অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ১৩
মৌমিতা_শবনাম
বৃষ্টি হাসপাতালে ভর্তি জ্ঞান ফিরেছে তার। তবে হেটে যাওয়ার মতো সুস্থ ও নয়। বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে তার। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে তখন সেখানে তন্নি আর রাদ আসে। হাজার রাগ থাকলেও বৃষ্টির এমন একটা খারাপ খবর শুনে বসে থাকতে পারেনি তন্নি তাই ছুটে চলে এসেছে।
তন্নিকে দেখে বৃষ্টি হাসে। তন্নি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে মেয়েটা শুকিয়ে গেছে। সন্তান হারানো স্বামী হারানোর থেকে কষ্টের বলে মনে করে তন্নি। স্বামী হারালে সন্তানের মুখ দেখে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু সন্তান হারালে কি করবে?
তন্নি বৃষ্টির পাশে বসতেই বৃষ্টি হালকা হেসে বলে, –” দেখ তন্নি তোর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি দিয়েছে আমাকে। আমি আরো শাস্তি পাওয়ার যোগ্য দেখ না যাকে ভালোবেসে তোর সাথে বেইমান করলাম সে ও তার মা আমাকে হাসপাতালের বেডে রেখে চলে গেছে। ”
তন্নির খারাপ লাগছে বৃষ্টির জন্য। মেয়েটার তার কর্মফল পেয়েছে এর থেকে বড় শাস্তি আর কিছু হতে পারে না। তন্নি বৃষ্টির হাত ধরে বলে, –” আমার তোর উপর কোনো রাগ নেই।”
বৃষ্টি বলল, — ” জানিস তন্নি আমি নাহ চেষ্টা করেছি সংসারটা বাঁচাতে কিন্তু অন্যের সংসার ভেঙ্গে সংসার করলে যা হয় আর কি।”
তন্নি বলল,–” তুই তো এমন ছিলি নাহ তোকে তো কেউ কিছু বলতে গেলে তাকে নাকানিচুবানি খাওয়াতি।”
বৃষ্টি হাসলো হালকা। হাসিটায় ছিল একরাশ চাপা কষ্ট। তন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,–” জানিস যখন জেনেছি আমি মা হতে যাচ্ছি অনুভূতিটা অন্যরকম ছিল তোকে বোঝাতে পারবো না। তখন ভাবলাম সব বাদ দিবো ভালো মেয়ের মতো সংসার করবো। যখন আমি সংসারে মন দিলাম তখন আমার স্বামী সরি নিরব তখন মনে করলো তোকে ছাড়া সে অসম্পূর্ণ। তোকে পেতে সে এখন উঠে পড়ে লেগেছে মনিকে এনেছে কে সে জানি নাহ। ”
তন্নি রাদের দিকে তাকায়। রাদ তন্নির দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে। তন্নিও মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
————-
মনি আজ রাদের বাসায় যাবে। প্রিপারেশন নিচ্ছে যেন সেখানে কোনো ভুল না হয়। নওরব তার পাশে বসে মনিকে দেখছে আর বলছে কিভাবে সে তন্নির সামনে অভিনয় করবে। মনি বারকয়েক অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে– ” অভিনয় পারফেক্ট হচ্ছে তো?”
নিরব বলে,–” একদম পারফেক্ট হচ্ছে এভাবে অভিনয় করলে তন্নি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে। ”
মনি হাসে। নিরব হঠাৎ মনে পড়ে বৃষ্টির কথা সে জলদি তার মাকে কল দেয় এই মেয়ে যদি পুলিশ কমপ্লেইন করে তাহলে মা ছেলে দুজনকেই জেলে যেতে হবে। মনির পাশ থেকে উঠে নিরব বারান্দায় চলো যায় ফোন নিয়ে। রুনা ফোন ধরতেই নিরব বলে ওঠে, –” বৃষ্টি কোথায়? ”
রুনা চমকে বলেন,–” হাসপাতালে কেন?”
নিরব বলল,–” তুমি কোথায়? ”
রুনা বলল,–” হাসপাতালে যাচ্ছি রাস্তায়। ”
নিরব বিরক্তিতে কপাল কুচকে ফেলল। দাঁতে দাঁত চিপে বলল– ” মা তুমি এমন বোকামি কি করে করতে পারো ও যদি এখন পুলিশ স্টেশনে চলে যায়। ”
রুনা বললেন,–” কি বলিস আমি বুঝতে পারিনি রে।”
নিরব কিছু বলল না। রুনা বুঝতে পারলেন তার করা ভুলের জন্য ছেলের রাগ হয়েছে। রুনা বললেন, –” চিন্তা করিস নাহ আমি হাসপাতালে গিয়ে ফোন দিচ্ছি। ”
নিরব ছোট করে উত্তর দিল, –” হুম। ”
তারপর নিরব কল কেটে এসে আবার মনিকে বলল রেডি হয়ে নিতে। মনিও চলে যায় রেডি হতে তাদের আবার ছবি আনতে যেতে হবে
————-
রুনা হাসপাতালে এসে দেখে বৃষ্টি কোথাও নেই। রুনা সারা হাসপাতাল খোঁজে ফেলেছে কিন্তু সে কোথাও বৃষ্টিকে দেখতে পায় না। রুনা ভয় পেয়ে যান। সে জলদি নিরবকে কল দেয়। নিরব সাথে সাথে কল রিসিভও করে। নিরব বলে,–” হ্যা মা বলো।”
রুনা একটা ঢুক গিলে ভয়ে ভয়ে বললেন, –” বাবা আমি বৃষ্টিকে পাচ্ছি নাহ।”
নিরব চিৎকার দিয়ে বলে, –” হোয়াট!”
রুনা আবারও বললেন, –” হাসপাতাল পুরোটা খোজেছি কোথাও নেই সে।”
নিরব চিন্তায় পড়ে গেল কোথায় গেল মেয়েটা। পুলিশ স্টেশন যায় নি তো। এদিকে রুনাও চিন্তায় আছেন বৃষ্টি পুলিশ স্টেশন চলে যায় নি তে। তাহলে তো উনাকে আর নিরবকে জেলে যেতে হবে ভয়ে শুকনো ঢুক গিলল। ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নিল।
————–
নিরব এবং রুনার ধারণা একদম ঠিক বৃষ্টি পুলিশ স্টেশনে গেছে। বর্তমানে সে পুলিশ অফিসার রওনক এর সামনে দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টি তাকে সব বলল। সব শুনে রওনক বললেন,–” আপনার বিয়ে হয়েছে কতদিন? ”
বয়সে বাবার সমান লোকের কাছ থেকে আপনি সম্বোধন পেয়ে কিছুটা আনইজি ফিল করে। পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে, –” জ্বি তিন মাস হবে প্রায়।”
রওনক বুঝলেন। বৃষ্টি ওর কাছে কিছু ই লুকাইনি বরং তার অন্যায় গুলো সহ তুলে ধরেছে। রওনক আবার জিজ্ঞেস করলেন, –” এখন আপনার স্বামী অর্থাৎ নিরব কোথায় আছে? ”
বৃষ্টি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,–” সে কোথায় আছে জানি নাহ কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি কোথায় আছে আমি জানি।”
রওনক বললেন, –” ওকে চলুন। ”
রওনক আর বৃষ্টি বেরিয়ে পড়ল হাসপাতালের দিকে। বৃষ্টির মাথায় এখন একটাই চিন্তা যে পাপ সে করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত সে করবে নিরবের থেকে দূরে চলে যাবে। নিরব যেই পাপ করেছে তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
————-
মনিকে নিরব রাদের বাসার সামনে নামিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। মনি সকল প্রমাণ নিয়ে রাদের বাসায় ঢুকে। আজ অফিস ছুটি থাকায় রাদ বাসাতেই আছে। তন্নি দুপুরের খাবার রান্না করে আর রিধি তাকে হেল্প করছে যদিও তন্নি নাহ করেছে অনেকবার যে তার হেল্প লাগবে নাহ।
নিরব ল্যাপটপে বসে কাজ করছিল রাইদা তার পাশে বসে তার ফোনে কার্টুন দেখছিল। তখন হঠাৎ সেখানে মনি ঢুকে বলে,–” রাদ।”
আচমকা নিজের নাম শুনে সামনে তাকিয়ে চমকে যায় রাদ। মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় মনি নামটি। তন্নি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে সে। মনি দৌড়ে এসে রাদকে জড়িয়ে ধরে রাদ বিরক্ত হয়ে মনিকে ছাড়িয়ে বলে,–” তুমি এখানে কেন এসেছো?”
মনি আবারও রাদের কাছে ঘেঁষে বলে,–” ওমা আমি আমার স্বামীর কাছে আসবো না এছাড়া এখানে আমার সন্তান আছে। ”
তন্নি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে সোফায় এসে বসে মনিকে জিজ্ঞেস করে, –” সন্তান মানে? ”
মনি চোখে পানি নিয়ে রাইদার দিকে তাকায়। রাইদা পিটপিট করে দেখে যাচ্ছে সবাইকে সে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে। মনি গিয়ে রাইদাকে কোলে তুলে বলে, –” এই যে এই হলো আমার আর রাদের মেয়ে রাইদা।”
রাইদা অপরিচিত কারো কোলে উঠে সে কি কান্না। মনিকে চিমটি দিতে থাকে যেন তাকে নামিয়ে দেয়। অবশেষে বাদ্য হয়ে মনি তাকে নামিয়ে দেয়
রিধি দাড়িয়ে দেখছে এই মেয়েকে বিরক্ত লাগছে তবে ভাই না করাই সে কিছু বলছে না নয়তো সেও নাকানি চুবানি খাইয়ে ছাড়তো এই মেয়েকে।
তন্নির কোলে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে রাইদা। তন্নি রাইদাকে নিজের কোলে নিয়ে মনিকে জিজ্ঞেস করে, –” আপনি যে উনার ওয়াইফ তার কি প্রমাণ? ”
মনি যেন এতক্ষণ এই প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছিল। ব্যাগ থেকে সেই বানানো ছবি গুলো বের করে তন্নিকে দিলো। তন্নি ছবি গুলো দেখে রাদের দিকে তাকিয়ে বলে– ” আপনি আমার সাথে চিট করলেন। ”
তন্নির এই কথায় মনি সবার আড়ালে হাসে। রাদ চমকে উঠে তন্নি তাকে ভুল বোঝবে নাতো। রাদ তাড়াহুড়ো করে বলে,–” না না মিসেস তন্নি আমি চিট করে নি মনি আমার ওয়াইফ নয় আর রাইদা তো…..
রাদকে পুরোটা বলতে না দিয়ে মনি বলে উঠে, –” আমাদের সন্তান রাদ প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমি আর কখনো তোমায় ছেড়ে যাবো না কোথাও।”
তন্নি কান্না করে বলে,–” আই হেট ইউ রাদ।”
তন্নি কান্না করে উপরে চলে যায়। রাদও তার পিছন পিছম যায়। রিধি চোখ পাকিয়ে মনির দিকে তাকিয়ে বলে–” গেস্ট রুমে গিয়ে বসো।”
রিধি রাইদাকে নিয়ে চলে যায়। মনি মনে মনে খুশি হয় তার প্ল্যান সকসেস হচ্ছে। সে নিজের ব্যাগ নিয়ে গেস্ট রুমে চলে যায়। তন্নির জন্য তার বড্ড মায়া হচ্ছে আহারে মেয়েটা বার বার কষ্টই পাচ্ছে। অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ১৪ ( শেষপর্ব)
মৌমিতা_শবনাম
রাদ আর তন্নি বেলকনিতে বসে আছে। তন্নি রাগী ভাব নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আর রাদ তার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। তন্নি আর রাদ একে অপরের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে দেয়। রাদ হাসতে হাসতে বলল,–” যা অভিনয়টা করলে মিসেস তন্নি।”
তন্নি একটা ভাব নিয়ে বলে,–” সিনেমার নায়কারা হার মানবে তাই নাহ।”
রাদ হেসে বলে,–” ইয়াহ।”
তন্নি নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,–” ভাগ্যিস আপনি ঐদিন ক্যান্টিনে গিয়ে সব বলেছিলেন। ”
বিয়ের আগে যখন তন্নি গিয়ে রাদকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তখন রাদ ওকে কিছু কথা বলবে বলে তন্নিকে নিয়ে ক্যান্টিনে গিয়েছিল। সেখানে বসেই রাদ তন্নিকে তার জীবনের সব সত্যি বলে দিয়েছিল। রাইদা ওর সন্তান নয় বরং ওর বড় ভাইয়ের। মনির ব্যাপারেও বলেছিল সে। সব জানিয়ে সে তন্নিকে জিজ্ঞেস করে, –” মিস তন্নি আপনি কি আমার মিসেস তন্নি হবেন?
সেদিন তন্নি রাদের হাত ধরে হ্যা উত্তর দিয়েছিল। তন্নি হাসতে হাসতে বলে,–” আপনার এক্স মনি আস্ত একটা বলদ।”
রাদ হেসে দিয়ে বলল,–” হ্যা নয়তো বুঝে যাওয়ার কথা আমার রিয়েকশনে।”
তন্নি হালকা মায়া দেখিয়ে বলে,–” না থাক নাহ বেচারি এতো কষ্ট করে ঘটনা গুলো সাজিয়েছে কি করে আমি এগুলো ব্যস্তে দেই।”
রাদ কিছু বলতে নিবে তখনই কারো পায়ের শব্দ শুনতে পায়। রাদ তন্নির সাথে ঝগড়ার অভিনয় করতে থাকে। এমন যে তন্নি রাগ দেখাচ্ছে সে তার রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। ওদের সন্দেহ সত্যি ছিল মনি এসেছে। রাদ মনিকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,–” কি এখানে কি চায়? গেট লোস্ট।”
মনি ন্যাকা ন্যাকা ভাব নিয়ে কান্না করার মতো অবস্থা নিয়ে রাদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এবার তন্নির সহ্য হলো নাহ এই নিয়ে ৩ বার জড়িয়ে ধরেছে তার বরকে। মনিকে টেনে এক থাপ্পড় লাগায়। মনি গালে হাত দিয়ে চোখ পাকিয়ে তন্নির দিকে তাকায় তন্নি দাঁতে দাঁত চিপে বলে,–” তুই রাইদার মা তাই নাহ রাদের বউ। মানে তুই যা বলবি তা বিশ্বাস করে নিবো আর আমার বরকে ছেড়ে দিব ভাবলি কি করে?”
মনি অবাক হয়ে বলল,– মানে?”
যেই আকাশের কাছ থেকে ছবি গুলো বানিয়ে এনেছিস সে আমাকে বলেছে আর যেদিন তুই বাংলাদেশে এসেছিস সেদিনই তোর আসার খবর পেয়ে গেছি আর তোর আর রাইদার ব্যাপারে আমাকে আগেই বলে দিয়েছে রাদ। বিকেল অব্দি সময় দিলাম বেরিয়ে যা এই বাসা আর আমাদের জীবন থেকে। ”
মনি তন্নির কথাকে পাত্তা না দিয়ে রাদকে বলে,–” প্লিজ রাদ আমাকে গ্রহণ করে নাও আমি আর কখনো ছেড়ে যাবো না।”
রাদ নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে, –” মনি চলে যাও তোমার মতো মেয়ের মুখটাও দেখতে চাই নাহ আমি। যদি এরপরও জ্বালাতে আসো তাহলে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।”
মনি আর কিছু বলে না সে বুঝে যায় তার রাদকে পাওয়া হবে না। এখানে কারো দোষ নেই সে নিজের দোষে রাদকে হারিয়েছে। মনি গেস্টরুমে চলে যায় নিজের ব্যাগ গুছাতে থাকে। মনির পিছনে রাদ তন্নিও আসে। মনি ব্যাগ গুছিয়ে এসে রাদের সামনে দাড়িয়ে বলে, –“ক্ষমা করে দিও তোমার সাথে অন্যায় করার জন্য তোমাকে মিথ্যে অপবাদ দেওয়াই তুমি খুব লাকি রাদ তন্নির মতো মেয়ে পেয়েছো। আমি চাইলে ঝামেলা করতে পারতাম কিন্তু এতে না তোমরা সুখে থাকতে পারবে না আমি এর থেকে ভালো বরং নিজের জীবনটা আবার শুরু করে।”
তন্নি নিজেকে সামলে নিয়ে মনির কাছে গিয়ে বলে,–” সরি নিজের খেয়াল রেখো আর কখনো অন্যের ক্ষতি করতে যেও না।”
মনি রাদ আর তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে– ” ভালো থেকো আসি আমি।”
মনি চলে যায়। যাওয়ার আগে রাদকে আবার দেখে যায় পিছন ঘুরে তারপর আর পিছন ঘুরে না। মনি চলে যেতেই রিধি এসে নাচতে নাচতে বলে,—” ইয়াহু আপদ বিদায় হয়েছে। ”
পরক্ষণেই আবার মন খারাপ করে বলে,–” দূর ভাবছিলাম কয়েকদিন মনিকে নাকানিচুবানি খাওয়াবো এতো দেখি ৫ ঘন্টায় বিদায় নিল।”
তন্নি রিধির কথায় হালকা হাসলো। রিধির কাধে হাত দিয়ে বলে,–” ডিয়ার ননদিনী নিধি তো ইচ্ছে করে যায় নি বাধ্য হয়েছে। ফাঁদে পড়ে সে নিজের ভুলটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। ”
রিধি বুঝতে না পেরে বলল,–” কিভাবে? ”
তারপর তন্নি তাকে পুরোটা বলতে শুরু করলো।কিছুক্ষণ আগে মনি যখন গেস্টরুমে যায় তখন তন্নি ওর পিছনে পিছনে যায়। মনি রুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। তখন তন্নি জানালার সাইডে গিয়ে দাঁড়ায়। মনি ফোন বের করে নিরবকে ফোন দেয় কিন্তু নিরব ফোন ধরে না। মনি বিরক্ত হয়ে বলে, –“এই ছেলে কোথায় হারিয়ে গেছে উফ বিরক্তিকর। ”
তখন আবার ফোন দেয় মনি নিরবকে। এবার সাথে ফোন ধরে। আর অপর পাশের লোকটার কথায় জানতে পারে যে নিরবকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
—————-
বৃষ্টি এখনও হাসপাতালে বসে আছে। হাতে হাসপাতালের ছাড়পত্র। কিছুক্ষণ আগেই নিরব আর তার মাকে পুলিশ নিয়ে গেছে। বৃষ্টি এবার কি করবে ভাবছে মা বাবার কাছে সে কখনো যাবে না। কোন মুখেই বা যাবে সে। কতই মা বড় মুখ করে বলেছিল সে যে নিরব তাকে ভালোবাসে।
বৃষ্টি উঠে দাড়ায় এখানে বসে থাকলে কিছু হবে না। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যায়। কি করবে সে কোথায় কাজ খুজবে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সে তখন ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মিশমি কল দিয়েছে। বৃষ্টি ফোনটা রিসিভ করে বলে,–” আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”
মিশমি সালাম নিয়ে বললেন, –” কোথায় তুই তন্নি ফোন দিয়ে বলল তুই আসছিস তাই তো তোর প্রিয় খাবার বানিয়ে রাখলাম। ”
বৃষ্টি কিছু না বলে চুপ করে থাকে। মিশমি ধমকে বলেন,–” তোর আঙ্কেল না খেয়ে বসে আছে তুই আসলে তবে খাবে জলদি আয় বাসায়।”
বৃষ্টি বলল,–” আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যে তুমি আঙ্কেলকে খেতে দাও।”
মিশমি আর কিছু বলে না ফোন কেটে দেয়। বৃষ্টি অন্যায় করলেও তার শাস্তি সে পেয়েছে মেয়েটা এখন যে পরিস্থিতিতে আছে তার মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন। তাই তারা বৃষ্টিকে ক্ষমা করে দিয়েছে।
বৃষ্টি কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ফিরে। বৃষ্টিকে বাসায় ফিরতে দেখেই মিশমি উঠে রান্না ঘরে চলে যায় খাবার আনতে। তুষার সাহেব গিয়ে বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে– ” যাহ ফ্রেশ হয়ে আয়। “.
বৃষ্টি আর কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে চলে যায় তন্নির রুমে। তন্নির একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। বৃষ্টির মনে অপরাধ বোধ কাজ করছে। যাদের সাথে এতো অন্যায় করেছে তারাই তাকে আবার আপন করে নিয়েছে। আর তার মা বাবা তো এ কয়দিনে একটা বার ফোন ও দেয় নি। বৃষ্টি হাসে নিজের ওপর।
—–
খাবার খেতে বসেছে বৃষ্টি, মিশমি আর তুষার সাহেব। বৃষ্টির গলা দিয়ে খাবার নামছে না বিষয়টা তুষার সাহেব খেয়াল করে বলেন,–” কিরে মা খাচ্ছিস নাহ যে?”
বৃষ্টি কান্না করতে করতে বলে,–” প্লিজ আঙ্কেল আমাকে মা ডেকো না এই ডাকের যোগ্য নই।”
তুষার সাহেব বললেন, –” দুর পাগলি মেয়ে তুই তো তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস। তোর সব অন্যায় ক্ষমা করে দিয়েছি সেই কবে।”
মিশমি বললেন, –” মা বাবা কি সন্তানের প্রতি রাগ করে থাকতে পারে। ”
বৃষ্টির চোখে পানি চলে আসলো কাঁদতে কাঁদতে বলল,–” আমায় ক্ষমা করে দাও তোমরা।”
তুষার সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে– ” হয়েছে তো অনেক কেঁদেছিস এবার খেয়ে নে।”
বৃষ্টিকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয় তুষার সাহেব। যখন থেকে বৃষ্টিকে চিনে নিজের সন্তানের মতোই তো আগলে রেখেছে তাকে। তন্নিকে আর তাকে কখনো আলাদা মনে করে নি তারা।
——————-
রুমে তন্নি আর রাদ বসে আছে। রাইদা অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। তন্নি কিছু একটা বলতে চাইছে রাদকে কিন্তু বলতে পারছে নাহ
রাদ বুঝতে পেরে বলে,–” মিসেস তন্নি আমাকে কি কিছু বলবে তুমি?”
তন্নি হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বলে,–” ইয়ে মানে আসলে…”
রাদ হেসে বলল,–” তুমি এতো নার্ভাস হচ্ছো কেন?”
তন্নি অসহায় গলায় বলে, –” আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।”
রাদ বলে,–” বলো কি বলবে? ”
তন্নি পাশে থাকা গ্লাসের পানি পুরোটা এক ঢুকে খেয়ে ফেলে। তার গলা শুকিয়ে আসছে মনের কথা বলতে চাই সে রাদকে। বলতে চায় এ কয়দিনে রাদের সাথে থেকে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তন্নি নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলে,–” ভালোবাসি রাদ সাহেব ”
রাদ অবাক হয়ে তাকায় তন্নির দিকে। তন্নি লজ্জায় মুখ লুকায় রাদের বুকে।
১১ মাস পর
হসপিটালে ওটির সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে রাদ,মিশমি, রিধি, রাইদা, তুষার সাহেব, বৃষ্টি আর বৃষ্টির হাসবেন্ড সয়ন। বৃষ্টিকে আবার বিয়ে দেয় মিশমি আর তুষার। সয়ন ছেলেটা ভীষণ ভালো এবং ভদ্র একটা ছেলে। আজ তন্নির ডেলিভারি তাই সবাই হাসপাতালে। রাদ এদিক ওদিক পায়চারী করছে আর পাগলামো করছে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে চোখ গুলো লাল হয়ে আছে সে ভয় পাচ্ছে তন।নিকে হারিয়ে ফেলার। কিছু ক্ষণ পরে একজন নার্স বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে। সাথে ডাক্তার ও আসে। ডাক্তার রাদকে বলে,–” কংগ্রেস মিস্টার রাদ আপনার ছেলে হয়েছে। ”
রাদ খুশি হয়ে যায়। রিধি গিয়ে বাচ্চাকে নার্সের কোলে নেয়। রাদ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, –” আমার ওয়াইফ কেমন আছে? ”
ডাক্তার বলল,-” ভালো আছে একটু পর কেবিনে দেওয়া হবে।”
——–
তন্নি চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তার পাশেই দোলনায় বাবুকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। রাদ এসে তন্নি আর বেবির মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটায় বসে। রাদ এসেছে বুঝতে পেরে তন্নি চোখ খুলে। রাদ বলে,–” এখন কেমন লাগছে।?”
তন্নি বলল,–” ভালো বেবিকে দেখেছো?”
রাদ মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যা। তন্নি বলল,–” একদম তোমার মতো হয়েছে তাই নাহ।”
রাদ মাথা নাড়িয়ে বলল,–” নাহ একদম আমাদের মতো।”
তন্নি হাসলো রাদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। তন্নি বলল,–” পাগলামি করছিলে কেন?”
রাদ বলল,–” তুমি যে আমার খুশি ভয় হচ্ছিল হারিয়ে না ফেলি।”
তন্নি বলল,–” পাগল। ”
রাদ শক্ত করে তন্নির হাতটা নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। তন্নি রাদের দিকে তাকালো এই লোকটা ছাড়া সে অসম্পূর্ণ। ওকে আকড়ে বাঁচতে চায় সারাজীবন। রাদ তন্নির দিকে তাকিয়ে কপালে আর ঠোঁটে চুমু খেলো। সে যেন তার প্রাণকে ফিরে পেয়েছে।
সমাপ্ত