অ্যাটলাস শৃঙ্গে
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১৬.
গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে আসা হিমশীতল বাতাসে গায়ে শিহরণ অনুভব করে ল্যায়লা। জানালার সাথে মাথা হেলান দিয়ে বাইরের দৃশ্য অবলোকন করছে সে। তখনই নাহালের কাছ থেকে প্রথম প্রশ্নটা পায় সে,
” আপনাদের কি লাভ ম্যারেজ? ”
ল্যায়লা আড়চোখে ফাতিহর দিকে তাকায়। ফাতিহর দৃষ্টি আর মুখশ্রী জুড়ে কাঠিন্যভাব। ইসামের উপর বরাবরই বিরক্ত সে। ল্যায়লা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দেয়,
” না। ”
ইসাম কথার মাঝে বাগড়া দিয়ে বলে,
” একচুয়্যালি ওদের এরেঞ্জ ম্যারেজ। হানিমুনে যাচ্ছে। তাই দুজনেই বেশ লজ্জা পাচ্ছে। ”
ইসামের কথাটুকু বলতে দেরি কিন্তু গাড়ির সামনের লুকিং গ্লাস দিয়ে তার দিকে দু জোড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে দেরি করে না ল্যায়লা এবং ফাতিহ। ইসাম সেই দৃষ্টি দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তাই আগুনে আর পেট্রোল না ঢেলে নাহালকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
” ওদের ব্যাপারে জেনে তোমার লাভ নেই। ওরা দুজনই নিরামিষ। তুমি আমার ব্যাপারে যা জানতে চাও প্রশ্ন করতে পারো। আমি খুশি খুশি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। ”
কথাটা বলেই ইসাম নাহালের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে। নাহাল টিপ্পনী কেটে বলে,
” ওহ। তাই নাকি? এজন্যই আপনি তাদের মাঝখানের আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে নিজেও তাদের সাথে হানিমুনে যাচ্ছেন?
ইসামের চোখ সরু হয়ে আসে। মেয়েটা কথা জানে ভালো। ইসাম নিজের ঘাড়ের দিকের কলার নাচিয়ে বলে,
” আমি যাচ্ছি যেন পথে কাউকে পেয়ে যাই। যার সাথে পরবর্তী বছর আমি হানিমুনে যেতে পারবো। এন্ড আই এম শিওর পথে কাউকে না কাউকে আমি পেয়েই যাবো। আই ক্যান ফিল দ্যাট। ”
__________
বেশ অনেকক্ষণ ধরে ল্যায়লার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফাতিহ পাশ ফিরে একবার তাকায়। ল্যায়লা মাথা নুইয়ে বসে আছে। ফাতিহর চিন্তা হয়। এভাবে বসে আছে কেন মেয়েটা? খারাপ লাগছে? ফাতিহ এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে রেখে আরেক হাত বাড়িয়ে ল্যায়লার মুখ আড়াল করে রাখা চুল গুলো মুখের সামনে থেকে সড়িয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করে,
” ঠিক আছো ল্যায়লা? ”
ল্যায়লার মাথা ঘুরাচ্ছে হঠাৎ করে। চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছে। পেট গুলিয়ে বমিও আসছে। সে একহাতে ইশারা করে বলে গাড়ি থামাতে। ফাতিহ সাথে সাথে রাস্তার একপাশে গাড়ি থামায়। ফাতিহকে গাড়ি থামাতে দেখে ইসাম আর নাহালও আগ্রহী দৃষ্টিতে সামনে তাকায়।
গাড়ির ব্রেক কষতেই ল্যায়লা কোনোমতে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার একপাশে দৌড়ে গিয়ে একটি গাছের কাছে দাঁড়িয়ে বমি করে দেয়। ল্যায়লাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে ফাতিহও তার পিছু পিছু নেমেছিলো। যখন দেখে ল্যায়লা শরীরের ভার ছেড়ে দিচ্ছে তখন তাড়াতাড়ি তাকে আগলে ধরে। চিল্লিয়ে ইসামকে ডেকে বলে পানি দিতে।
আচমকা এমন পরিস্থিতি দেখে ইসাম ভড়কে যায়। নাহালের হাতের কাছে পানির বোতল থাকায় সে বোতল নিয়ে নেমে দৌঁড়ে ফাতিহর কাছে যায়। ফাতিহ একহাতে ল্যায়লাকে আগলে রেখেই তার মুখের সামনে পানি নিয়ে বলে,
” কুলি করে হাত মুখ ধুয়ে নাও। আরাম পাবে। ”
ল্যায়লা কোনোমতে কুলি করে চোখেমুখে পানি দিলেও এখনো তার শরীর নিস্তেজ লাগছে। ইসামও ইতিমধ্যে এসে পড়েছে সেখানে। সে চিন্তিত সুরে প্রশ্ন করে,
” ল্যায়লার কি হলো হঠাৎ? ”
ফাতিহ চিন্তিত সুরে বলে,
” মোশন সিকনেস হচ্ছে মনে হয়। ”
কথাটুকু বলেই সে ল্যায়লাকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়৷ নাহাল বলে উঠে,
” ভাইয়া, ভাবিকে আমার সাথে পিছনে বসিয়ে দিন। আমি খেয়াল রাখছি। ”
ফাতিহ তড়িৎ গতিতে জবাব দেয়,
” ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড তুমি সামনে বসবে ইসামের সাথে? আই ক্যান টেক কেয়ার অফ হার। ”
ফাতিহ এমন বিচলিত স্বরে কথা বলে, যেন সে নিজেকে ছাড়া অন্য কারো উপর ল্যায়লার দায়িত্ব দিতে রাজি না। নাহাল বলে উঠে,
” শিওর। আ’ম শিওর ভাবি আপনার সাথে বেশি কমফোর্টেবল ফিল করবে। ”
__________
সারা রাস্তায় আর কেউই তেমন একটা কথা বলে না। ল্যায়লা ফাতিহর কাধে ঘাড় রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফাতিহ মনে মনে বেশ আশাহত অনুভব করছে। মেয়েটার মুখের হাসি এমন ক্ষণস্থায়ী কেন? সবে তো মেয়েটা তাদের সাথে মিলে সময়টা উপভোগ করা শুরু করেছিলো। কিন্তু আবার সেই একই নিষ্প্রভতা তার চেহারায় এসে ভর করলো। এই বিষণ্ণতার সুতো কেটে কি ল্যায়লাকে মুক্ত করে দেওয়া যায় না? একটা অসীম আকাশ কি ল্যায়লাকে সাদরে গ্রহণ করে নিতে পারে না? যেই আকাশে ল্যায়লা মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ে বেড়াবে?
__________
আল মানাল কম্পিউটার কাছাকাছি আসতেই নাহাল গাড়ি থামাতে বলে। একবার পিছনে ফিরে ফাতিহকে ল্যায়লার খেয়াল রাখতে বলে বিদায় জানায় সে। ফাতিহ চোখের ইশারায় সামান্য হেসে বিদায় জানাতেই নাহাল ইসামের দিকে তাকায়। পরপরই সে এক হাত বাড়িয়ে সামান্য হেসে ধন্যবাদ জানায়। ইসাম নাহালের দিকে তাকিয়েই তার বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে মৃদু হ্যান্ডশেক করে। নাহাল আর অপেক্ষা করে না। সেখানেই নেমে পড়ে। তখনই ইসাম অনুভব করে তার হাতে একটি ছোট ভাজ করা কাগজ। ইসাম আগ্রহ নিয়ে কাগজের ভাজটি খুলতেই দেখতে পায় সেখানে গোটা ইংরেজি অক্ষরে লেখা,
” +212774295232
থ্যাংকস ফর দ্যা রাইড। ”
ইসাম হতভম্ব দৃষ্টিতে গাড়ির জানালা দিয়ে নাহালের যাওয়ার পানে তাকায়। তখনই নাহাল হাঁটতে হাঁটতে সামান্য পিছনে ফিরে হাসি বিনিময় করে। ইসামের বিস্মিত চেহারায় এবার হাসি ফুটে উঠে। সে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে,
” মেয়ে তবে এতো সেয়ানা? ”
__________
৪২ এভেনিউ সালাম আল বারিদ রোডের শেষ মাথায় যে দোতলা আধুনিক ধাচের বাড়িটা রয়েছে সেটা কোনো এক কালে ফাতিহর বাবা আলেদ্দিন আরাব তৈরি করেছিলেন। ইউরোপের ক্লাবে খেলার কারণে ফাতিহর বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরেই কাটাতে হয়। তার বাবা, মা দুজনেই তার সাথে মাদ্রিদে থাকে তাই। তার পরিবারের আরেকজন সদস্য হলো তার বড় বোন ফারাহ। যে নিজের স্বামী সন্তানের সাথে কানাডাতে স্থানীয়। তাই আপাতত রাবাতে তার বাসা সম্পূর্ণ ফাঁকা।
বাসার সামনে এসে ইসাম গাড়ি থামাতেই ফাতিহ মৃদুস্বরে ল্যায়লাকে ডাকে। ল্যায়লার হয়তো ঘুম কাচা ছিলো। তাই এক ডাকেই সে চোখ মেলে তাকায়৷ আশেপাশে একবার তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” আমাদের তো কাশবাহ দেস ওউদাইয়াস যাওয়ার কথা ছিলো। এটা কোন জায়গা? ”
ফাতিহ গাড়ি থেকে নেমে ল্যায়লার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
” অলরেডি মোশন সিকনেস হচ্ছে তোমার। ইউ শুড টেক রেস্ট নাও। আমরা কালকে ওউদাইয়াস যাবো। ”
ল্যায়লা ফাতিহর বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে নেমে আসে। ইসাম গাড়ি রাস্তার একপাশে পার্ক করতে থাকে৷ বাড়ির চারিদিকে ইটের তৈরি দেওয়াল দ্বারা ঘেরাও করা। মেইন গেটের ভেতর থেকে একজন লোক ফাতিহকে দেখেই এগিয়ে আসে গেট খুলে দেওয়ার জন্য। বেশভূষা দেখে ধারণা করা যায় ইনি এই বাসার দাঁড়োয়ান। তিনি গেট খুলতেই ফাতিহ হেসে সালাম দিয়ে বলে,
” ভালো আছেন আবদেল সাহেব? ”
লোকটা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলে,
” আলহামদুলিল্লাহ। আপনি ভালো আছেন ফাতিহ বাবা? ”
ফাতিহ হেসে মাথা নাড়ে। আবদেল সাহেব একবার ল্যায়লাকে দেখে নেয়৷ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ফাতিহর দিকে তাকাতেই ফাতিহ বলে উঠে,
” শি ইজ মাই গেস্ট। ”
__________
ঘরের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই ফাতিহ হাসি হাসি মুখে বলে উঠে,
” ওয়েলকাম টু মাই হোম। ”
ল্যায়লা বাসা ঘুরে দেখার সুযোগ পায় না। তার এই মুহুর্তে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। ফাতিহ তা বুঝতে পেরে ল্যায়লাকে একটা রুমে নিয়ে বলে,
” তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও। আমি খাবার আর নোসিয়ার মেডিসিন অর্ডার করে দিচ্ছি। খেলে আরাম পাবে। আর ইফ ইউ নিড এনিথিং জাস্ট লেট মি নো। ”
ল্যায়লা মাথা নেড়ে কেবল সম্মতি জানায়। ফাতিহ বেরিয়ে যেতেই ল্যায়লা সম্পূর্ণ রুমটা চোখ বুলিয়ে দেখে। এই বাসাটা ইসামের বাসার তুলনায় আলাদা আদলে সাজানো। অনেকটা ইউরোপিয়ান স্টাইলে। সব উডেন ফার্নিচার। সাদা আর কালো রঙের থিমে রুমের সব আসবাবপত্র। ল্যায়লা আর বেশি মাথা ঘামায় না। রুম ক্লিন থাকাতে সে সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমে তলিয়ে যায়।
__________
খাবার আর মেডিসিন ডেলিভারি পেতেই ফাতিহ ল্যায়লাকে ডাকতে এসে দেখে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই আর বিরক্ত না করে সে চলে যায়। লিভিং রুমে ইসাম বসে আছে। ফাতিহকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখেই ইসাম উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
” তুই থাক তাহলে। ল্যায়লার খেয়াল রাখিস। আমি আসছি। ”
ফাতিহ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” তুই কোথায় যাচ্ছিস? ”
ইসাম আড়মোড়া ভেঙে বলে উঠে,
” আমার দাদা মশাই খবর পেয়ে গিয়েছে যে আমি মরক্কোতে এসেছি। এইমাত্র জানালো যে তার লাঠির আঘাত থেকে যদি বাঁচতে চাই তাহলে এখনই বাসায় যেতে হবে আমার। ”
ইসামের কথা শুনে ফাতিহ হাসে। সে আফসোসের সুরে বলে উঠে,
” হামিদ দাদার হাত থেকে আজ কেবল আল্লাহই তোকে বাঁচাতে পারবে। বেস্ট অফ লাক। ”
ইসাম যেতে যেতে বলে,
” তোকে আমি পরে এসে দেখে নিবো। ”
ইসাম যেতেই ফাতিহ আরাম করে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিয়ে। যেহেতু ল্যায়লাও ঘুমাচ্ছে আর ইসামও চলে গিয়েছে তাই একা আর তার খেতে ইচ্ছে করছে না। একেবারে ল্যায়লা উঠলে তার সাথেই খেয়ে নিবে সিদ্ধান্ত নেয়। লিভিং রুমের মাঝে থাকা বিশাল টেবিলটার উপর থেকে সে হাত বাড়িয়ে রিমোট নিয়ে টিভি অন করে। ভলিউম একদম লো করে বসে খেলা দেখতে থাকে। তখনই তার ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই সে দেখে তার বোন কল করেছে। ফাতিহ কল রিসিভ করতেই ফোনের অপরপাশ থেকে একটা বাচ্চার স্বর ভেসে আসে।
” মামা। ”
ফাতিহ ৬ বছরের আদুরে ভাগনের কণ্ঠ শুনে হেসে বলে,
” কি খবর হামজা সাহেব? ”
বাচ্চাটা অভিযোগের স্বরে বলে উঠে,
” খবর ইজ নট সো গুড মামা। পাপা মাম্মার ভয়ে গতকাল থেকে বাসায় ফিরে নি। আর তোমার বোন পাপাকে না পেয়ে এখন আমার উপর রাগ ঝাড়ছে। ”
ফাতিহ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,
” কি আর করবে বলো? হাজার বছর ধরে তো এটাই চলে আসছে৷ স্বামীরা স্ত্রীর ভয়ে সর্বদা শঙ্কায় থাকে। তুমি যদি বড় হয়ে এমন বিপদে না পড়তে চাও তাহলে কখনো বিয়ে করো না। ”
সাথে সাথে ফোনের অপর পাশ থেকে একটি নারী কণ্ঠ বলে উঠে,
” আমার ছেলেকে এসব উল্টাপাল্টা বুদ্ধি দিয়ে নিজের মতো চিরকুমার বানাতে চাস নাকি? ”
” এ বাবা! আমি কেন চিরকুমার থাকতে যাবো? আমি তোকে বলেছিই, যেদিন হামজার বিয়ে দিবি সেদিন আমিও নিজের জন্য কাউকে খুঁজে নিবো। ”
ফারাহ টিপ্পনী কেটে বলে,
” আমি যতদূর জানি, তুই ইতিমধ্যে হামজার জন্য মামি খুঁজেও নিয়েছিস। ”
ফাতিহ ভ্রু কুচকে বলে,
” এসব আজেবাজে তথ্য তোকে কে দেয়? ”
ফারাহ একই স্বরে আবার বলে উঠে,
” ল্যায়লার সাথে দেখা কবে করাচ্ছিস সেটা বল। ”
ফাতিহ বুঝতে পারে এসব ইসামের কাজ। ফাতিহর তুলনায় ফাতিহর পরিবারের সাথে ইসামের খাতির বেশি। ফাতিহ মনে মনে বলে উঠে,
” হামিদ দাদার লাঠি যেন আজ সত্যিই তোর পিঠে ভাঙে। ”
__________
ল্যায়লার যখন ঘুম ভাঙে তখন বিকাল প্রায়। সে বিছানা ছেড়ে নেমে দরজার কাছে যেতেই দেখে সে দরজা ভিতর থেকে লক করতে ভুলে গিয়েছিলো। ল্যায়লা আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। সে রুম থেকে বের হয়ে দেখে দো তলায় এদিকে কারো শব্দই পাওয়া যাচ্ছে না৷ ল্যায়লা ভাবে ফাতিহ আর ইসাম হয়তো নিচে৷ তাই সে নিচে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতে নিয়েই লক্ষ্য করে তার পাশের রুমের দরজা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে। সেদিক দিয়ে ফাতিহর অবয়ব দেখা যাচ্ছে। ল্যায়লা ধীর পায়ে সেই রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজার আড়াল হতেই সে দেখে ফাতিহ নামাজ পড়ছে। ল্যায়লার মস্তিষ্কে সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে একটি চিন্তা ঘুরপাক খায়। তার মনে পড়ে যায় আজকে সকালে এখানে আসার পথে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সারা রাস্তায় ফাতিহর কাধে মাথা রেখে আসার দৃশ্য। আবার দুপুরে ঘুমানোর আগেও দরজা ভিতর থেকে লক করতে ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটাও তার মনে পড়ে। সাথে সাথে সে নিজেকে প্রশ্ন করে,
” আমি কেন ফাতিহকে বিশ্বাস করছি? বিশ্বাস করা তো আমার স্বভাবে পড়ে না। কাউকে বিশ্বাস করা এবং কারো সংস্পর্শে আসা নিয়ে তো আমার ঘোর সমস্যা ছিলো। তাহলে ফাতিহর সংস্পর্শে আমি খারাপ ফিল করছি না কেন? এটা কি ধরে অনুভূতি? ”
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]