“সাবিহা আমি বিয়ে করেছি”
“কী!”
মেইন গেইট থেকে দৌড়ে রুমে চলে এলো বিহি। বিহির পেছন পেছন দৌড়াতে দৌড়াতে এলো সাবিহা।
“বিহি, হয়তো কোনো ভুল হচ্ছে এরকম কিছু না”
বিহি চুপচাপ বসে আছে।
“বিহি! চল”
“না”
“কেন? তুই গিয়ে আগে দেখ তো সত্যিটা কী?”
“তা জানার কোনো প্রয়োজন নেই।”
“অনেক প্রয়োজন আছে”
“নিজেই তো দেখে নিয়েছি, আর কী জানবো?”
“সবসময় নিজের দেখাটাই কী সত্যি হয়?”
বিহি কিছু একটা ভেবে উঠে দাড়ালো।
এবার পরিচয় পর্বে আসা যাক।
বিহি হলো সাবিহার ছোট চাচার মেয়ে। পুরোনাম হলো বিহি তাসনিম পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় সে সবার চোখের মনি। যৌথ পরিবার হওয়ায় তারা সবাই একসাথে বড় হয়েছে। সাবিহার বড় ভাই সাদাফ আরমান, পাঁচ বছর আগে বিদেশ গিয়েছে পড়াশুনা করার জন্য। তবে যাওয়ার আগেই পরিবারের ইচ্ছেতে সাদাফ এবং বিহির বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। কথা ছিল সাদাফ দেশে ফিরলে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। এর মধ্যে সাদাফের সাথে বিহির আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। পরিবার চাইছে বলে সে রাজি হয়েছে। পরিবার তো আর তার খারাপ চাইবে না! কিন্তু সাদাফ দেশে ফেরার সময় যে নতুন খবর নিয়ে আসবে কে জানতো? তার আবার যেই খবরে বিহির জীবন ওলটপালট হয়ে যাবে!
বিহি নিচে আসলো। দাড়িয়ে আছে সবাই। সবার মূল কেন্দ্রবিন্দু সাদাফ এবং তার সাথে থাকা মেয়েটি। সাদাফ আজ দেশে ফিরেছে। বাড়ির কাউকে এয়ারপোর্টে যেতে বারণ করেছে। অগত্যা সবাইকে বাড়িতেই অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাড়ির সামনে গাড়ির হর্ন বাজতেই সবার আগে বিহি এবং সাবিহা দৌড়ে গেল কিন্তু গিয়ে যা দেখলো মুহূর্তেই সব খুশি উধাও হয়ে গেল। সাদাফ একটা মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে বসে আছে। গাড়ি থেকে নেমে হাত ধরে এগিয়ে আনছে বাড়ির দিকে। সাবিহা জিজ্ঞাসা করতেই সাদাফ উত্তর দিলো। সাদাফ বিহিকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেল পাশ কাটিয়ে। বিহি নিরব হয়ে রইলো। যখন বুঝতে পারলো। তখন সে ঘরে চলে গেল। তারপরই এই ঘটনা।
“সাদাফ কে এই মেয়েটা?”(সাদাফের আব্বু)
“আব্বু আসলে…”
“সাদাফ সাবিহা যা বলছে তা কী সত্যি?”(সাদাফের আম্মু)
“হুম”
“কে সে?”
সাদাফ গা ছাড়া কন্ঠে স্পষ্ট জবাব দিলো
“মাই ওয়াইফ”
এটা শুনে তৎক্ষণাৎ সাদাফের মা এগিয়ে আসলো।
“তোর ওয়াইফ মানে কী?”
“আমি বিয়ে করেছি লিজাকে”
“তুই তো আমাদের কিছু জানাস নি? আর তুই কী পাঁচ বছর আগের কথা সব ভুলে গেলি?কী করে করলি এমন?”
কারো আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না।
“আম্মু আমার নিজের লাইফ! এখানে ডিসিশন নেওয়ার অধিকার আমার নিশ্চয়ই আছে?”
“তোর অধিকারেই কিন্তু তুই বিহিকে চেয়েছিলি। আমরা কেউ জোর করিনি তোকে, উল্টো বিহিকে বুঝিয়েছি।
যখন সে চাইতে শুরু করলো তখন তুই এসব কী করলি?”
“আম্মু পছন্দ চেন্জ্ঞ হতেই পারে। বাই দ্যা ওয়ে আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে আমি রুমে যাচ্ছি। চলো লিজা”
“ও কোথায় যাবে ভাইয়া?”
“কেন? রুমে!”
“তোমার রুমে ও কেন যাবে?”
“তুই চুপ থাক। ছোটো ছোটোর মতো থাক। এজ মাই ওয়াইফ লিজা আমার রুমেই থাকবে; ওটাই তো ওর রুম।”
সাবিহা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। বিহি নিরব দর্শকের মতো সব দেখলো। আসলেই তো তার মধ্যে এমন কিছুই নেই যা ওই মেয়ে মানে সাদাফের ওয়াইফের মধ্যে আছে। কিন্তু সে তো তাকে চায়নি। সে তো অনেকবার বারণ করেছিল। সবার জোরাজুরিতেই শেষমেষ বাধ্য হয়েছিল পরে যখন সে চাইতে শুরু করলো তখন সাদাফ এমন করলো কেন? যদি এমনিই হয় তাহলে তাকে চেয়েছিল কেন?
বিহির মা বাবা মুখ ঘুরিয়ে রুমে চলে গেল। আর সাদাফের মা বাবা তার ছেলের কাজে লজ্জিত। সাদাফের বাবা তার ভাইয়ের সামনে যেতে পারছে না লজ্জায়।
দুপুরে সবাই সবার রুমে খাবার খেলো একসাথে কেউই খেতে পারছে না। আর বিহির বাবা মায়ের খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। তারা কত আশা নিয়ে রাজি হয়েছিল এই বিয়েতে।
বিকেলে বিহি তার ব্যালকনিতে বসে আছে। হঠাৎ তার মাথায় কেউ হাত রাখলো। উপরে তাকাতেই দেখে তার বাবা।
“বাবা তুমি!”
“হ্যাঁ ভালো লাগছিল না তাই তোর ঘরে এলাম”
“ভালো করেছো, বসো গল্প করি”
বিহির বাবা বসলো,
“ভেঙে পড়িস না মা!”
“বাবা! আমি ভেঙে পড়িনি। আমি তো এতোটাও আগ্রহী ছিলাম না তাই আমাকে এটা এতোটা ভাবাচ্ছেও না”
বিহি কথাটা বললেও তার ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে; তবুও সে নিজেকে সামলে যাচ্ছে।
“তোকে আমি এর চেয়েও ভালো কারো হাতে তুলে দিবো; দেখবি তুই অনেক সুখী হবি!”
বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কথাটা বললো। বুকটা হালকা হয়ে যাচ্ছে। বাবা কত চিন্তা করে আমার জন্য। আমার জন্য তাদের এই দোয়াটাই যথেষ্ট।
“না বাবা, আমি এখন এসব চিন্তা করছি না। আমি পড়ালেখা করবো ভালো করে। আমার পরিচয় গড়ে তুলবো। আমার নিজস্ব পরিচয়ে তোমাদের চেনাবো। তখন তোমার আর শুধু এই বাড়ির পরিচয় হবে না বাবা। আরো একটা নতুন পরিচয় হবে ইনশাআল্লাহ।”
বাবার চোখ চিকচিক করে ওঠে।
“তুই অনেক বড় হবি রে মা। অনেক সুখী হবি।”
বাবা এই কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাবার এমন কথায় আমার বুকভরা আশা জাগলো। এই দোয়াগুলোই হয়তো আমাকে এগোতে সাহায্য করবে। পেছনে পড়ে থাকলে হবে না। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। নিজের পরিচয় নিজেই গড়বো ইনশাআল্লাহ। আমি উঠে রুমে চলে আসলাম।
রাতে সবাই একসাথেই খেতে বসেছে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। সবাই স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় ভালো। একটু পর সাদাফ এবং লিজাকে রুম থেকে বাইরে আসতে দেখা গেলো। আমরা সবাই নিজের মতো খেতে লাগলাম। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো তখন যখন টেবিলে সাদাফের পাশে খালি কোনো চেয়ার নেই।
“লিজা কোথায় বসবে এখন?”
“কেন? বড় আম্মুর পাশে তো একটা চেয়ার খালি ওইটাতে বসুক”(আমি)
“তুই চুপ থাক বিহি। ও ওখানে কেন বসবে? ও আমার পাশে বসবে!”
“তাহলে চেয়ার এনে বসাও”
বলে আমি খেতে লাগলাম। সাদাফ ভাইয়া এবার এসে আমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো।
“তুই আম্মুর পাশের চেয়ারে বস যা”
“আমি কেন ওখানে বসবো? আমার চেয়ারে আমিই বসেছি”
“দেখ লিজা এখানে নতুন। ও আমার সাথে বসে খাবে। আমি যেহেতু এদিকে আছি আমার একপাশে তুই আরেকপাশে আব্বু। তাই তুই গিয়ে আম্মুর পাশে বস।”
আমি হাত ঝাঁ’ড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে বললাম,
“আমি পারবো না ওখানে বসতে। আমার চেয়ার এটা। ছোটো থেকে আমি এখানেই বসছি। নতুন কারো জন্য আমি সিট ছাড়তে পারবো না।”
“হ্যাঁ ও তো ঠিকই বলেছে। তুই ওকে উঠাচ্ছিস কেন? তুই তো আর কার সাথে ঘেঁষে বসিস নি যে ওকে ওখানেই বসতে হবে।”(বড় আম্মু)
সাদাফ ভাইয়া কিছু না বলে আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো। আমার এবার খুব খারাপ লাগলো। আমি ওর জন্য নিজের একটা জায়গা হারিয়েছি। এখন আবার চেয়ার ও ছাড়তে হবে? পারবো না আমি। কে ও? কেন আমাকেই স্যাক্রিফাইস করতে হবে?
সাদাফ ভাইয়াকে বারবার হাত ছাড়তে বলছি কিন্তু ছাড়ার নাম গন্ধ নেই। এবার বড় আম্মু উঠে এসে সাদাফ ভাইয়ের থেকে আমাকে ছাড়িয়ে তার গালে সজোরে থা’প্পড় বসিয়ে দেয়। সবাই অবাক হয়ে আছি। বড় আম্মু কখনোই তার ছেলেকে মারে না কিন্তু আজ!
“তোকে কী এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে? আর ও কেন তোর বউয়ের জন্য জায়গা ছাড়বে? তুই নিজে যেভাবে পারিস সেভাবে ওকে বসা।”
সাদাফ ভাইয়া লিজার হাত ধরে রুমে চলে গেল। যাওয়ার সময় শুধু এটা বললো, “দরকার নেই তোমাদের। আমিই ওকে খাওয়াবো। আর খাবো না এখানে”
আমিও আর কিছু না বলে রুমে চলে এলাম। খিদে নেই আর। আসার সময় শুনলাম লিজা বলছে,
“তোমার পরিবার তো তোমাকে দেখতেই পারেনা। তুমি আলাদা হয়ে যেতে পারো! এটাই মনে হয় ভালো হবে”
কী বলছে কী লিজা! ও কী পরিবার ভাঙতে চাইছে নাকি!??!
চলবে…?
#পরিণীতা
#পর্ব_১
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম
(1082 শব্দের)
[গল্প আমার নিজের লেখা। আইডির নাম আরবিতে তাই বুঝতে পারছেন না? নাকি অন্য কারণ? প্লিজ ক্লিয়ার]