পরিণীতা পর্ব -০৩

#পরিণীতা
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম

“বিহি তোর মত আছে এই বিয়েতে?”

“রাজি না থাকলে নিশ্চয়ই বিয়েটা হতো না!”

সাদাফ ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি স্পষ্ট দেখলাম চোখে পানি চিকচিক করছে।

“তুই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল তো তুই সত্যিই রাজি তো?”

আমি তো আমার নিয়তি মেনে নিয়েছি তাহলে তার কীসের সমস্যা?

“হ্যাঁ আমি এই বিয়েতে রাজি। আমার মতো ছাড়া আমার বাবা মা কেউই আমার বিয়ে ঠিক করবে না নিশ্চয়ই আর না আমি তাদের মত ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো।”

আমি যে সাদাফ ভাইয়াকে মিন করে শেষ কথাটা বলেছি সেটা সে ভালোই বুঝতে পেরেছে। সে উল্টো ঘুরে দাঁড়ালো। বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলো যা আমি স্পষ্ট দেখলাম। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“জানি তুই আমাকে বলছিস কথাটা।”

আমি চুপ করে রইলাম। হঠাৎ সাদাফ ভাই বলে উঠলেন,
“জানিস? তোকে হারিয়ে আমি বড্ড ভুল করেছি”

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।

“তুই আমার জীবনে থাকাকালীন সুখ ছিল। কিন্তু আমি হীরা ছেড়ে মরীচিকার পেছনে ছুটেছি তাই এখন এই ফল ভোগ করতে হচ্ছে।”

“কী ফল?”

সাদাফ ভাইয়া কিছু বললেন না। হঠাৎ ছুটে এসে আমার হাত ধরে বললো,

“তুই যদি বিয়েতে রাজি না থাকিস তাহলে আমাকে বল আমি বিয়ে ভাঙার ব্যবস্থা করবো। তুই শুধু আমার হয়ে যা। আমি ভুল শোধরাতে চাই!”

আমি এমন কান্ড হতভম্ব হয়ে গেলাম। কী বলছে কী এসব?

“তুই কী ভাবছিস আমি জানি কিন্তু আমার কিছু করার নাই। আমি সত্যিই ভুল শোধরাতে চাই”

আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমি হাত এক ঝাঁ’ড়িতে ছাড়িয়ে নিলাম। বলা শুরু করলাম,

“আমার হাত ধরার সাহস কে দিয়েছে আপনাকে? আপনার বউ আছে! নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করে এসেছেন। এখন এসব কেন বলছেন? আমি তো সরে এসেছি। আমার জীবনে একটু আশার আলো দেখা দিলে আপনার অনেক সমস্যা হয় তাই না!”

“বিহি এভাবে বলিস না। আমি সত্যিই ভুল শোধরাতে চাই!”

“বললেই কী ভুল শোধরানোর যায়?”

“আমি জানি আমি যা করেছি তার জন্য তোকে অনেক ভুগতে হয়েছে। আমি আসলেই তখন বুঝতে পারিনি কী হয়েছিল আমার!”

” এসব কথা বাদ দেন। কাল আমার বিয়ে! আর আপনি আমাকে এখানে ডেকে এনেছেন এসব বলার জন্য? আপনারা চেষ্টা করে বিয়ে ভাঙতে চাচ্ছেন তাই না?”

” আরে তুই তো এই বিয়েতে রাজি না!”

“কে বলেছে আমি রাজি না? আমি একটু সুখে থাকতে চাইলে আপনার সমস্যা হয় কেন? সেদিন তো আপনিই বলেছিলেন আমি আপনার যোগ্য নয়। লেজার মতো হতে শিখো। এখন কেন আমাকে খুঁজছেন? লিজাকে এখন আর ভালো লাগে না?”

আমি বলে চুপ করে রইলাম,

” সত্যি বিহি আমি জানি না কেন এমন করলাম। বিদেশ যাওয়ার পর আমি ভাবতাম তাড়াতাড়ি এসে তোকে বিয়ে করবো। সবসময় তোর কথা মনে পড়তো। আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য আস্তে আস্তে বন্ধু বানানো শুরু করলাম। লিজা আমার ফ্রেন্ড হয়েই এসেছিল। জানিস তাদেরকে আমি তোর কথা বলতাম। কিন্তু কী থ…”

সাদাফ ভাইয়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আমি বললাম,

“হয়েছে সাদাফ ভাই! থামেন! আপনার থেকে আমি এতো কিছু জানতে চাইনি! আমি তো কোনো কৈফিয়ত দিতে বলিনি! আমার ভাগ্যে আপনি ছিলেন না তাই আপনাকে পাই নি। এটা নিয়ে তো আমার আফসোস নেই! আপনার কেন সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি না!”

সাদাফ ভাইয়া আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,

“সত্যি করে বলুন তো? আমি এখন লিজার মানে ভাবির থেকেও উচ্চ পদের চাকরি করি বলে এই দাম বেড়ে গেলো? এটাই কী আসল কারণ বলে ধরে নিবো?!”

“বিহি!”

“এভাবে বলে কিছু হবে না। আপনার প্রতি এক আকাশ সমান বিশ্বাস আমার ছিলো! আমি কখনো অন্য কাউকে এতোটা বিশ্বাস করিনি। আপনি যেদিন আমাকে বুঝিয়েছিলেন সেদিন আমি রাজি হয়েছিদাম আমার তখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও! আমার ছোট বয়সী মন আপনাকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল কিন্তু আপনি যে কাজ করলেন! হাহা! এখন আবার একই ফাঁদে পা দিবো আমি? আপনি যাওয়ার আগে যে রিংটা আমাকে দিয়ে গিয়েছিলেন সেটা আমি যত্ন করে রেখেছিলাম। এতো কিছুর পরও সেটা আমার কাছে ছিলো কিন্তু কাল আমি সেটা ফেলে দিবো কারণ পরশু অন্য কারো সাথে আমার বিয়ে। আমি চাই না তাকে আমি ঠকায় কিংবা কারো কাছে আমি ঠ’কবাজ হিসেবে থাকি!”

সাদাফ ভাইয়া মাথা নিচু করে কথা শুনছিল। কথা শেষ হওয়ার পর মাথা উঁচু করে এগিয়ে এসে বলল,

“কোনো ভাবেই কী সম্ভব নয় আমার ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া?”

“আপনি ভুল করেননি আপনি আমার ভাগ্যে ছিলেন না তাই হন নি এটা নিয়ে এতো ভেবে লাভ নেই।”

সাদাফ ভাইয়ার মুখের রঙ চেন্জ্ঞ হয়ে গেল। কেমন যেন কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“তোকে তো আমার হয়েই থাকতে হবে। সেটা বিয়ে করে হোক আর না করে।”

“মানে?”(অবাক হয়ে)

“তুই যেহেতু রাজি হোস নি ভালো কথায় তাহলে আঙুল তো একটু বাকাঁতেই হয়”(বাঁকা হাসি হেসে)

“কী করতে চাইছেন আপনি?”

“তোকে বলেছিলাম আমার হয়ে যেতে তুই শুনিস নি; শুধু শুধু আমাকে কিছু কথা শুনতে প্লাস বলতে হলো! তোকে এখন ওই ছেলেও বিয়ে করবে না। আমি তো করবোই না। তোর পরশু বিয়ে হচ্ছে না এতো তোরজোরের কী দরকার? তোর বিয়ে আমি ভাঙবো তুই সারাজীবন একা থাকবি তবুও তুই অন্য কারো হবি না।”

সাদাফ ভাইয়া রেগে কথাগুলো বলে ছাদের বাইরে যেতে লাগলো। আমার মনে ক্রমাশয় ভয় বাড়তে লাগল। সাদাফ ভাইয়া যে কী করতে পারে আমি ভালো মতোই জানি। কী করবে সে?! ভয়ে গলি শুকিয়ে যাচ্ছে। সাদাফ ভাইয়া সাধারণ কিছু করবে না! যা ইচ্ছে তাই কান্ড করবে এতে বাবা-মার সম্মানের কথা রয়েছে। বাইরে সাদাফ ভাইয়ার আওয়াজ শোনা গেল। বুঝলাম বাইরে বড় আম্মু দাঁড়িয়ে থাকবে বলেছিল হয়তো তারাই কথা বলছে,

“তুমিও আছো এখানে? নিশ্চয়ই শুনেছো সব? বুঝে গেছো?”

ঠাসসসসস! চড়ের আওয়াজ শুনে আমি ভারি গাউন আলগে দৌঁড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সাদাফ ভাইয়া গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বড় আম্মু রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। সাদাফ ভাইয়া কিছু না বলে নিচে চলে গেল। আমি ভয়ে ভয়ে বড় আম্মুর দিকে তাকালাম।

“কোনো চিন্তা করিস না ওরা কিছু করতে পারবে না। আমার সত্যি ভাবতে কষ্ট হচ্ছে এটা আমার ছেলে!” বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো। মানুষটা যতই কঠোর দেখাক ভেতরটা অনেক নরম! আমরা নিচে চলে এলাম। আর কোনো অনুষ্ঠানে গেলাম না ভালো লাগছে না। রুমে এসে চেন্জ্ঞ করেই ঘুমিয়ে গেলাম। মেহেদী ও তুললাম না।

——————-
আজকে আমার বিয়ে আদিবের সাথে। আমি জানি না সাদাফ ভাই কী করতে চাইছে! এদিকে আদিবের সাথে আমার কোনো কথাও হয়নি এখনো। সব মিলিয়ে ভয়ানক অস্বস্তি হচ্ছে। আমি রেডি হয়ে বসে আছি। সবাই বর দেখতে গিয়েছে।

ফুলের পর্দার এ পাশে আমি এবং অপর পাশে আদিব। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কাজী বিয়ে পড়াচ্ছে। যখন আমাকে কবুল বলতে বলা হলো আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। নিজেকে সামলে যখন বলতে যাবো তখনই কেউ একজন বলে উঠলো,

“দাঁড়ান”

মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম সাদাফ ভাইয়া নামছে।

“এতো তারা নেই! আগে আমার কিছ কথা বলার আছে”

“কী কথা?”(আদিব)

“হ্যাঁ আপনার সাথেই তো আমার আসল কথা।”

বুঝে গেছি সাদাফ ভাই কী করতে চাইছে।

“আপনি কী জানেন বর সাহেব? আপনার হতে যাওয়া না হওয়া ওয়াইফের আমার সাথে আগে বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল?”

“হতে যাওয়া না হওয়া ওয়াইফ মানে?”

“এই কথাগুলো শোনার পর আপনি আর ওকে বিয়ে করবেন না। এর চেয়েও ভালো মেয়ে পাবেন ওকে ছেড়ে দিন!”

“কী কথা?”

” আমার সাথে বিহির বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এবং আমি ওকে ছেড়ে দিয়েছি কারণ ওর চরিত্র ঠিক নেই। আমি বিদেশ থাকা কালীন এই সংবাদ পেয়েছিলাম।”

আমার চোখে পানি এসে গেল। বিয়ে ভাঙতে সবার সামনে আমার চরিত্র খারাপ করলো!

“আমি চাই না আপনাকে এসব লুকিয়ে ঠ’কিয়ে বিয়ে দেওয়া হোক! আপনি বরং চলে যান সেটাই ভালো। এসব খারাপ মেয়ের হাত থেকে বেঁচে থাকবেন”

বড় আম্মু কিছু বলতে যাবে তখনই আদিব দাঁড়িয়ে গেল। আমি বুঝে গেলাম সব শেষ!

চলবে….?

(1145 শব্দের)

(কী হতে পারে বলে মনে হচ্ছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here