আরশিকথা -১৫
সুপ্রভা জুবায়েরকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে, এটা কিভাবে সম্ভব!
শুভ্রর বিশ্বাস হতে চায় না।
দীপ্র, এখন দায়িত্ব তোর নিতে হবে। প্রভা তোর ভালো বন্ধু! আমি জানি ও শুধু আমাকেই ভালোবাসে, এখন জিদ করে বিয়ে করছে!
-জিদ করছে না ভাইয়া, তুই চলে যাওয়ার পরে ও কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, আমি জানতাম ওর পছন্দের মানুষ ওকে ছেড়ে গেছে কিন্তু একবারের জন্যও বুঝতে পারিনি, সেই মানুষটা তুই ছিলি!
-তার জন্য কারণ ছিল দীপ্র, তুই আমাকে জানিয়েছিলি, প্রভাকে তোর পছন্দ। আমি কি করতাম তখন!
আজকে এত কথা বলছিস, সেদিন কেন বলিস নি!
শুভ্র নিজের ভুল খুব ভালো করে বুঝতে পারছে, কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করা শুভ্রর স্বভাবে নেই! ধীর স্থির দীপ্রর দিকে তাকিয়ে, শুভ্র বলল, এখন শুধু একটাই সত্য, প্রভা শুধু আমার, ও অন্য কারো হতে পারবে না।
তুই যা, প্রভাকে বুঝিয়ে রাজি কর!
এটা কি সম্ভব!
অবশ্যই সম্ভব। সোজা ভাবে বলবি, সোজা না হলে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবি, বলবি ভাইয়া তোর জন্য সিক হয়ে গেছে, হসপিটালে ভর্তি করতে হবে!
তুই কি ক্রেজি, ভাইয়া?
শুভ্র রহস্যময় হাসি হেসে বলল, প্রয়োজনে গেলাম হসপিটালে!
★★★
জুবায়ের এর সাথে সুপ্রভা শপিংয়ে বেড়িয়েছে, এনগেজমেন্ট রিং কিনবে, ডায়মন্ড গ্যালারি থেকে।
শো রুমে ঢোকার আগে, জুবায়ের বলল, সুপ্রভা, এসো, একটা ড্রিংকস নিয়ে নিই।
প্রভা এগিয়ে গেল। জুস নিয়ে জুবায়ের বলল, তুমি সিওর তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও?
প্রভা অবাক হয়ে বলল, কেন, কোনো সন্দেহ আছে?
না, সন্দেহ নেই! তবে একটা বিষয় মনে হচ্ছে, তুমি নিজের থেকে পালাতে চাইছ! এভাবে তুমি সারাজীবন বাঁচতে পারবে? একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে?
আমার সাথে তুমি হয়তো ভালো থাকবে, থাকার চেষ্টা করবে, কিন্তু তোমার সব অনুভূতি শুভ্র নিয়ে বসে আছে। তাই আরেকবার ভাবো প্লিজ!
আরেকবার মানে? এখন আর ভাবার কিছু নেই!
প্রভা শক্তভাবে জবাব দিলো।
শোনো, তুমি অনেক শক্ত একটা মেয়ে, কিন্তু শুভ্রর সামনে গেলেই তুমি ভেঙেচুরে যাচ্ছ! কি দরকার এই ভালোবাসা অস্বীকার করা! ওর হয়তো সত্যিই কোনো সমস্যা ছিল, যে কারণে তোমাকে ছেড়ে যেতে হয়েছিল।
প্রভা আর কিছু উত্তর দিলো না। জুবায়ের ওকে সহজভাবে একসেপ্ট করতে পারছে না। ওর মনে সন্দেহ ঢুকে গেছে, প্রভা।সারাজীবন চেষ্টা করলেও জুবায়েরকে বোঝাতে পারবে না, ও শুভ্রকে ভুলতে চায়, বারবার চেষ্টা করেও ভুলতে পারছে না।
ওরা আংটি না কিনেই ফিরে গেল বাসায়।
★★
দীপ্র ফোন করছে একটানা৷ প্রভা রিসিভ করল অনেকক্ষণ পরে।
কি হলো, কোথায় ছিলি!
আংটি কিনতে বের হয়েছিলাম।
কেনা হলো?
না।
কেন?
পরে কিনব!
প্রভা, একটা কথা বলছি, তুই কোনো রিএ্যাক্ট করবি না।
প্রভা বলল, আচ্ছা রিএ্যাক্ট করব না। আমি রিএ্যাক্ট করতে ভুলে গেছি।
ভাইয়া আমাকে সবটা বলেছে প্রভা! আমি প্রথমে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম তোরা আমাকে কিছু বলিস নি, বুঝতেও দিস নি, পরে মনে হলো, এটা তোদের ভীষণ ব্যক্তিগত বিষয়! আমি সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি।
প্রভা কিছু বলার মত খুঁজে পেল না।
প্রভা, ভাইয়াকে একসেপ্ট করে নে প্লিজ! আর কোনো কথা বাড়াস না।
প্রভা চুপ করে থেকে বলল, শুভ্র কোথায়?
ও আজকে বাসায় গেল। মার সাথে কথা বলে তোদের বাসায় পাঠাবে। প্রভা, ভাইয়া কল করছে, একটু রাখ তো রিসিভ করি!
রাখতে হবে না, এ্যাড করে নে!
দীপ্র হেসে এ্যাড করে নিলো!
সম্পূর্ণ অপরিচিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– হ্যালো, কে আপনি? ফোন যার কী হয় আপনার?
দীপ্র বলল, কেন, কি হয়েছে, আপনি কে? ভাইয়া কোথায়?
এখানে একটা একসিডেন্ট হয়েছে, বাসের সাথে। ফোনটা রাস্তায় পেলাম। কার ফোন তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
দীপ্র হতভম্ব হয়ে বলল, লোকেশনটা কোথায়?
ব্রীজ পেরিয়ে আধঘন্টা মত পরে, বাঁশতলা বাজারের কাছে।
প্রভার হাত থেকে ফোনটা পরে গেল।
চলবে
শানজানা আলম
( আগুনপোকা- প্রি-অর্ডার করতে পারেন কমেন্টে দেওয়া লিংকে)