#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৬
রিসাব এখনো রাতের মুখপানে তাকিয়ে আছে জবাবের আশায়। রাত রিসাব কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগে,
-“আমি তোকে ভালোবাসি না।”
চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। গান বাজনা সব অফ। রাত আবারো বলতে লাগে,
-“আমি বিবাহিত।আমার একটা বেবি আছে।”
রিসাব এবার অবাকের শীর্ষে। সে উঠে দাঁড়ালো। অবাক হয়ে বলতে লাগলো,
-“কিহ!কবে?”
রাত মুচকি হেসে বললো,
-“বলতে চেয়েছিলাম অনেকবার। শুনিসনি। শুনলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না!আমি শিশির চৌধুরীর বউ আর সায়ান চৌধুরীর আম্মু।”
-“আমাদের কলেজের শিশির চৌধুরী?”
-“হ্যা।”
-“কিন্তু ওনার তো বউ আছে।”
-“এটা আমাদের পারসোনাল বিষয় রিসাব।তোকে জবাব দিতে বাধ্য নই।”
রিসাবের পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। আস্তে আস্তে পিছাতে পিছাতে বললো,
-“সরি রাত। আমার ভুল হয়ে গেছে। মস্ত বড় ভুল। ইউ ক্যান গো রাত।”
-“ধন্যবাদ।”
বলেই রাত শাড়ির কুঁচি ধরে দৌড় লাগালো।সবাই সাইড হয়ে গেলো।রিসাব রাতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে৷ আর ভাবছে,
-“আমার ভালোবাসাটা এক তরফা। রাত শিশিরের সাথেই ভালো থাকবে।”
ভেবেই সে চোখের কোণে থাকা পানিটা মুছে নিলো।তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“লেটস এনজয় দা পার্টি।”
এদিকে রাত বাহিরে এসে দেখলো গাড়ি ঠিকই পার্ক করা বাট শিশির নেই। রাত হন্তদন্ত হয়ে শিশিরকে খুঁজতে লাগলো।কোথাও না পেয়ে নিজের গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে লাগলো।
বাসায় আসতেই দেখতে পেলো শিশিরের জুতো দরজার বাহিরে। রাতের মুখে হালকা হাসি ফুটলো। কারণ শিশির বাসায়!রাত তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেলো।রুমে পা রাখতেই দোখতে পেলো সবকিছু অন্ধকার। কেউ নেই এখানে। রাত তবুও বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে দেখতে পেলো শিশির সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।মুখটা আকাশের দিকে।রাত শিশিরের কাঁধে হাত রাখলো।শিশির চোখের পানিটা মুছে রাতের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললো,
-” চলে এলে যে!”
-“আপনি চলে এলেন তাই।”
-“আমাকে দিয়ে কি যায়-আসে রাত। তুমি এনজয় করতে পারতে।”
-“যায়-আসে।আপনি আমার স্বামী স্যার। আমাদের বিয়ে হয়েছে, পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আমরা। আপনি আমাকে যা বলবেন তাই করতে বাধ্য আমি।আপনার পছন্দ মত চলতে বাধ্য আমি।আর আপনি কিনা আমাকে রেখেই চলে এলেন।”
শিশির রাতের দিকে তাকালো।শিশিরের লাল চোখজোড়া দেখে আঁতকে উঠলো রাত।তারপর বলতে লাগলো,
-“হেঁটে এসেছেন?”
-“রিকশা দিয়ে।”
-“চলুন ঘরে। এখানে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছেন কেন।”
বলেই রাত শিশিরের হাত ধরে টানতে লাগলো রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু শিশির সেখানেই দাঁড়িয়ে। রাত বুঝলো,শিশিরের মন খারাপ। তাই সেও দাঁড়িয়ে থেকে বললো,
-“কি দেখেন আকাশে।”
-“চাঁদ! ও নিজেও আমার মত একা।”
-“আপনি কই একা?আমি আছি না?”
-“আমার সাথে কেউ থাকে না রাত। সবাই ছাড়তেই ভালোবাসে।”
-“কে বললো থাকে না?আমি আছি না?”
-“রিসাবের প্রপোজাল একসেপ্ট করোনি কেন?”
-“আপনি কি করে জানলেন?”(অবাক হয়ে)
-“আমি জানি যে রাত কখনোই একসেপ্ট করবে না। এটা রাত!মিতালি না।”
-“হ্যা এটা ঠিক। কিন্তু এমন ভাবে বলছেন যেন একসেপ্ট করার খুব প্রয়োজন ছিল!”
শিশির রাতের দিকে ফিরলো। রাতের হাত ধরে বলতে লাগলো,
-“আমার সাথে থাকলে হয়তো তোমার লাইফটা নষ্ট হবে রাত।নিজের লাইফটা এভাবে নষ্ট করো না। তুমি বরং..তুমি বরং ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে নাও।”
বলেই শিশির পিছনে ঘুরে গেলো কান্না লুকাতে। রাত শিশিরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
-“তারমানে এগুলো ভেবেই উনি পার্টিতে কিছু বলেননি।”
রাত শিশিরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,
-“এতদিনে আমাকে এই চিনলেন? আমি সায়ানকে নিজের ছেলে মানি আর আপনাকে নিজের স্বামী। আমি কখনোই আপনাদেরকে ছেড়ে যেতে পারবো না স্যার।আপনি..”
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই শিশির রাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাত অনুভব করছে,শিশিরের হার্টবিট কত জোরে হচ্ছে! রাতও শিশিরের পিঠে হাত রাখলো।শিশির অসহায় গলায় বললো,
-“রাত প্লিজ আমায় ছেড়ে কখনো যেয়ো না রাত। প্লিজ।আমার পরিবারটাকে তুমিই পারবে আগলে রাখতে রাত। আমার একমাত্র বউ তুমি। তোমাকে আমি পুরোপুরি সেই অধিকার দিয়েছি। আমাকে ছেড়ে যেয়ো না রাত। থেকে যাও আজীবন।”
রাত মুচকি হেসে বললো,
-“এতক্ষণে মনের কথাটা বের হলো।ওগুলো মুখের কথা ছিল।”
-“হু!”
-“আমি আপনাদের ছাড়া থাকতে পারব না শিশির।মরেই যাব। সায়ান তো আমার প্রাণ।ওকে ছাড়া কেমন ছটফট করি দেখেনই তো।আর পুরো পরিবারটা আমার ভালোবাসা। ”
শিশির রাতকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। রাত কান্না থামাচ্ছে না।সে চায় যেন শিশির হালকা হয়। একটু কাঁদে।তাহলেই তো তার মনটা হালকা লাগবে।
বেশকিছুক্ষন পর রাত শিশিরের হাত ধরে বলল,
-“চলুন!”
-“কোথায়?”
রাত কিছু না বলে শিশিরের হাত ধরে ছাদের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
ছাঁদে এসে শিশিরের হাত ধরে পাতা মাদুরে বসলো রাত।শিশির অবাক হয়ে বললো,
-“ছাদে আনলে যে?”
-“ভূতে ধরাবো তাই।”
বলেই রাত ফিক করে হেসে দিলো। শিশির রাতের গাল টেনে বললো,
-“আমার সাথে মজা?”
-“তো কার সাথে করব?”
শিশির আচমকা রাতকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমার সাথেই!”
রাত হাসলো। শিশিরের চোখের পানিটা শুকিয়ে গেছে। চোখগুলো একটু লাল হয়ে আছে আর খানিকটা ফুলেও গেছে। সাদা শরীরের খাড়া নাকটার আগায় লাল হয়ে আছে। রাত সেটায় স্পর্শ করে বললো,
-“আপনি কাঁদতেও জানেন?”
শিশির রাতের কাধে মাথা রাখে। রাতের অন্যরকম ফিলিং হচ্ছে! শিশিরের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত তার কাছে স্পেশাল!আর শিশির এখনো তার কাঁধে মাথা রেখে আছে। এ-র চেয়ে সুখের আর কি?শিশির আলতো করে রাতের কোমড় জড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে বললো,
-“মিতালি যাওয়ার পর আমার প্রতিটা রাত কেঁদেই কেটেছে।”
রাতের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। শিশির অসহায় গলায় বলল,
-“যাওয়ার পর বলছি কেন?সায়ান পেটে আসার কয়েকমাস পর থেকেই ও আমায় অবহেলা শুরু করে!”
-“আপনার খুব কষ্ট হতো তাই না?”
-“হুম হতো!প্রিয় মানুষ অবহোলা করলে যে ঠিক কতটা কষ্ট লাগে সেটা আমি তখন বুঝেছিলাম। সারাটাদিন কাজ করে যখন বাসায় ফিরে ওকে খুঁজতাম, ও আমায় পাত্তাই দিতো না।কিন্তু তোমার বেলায় সবটা উল্টো রাত। তুমি সবসময় আমার সব কাজে সাহায্য করো!ভুল ধরিয়ে দাও। আমার খেয়াল রাখো,আমার পরিবারের খেয়াল রাখো। এত ভালো কেন তুমি রাত?”
রাত নিঃশব্দে হাসলো। চোখের কোণে জমে থাকা
পানিটা মুছে বললো,
-“আপনার বউ যে তাই।”
-“না রাত!আমি তো ওতো ভালো নই। ভালো হলে কি মিতালিকে আনতাম?বিয়ের পর পর তোমার সাথে বাজে বিহেভিয়ার করতাম?তুমি সবচেয়ে স্পেশাল রাত!তুমি আমার জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছো। ইউ আর গ্রেট।”
-“হু হু থাংকু।কিন্তু আমার এসবের পিছনে একটা কারণও আছে।”
-“কি কারণ?”
-“সায়ান।আমার ছেলে। ওকে আমি নিজের ছেলে বানিয়েছি। ওকে ছেড়ে কিভাবে যেতাম বলতে পারেন?আপনি তো জানেন যে আমি কখনো মা হতে পারব না।”
বলতে বলতে রাতের চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। শিশির সেটা মুছে বললো,
-“ডাক্তার দেখিয়েছিলে?”
-“হুম।”(মাথা নিচু করে)
-“জিজ্ঞেস করা উচিত না কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করবো,ডাক্তার কি বলেছে যে একদমই মা হওয়ার আশংকা নেই?”
-“আমি তো জানি না। আমাকে মা বলেছিল রিপোর্ট দেখার পর। কারণ আমার অস্বাভাবিক পেট ব্যাথা হত। যার কারণে ডাক্তার দেখাতে যাই।কিন্তু রিপোর্ট টা আমি চেক করিনি,চেক করার মত শক্তি ছিল না। মা যা বলেছিল সেটাই মনে আছে।”
-“কি বলেছিল?”
-“বলেছিল..বলেছিল যে..রাত তুই কখনো মা হতে পারবি না।”
বলেই রাত শিশিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।কাঁদতে আরম্ভ করলো। শিশির রাতের চুলে হাত দিয়ে বললো,
-“কেঁদো না রাত!আমরা ডাক্তাদের কাছে যাব।যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে এর সমাধানও নিশ্চয়ই রয়েছে!”
রাত কিছু বলছে না। এতদিন পর কাঁদার জন্যে একটা বুক পেয়েছে সে। আজ কাঁদবে সে। মন ভরে কাদবে।এমন কাঁদার জন্যে বুক কয়জনই বা পায়?অবহেলায় হারিয়েও যায়।কিন্তু রাত তো হারাতে চায় না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখতে চায় শিশিরকে তার সাথে। রাত শিশিরের শার্ট খামচে ধরলো।কিছুক্ষণ পর তার কান্না থামলো। শিশির রাতের চোখ মুছে বললো,
-“আর কখনো কাঁদবা না!”
-“হু!”(নাক টেনে)
-“গুড গার্ল।”(মুচকি হেসে)
-“স্যার একটা কথা বলি?”
-“কি?”
-“আমি কিন্তু দ্বিতীয় শর্তটাও জিতে গেলাম।”(বাঁকা হেসে)
শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাতের মুখপানে। আসলেই তো তাই।রাত তো জিতে গেছে। হ্যা!আর রাতের এই দ্বিতীয় #শর্ত জেতার মধ্য দিয়েই আজকের পর্ব এখানেই…
চলবে…#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৭
ভোর হচ্ছে! চারিদিক থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে।ভোরের আলো ফুটছে। রাত আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে শিশিরের বুকে আবিষ্কার করলো!হাই তুলতে তুলতে চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যে গতকাল রাতে তারা এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।রাত শিশিরকে ডাকতে আরম্ভ করলো,
-“স্যার?শিশির স্যার?উঠুন!”
-“রাত ঘুমাতে দেও তো।”
বলেই শিশির আবার ওপাশে ফিরলো। কিন্তু নিচে বালিশ না থাকায় মৃদু গলায় বললো,
-“আউ”
-“ও স্যার!উঠুনননন।”
-“রাত চেঁচিয়ো না তো। এমনিই সারারাত ঘুমাতে পারি নি।”
বলেই শিশির রাতের হাতটা টেনে নিজের মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে পড়লো। রাত দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“শিশির চৌধুরী!এটা আপনার বিছানা না। এটা বাড়ির ছাদ!”
শিশির এবার পিটপিট করে চোখ খুললো।আঁড় মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। রাত দাঁড়িয়ে বললো,
-“আপনি আসতে থাকুন,আমি গিয়ে নামাজ পড়ি।”
শিশির হাই তুলতে তুলতে বললো,
-“আসছি।”
-“না আসলেও সমস্যা নাই। এখানেই ঘুমিয়ে যান, ভূতে এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিক।”
-“সারারাত চলে গেলো কোনো ভূত এলো না আর তুমি আসছো এখন ভূত দেখাতে!”(হেসে)
রাত আর কিছু না বলে মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।শিশিরও কিছুক্ষণ ছাদে হেঁটে নিচে নেমে এলো। ফ্ল্যাটে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।তারও আল্লাহ তায়ালাকে শুকরিয়া জানাতে হবে কারণ তিনিই তো রাতকে শিশিরের কাছে এনে দিলেন।মিতালির মত এত বড় ঝামেলাটাকে সরিয়ে দিলেন।
নামাজ শেষ করে রাত বারান্দার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে,
-“আচ্ছা,মিতালি তো চলে গেছিলো। তার আবার ফেরার প্রয়োজন হলো কেন?এর কি কোনো কারণ হতে পারে?মিতালিকে ছেড়ে দিয়ে ভুল করলাম না তো?”
রাত ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফুলের টবগুলোতে পানি দিতে দিতে আবারো ভাবলো,
-“মিতালির ফিরে আসার নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। নয়ত এমন পাগলামি সে কেন করবে?সাতদিনে কি করতে চাইছিল?আন্টি কি কিছু বলতে পারেন?”
ভাবতে ভাবতে রাত অনুভব করলো তার কাঁধে কারোর গরম নিঃশ্বাস। রাত চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে বললো,
-“স্যার!”
-“কিভাবে বুঝলে?”
বলেই শিশির রাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। রাত গাছে পানি দিতে দিতে বলে,
-“বাহ রে! আপনার নিঃশ্বাস পড়ছিলো!”
-“কিন্তু এটা তো মা ও হতে পারত!”
-“হতে পারত কিন্তু মা সায়ানকে রেখে কখনোই আসবেন না। আর আসলেও তো সায়ানের মুখের ইংলিশ শব্দেও বুঝে যেতাম।”
বলেই রাত হো হো করে হাসতে লাগলো।শিশিরও হাসতে হাসতে বললো,
-“আসলেই। বাচ্চারা এভাবেই কথা বলে।”
রাত কিছু বলতে যাবে এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ হলো। রাত মুচকি হেসে বললো,
-“আমি দেখছি..”
শিশির সায় দিলো। রাত দরজা খুলতেই সায়ানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চৈতী বেগমকে দেখতে পেলো।সায়ানকে কাঁদতে দেখে রাত কোলে নিতে নিতে বললো,
-“কাঁদছিল?”
-“আর বলিস না,সারারাত ঘুমিয়েছে কোনো বিরক্ত করেনি। সকালে উঠতেই কান্না আরম্ভ। হয়ত খিদে পেয়েছে।”
-“হ্যা। আমি ফিডার বানিয়ে দিচ্ছি।তুমি ভিতরে আসো।”
বলেই রাত সায়ানকে শুইয়ে দিলো।চৈতী বেগম সায়ানের পাশে বসে বললো,
-“আর কত কাঁদবি? তুই একটা ছিঁচকাদুনে হবি।”
শিশির বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-“একদম ঠিক বলেছো মা। রাতের মত ছিঁচকাদুনে হবে।”
রাত ফিডারটা সায়ানের মুখে দিয়ে বললো,
-” একদম না!আর আমি ছিঁচকাদুনে না।”
শিশির হেসে উঠলো। চৈতী বেগম বললেন,
-“আচ্ছা আমি তোদের জন্যে নাস্তা রেডি করি। আজকে আবার কেয়া আসবে।”
রাত হেসে সায় জানায়।সায়ানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।এদিকে শিশির লেপটপ নিয়ে বসে পড়লো।
____
কলেজে পা রাখতেই রিসাব দৌড়ে এলো রাতের কাছে।যেন সে গেটের কাছে রাতের জন্যেই অপেক্ষা করছিলো। রাত রিসাব কে দেখে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে আনার এগুতে যাবে এমন সময় রিসাব পিছন থেকে বলে উঠলো,
-“রাত শোন!”
রাত পিছনে ফিরে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
-“জ্বী!”
-“রাত আ’ম রিয়ালি সরি।”
রাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।রিসাব মাথা নিচু করে বলতে লাগে,
-“আমি আসলে জানতাম না যে তুই বিবাহিত। হ্যা তুই অনেকবার বলতে গেছিস কিন্তু আমিই শুনিনি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। কি বলবো তোকে এখনোও বুঝতে পারছি না। কিভাবে যে মাফ চাইবো..নির্লজ্জের মত কি করলাম গতকাল!”
-“সত্যি বলতে গতকাল নিজের রাগটা কন্ট্রোল না করলে তুই চড় খেতি।”(মুচকি হেসে)
রিসাব মুখ তুলে রাতের দিকে তাকায়। রাত হালকা হেসে বললো,
-“একজনের প্রতি আরেকজনের অনুভূতি আসতে পারে,এটা স্বাভাবিক।একজনকে তোর ভালো লাগতেই পারে।কিন্তু আমি শিশির স্যারকেই ভালোবাসি।”
বলেই থামলো রাত। কত সহজে বলে দিলো। সে আসলেই ভালোবাসে শিশিরকে?রাতের বুকটা কাঁপছে।রিসাব বলতে লাগে,
-“আর শিশির স্যার?”
-“আমি এটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না।”
বলেই রাত ক্লাসরুমের দিকে পা বাড়ায়। রিসাবও রাতের পিছনে পিছনে পা বাড়ায়। কারণ সে রাতের বন্ধু হয়ে থাকতে চায়। সে এই বন্ধুত্বটাকে অন্তত নষ্ট হতে দিতে চায় না। তাই রাতের কাছ থেকে তাকে মাফ চাইতেই হবে। যে করেই হোক।
কলেজ শেষ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসায় ফেরে রাত। পাশে কেয়া।কেয়া রাতকে আনতে গেছিলো। এটার প্রয়োজন না হলেও সে চেয়েছিল রাতকে একটু সারপ্রাইজ করতে। রাত ধপ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কেয়া বলতে লাগে,
-“ভাবী?”
-“কি!”
-“ও ভাবী!”
বলেই কেয়া মিটমিট করে হাসতে লাগে। রাত একটা ভ্রু উঁচু করে বললো,
-“কি? ”
-“তোমার পাশের ওই ছেলেটা কে ছিল গো?”
রাত এতক্ষণে ঘাড়টা একটু উঁচু করেছিল। সেটা আবারো এলিয়ে দিয়ে বললো,
-“ওর নাম শিহাব। পাশের যে মেয়েটা?ওটা নিপা, ওরা দুজন কাজিন।”
-“ওহ আচ্ছা।”
কেয়ার মুখের কোনো সেড এক্সপ্রেশন না দেখে রাত অবাক হয়ে বললো,
-“কি ব্যাপার?তোমার মন খারাপ হলো না?”
-“মন খারাপ কেন হবে ভাবী?”
-“আমি তো ভাবলাম তুমি শিহাবের উপর ক্রাশ।”(আড়চোখে তাকিয়ে)
-“ওটা না। আরেকটা যে ছিল আরেক পাশে। শিহাবকে তো চিনছিই। নিপার পাশে যেটা ছিল।ওটা না?”
-“হ্যা।আরেক পাশে যেটা ছিলো ওটা রিসাব।”
-“হ্যা হ্যা ওটাই।”
বলেই কেয়া লাজুক লাজিক হাসতে লাগলো। রাত মুখ টিপে হেসে বললো,
-“পছন্দ হয়েছে নাকি?”
কেয়া বারকয়েক মাথা নাড়ায়।কিন্তু মুখ খুলে না। নিচের দিকে তাকিয়ে রয়। রাত দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“নাম্বার আছে আমার কাছে।”
কেয়ার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।রাতের পাশে বসে হাত নিয়ে বললো,
-” ভাবী গো ভাবী,ও আমার ভাবী!”
-“বলো গো ননদিনী!”
বলেই রাত হো হো করে হাসতে লাগে। কেয়া রাতের হাত দেখতে দেখতে বললো,
-“নাম্বারটা দাও না গো!এই প্রথম একজনরে দেখে ক্রাশ খাইছি।”
-“দিতে পারি। বাট এক শর্তে।”
-“কি শর্ত। তোমার কাছ থেকে নাম্বার নিতেও শর্ত?”
-“ইয়াহ কেয়া বেবি। লাগলে বলো নয়ত ফুটো।”
-” না না রাজি আমি।”
-” শিশির স্যার ভয় পান এমন একটা জিনিসের নাম বলতে হবে।”
-“ওরে বাপরে।”
বলেই কেয়া লাফিয়ে উঠে যেতে লাগলো।রাত পিছন থেকে বললো,
-“কি হলো? বলবে না?”
-” না বাবা। ভাইয়া জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে।”
রাত নিজের ফোনটা উঁচু করে বললো,
-“নাম্বার?”
কেয়ার চেহারাটা দেখার মত হয়েছে। শেষমেষ সে কাঁদো কাঁদো গলায় আঙুল উঁচিয়ে বললো,
-“তাহলে ভাইয়াকে কিন্তু বলবা না যে আমি বলে দিছি।”
-“সেটা পরেরটা পরে বুঝা যাবে!”
-“না না না।তাহলে বলব না।”
বলেই কেয়া যেতে লাগলো।রাত হেসে বললো,
-“আচ্ছা যাও বলব না৷ এবার তো বলো।”
-“ভাইয়া আড়শোলা ভীষণ ভয় পায়।”
এটা শুনেই রাতের হাসি আর দেখে কে!রাত হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাওয়ার মত অবস্থা। কেয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-“এভাবে হেসো না।এর কারণও আছে।”
-“হোহহ!কি কারণ?”(হাঁপাতে হাঁপাতে)
-” এক জাতীয় আড়শোলা আছে না যেগুলো চুল খেয়ে ফেলে?তো ওমন একটা আড়শোলা ভাইয়ার অর্ধেক চুল খেয়ে ফেলেছিল রাতে ঘুমানোর পর। তারপর থেকে ভয় পায়।এটা তো ছোটবেলার কাহিনী। মানে ছোটবেলায় ভয় পেত।বাট এখনো ভয়টা আছে কিনা জানি না। এখন নিজেই যে রাগী। অবশ্য হঠাৎ সামনে পড়লে যেকোনো নির্ভীকও ভয় পাবে।”
রাত শয়তানী হাসলো। তারপর দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“দেখাচ্ছি মজা!প্রেমে নাকি পড়তি না?”
চলবে…
(