#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ১৬
বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। যাকে বলে রাস্তা-ঘাট ডুবিয়ে দেওয়া বৃষ্টি। এ বৃষ্টির মধ্যে সাধারণত কেউই ঘুম থেকে উঠতে চাই না। আর প্রাচুর্যের কথা আসলে তো আরও না। কারন সে অলস। এইযে সকাল বেলা তার মা তাকে নাহলেও সাত থেকে আট বার ডেকে গিয়েছে কলেজে যাওয়ার জন্য কিন্তু না তার এক কথা সে এই বৃষ্টির মধ্যে কিছুতেই কলেজে যাবে না। তার কথা শুনে মিসেস শাহানা বললো বাড়ির গাড়িতে যাবে আসবে তাতে বৃষ্টি হলেও কি বা নাহলেও কি। কিন্তু প্রাচুর্য তা শুনলে তো। সে আজকে যাবে না তো যাবেই না। শেষে মিসেস শাহানা হাল ছেড়ে বকবক করতে করতে চলে গেলেন। এখন প্রাচুর্য শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
কিন্তু তার সাধের এতো শান্তির ঘুম বোধহয় সহ্য হলো না প্রিয়তির। প্রাচুর্য কলেজে না গেলে কি হবে প্রিয়তি সেই সকাল সকাল বৃষ্টি মাথায় ভিজে পুরে হাজির হলো চৌধুরী বাড়ির দোরগোড়ায়। তার এ বাড়িতে আসা এই প্রথম নয়। আগেও এসেছে বহুবার। তাই এ বাড়ির কাউকে চিনতে ভুল হলো না তার। বা তাকেও চিনতে কারো ভুল হয়নি এ বাড়ির। এমন কাক ভেজা অবস্থায় প্রিয়তিকে দেখতেই আঁতকে উঠলেন মিসেস ফারাহ। একটা তোয়ালে নিয়ে তাড়াতাড়ি এসে 🫢প্রিয়তির মাথা মুছে দিতে দিতে বললেন—
” একি এমন অবস্থা কিভাবে হলো তোমার মা?”
” আর বলবেন না আন্টি। প্রাচুর্য আজকে কলেজে আসে নি বলে আমার ও আর ক্লাস করতে মন চাইলো না। ইচ্ছা হলো আপনাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি একটু। অনেকদিন তো আসা হয় না। তাই একটা রিকশা ডেকে উঠে পরলাম। কিন্তু বাইরে এতো পরিমান বৃষ্টির তান্ডব চলছে যে রিকশায় উঠেও লাভ কিছু হলো না সেই ভিজে চুপচুপে হয়ে গেলাম।”
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো প্রিয়তি। মিসেস ফারাহ প্রিয়তির কথা শুনে হেঁসে বললেন—
” তা বেশ করেছো। এমন তো একটু মাঝে মাঝে আসতে পারো তাহলে তোমার ও ভালো লাগে আর আমাদের ও।”
প্রিয়তি মনে মনে ভাবলো—আসতে তো আমার ও ইচ্ছা করে আন্টি। কিন্তু আপনাদের বাড়ির মেয়েই তো আনতে চাই না। নাহলে মন ভরে একটু আপনার ছেলেটা কে দেখতাম। কি সুন্দর আপনার ছেলেটা।
কিন্তু মুখে বললো— “আসলে আন্টি সময় হয় না তো। জানেই তো সকাল থেকে কলেজ তারপর আবার ব্যাচ। সব মিলিয়ে প্রেসার যায় একটু। তবে আমি চেষ্টা করবো আসার।”
” থাক অনেক কথা হয়েছে এবার প্রাচুর্যের ঘরে যেয়ে ঝটপট কাপড় পাল্টিয়ে আসো তো। নাহলে একটু পরেই ঠান্ডা লেগে যাবে। তারপর এসে যতো খুশি ততো কথা হবে। এখন তাড়াতাড়ি যাও। আমি সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”
” ঠিক আছে আন্টি”
.
.
প্রিয়তি প্রাচুর্যের ঘরে এসে দেখলো প্রাচুর্য কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তা দেখে প্রিয়তি প্রাচুর্যের গায়ের থেকে কাঁথা টান দিয়ে ফেলে দিলো। তাতে প্রাচুর্যের চোখের উপর আলো এসে পরতেই চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। প্রিয়তিকে কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে বললো—
“তুই?”
“জ্বী আমি। আমার ঘুম হারাম করে এখন আপনি আরামসে ঘুমাচ্ছেন? ”
” শাঁকচুন্নি তা বলে তুই আমার ঘুম ভাঙাবি?”
” ওরে আসছে আমার মহারানী। এখন ওঠ তাড়াতাড়ি। আমাকে জামা দে একটা। ফ্রেশ হবো।”
” তা এমন ভেজা পুরা হয়ে কোথা থেকে উদয় হলি?”
” আসতে আসতে ভিজে গেছি। এখন জামা দে তো।”
প্রাচুর্য উঠে তার ওয়ারড্রব থেকে একটা নতুন থ্রি-পিস বের করে দিয়ে বললো—
” যা ওয়াশরুম থেকে থেকে চেঞ্জ করে আয়। আমি ততোক্ষণে বিছানা ঠিক করছি।”
প্রাচুর্য বিছানা ঠিক করতে করতে রুমে আসলেন মিসেস ফারাহ। প্রাচুর্যকে বিছানা ঠিক করতে দেখে মিষ্টি হেসে বললেন —
” আমার ছোট মেয়েটা বিছানা ঠিক করছে বুঝি? দেখি সর বাকিটুক আমি করছি।”
প্রাচুর্য মিসেস ফারাহ কে জড়িয়ে ধরে বললো—
” আর লাগবে না বড় মা। আমি পারবো তো। তোমার এই ছোট মেয়ে এখন বড় হয়ে গেছে।”
” হ্যাঁ তাই তো। এখন বিয়ে টা দিয়ে দি তাহলে?”
” আরে না বিয়ে করার মতো অত বড় হয়নি।”
মিসেস ফারাহ ও প্রাচুর্যের কথার মধ্যে ওয়াশরুম থেকে বের প্রিয়তি। প্রিয়তিকে দেখতেই মিসেস ফারাহর মনে পরলো এই রুমে আসার কারন। তিনি তৎক্ষণাৎ বললেন—
” দেখেছিস তোর সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেলাম যে এই রুমে কেনো এসেছি। প্রাচুর্য যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। একসাথে খেতে বসবি সবাই।”
” বড় মা তুমি প্রিয়তি কে নিয়ে যাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ততোক্ষণ ও তোমার সাথে গল্প করুক।”
প্রাচুর্যের কথায় মিসেস ফারাহ প্রিয়তিকে নিয়ে চলে গেলেন।
এ বাড়িতে এমনি তিন বেলায় সকলে একসাথে খায় শুধু প্রাচুর্য ছাড়া। কারন প্রাচুর্যের সক্কাল সক্কাল কলেজ থাকে। তাই সবাই এক সাথে খেলেও সে পারে না। তবে বন্ধের দিন সে সকলের সাথে খাওয়া মিস করে না। আজ যেহেতু বন্ধ তাই সে সকলের সাথে একসাথেই খাবে।
প্রাচুর্য ওয়াশরুম থেকে মুখ মুছতে মুছতে বের হলো। ভেজা তোয়ালে চেয়ারের উপর মেলে দিয়ে ওড়না জড়িয়ে বের হলো রুম থেকে। সে মুহুর্তে বের হলো তাফসির ও। প্রাচুর্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাফসিরের দিকে তাকিয়েই থমকে গেলো। হার্টবিট মিস হলো বোধহয় তার। কি সুন্দর লাগছে আজ তাকে। বোধহয় কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে কারন চোখ দুটো এখনো হালকা ফোলা। মাথার চুল গুলো এলোমেলো। কিছুটা কপালে এসেও পরেছে। পরনে তার গোল গলার ব্লাক টিশার্ট।
প্রাচুর্যকে তার দিকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো তাফসির। এগিয়ে এসে প্রাচুর্যের মুখের উপর ফু দিতেই ধ্যান ভাঙলো প্রাচুর্যের। তা দেখে তাফসির মিটমিট করে হেঁসে প্রাচুর্যকে বললো—
” ম্যাডাম দেখা কি শেষ হয়েছে নাকি আরও দেখবেন?”
তাফসিরের কথায় লজ্জায় পরে গেলো প্রাচুর্য। বুঝতে পারলো নিজের ভুল। মনে মনে নিজেকে গালি ও দিলো এভাবে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকার জন্য। আমতাআমতা করে বললো—
” ন.না মানে কিছু দেখছিলাম না তাফসির ভাই।”
” সত্যি? কিন্তু আমি তো দেখলাম আমাকে দেখছিস।”
” আপনার চোখে সমস্যা। ডাক্তার দেখান। সবসময় উল্টা পাল্টা দেখেন। আমি যায় আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
” এই শোন ”
” জ্বি বলুন”
” বাসায় এসেছে? গলা শুনলাম। ”
” আমার বান্ধুবী প্রিয়তি এসেছে।”
তাফসির চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন—
” সানজিদা প্রিয়তি?”
তাফসিরের কথায় প্রাচুর্য অবাক হয়ে বললো—
” আপনি কি করে জানলেন ওর পুরো নাম।”
তাফসির মুহুর্তেই মুখটাকে গম্ভীর করে বললো—
” ডিস্টার্ব করছে কালকে রাত থেকে ননস্টপ। আমার ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক কোথাও বাদ রাখেনি মেসেজ দিতে।”
প্রিয়তি এমন ছ্যাচড়ামো করেছে শুনে রাগ হলো প্রাচুর্যের। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে তাফসির থমথমে গম্ভীর কন্ঠে বললো—
” ওকে বলে দিস যেনো আমাকে আর বিরক্ত না করে। নাহলে ব্যাপারটা ভালো হবে না। সাবধান করে দিস।”
” আর করবে না তাফসির ভাই। নিশ্চিন্ত থাকুন।”
” বেশ। নিচে চল।”
খাবার টেবিলে সবাই প্রিয়তির সঙ্গে নানা রকম কথা বললেও বললো না প্রাচুর্য ও তাফসির। পাশ থেকে প্রিয়তি তাফসিরকে নিয়ে হাজারটা কথা বললেও কোনো প্রতি উত্তর করলো না সে। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে আসলো।
প্রিয়তি প্রাচুর্যের রুমে আসতেই প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে বললো—
” কিরে কালকে যে কাজটা দিয়েছিলাম করেছিস?”
” না ”
” কেনো? ”
” বড় মা চলে এসেছিলো ”
” পরে বলতি ”
” আমাকে কি তোর চাকর মনে হয়? আর কি বলেছিস তুই তাফসির ভাইকে?”
” আমি আবার কি বললাম?”
” তুই মেসেজ দিস নি ওনাকে?”
” ও হ্যাঁ দিয়েছিলাম। সিন করে রেখে দিয়েছে কোনো রিপ্লাই দেয় নি। কি এটিটিউড ভাবা যায়!! আই লাইক ইট। আচ্ছা এক মিনিট এক মিনিট তুই কি করে জানলি?”
” জানা টা কি খুব কঠিন মনে হয়? তার আগে বল তুই এমন কেনো করলি? জানিস ওনার সামনে কতোটা ছোট হয়েছি আমি?”
” সব তোর জন্য। ”
” আমার জন্য?? ”
” হ্যাঁ। তুই যদি কালকে রাতে মেসেজ সিন করতি বা আমাকে সব জানাতি তাহলে তো আর আমি কিছু করতাম না। আর মেইন কথা কি জানিস? আমি জানতাম তোর দ্বারা এসব সম্ভব না তাই যা বলার আমিই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু অগত্যা এটিটিউড বয় তো মেসেজ ই সিন করেন না। দেখলি না আজকে খওয়ার টেবিলেও তাকালো পর্যন্ত না। মনে হচ্ছিলো সে ছাড়া আর কেউ উপস্থিত নেই।”
” শোন তোকে ভালো কথা বলছি। এসব বাদ দে। উনি রিলেশন করবে না তোর সাথে। তার থেকে ভালো এমন কোনো কাজ করিস না যাতে আমি বা তুই ছোট হই।”
” তুই এমন কথা বলতে পারলি? বেশ চলে যাচ্ছি তোর বাড়ি থেকে। বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে বেইমানি করলি।”
” আরে শোন না। এখানে বেইমানির কি করলাম? ভুল বুঝিস না আমাকে”
#চলবে