#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৯
ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বাহিরে আসতেই শিশিরকে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় রাত। সে সেদিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় পিছন থেকে রিসাব বলে উঠে,
-“হেয় রাত?”
রাত থেমে যায়। পিছনে ফিরে বলে,
-“কি?”
রিসাব মাথা চুলকে হেসে বললো,
-“আমি ড্রপ করে দিবো?”
-“না রে লাগবে না।”
অনেক্ষণ যাবত শিশির রাতকে রিসাবের সাথে কথা বলতে দেখছে।আস্তে আস্তে মনের মধ্যে কেমন একটা জ্বলন অনুভব হচ্ছে । দাঁত কিড়মিড় করে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো।ড্রাইভার বলতে লাগলো,
-“স্যার স্টার্ট দিবো?”
শিশির রেগে বলে উঠলো,
-“বলেছি আমি?”
ড্রাইভার আর কিছু বলার সাহস পেলো না। শিশির রাগে গরম হয়ে ভাবছে,
-“এত কিসের কথা বলতে হয়?আমি যে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার কোনো খবর নাই।”
এদিকে রাত রিসাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আসি।”
-“আরে আমি ড্রপ করে দিচ্ছি। আয়।”
বলতে বলতে সে বাইকে বসে পড়লো।রাত হাত নাড়িয়ে না করতে করতে বললো,
-“আমার ড্রাইভার অপেক্ষা করছে। আসি রে।”
বলেই সে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে গিয়ে বসলো।গাড়িতে বসেই দেখতে পেলো শিশির অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে রাত বলতে লাগলো,
-“শরীর কেমন এখন?”
-“ভালো।”
-“সায়ু কি করছে?”
-“মায়ের সাথে খেলছে।”
শিশিরের এমন ঠান্ডা গলায় কথা বলা রাত কে কেমন ভড়কে দিচ্ছে। রাত অবাক হয়ে বললো,
-“এত চুপচাপ যে?”
-“তো কি করব।”
-“ওমা কথা বলুন।”
শিশির রাতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-“তোমার কথা বলা শেষ হলে না কথা বলব।”
-“আমি?কার সাথে?”(অবাক হয়ে)
-” ওইযে বন্ধুদের সাথে।”
রাত হেসে ফেললো। তারপর শিশিরের হাতের ভিতর হাত দিয়ে বললো,
-“ধূর।রিসাব!ড্রপ করে দিতে চাইছিল।”
শিশির এটা শুনে যেন আরো রেগে গেল। ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তো চলে যেতে। এত আশা নিয়ে বললো।”
রাত মুখ ফুলিয়ে বললো,
-“ধূস। আর এদিকে যে আমার মাস্টারমশাই অপেক্ষা করছে।সেটা? ”
শিশিরের মুখে হাসি ফুটলো।রাতের গাল টেনে বললো,
-“হয়েছে বুঝতে পেরেছি। ”
রাতও হেসে ফেললো।তবে শিশিরের মনের জ্বলনটা সে বুঝলো।একটু ভালোলাগা কাজ করলো রাতের মনে। ইশ!শিশির তার জন্য জেলাস।ভাবতেই কেমন খুশি খুশি লাগছে রাতের।
____
বাসায় ঢুকেই নুশান আর মিতালিকে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে রাত আর শিশির।মিতালি সায়ানকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে দোলাচ্ছে আর নুশান তার পাশেই বসে। রাত তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে চৈতী বেগমকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো,
-“আন্টি!আন্টি!”
শিশিরও বেশ রেগেই গেলো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-“নুশান!তুই এখানে কি করছিস?”
ততক্ষণে চৈতী বেগম এসে দাঁড়ালেন তাদের সামনে। রাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
-“এসেছিস তোরা!”
শিশির চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলতে লাগলো,
-“মা ও এখানে কি করছে?”
চৈতী বেগম কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। এদিকে রাত ভ্রু কুঁচকে মিতালির দিকে তাকিয়ে আছে।মিতালি সায়ানকে বুকে নিয়ে খেলছে তখনও।নুশান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“রিলাক্স! আমি বলছি।”
রাত নুশানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“কি বলবেন আপনি?”
শিশিরও রাতের পাশে দাড়িয়ে বললো,
-“হ্যা বলুন কি বলবেন।”
নুশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আসলে মিতালি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছে। সায়ানের জন্য । তাই ডাক্তারের মতে কিছুদিন ওর কাছে সায়ানকে…”
রাত রেগে গেলো। বুকটা ধরফর করছে। তার সে বললো,
-” ওহ আচ্ছা? আপনার কি মনে হয় মিঃ নুশান!আপনি যা ইচ্ছে বলবেন আর আমরা বিশ্বাস করে নিবো?”
-“তুমি বিশ্বাস না করলে আমি রিপোর্ট দেখাই। আর মিতালি ভীষণ অসুস্থ। ভেঙে পড়ছে ধীরে ধীরে। ”
রাত মিতালির থেকে সায়ানকে নিতে গেলে মিতালি সায়ানকে নিয়ে উঠে দাড়ালো। চেপে ধরে বললো,
-” না না না। আমার বাচ্চা কে দিবো না আমি।”
শিশির মিতালির হাত চেপে ধরে বললো,
-“একদম আমার আমার করবা না। ভালোই ভালোই বলছি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও।”
মিতালি দৌড়ে নুশানের পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“নুশান তুমি কিছু বলো নাহ!”
নুশান হাত জোড় করে বলতে লাগলো,
-“আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ।প্লিজ আমাদের উপর একটু দয়া করুন।মাত্র ৭ টা দিন। যত খরচ আছে সব আমিই বহন করবো। দয়া করে ৭ টা দিন একটু আমাদের এখানে থাকতে দিন। নাহয় আমার স্ত্রী মারাও যেতে পারে।”
রাত এবার হো হো করে হাসতে লাগলো। রাতের হাসি দেখে সবাই প্রায় অবাকের শেষ প্রান্তে। রাত হাসতে হাসতেই বললো,
-“ওহ রিয়ালি?তো কই ছিল এই পাগলামো যখন আপনার বউ এই ১৫ দিনের সায়ানকে রেখে পালিয়ে গেছিলো?কই ছিল এই পাগলামো যখন আমার স্বামী নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে কাঁদছিলেন! ১৫ দিনের এই এতটুকু বাচ্চা টা খালি ঘরে ভয়ে কাঁদছিল। কেউ ছিল না ওর কাছে।কই ছিল তখন আপনার স্ত্রী?”
নুশান এবার চুপ করে রইলো। পুরনো দিনের কথা মনে পড়ায় চৈতী বেগম মুখ চেপে কাঁদছেন। শিশির চোখের কোণে থাকা জলটা মুছে বললো,
-“আইনত আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আর আমার বাচ্চার দায়িত্ব যে মিতালি নিবে না তাও লেখা ছিলো পেপারস এ। ”
নুশান হাত জোড় করে বলতে লাগলো,
-“দয়া করে একজন মায়ের থেকে তার সন্তান কে কেড়ে নিবেন না।”
রাত এবার চেঁচিয়ে উঠলো,
-“এই কিসের মা? কিসের মা হুম? যেই চ*রি*ত্র*হী*ন মা তার ১৫ দিনের সন্তান আর ৩ বছরের সংসার ছেড়ে এক পরপুরুষের সাথে পালিয়ে যেতে পারে সে আবার কিসের মা?”
নুশান কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাত আবার চেঁচিয়ে উঠলো,
-“কিহ? আনসার মি!”
মিতালি সায়ানকে বুকে নিয়ে রাতের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“প্লিজ আমাকে আমার বাচ্চার কাছে থাকতে দাও। আমি দূরেই থাকব। সত্যি।”
রাত মিতালিকে তুললো। তারপর ওর কাছ থেকে সায়ানকে কোলে নিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।সায়ানকে হারানোর যে বড্ড ভয় তার। বড্ড বেশি।মিতালি এবার জোরে কেদে উঠলো।কিন্তু এই কান্না যে জেদের সেটা হয়ত কেউই বুঝেনি। কিসের জেদ? রাত যে দৌড়ে পালালো।আর সে কেড়ে নিতে পারলো না। এই জেদের। নুশান মিতালিকে জড়িয়ে ধরতেই মিতালি নুশানকে ধাক্কা মেরে শিশিরের পা ধরে বলতে লাগলো,
-“দয়া করো আমার উপর। আমি দূরেই থাকব। কয়েকদিনের ঠাই দাও আমায়। আমি মরেই যাব শিশির।”
শিশির মিতালিকে পায়ের ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। তারপর মুখ ঘুরিয়ে বললো,
-“কতবার বলেছি!অপবিত্র শরীরে আমাকে ছুবি না।”
মিতালি আর কি করবে ভেবে না পেয়ে চৈতী বেগমের পা ধরে বসে পড়লো। এবার যদি একটু ঠাই হয়!
______
রাত সেই যে বিকাল থেকে সায়ানকে বুকে নিয়ে বসে আছে।এখনো বসেই আছে।সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো।শিশির এতক্ষণ স্টাডি রুমে বসে আছে। রাতকে ডিস্টার্ব করতে চায় না। থাক না ছেলের সাথে।সায়ান রাতের চুল নিয়ে খেলছে।রাতের ভীষণ ভয় হচ্ছে। ছেলেকে হারানোর ভয়।সে কিছুতেই মিতালিকে দিবে না তার ছেলেকে।কিছুতেই না। কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো রাত।পিছনে ফিরে দেখলো শিশির দাঁড়িয়ে। রাত অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আবারো চিন্তায় নিমগ্ন হলো।শিশির রাতের পাশে বসে বললো,
-“মন খারাপ পিচ্চি?”
-“আমার সায়ান!”
বলেই রাত ফুঁপিয়ে উঠলো। শিশিরের বুক ধরফর করে উঠলো।রাতের কান্নাটা সে মোটেও নিতে পারছে না। রাত কেন কাঁদবে? রাতের এই চোখের জল তার কাছে বিষের মত লাগছে।সে রাতকে বুকে জড়িয়ে বললো,
-“কেন কাঁদছো রাত? এই দেখো সায়ান তো এখানেই।”
বলেই সে সায়ানের কপালে চুমু দিলো।রাত কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“মিতালি আমার ছেলেকে কেড়ে নিতে এসেছে।”
-“তেমন কিছুই হবে না রাত।আমি তোমার পাশে আছি।সবসময়!”
-“ও কেন আমার ছেলেকে কোলে নিবে!”
-“আর নিবে না। দিবা না।”
-“হুহ। কখনো না। সায়ান আমার বুকের ধন। ওকে আমি কাউকে দিবো না।”
বলেই সে সায়ানকে এলোপাতাড়ি চুমু দিচ্ছে। আর সায়ান খিলখিল করে হাসছে। শিশির রাতের পাগলামি দেখে ভাবছে,
-“এতটা ভালেবাসে ও সায়ানকে!ওর সামনে তো মিতালি কিছুই না।”
রাত সায়ানকে নিয়ে বিছানায় শুতে শুতে বললো,
-” রাত হয়ে এলো।আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে আপনার খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
-“আজ মায়ের অনেক কাজ। এতজনের খাবার।”
রাত ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এতজনের খাবার মানে?”
-“মা মিতালির কান্না দেখে কিছুটা গলেছে।তাই সাতদিন থাকবার পারমিশন দিয়েছে। আমি অনেক রাগারাগি করেছি।কিন্তু! “(চাপা রাগ নিয়ে)
-” আর রাগ দেখাতে হবে না স্যার।”
-“মা নিজের ফ্ল্যাটে রাখবে ওদের।তাই বলেছে আমাকে টেনশন না করতে। আর মায়ের আরেকটা ভয়ও আছে।”
-“কিসের? ”
-“মিতালি যদি সায়ানের জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা করে,আর যদি পুলিশি ঝামেলা হয়!!তাই মা আমায় নিষেধ করছে রাগারাগি করতে।”
-“হুম ঠিকই বলেছেন উনি। আর আমি সায়ুকে হারাতে চাই না।”(অসহায় গলায়)
-“তুমি একদম ভয় পেয়ো না। মিতালিকে আমি কিচ্ছু করতে দিবো না।”
রাত হাসলো।তারপর বলতে লাগলো,
-“মিতালি এখানে কোনো মতলব নিয়েই এসেছে স্যার।”
-“জানি।”(রাগ কন্ট্রোল করে)
-“কিন্তু উনি যদি চলেন ডালে ডালে,আমিও তবে চলি পাতায় পাতায়।”
-“মানে?”(অবাক হয়ে)
-“আমিও দেখি উনি কতদূর করতে পারেন।উনি এখানে সাতদিনের সুখ নয় মরণ যন্ত্রণা নিতে এসেছেন।অতি চালাকির গলায় দড়ি জানেন তো?”
-” হু “(মাথা নাড়িয়ে)
-” সেটাই ওনাকে দেখাবো এবার।”(বাঁকা হেসে)
চলবে…..
#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১০
-“দেখো মিতালি!একমাত্র তোমার জেদের জন্য আমাকে এসব করতে হচ্ছে। ”
শক্ত গলায় বললো নুশান। মিতালি নুশানের হাত ধরে নিম্ন স্বরে বলে উঠলো,
-“আরে,তুমি বোঝার ট্রাই করো!সায়ানকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না। সায়ান আমার ছেলে।”
নুশান মিতালির হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। ওর থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে বললো,
-“আমি কি বুঝিনা মনে করেছো!তুমি সায়ানের জন্য আসছো তাই না!হাহ!”
-“হ্যা।আমি তো সায়ানের জন্যই আসছি।”(জোরপূর্বক হেসে)
-“থাক আর কত মিথ্যা বলবা।আমি খুব ভালো করেই জানি যে তুমি এখানে শিশির আর রাতের মধ্যে প্যাচ লাগাতে এসেছো।”
মিতালি হাসলো।হাসতে হাসতে বললো,
-“যাক!আমার সাথে থেকে থেকে তোমার কিছু তো বুদ্ধি হয়েছে। ”
নুশান বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“কোনো দরকার আছে কি এসবের? ”
-“আলবাদ আছে।আর আমার আসলেই সায়ানকে লাগবে।আমি সায়ানকে এখান থেকে নিয়ে যাব।”
-“একমাত্র তোমার শরীরের কথা চিন্তা করে আমি সায়ানকে নিয়ে রাজি হয়েছি।নয়ত পরের ফসল আমি কেন বয়ে বেড়াব?”
-“আচ্ছা ঠিকাছে। আর বাকি রইলো রাত-শিশির।ওদেরকে আলাদা করাটাই আমার মেইন কাজ।”
-“কিন্তু শিশির তো আমাদের বিরুদ্ধে কিছু করছে না। যা করেছিল সব আমি পুলিশদের টাকা খাইয়ে বাদ করেছি। এখন কিসের শত্রুতা ওর সাথে?”(ভ্রু কুঁচকে)
-“শত্রুতা আছে!শিশির কিভাবে পারলো আমাকে ভুলে যেতে?”
-“ন্যাকামো কথা বলো না।শিশিরকে ছেড়ে দিয়েছো। তাহলে ও তোমায় ভুলবে না তো কি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবে?”
-“হ্যা করবে!”
-“পাগলকে নিয়ে আছি আমি।”
-“সে তুমি যাই বলো। শিশির সুখে সংসার করবে এটা আমি দেখতে পারব না। আমি সুখে থাকছি এটা শিশির দেখবে এটাই আমি চাই।”
-“কিন্তু কেন মিতালি!বাদ দাও এসব। চলো আমরা আমাদের মত থাকব।”
-“একদম আমার কাজে বাঁধা দিবে না নুশান। তুমি না আমায় ভালোবাসো?”
নুশান কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিতালির এসব তার মোটেও ভালো লাগছে না। তারা তো পালিয়ে ছিল। এখন কেন মিতালি আবার এসব নাটক শুরু করেছে?নুশান অসহায় গলায় বললো,
-“প্লিজ মিতালি!”
মিতালি শয়তানী হেসে বললো,
-“আমি শিশিরের ধ্বংস দেখতে চাই।”
নুশান বেশ অবাক হলো। তারপর মিতালিকে টেনে নিয়ে বললো,
-“কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা?”(ভ্রু কুঁচকে)
মিতালি কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় ঠকঠক করে কড়া নাড়লো কেউ।মিতালি নুশানকে থামিয়ে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।দরজা খুলতেই শিশিরদের বাড়ির কাজের মহিলাকে দেখে বললো,
-” বলো।”
-“আফা খালাম্মা আফনাগো আইতে কইছে।”
-“তুমি যাও আমরা আসছি।”
-“জ্বে।”
বলেই কাজের মহিলাটি চলে গেলো। মিতালি দাঁতে দাঁত চেপে নুশানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“বউয়ের জন্য কাজের মহিলাও রাখা হচ্ছে।”
-“হ্যা তো। রাখুক না!”
-“একদম বাজে কথা বলবা না।আমার জন্য কখনে রাখেনি।”
নুশান আর কিছু বললো না। মিতালিকে দেখে তার নিজেরি কেমন অচেনা অচেনা লাগে।কারণ মিতালি পালানোর সময় বলেছিল যে আর কখনো সে পিছনে ফিরে তাকাবে না। কিন্তু এখন তো সে পরের সংসার ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছে। নুশান তো শুধু মিতালিকে চেয়েছিলো।তারচেয়ে বেশিকিছু তো না।
নুশান,মিতালি শিশির একই ভার্সিটিতে পড়ত। নুশান আর শিশির দুজনই মিতালিকে ভালোবাসতো। শিশির বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় মিতালিও রাজি হয়ে যায়। তখন আর নুশান এরমধ্যে থাকতে চায়নি। সরে গেছিলো।কিন্তু বিয়ের ২ বছর পর মিতালি নিজেই নুশানের সাথে দেখা করে, ঘনিষ্ঠ হয়।নুশানও পুরনো প্রেম পাওয়ার লোভে শিশিরকে ঠকাতে অগ্রসর হয়।
-“খেতে চলো!”
মিতালির কথায় ধ্যান ভাঙে নুশানের।হ্যাবোধক মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,
-“যাবো তো।”
-“তো চলো!এমনিতেই আজকের দিন গেলে একদিন চলে যাবে। হাতে থাকবে ছয়দিন।”
-“আমি তো মানুষের বাসায় থাকতেই চাই না।”
রেগেমেগে বলেই নুশান প্রস্থান করলো।মিতালি বাঁকা হেসে বললো,
-“তুমি চাও আর না চাও শিশিরকে কখনোই আমি সুখে দেখতে পারব না। তার অবশ্য আরেকটা কারণও আছে। জানবে জানবে!ধীরে ধীরে সবই টের পাবে।”
বলেই সে আঁচল ঠিক করে খেতে চলে যায়।
____
সায়ানকে ঘুম পাড়িয়ে চৈতী বেগমের ফ্ল্যাটে খাবার নিতে এসেছে রাত।কারণ রান্না-বান্না তো উনিই করেন।শিশির অসুস্থ থাকায় চৈতী বেগমকে রাতদের ফ্ল্যাটে থাকতে হয়েছিল। এখন তো শিশির কিছুটা সুস্থ আর এই শয়তানগুলোও এখানে এসে জুটেছে তাই চৈতী বেগম নিজের ফ্ল্যাটে চলে এসেছেন।চৈতী বেগম যে ইচ্ছে করে মিতালিকে রেখেছেন এমনটা কিন্তু নয়। তিনি যথেষ্ট ঘৃণা করেন মিতালিকে।কিন্তু মিতালিকে তো বিশ্বাস নেই।কি থেকে কি ক্ষতি করক বসবে!তাই তিনি বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছেন।সাত দিনেরই তো ব্যাপার। কথাগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছিলেন চৈতী বেগম।রাত টেবিলে প্লেট রেখে ভাত বাড়ছে। তা দেখে মিতালি বলে উঠলো,
-“এখানে খাবে না?”
রাত শান্ত গলায় বললো,
-“রুমে গিয়ে খাবো।”
মিতাকি অসহায় হওয়ার ভান করে বললো,
-“আমাদের জন্য খাচ্ছো না তাই না?আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি রুমে।যদি তুমি বলো তো।”
রাত মুচকি হেসে বললো,
-“আসলে আমার হাসবেন্ড কে খাইয়ে দিতে হয় তো তাই আমরা রোজ একসাথেই খাই।”
মিতালির মুখটা চুপসে গেলো। রাত চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আন্টি তুমি খেয়ে নাও। আমি ওনাকে খাইয়ে আসি।”
বলেই রাত চলে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে আবারো মিতালি বলে উঠলো,
-“সায়ান মনে হয় ঘুমায়নি তাই না?আসলে ও তো আমায় ছাড়া ঘুমাতে পারে না।”
রাত পিছনে ফিরে বললো,
-“সায়ান রোজ রাত ১১ টায় ঘুমিয়ে যায়। দেড় মাস যাবত আছি তো!সব টাইমে টাইমেই হয়।”
-“ওহ ঘুমিয়ে গেছে?”
-“জ্বী।”
বলেই রাত আর একমুহূর্ত দেরী না করে নিজের রুমে চলে গেলো। শিশির লেপটপ নিয়ে বসে আছে। রাত গিয়ে লেপটপ টা সরিয়ে বললো,
-“নিন জনাব। খেয়ে নিন।”
শিশির হেসে বললো,
-“অসুস্থদের খাইয়ে দিতে হয়।”
রাত জানত শিশির এটাই বলবে। তাই নিজ হাতে শিশিরকে খাইয়ে দিতে লাগলো।শিশির খেতে খেতেই বললো,
-“তুমি খেয়েছো?”
-“খাবো নে।আগে আপনি।”
-“আমার থেকেই খাও।”
রাত শিশিরের জোরাজোরিতে এখান থেকেই খেয়ে নিলো।রাত খাবারটা শেষ করে হাত ধূয়ে প্লেটটা ছোট্ট টেবিলে রেখে বললো,
-“ঔষধ টাইম।”
শিশির সম্মতি দিলো। একটু পর বললো,
-“খাবার যে আনতে গেলে, শয়তানদের কি অবস্থা? ”
-“কোন শয়তান?”
-“মিতালি আর নুশান।”
-“ওহ।মিতালি সায়ানকে চাচ্ছিলো।”
-“মানেহ।”(ভ্রু কুঁচকে)
-“হ্যা। সে বললো তার কাছে নাকি ঘুমাবে।”
-“পাগল নাকি!”
বলেই শিশির ঔষধ গুলো খেয়ে নিলো। তারপর জোরে শ্বাস ছেড়ে বললো,
-“আমার ছেলে তার মায়ের কাছেই বেশি কমফরটেবল।”
রাত হাসলো।শিশিরের দিকে হালকা ঝুঁকে বললো,
-“আর সায়ানের বাবা?”
শিশির নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। রাতও মিটিমিটি হাসছে।শিশির আচমকা রাতের কোমড়ে হাত রেখে বললো,
-“জানতে চাও?”
-” হু হু।”
শিশির রাতের কোমড় ধরে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।রাত অস্থির হয়ে বললো,
-“আরে আরে কি করছেনটা কি!ব্যাথা পাবেন তো।”
-“পাবোনা।”
রাত আর কিছু বললো না। শিশিরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। শিশির রাতের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে বললো,
-“সায়ানের বাবাও রাতের কাছেই বেশি কমফোর্টেবল।”
-“আচ্ছা তাই!”
-“জ্বী।”
রাত হেসে শিশিরের চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো।শিশির বলে উঠলো,
-“এলোমেলো করলে কেন? এখন কে আঁচড়ায় দিবে?”
-“এতটুকু চুল আবার আঁচড়ানো লাগে।”(মুখ ভেঙিয়ে)
-“লাগে লাগে। এখন তুমিই আচঁড়িয়ে দিবে। দাও।”
রাত মুখ ভেংচি কেটে উঠে পড়লো।ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি এনে শিশিরের চুলগুলো আঁচড়াতে লাগলো।শিশির হঠাৎ বলতে লাগলো,
-“রাত তুমি ইনভিটিশন পাইছো?”
-“কিসের?”(চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে)
-“হাসিব স্যারের বিয়ে।”
-“ওহ আমাদের হাসিব স্যার?কলেজের?”
-“হ্যা। আমাকে আগেই জানালো।তোমাদের মেবি জানাননি।”
-“জানালেও কি!এত স্টুডেন্ট কে কি দাওয়াত করা যায়?”
-“আমার সাথে যাবে।”
-“আপনি যাবেন?”(অবাক হয়ে)
-“হ্যা।”
-“একদম না। পায়ে না ব্যাথা?”
-“কমে গেছে তো রাত। এখন খুঁড়াইও কম।”
-“কবে বিয়ে?”
-“এইত ৩ দিন পর।”
-“আচ্ছা।”
বলেই রাত চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিলো। শিশির পিছন থেকে বলে উঠলো,
-“রাত একটা কথা বলি?”
রাত ড্রেসিং টেবিল গুছাতে গুছাতে বললো,
-” কি বলবেন? এই মাঝরাতে আপনার এত পকপক।”
-“আরে শুনোই না।!”
-“কি?”
-“তুমি হাটার সময় না,তেমার কোমড়টাও নড়ে।”
রাতের চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকায় শিশিরের দিকে।শিশির চোখ টিপলো। রাতের বিষম উঠে গেলো। শিশির যে কোনোদিন একথা বলবে এটা রাতের ধারণার বাহিরে একদম।রাত কিছু বলবে তার আগেই মিতালি হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়লো।
চলবে….
(