#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২৩
কথায় আছে,যখন সুখ আসে তখন যেনো চারোদিক দিয়ে একদম চম্মুকের মতো টেনে টেনে আসে।তখন যেমন খুশি আর থামানো যায়না আর চোখের বিন্দু বিন্দু পানিও আটকে রাখা যায়না।ঠিক সেই ভাবেই আজ মারজিয়ার দিন।একের পর এক সারপ্রাইজ পেতে পেতে শেষেরটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।অবাক হয়ে হা করতে করতে কখন যে মুখ হা হয়ে প্যারালাইজড হয়ে যায় বোঝা বড় দায়।
তখন তারা সন্ধ্যা বিলাসের সাথে কিছু স্মৃতি বিলাস নিয়ে বাসায় ফিরে পুতুল মারজিয়া।কিন্তু বাসায় এসেই যে আরো একটা চমৎকার ধরনের সারপ্রাইজ পাবে ভাবতেও পারে নি সে।প্রথমে মারজিয়া পুতুলকে বাসার সামনে রেখে নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই পুতুল তাকে জোর করে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়।নিচের রুমটা পুরো কেমন যেনো অন্ধকার হয়ে আছে,মারজিয়া ভ্রু কুঁচকে পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,
-কিরে এরকম অন্ধকার কেন বাসার সবাই কই?
তখনি আবার কে যেনো বলে উঠে, ‘মা মশা’ মারজিয়া চট করে মাথা এদিক ওদিক ঘুরায় কিন্তু কিছু দেখতে পারে না।আবারো জিজ্ঞেস করে,
-স্নিগ্ধার গলার আওয়াজ না?
তখনি চট করে বাড়ির সব লাইট জ্বলে উঠলো আর সবাই এক সাথে চিল্লিয়ে উঠলো।মারজিয়া আৎকে উঠে,চোখ মুখ খিঁচে কান হাত দিয়ে চেপে ধরে।কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়ার পর আওয়াজটা একটু কমে,পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে সামনে,পুতুলের বাবা মা ভাই ভাবি স্নিগ্ধা সহ তার মা দাঁড়িয়ে আছে।আবার হা হয়ে যায় সে,পাশ ফিরে পুতুলের দিকে তাকায় পুতুল চোখ টিপ দেয়।মারজিয়া বুঝে যায়।এই না তার জন্মদিন মনে রাখে নি বলে সারাদিন মন খারাপ করে বসে ছিলো আর আজকেই এতো এতো সারপ্রাইজ পেয়ে সে সত্যি অবাক।হা করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবার দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে যায় তার মায়ের কাছে,উনি ছলছল নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে,মুখে এক ঝলাকা হাসি।চোখে পানিতে টুইটুম্বুর সে যানে এটা খুশির কান্না,আসলেই এদের মতো একটা পরিবার পেয়ে তারা মা মেয়ে খুবই ঋণী!ঠিক তাদের দুর্ভিক্ষর সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এখনো যেনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।মারজিয়া আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না,চোখের এক কোন দিয়ে টুপ করে পানি পরে যায়।পুতুল মা মেয়ের এমন ইমোশনাল অবস্থা দেখে,স্নিগ্ধার কাছে গিয়ে ওকে ধমকের স্বরে বলে,
-এখনি তোর মশা মশা করতে হলো?
স্নিগ্ধা তার মায়ের কোলে বসেই হাত নারিয়ে নারিয়ে পুতুলকে জবাব দেয়,
-দেকো তোমরা তখন আমর কাচ তেকে লুকিয়ে চলে গেছো তাতে আমি কিচু মনে করিনি পাপা বলেছে আমাকে চকলেট দিবে তাই এখনো চুপ আচি,নাহলে দেখতা তোমাদের প্ল্যান আমি কীভাবে নষ্ট করতাম।
-ওরে পুষকুনির পানিরে তোকে নিয়ে গেলে কি আমরা শান্তিতে ঘুরতে পারতাম?
-উপফ ফুপ্পি ওটা পুষকুনির পানিনা পুচকির নানি হবে।
পেছন থেকে প্রণয় স্নিগ্ধাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-ওইসব নানি টানি পরে দেখা যাবে,এখন তুই বার্থডে সেলিব্রেট কর তোর বান্দুবির।
তারপর তারা আবার কেক কাটে,এইবার পরিবারের সবার সাথে সুন্দর মুহুর্ত কাটায় মারজিয়া।এই দিনটা যেনো এক স্মৃতির পাতায় আটকে থাকবে,যেখানে তাদের মতো মেয়েদের এগুলো আশা করাটাও হাস্যকর সেখানে সে না চাইতেই পেয়ে যাচ্ছে।
রাতে মারজিয়া পুতুলদের বাসায় থেকে যায়।এখন প্রায় এগারোটা নাগাদ।পুতুল আর মারজিয়া শুয়ে শুয়ে গল্প করছে,এরই মধ্যে মারজিয়া অনেকবার পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,সে কিভাবে তাদের সাথে এতো প্ল্যান করে না কি!কিন্তু পুতুল কিছু বলে না।তারপর তারা কিছুক্ষণ কথা বলে,একটু পর মারজিয়া ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু পুতুলের চোখে ঘুমের কোনো নাম গন্ধ নেই,সে শুধু একটা কথা ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ স্টোনে গিয়ে একটা মেসেজ দেখে আবার হাসে।এইটা তার দেওয়া দ্বিতীয় মেসেজ।
“এই অদ্ভুত ধরণের থ্রি পিসে পুতুলকে অদ্ভুত ধরণের সুন্দর লাগছে”
এই ছোট এক লাইনের কথাটাযে তাকে কি আনন্দ দিয়েছে সেটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।
সেখান থেকে বেরিয়ে পুতুল তার গ্যালারিতে যায় যেখানে আজকের মারজিয়া,সিজান,আর তার কিছু সংখ্যাক ছবি আছে।যেগুলো সিজান তাকে দিয়েছিলো।মোট সাতটা ছবির মধ্যে একটা ছবিতে সামিরকে দেখা যাচ্ছে,আর ওইটাই বার বার জুম করে দেখছে পুতুল।সেদিন মারজিয়া তাকে একা রেখে না গেলে আজকের মতো এতো সুন্দর মুহুর্ত আর অনুভূতিময় দিন কখনোই হয়তো পেতোনা।
সেদিন,মারজিয়া যখন জিদ করে পুতুলকে একাই মাঠে রেখে চলে যায়।তখন সেখানে পুতুলের সাথে দেখা হয় সিজানের,সাথে সামিরও ছিলো।তাকে এখানে একা দেখে সিজান জিজ্ঞেস করে,
-হেই বার্বি ডল তুমি এখানে একা!Why?
পুতুল একবার তাদের দুজনের মুখের দিকে তাকালো,দ্বিধায় পরে গেলো বলবে কি বলবে না।সিজান ভ্রু কুঁচকে আবার জিজ্ঞেস করে?
-কি হয়েছে তোমার সাথে কেউ আসে নি?
পুতুল মাথা দুলায়,যার অর্থ ‘হ্যা’ চারোদিকে তাকিয়ে বলে,
-কই তোমাদের বাসার কাউকে তো দেখছি না।
পুতুল মাথা নিচু করে বলে,
-এসেছিলো!মারজিয়া,কিন্তু ও চলে গেছে।
-চলে গেছে মানে,ওর কি কোনো কমনসেন্স নেই তোমাকে একা এখানে রেখে চলে গেলো।এই যায়গাটা তেমন একটা ভালোনা সেকি জানেনা?
-আসলে আপু কথাটা সেটা না।
-তাহলে কোনটা?
পুতুল আমতা আমতা করে মারজিয়ার জিন্মদিনের ব্যপারটা বলে।সে মারজিয়াকে না জানিয়ে তাকে বার্থডে সারপ্রাইজ দিতে চায়।চাইলে ফেমিলির সাথে দিতে পারবে,তাও একটু অন্যরকম ভাবে খুশি করতে চায়।
কথাটা শুনে সিজান কিছুক্ষণ ভাবে,মুহুর্তেই খুশি
হয়ে যায়।তারপর তাকে এই বুদ্ধিটা দেয় পুতুলের ভয় হয় কিভাবে কি করবে,তখন সিজান তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
-আরে প্যারা নাই লিটল বার্বি ডল তোমার ওই লাল মরিচ চকলেট ফ্রেন্ডের জন্য এইটুকু তো আমরা করতেই পারি তাই না বল সামির।
এইবার পুতুল সামিরের দিকে তাকায়।এতক্ষণ সে চুপ করেই ছিলো।পুতুলের তাকানোর সাথে সাথে তাদের চোখাচোখি হয়ে যায়।পুতুল চট করে চোখ নামিয়ে নেয়।সামির বলে,
-ঠিক আছে।
-তোমার ফোন টা দাও আমি আমাদের দু জনের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সেভ করে দিচ্ছি।
পুতুল তার ফোন এগিয়ে দেয়। সিজান পুতুলের ফোনে তার আর সামিরের নাম্বার সেভ করে দিয়ে বলে,
সব কিছুর প্ল্যান আমরা মেসেজে করবো ঠিক আছে?
পুতুল মাথা দুলায়। আবার চিন্তত স্বরে বলে,
-কিন্তু সবাইকে ম্যানেজ করবো কীভাবে?
-আরে বার্বি ডল তুমি এইসব নিয়ে চিন্তা করছো লাইক সিয়াসলি?আরেহ আমি জানি তুমি পারবে সব ম্যানেজ করতে,আর আমরা তো আছিই।সো নো টেনশন ওনলি চিল ওকে?
বলে সিজান হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে হাত এগিয়ে দেয় পাঞ্চ করার জন্য।পুতুল খিলখিল করে হেসে সিজানের সাথে পাঞ্চ করে।
-তাহলে চলো সামিরের গাড়ি দিয়ে তোমাকে বাসায় ড্রপ করে আসি।
বলে সিজান পুতুলের হাত ধরে সামনে এগুতে থাকে,আর সামির তাদের পেছন পেছন।ডাল দিয়ে উঠার সময় সিজান পুতুলের হাত শক্ত করে ধরলেও পুতুলের তার লম্বা স্কার্টের সাথে পা বেঝে পড়ে নিতে যায়।কিন্তু পেছনে সামির থাকায় তাকে ধরে নেয়।পুতুলের বুক ধুক করে উঠে,মনে হয় এখনি এখান থেকে পরে হাড্ডি সব ভেঙে যাবে।যখন মনে হলো পেছন থেকে কেউ ধরে আছে,তখন আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়।খানিকটা লজ্জা পায় হয়তো।তারপর সামির তার গাড়ি দিয়ে পুতুলকে তাদের বাসার সামনে নামিয়ে দেয়।এছাড়া সারা রাস্তায় গাড়িতে বসে সিজান আর পুতুল ননস্টপ বকবক করতে থাকে।বাড়ির সামনে আসতেই পুতুল নেমে যায়।পুতুল যাওয়ার একবার তাদের বাসায় আসতে বলে কিন্তু কেউ আসে না।
বাসায় ভেতরে এসে পুতুল চিন্তায় পরে যায় কি করবে,হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই ভাবির কাছে দৌড়ে গিয়ে বলে,
-ও ভাবিপু কিউটি ভাবিপু কি করো।
-আসলি তাহলে,তোদের ঘুরা শেষ হলো?
-হুম,শুনোনা।
-হুম বল
-কালকে মারজিয়ার জন্মদিন।
-ও তাই নাকি,ভালো তো কালকে ওকে আমাদের বাসায় আসতে বলিস।
-আরেহহ সেটার জন্যই তো তোমার কাছে আসলাম।চলো না কালকে আমরা সবাই মিলে মারজিয়াকে সারপ্রাইজ দেই।
-সারপ্রাইজ কিসের সারপ্রাইজ?
-আরে কালকে আমি মারজিয়াকে নিয়ে বাহিরে যাবো ঘুরার কথা বলে,ওকে বুঝতে দিবোনা।তোমরা ওর জন্য কেক আনবা রুম ডেকোরেশন করবা,দেন আমরা বাসায় আসলে সবাই মিলে সারপ্রাইজ দিবো ও অনেক খুশি হবে দেখিয়ো।
-সত্যি?আচ্ছা ঠিক আছে।
পুতুল খুশিতে লাফিয়ে উঠে,”লাভিউ ভাবিপু” বলে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে ঘরে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ,পুতুল সিজান ভেবে তারাতাড়ি অ্যাপে ঢুকে দেখে সামির!অবাক হয় পুতুল তারাতাড়ি করে ম্যাসেজ চেক করে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়,ছোট্ট একটা ম্যাসেজ যেখানে লেখা ছিলো।
“পুতুলদের সবসময় পুতুল ড্রেস পড়তে হয় না। মাঝে মাঝে অন্য কিছুও ট্রায় করতে হয়।”
চলবে..!#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২৪
জানালা ভেদ করে রোদের তিব্র আলো মুখে পড়তেই ঘুম হালকা ছুটে যায় পুতুলের।দু হাত দিয়ে মুখ কিছুক্ষণ চেপে ধরে।আড়মোড়া হয়ে উঠে দেখে পাশে মারজিয়া নেই।কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থেকে আলসেমি ছেড়ে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঢুলতে ঢুলতে নিচে যায়।সিঁড়ির নিচে আসতেই তার ভ্রু কুঁচকে যায়।দেখে গুটি গুটি পায়ে স্নিগ্ধা দড়জা দিয়ে ভেতরে ঢুকেই এক দৌড় দেয়।তার হাতে অনেকগুলো চকলেট যেটা সে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে।পুতুলের সামনে দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার আগেই পুতুল খোপ করে স্নিগ্ধাকে ধরে দাড় করিয়ে দেয়।স্নিগ্ধা একটা চিৎকার দেয়।পুতুল তাকে ধমক দিয়ে বলে,
-এই চুপ চিল্লাস কেন,এমন দৌড়ে কই যাচ্ছিলিস সকাল সকাল।আর তোর হাতে কি?
-কেন চোখে দেখোনা চকলেট!
-কে দিছে?
স্নিগ্ধা এইবার চকলেট গুলো আরো শক্ত করে ধরে পুতুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
-তোমাকে কেন বলবো?আমি জানি তুমি আমার সব চকলেট খেয়ে ফেলবে।
বলে স্নিগ্ধা আবার দৌড় দিতে নেয়,কিন্তু তার আগেই পুতুল আবার ধরে নেয়।
-আমি জানি এগুলো তোর পাপা দেয় নি,তাই সত্যি করে বল কে দিয়েছে না হয় তোর পাপাকে বলে দিবো তুই অচেনা মানুষের কাছ থেকে চকলেট নিয়ে খাস।
-উপফ ফুপ্পি অচেনা মানুষ হতে যাবে কেনো আমাকে তো এই চকলেট গুলো সামির আঙ্কেল দিলো।
সামিরের কথা শুনে পুতুলের বুক ধুক করে উঠলো।সামির!সামির এখানে এসেছে?কই সেতো দেখতে পারছে না,
-সামির!মিথ্যা কথা বলছিস কেনো স্নিগ্ধা।
-হুম সামির আঙ্কেলি তো,একটু আগে আমি দারোয়ান নানুকে নিয়ে দোকানে যাচ্ছিলাম তখন সামির আঙ্কেলকে দেকেচি,আমাকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়েছে তারপর এত্তো গুলা চকলেট দিয়েছে।
সামির এই টাইমে এই গ্রামে?তাও আবার তাদের বাড়ির সামনে, কি কারণে এসেছিলো।জিজ্ঞেস করবো?না থাক আবার কি না কি মনে করবে,আসতেই পারে হয়তো কোনো কাজে এসেছিলো।
ভাবতে ভাবতেই স্নিগ্ধা দৌড়ে চলে যায়।পুতুল আর বেশি ঘাটে না,আরেকটু সামনে গিয়ে দেখে মারজিয়া আর শ্রেয়া রান্না ঘরে কিছু করছে।’তার মানে মারজিয়া এখনো যায় নি?উপপ ভালোই হলো।
পুতুল দৌড়ে রান্না ঘরে যায়।দেখে শ্রেয়া আর মারজিয়া মিলে কিছু রান্না করছে,পুতুল যেয়ে বেসিনের উপর বসে তাদের কাজ দেখতে থাকে।রান্না শেষ হলে এক এক করে টেবিলে সব খাবার রাখতে থাকে পুতুল আর মারজিয়া।সকালের নাস্তা করা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রণয় সবাইকে তাড়া দিয়ে বলে,
-তোমরা সবাই জলদি করে রেডি হয়ে নাও। হাতে বেশি সময় নেই।
পুতুল স্নিগ্ধার সাথে চকলেট নিয়ে ঝগড়া করছিলো।ভাইয়ার এতো তাড়া দেখে বলে,
-কেন ভাইয়া কই যাবো আমরা।
-আরে ফায়াজ আঙ্কেল দের বাড়ি আজকে আমাদের দাওয়াত রয়েছে বাবা তোদের বলে নি?
বলে বাবার দিকে তাকায় প্রণয়।তখনি সে জ্বিভ কেটে বলে,
-যা বলতেই ভুলে গেছি তুই একবার আমাকে মনে করিয়ে দিবিনা?
-যাই হোক।এখন তো সবাই যেনে গিয়েছো?সো কেউ একদম লেট করবে না,আমি একটা কাজ সেরে আসছি তারপর তোমাদের সবাইকে নিয়ে যাবো।
শ্রেয়া এইবার চিন্তিত স্বরে বলে,
-এই তোমরা না সবসময় এমন করো।হুট করে বলে ফেললেই কি আর সাথে সাথে যাওয়া যায়?ঘরে কত কাজ পরে আছে,আগে জানলেতো সব কিছু ঘুছিয়ে রাখতাম।এখন এইটুকু সময়ে কি করবো?
প্রণয় শ্রেয়ার কথার পালটা জবাব দিয়ে বলে,
-এখন এখানে বক বক না করে কাজ করলে তোমার একটা কাজ হলেও আগাবে,সো তাড়াতাড়ি করো।
শ্রেয়া গুটিগুটি চোখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যাঙচি কেটে চলে যায়।মারজিয়া একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে মিন মিন স্বরে বলে,
-আন্টি আঙ্কেল আমি তাহলে আসি আজ,মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
বলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়ানোর আগেই প্রণয় সোফায় বসে তার জুতা ঠিক করতে করতে বলে,
-আপনি আবার কই জান মেডাম।আপনাকেউ আমাদের সাথে যেতে হবে।
-না না ভাইয়া আমি যাবো কি করতে আমি বরং বাসায় যাই।আর পুতুল তুই আমাকে কল করিস কালকে স্কুলে যাবো আমরা।
শেষের কথাটা পুতুলের কাধে হাত রেখে বলল মারজিয়া।কিন্তু তার আগেই প্রণয় দ্রুত জবাব দিলো।
-নাহ আপনার আমাদের সাথেই যেতে হবে কোনো কথা নেই।আর তোমার মাকে আমি বলে দিয়েছি।সো নো টেনশন এখন তুমিও বক বক না করে জলদি রেডি হও বেশি সময় নেই।পুতুল ওকে নিয়ে যা তোরা রেডি হ যা।
বলে প্রণয় চলে গেলো।পুতুল খুশি হয়ে মারজিয়ার হাত ধরে টেনে উপরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
-সবাই এতো ভালো হলো কীভাবে বল তো!আমার অনেক খুশি খুশি লাগছে,আবার কতদিন পর ও বাড়িতে যাবো সামিয়া আন্টি আলিয়া উফফ আমি অনেক এক্সাইটেড।
খুশিতে লাফাতে লাফাতে কথা গুলো বলে মারজিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।মারজিয়ার মুখের ভঙ্গি বুঝতে চেষ্টা করে বলে,
-কিরে তোর মুখ এমন করে রেখেছিস কেনো?গরুর মতো নাক ফুলাচ্ছিস কেনো?এমা আবার দেখি নাক দিয়ে ধুয়াও বেড় হচ্ছে,তোর বান্ধুবির খুশিতে তুই খুশি নোস?
বলে মারজিয়ার গালে হাত ছোয়ায় পুতুল।মারজিয়া এক ঝটকা মেরে পুতুলের হাত ফেলে দিয়ে বলে,
-তোর ভাই কি হ্যা?মানুষ নাকি গন্ডার,সবসময় আমার পিছে পরে থাকে।কি সুন্দর বউ বাচ্চা থাকতে সেই আমার সাথেই কীভাবে ফ্লার্ট করে গেলো।তোর ভাই কি কখনো ভালো হবে না হ্যা!
পুতুল চুপ মেরে যায়,কিছুক্ষণ মারজিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হুট করে হো হো করে হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,
-ও এই ব্যপার?আরে গাধি ভাইয়া মজা করে তোর সাথে।
-হু মজা না ছাই সেই ছোট বেলা থেকেই করে আসছে,যখন ভাবিপুর কাছে বিচার দিবো তখন বুঝবে, হু।
-আচ্ছা দিস এখন চল রেডি হই,সামির ভাইয়াদের বাসায় যেতে হবে না?ইয়েএএএ
মারজিয়া পুতুলের দিকে তাকিয়ে একটা ভেঙচি কেটে বিড়বিড় করে বলে,
“এদিকে ছাইয়্যা হয়ে প্রেমের নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে,আবার ভাইয়া মারায় হু। কি মনে করেছে আমি কিছু জানিনা?”
পুতুল রেডি হচ্ছে কম লজিকহীন কথা বার্তা বলে মারজিয়ার মাথা খাচ্ছে বেশি।মেয়ে প্রেমে পড়ে এইসব আবুল তাবুল কথা বলছে এটা মারজিয়া নিশ্চিত,নাহলে এরকম ভাবনা কেউ ভাবে?এইযে এখন যেমন বলছে,
-আচ্ছা মারজিয়া ভাইয়ারা এমন হুট করে আমাদের নিয়ে ও বাড়িতে যাচ্ছে কেনো?আমি কিন্তু কোনো সন্দেহ সন্দেহ গন্ধ পাচ্ছি।আচ্ছা এমনো তো হতে পারে,যে ওখানে নিয়ে আমাদের অজান্তেই সামির ভাইয়া আর আমার বিয়ে দিয়ে দিলো!
-কেন এমন মনে হলো কেন?
-আরেহহ হয়না কত গল্প সিনেমায়।
-ওইসব গল্প সিনেমাতেই হয়।
পুতুল আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারজিয়া পুতুলকে থামিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান বাড়ির সবাই রওনা দেয় এমপিদের বাড়ির উদ্দেশ্য। এখন পর্যন্ত কেউ ঠিক করে জানেনা তারা কেনো যাচ্ছে,শুধু বাবা আর ভাই সব ঠিক করেছে।
এদিকে পুতুলের কেমন লজ্জাও লাগছে আবার ভালোও লাগছে,লজ্জা লাগার কারণ হচ্ছে কালকের সেই মেসেজটা।আর ভালো লাগার তো কারণের অভাব নেই।
গাড়ি দিয়ে যাওয়ায় বেশিক্ষণ সময় লাগে নি তাদের।গাড়ি থেকে বেড় হয়ে পুতুল বেশ অবাক হয়।অনেকদিন পর বাড়িটা দেখে সে,কিন্তু আজকে কেমন যেনো নতুন নতুন লাগছে,বাড়িটা কেমন সজ্জা সজ্জা লাগছে যেমনটা বাড়িতে কোনো রকম অনুষ্ঠান থাকলে হয়।শুধু কি তারা আসবে বলে এরকম নাকি অন্য কিছু?
ভেতরে যায় তাড়া!সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বসে।সবার সাথে হেসে হেসে কথা বললেও পুতুলের কেমন যেনো অস্থির লাগছে,দু চোখ শুধু সামিরকে খুঁজছে,কেনো যেনো মনে হচ্ছে সামনে কিছু একটা হবে,আর যা হবে বেশি একটা ভালো কিছু হবেনা।নেহাত এগুলো পুতুলের আজেবাজে চিন্তা হলেও তার ভেতরে ঝড় তুলছে ভাবনা গুলো।
পুতুল মাথা নিচু করে টেনশন করছে,আচমকা হাতে কারো খামচি অনুভব করে,পাশে তাকিয়ে দেখে মারজিয়া তার হাত খামচে ধরে সামনের দিকে ইশারা করছে।পুতুল তার চোখে অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে দেখে,’সেদিনের ওই মেয়েটা।সামির যার হাত ধরে ছিলো।এই মেয়ে এখানে কি করে?’
ধুক করে উঠে পুতুল।মারজিয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।মারজিয়াও তার দিকে একি ভাবে তাকিয়ে আছে।
সামিয়া আন্টি তাদের সামনের সোফাতে বসেই গল্প করছিলো সবার সাথে,ওই মেয়েটা একটা রুম থেকে বেড় হচ্ছে,চোখে চশমা সেটা স্টাইলের জন্য পড়েছে নাকি কি সে জানেনা,পড়নে লেডিস টি শার্ট আর টাওজার।দেখে খুব মর্ডান মনে হচ্ছে,তাহলে সে যা ভেবেছিলো তা কি ঠিক?
ড্রয়িংরুমের এতোগুলা মানুষকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মেয়েটা সামিয়ার সামনে এসে বলল,
-মনি আমি গেলাম ভালো থেকো।
সামিয়া হালকা কাধ ঘুরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-কে রাকি?চলে যাচ্ছিস, আচ্ছা যা সাবধানে যা!
ধুপধাপ পা ফেলে গেইট দিয়ে বেড় হয়ে গেলো মেয়েটা।পুতুল আর মারজিয়া হা করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।তার মানে মেয়েটার নাম রাকি সামিয়া তাদের দিকে তাকিয়ে খেতে বলল,আর কিছু বলল না।পুতুলের বাবা জিজ্ঞেস করলো।
-কই সামির কই তাকেই তো দেখছিনা।
সামিরের কথা উঠতেই পুতুল এইবার ফুল এটেনশন দিলো তাদের উপর।সামিয়া আবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে তার বাবার উদ্দেশ্য বলল,
-উপরেই আছে,আসলে একটু স্ট্রেঞ্জের মধ্যে আছে তো তাই একাই রয়েছে।
-আচ্ছা কোনো সমস্যা নেই,আমরা নাহয় পরে কথা বলে নিবো নি এখন একটু একা থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিক।তা ছাড়া আপনারা যা করেছেন আমাদের জন্য বিশেষ করে সামির বাবা!
ফায়াজ এইবার মুখ খুলল পুতুলের বাবার হাত ধরে বলল,
-আরে কি বলিস না,তোর বিপদে আমরা পাশে দাড়াবো না তাকি হয়?আর সামিরও যা করেছে তার জন্য আমাদেরব খুব ভালো লেগেছে,ছেলেকে ভালো মতো মানুষ করতে পেরেছি এটাই অনেক।আর তার পেছনে কিন্তু তোর ও অবদান রয়েছে।
বলে তাড়া হাসতে লাগলো আবার গল্প জুরে দিলো।এদিকে পুতুলের চিন্তা যেনো আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলো,কিসের ঝামেলা কি গুছিয়ে নিবে?
-আচ্ছা ওইযে আমি হসপিটালে থাকা কালিন সামিরের সাথে আরেকটা ছেলে ছিলোনা কি জানি নাম,সে কোথায়?তাকেও কিন্তু আমার অনেক ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।
-ও হ্যা সিজান,ওকে ফোন করে বলেছি আসতেছে হয়তো।
বলার আগেই সিজান দৌড়ে ড্রয়িং রুমে এসে হাজির। দেখে মনে হচ্ছে খুব তাড়াহুরো করে এসেছে,এসেই সবার আগে মারজিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো,তারপর এগিয়ে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।তারপর উপরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর এখন তাদের যাওয়ার পালা।পুতুলের মন অস্বস্তিতে ভুগছে,একটিবারো সামিরের সাথে তাদের দেখা হয়নি।এই সিজানটাকেও হাতের নাগালে পাচ্ছে না যে কিছু জিজ্ঞেস করবে।
তখন পুতুল খেয়াল করলো।করিডরের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে সিজান তাদের ইশারা ডাকে,পুতুল বলে কিভাবে যাবে।তারপর একটা উপায় পেয়ে সামিয়ার উদ্দেশ্য বলে,
-আন্টি যাওয়ার আগে মারজিয়া একটু আপনাদের বাড়ি ঘুরে দেখতে চাচ্ছে নিয়ে যাই?
মারজিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায় সে কখন বলল এ বাড়ি ঘুরে দেখবে?
সামিয়ার অনুমতি পেয়ে পুতুল মারিয়াকে টেনে উপরে করিডরের এক কোনায় নিয়ে যায়।যেখানে সিজান দাঁড়িয়ে আছে,তার সামনে এসে দাড়াতেই মারজিয়া পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,
-এখানে নিয়ে এসেছিস কেনো আর আমি কখন বললাম যে এ বাড়ি ঘুরে দেখবো?
পুতুল মারজিয়ার কোনো কথার উত্তর দেয় না।সিজানকে সামিরের কথা জিজ্ঞেস করতে উদ্যোগ হতেই পেছন থেকে হাতের টান পড়ে,পুতুল তাকিয়ে দেখে সামির।কিন্তু কিছু বলার আগেই সামির ঝড়ের গতিতে পুতুলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।মারজিয়া আৎকে উঠে,পুতুলকে ধরতে যাবে তার আগেই সিজান তাকে ধরে আটকে রাখে,মারজিয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
-কি হচ্ছেটা কি?পুতুলকে নিয়ে কই যাচ্ছে!আমাকে আটকালেন কেনো ছাড়ুন ছাড়ুন বলছি।
সিজানের সাথে লড়াই করে মারজিয়া প্রায় ছুটেই যাচ্ছিলো।পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সিজান মারজিয়াকে একটা ঘরে নিয়ে ভেতর থেকে আটকে দিয়ে তাকে কিছু একটা বলে।কিছুক্ষণ ভাবার পর পুরো দমে যায় মারজিয়া।খাটে বসে পরে সাথে সিজানও!
_______
সামির পুতুলকে টেনে ছাদে নিয়ে বাহিরের সিঁড়ি দিয়ে বাগানে নেমে যায়।এই পর্যন্ত পুতুল অনেক প্রশ্ন করে সামিরকে কিন্তু সামির এর একটারো উত্তর দেয় না।হাত ধরে টেনে কালো গোলাপ গাছের সামনে দাঁড়ায় তারা দুজন।পুতুল অনেকদিন পর এই গাছটার সামনে এসে দাড়ালো।কিন্তু সামির তাকে আবার এখানে কেনো নিয়ে আসলো?
-সামির ভাইয়া কি হয়েছে আপনার?আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেনো,কিছু বলবেন?
এইবারো কিছু বললনা সামির,কিন্তু একটা কান্ড ঘটালো যেটাতে পুতুল খানিকটা ইতস্তত বোধ করলো একটু লজ্জাও পেলো বধোয়।
সামির খানিকটা প্রসারিত হয় পুতুলের দিকে।পুতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ পুতুল মাথা নত করে নেয়।সামির আরো একটু কাছে গিয়ে পুতুলের দু হাত নিজের দু হাতে পুরে নেয়।এভাবে অনেক্ষণ দুজন চুপ থাকে,পুতুল মিন মিন স্বরে শুধু এইটুকু বলে,
-সামির ভাইয়া!
চট করে সামির পুতুলের হাত ছেড়ে দেয়।তার কাছ থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়।কালো গোলাপ গাছের সামনে গিয়ে ফুল ছিড়তে থাকে,পুতুল শুধু অবাক হয়ে দেখতে থাকে।প্রায় আটটার মতো কালো গোলাপ ছিড়ে এনে পুতুলের হাতে গুজে দিয়ে বলে,
-তোমার জন্য!
এইবার সত্যি সত্যি পুতুল হার্ট ফেল করবে।সব সপ্ন সব!এ কি কখনো হতে পারে?নাতো সে তো নিজের স্ব চোক্ষে দেখছে তার হাতে তার এতো বছরের আশা করা কালো গোলাপ!
মুখ প্রায় দু ইঞ্চির মিতো ফাক হয়ে যায় পুতুলের।সামির জানতো পুতুলের রিয়াকশন এমনি হবে,তাই একটু হাসলো!আবার থম মেরে পুতুলের দিকে তাকিয়ে রইলো।মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই অনেক কিছু বলছে সে,কিন্তু এই মুহুর্তে পুতুল তা কানি কোনাও বুঝতে পারছে না।সামির আবার দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
-আজ থেকে এই গাছের অর্ধেক মালিক তুমি,পুরোটা তোমাকে আমি দিতে পারবোনা।তাই অর্ধেকি দিলাম।কিন্তু এই গাছের অর্ধেক মালিক তুমি বলে যে যখন মন চায় ফুল ছিড়বে তা একদমি হবে না।এই গাছটার অর্ধেক তোমার থাকলেও ছেড়ার ক্ষমতা শুধু একজনের থাকবে,সেটা আমি না অন্য কেউ।কে সেটা কখনোই জানতে চাইবে না কখনোই না।
চলবে..!
{বলুন তো কি হতে পারে সামিরের!সামনের টুইস্টের জন্য সবাই রেডি তো?}