুদ্রিকের স্পর্শে।রুদ্রিক নেশাময় কণ্ঠে বলে উঠল,
‘ আমার ভাগ্য সত্যিই অনেক ভালো। আর এ জন্য তোমার মতো একজন জীবন সঙ্গিনী কে আমার জীবন সাথী হিসেবে পেয়েছি।
আলহামদুলিল্লাহ্‌, তোমাকে পেয়ে আমি পরিপূর্ণ।ভালোবাসি বউ।’

অথৈ ছলছল চোখে তাকায় রুদ্রিকের দিকে।এই লোকটা যতোবার ভালোবাসি বলে।বুকটা কেঁপে উঠে।সুখে চোখে জল আসে।রুদ্রিক অথৈয়ের অশ্রুভেজা চোখে চুমু খায়।এরপর কপালে প্রগাঢ় অঅনুভূতিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।অথৈ রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরে।রুদ্রিক তাকায় অথৈয়ের দিকে।অথৈ এইবার নিজেই এগিয়ে যায় রুদ্রিকের দিকে।নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে অধরে অধর মিলিয়ে দেয় রুদ্রিকের সাথে।রুদ্রিকও প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে ভালোবাসায় সারা দিতে লাগে।দুটি মন, সাথে দুটি দেহ আজ ভালোবাসার বর্ষণে সিক্ত হচ্ছে।এই ভালোবাসা কোনোদিন না কমুক। এইভাবেই থাকুক আজীবন।
দুজন, দুজনকে ভালোবেসে হাতে,হাত রেখে সারাটিজীবন পারি দিক।

—————— সমাপ্ত—————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here