#মন_ছুঁয়েছে_সে
#পর্বসংখ্যা_২৭
#মৌরিন_আহমেদ
– এ্যাই কানিজ, শোন তো!
অনন্যার ঘর থেকে বেরোতেই কানিজকে ডাক দেন জোহরা। মাথা ঘুরিয়ে দেখে কিচেনের দরজায় দাড়িয়ে আছেন উনি। আর হাত নেড়ে ইশারায় ওকে ডাকছেন। ও একবার অনুর ঘরের দিকে তাকালো। দরজা বন্ধ। ও বেরোনোর পর পরই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে সে। ভাবতে ভাবতেই আবারও মৃদু গলায় হাঁক ছাড়েন জোহরা,
– এ্যাই!
এবার কানিজ খানিকটা এগিয়ে আসে। কিচেনে ঢুকতেই দেখা যায় বেদানা গ্যাসের চুলার সামনে দাড়িয়ে কী যেন করছে। জোহরা বেগম মিটসেফ থেকে একটা বয়াম নিয়ে এগিয়ে দিলেন ওর দিকে। ওদের কর্ম ব্যস্ততা দেখে কানিজ হঠাৎ বোকার মতো বললো,
– আমাকে হঠাৎ ডাকলে কেন, আন্টি?
জোহরা মুখে কিছু বললেন না। কিন্তু হাত উঁচিয়ে ওকে থামতে ইশারা করলেন। বেদানার কাছ থেকে আগের বয়ামটা নিয়ে মিটসেফে রাখলেন। কিচেনের আরও কিছু জিনিসপাতি নাড়াচাড়া করা শুরু করলেন। তারপর বেদানার কাছে গিয়ে কী কী যেন বুঝালেন। বেদানা বুঝতে পেরে যখন তাকে চলে যাওয়ার কথা বললো তখন উনি কানিজের দিকে তাকালেন। হাত নেড়ে বললেন,
– আমার ঘরে চল্, কথা আছে তোর সাথে।
– কী কথা, আন্টি?
– আহ্ হা। চল্ তো!
অনেকটা ঠেলেঠুলেই কানিজকে নিজের ঘরে নিয়ে যান জোহরা।
– কী হলো কিছু বলছো না কেন?.. তুমিই না বললে কী যেন বলবে.. তা এখন বলছো না কেন?
প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন না জোহরা। গালে হাত রেখে কী যেন ভাবতে থাকেন। কানিজ ঘড়িতে সময় দেখে। অধৈর্যের মতো আবারও প্রশ্ন করে,
– আন্টি! তুমি কি কিছু বলবে না কি!.. ও আন্টি!
বলেই হাত দিয়ে ওনাকে একটা ঠেলা দিয়ে ওঠে। ঠেলা খেয়ে অনেকটা ধ্যান ভঙ্গের মতো হয় জোহরার। চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
– হ্যাঁ, বল্, কী বলছিলি….
– আমি আবার কী বলবো? তুমিই তো বলার জন্য ডাকলে…
– ওহ্, হ্যাঁ। বলছি…
বলেই আবারও চুপ মেরে যান জোহরা। কানিজ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায়। ঠিক বুঝতে পারছে না, জোহরা বেগমের এমন ব্যবহারের কারণ। উনি হঠাৎ এভাবে ডেকে এনে বসিয়ে রেখেছেন কেন?
হঠাৎ জোহরাকে খুব উতলা দেখাতে লাগলো। উনি কেমন ব্যাকুল চিত্তে কানিজের হাত দুটো ধরলেন। ও লক্ষ্য করলো ওনার মুখের ভাব বদলে গেছে। কেমন অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে চেহারায়। অবাক হয়ে বললো,
– কী হয়েছে তোমার,আন্টি?
– আমার কিছু হয় নি রে, মা। অনুর হয়েছে। ও হঠাৎ করে বদলে গেছে তুই দেখতে পারছিস না? একা একা একা থাকে, ঠিক মতো কথা বলে না, খায় না, ঘুমোয় না। কাল রাতে দেখলাম… ব্যালকনিতে দাড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে, হাসছে। তাও আবার যে সে হাসি না, খিলখিলিয়ে হাসি। আ-আমি তাকিয়ে দেখি, কে-কেউ নেই। অথচ ও কথা বলছে, হাসছে। আ-আ- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কানিজ! কিচ্ছু বুঝতে পারছি না!
বলতে বলতেই ওনার মুখে কেমন যেন একটা ভয়ের ছাপ ফুটে ওঠে। উনি উতলা হয়ে উঠে কানিজের দু’ হাত আরও জোড়ে চেপে ধরেন। অসহায় গলায় বললেন,
– আমি জানি না, আমার মেয়েটার কী হয়েছে… জিজ্ঞেস করি, আমায় কিচ্ছুটি বলে না। তুই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড.. ওকে তোকে নিশ্চয় বলেছে। বল্ না, ওর কী হয়েছে?.. দেখ, আমি ওর মা। আমার কী মন খারাপ হয় না ওর জন্য?.. আমি তোকে বোঝাতে পারবো না ওর জন্য আমার ভেতরটায় কী হয়ে যাচ্ছে.. বুকের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে ওর অমন মলিন মুখ দেখে। আমার ফুটফুটে সুন্দর রাজকুমারীর মতো মেয়েটা.. কেমন করে বদলে গেল!.. কানিজ, তুই-তুই আমাকে খুলে বল্, প্লিজ!.. আমি জানি ও তোকে সব বলেছে.. ও তোকে না বলে থাকবেই না!.. বল্ না, মা। বল্?
কানিজ কী করবে ভেবে পায় না। জোহরা বেগম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন। নিজের একমাত্র মেয়ের জন্য তার কী অসীম ব্যাকুলতা! কতো ভালোবাসেন ওকে! অথচ ওর বাবা-মা? যে যার মতো বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত। ওর খোঁজ নেয়ারও যেন কারও সময় নেই। ক’দিন পরপরই তারা এদেশ থেকে ওদেশ দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। এই এখন যেমন জাপানে আছেন। লতা ফুপিন যে দেশে এলো তাতে একবারও কি দেশে আসার দরকার মনে করলেন না?
– এ্যাই কানিজ, কথা বলছিস না কেন? বল্ না!
কানিজের নিরবতা দেখে ওর বাহু ধরে ঝাঁকালেন জোহরা বেগম। ভীষণ অস্থির হয়ে আছেন উনি। অনন্যার এমন পরিবর্তন উনি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। অবশেষে মুখ খোলে কানিজ। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
– তুমি আমাকে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না, আন্টি। আমি বলতে পারবো না। অনু, আমার বন্ধু.. আমি ওকে প্রমিজ করেছি… এ আমার পক্ষে অসম্ভব! তুমি ওকে জিজ্ঞেস করো। ও বলবে তোমাকে, নিশ্চয় বলবে…
– ও বলবে না বলেই তো তোকে জিজ্ঞেস করছি। প্লিজ, মা আমার, এমন করিস না। আমাকে সবটা খুলে বল্। অনুর কী হয়েছে আমার তো সেটা জানতে হবে, তাই না? আমি তো ওর মা!.. আমাকে বল্..
কানিজ ভীষণ দ্বিধায় পড়ে যায়। কী করা উচিত চিন্তা করে। একদিকে বন্ধুকে দেয়া কথা রাখার পালা, অন্যদিকে বন্ধুর অসুস্থতায় কথা ভেঙে দেয়ার পালা। কোনটা করবে ও?
– অনু, একটা ছে-ছেলেকে ভা-ভালোবাসে।… ছেলেটার নাম ধ্রুব।.. অদ্ভুত চরিত্রের ছেলে… কী করে না করে আমরা কিছুই জানি না। অদ্ভুদ অদ্ভুদ কথা বলে…
– ওর সাথে সম্পর্ক কী ভেঙে গেছে অনুর?
অনেকটা স্তম্ভিত চাহনিতে প্রশ্ন করেন জোহরা। মাথা নাড়ে কানিজ। আগের মতই ধীর কণ্ঠে বললো,
– নাহ্। ওদের কোনো সম্পর্কই ছিল না। অনু যে ছেলেটাকে ভালোবাসে ব্যাপারটা বলতেই পারে নি ছেলেটাকে। তার আগেই চলে গেছে….
– কোথায়?
– আমি সঠিক জানি না, কিছু। তবে শুনেছি ঢাকায়.. ওর জন্যই অনুর এমন অবস্থা। সারাক্ষণ ওর কথাই ভাবছে তোমার মেয়ে।
– ছেলেটার কোনো নাম্বার আছে তোর কাছে, কানিজ? নাম্বারটা আমায় দে। আমি ওর সাথে কথা বলবো।
হঠাৎ দৃঢ় কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন জোহরা বেগম। কানিজ তাতে কিছুটা ভয় পেয়ে বললো,
– তু- তুমি কি করবে?
– সেটা আমার ব্যাপার।.. আমি যেমন করেই পারি ছেলেকে ম্যানেজ করবো। প্রয়োজন হলে ওকে ঘর জামাই রাখবো। তবুও আমার মেয়ের এমন কষ্ট আমি সইতে পারবো না।.. কানিজ, প্লিজ মা আমার। নাম্বারটা আমায় দে.. আমি কথা বলে দেখি।
জোহরার কথা শুনে কিছুটা স্বস্তি পায় কানিজ। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
– নাম্বার তো নেই! ইভেন যোগাযোগের কোনো ওয়েই নেই…. আমরা সব দিক দিয়েই ট্রাই করেছি, তার কোনো কন্টাক্ট নাম্বার, কোনো লোকেশন… কিচ্ছু জানতে পারি নি।.. এখন আমরা কি করবো বলো? কী করতে পারি?
ওর প্রশ্নের জবাবে আর কিছু বললেন না জোহরা বেগম। বাঁ হাতে নিজের অশ্রুসিক্ত গাল দুটো মুছে নিলেন। নিশ্চুপ হয়ে ভাবতে লাগলেন নিজের একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ পরিণতি!
___________________
– মি. লুটফর, আপনি কি গান গাইতে পারেন? বাংলা গান?
হাঁটতে হাঁটতেই প্রশ্ন করলেন লতা। মামা হঠাৎ অবাক চোখে তাকিয়ে বলেন,
– গা-গা- গান?
– ইয়া, আই মিন সং। আপনি কী গাইতে পারেন?
লতা উৎফুল্ল চিত্তে আবারও প্রশ্ন করলেন। মামা হঠাৎ কি বলবেন ভেবে পেলেন না। শুকনো ঢোক গিলে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলেন। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। তারপর লাজুক গলায় বললেন,
– বাংলা গান শুনতে আমার ভালোই লাগে… কিন্তু… কখনও তো গেয়ে দেখি নি… কী করে বলি গাইতে পারি কী না?
– শুনলে গাইতে পারবেন না কেন? চেষ্টা করুন।
– কিন্তু… আ-আ- আমি..
– চেষ্টা করুন না, প্লিজ?
মেয়েটা আব্দারী সুরে বলে ওঠে। মামা লজ্জায় ঘাড় চুলকাতে থাকেন। খুব ধীরে এবং লজ্জিত গলায় বললেন,
– আমি গাইবো, তবে… হাসবেন না কিন্তু!
– ওকে!
মাথা নাড়েন লতা। মামা ধীরে ধীরে সুর তোলেন,
– আমিচিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।
আমিচিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।
তুমিথাক সিন্ধুপারে
তুমিথাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী॥
ওগো বিদেশিনী…
দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায়দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায়দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায় দেখেছি হৃদি- মাঝারে
তোমায় দেখেছি হৃদি- মাঝারে ওগো বিদেশিনী।
আমিআকাশে পাতিয়া কানশুনেছিশুনেছি তোমারি গান,
আমিআকাশে পাতিয়া কানশুনেছিশুনেছি তোমারি গান,
আমিতোমারে সঁপেছি প্রাণওগো বিদেশিনী।
আমিতোমারে সঁপেছি প্রাণওগো বিদেশিনী।
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমিএসেছি নূতন দেশে,
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমিএসেছি নূতন দেশে,
আমিঅতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥
আমিঅতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥
ওগো বিদেশিনী…
ওগো বিদেশিনী…
ওগো বিদেশিনী…
ওগো বিদেশিনী…
– ইজ দিস আ টেগোর সং?
– সঠিক জানি না, হতে পারে।
– আম শিয়োর দিস ইজ টেগোর সং। অ্যান্ড ইউ নো, টেগোর ইজ মাই ফেভারিট!.. হি ইজ দ্যা ভার্সিটেল জিনিয়াস!
– ঠিক বলেছেন। উনি শুধু গানে না, বাংলা সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই অবদান রেখে গেছেন। নোবেলও পেয়েছেন, জানেন কি?
– হুম, শুনেছি। বাংলাদেশে তার থাকার বাড়িটাও আছে, তাই না?
– জ্বি। কুষ্টিয়ার “শিয়ালদহ কুঠিবাড়ি”। গিয়েছিলেন?
– ইচ্ছে আছে, কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠে নি। বাংলাদেশে তো আমার আসাই হয় না।.. এতো সুন্দর একটা দেশ অথচ….
– আপনি এদেশটাকে খুব ভালোবাসেন, তাই না?… দেশে থেকে যেতে চান?
উত্তরে মলিন হাসেন লতা। অন্য দিকে দৃষ্টি সরিয়ে বলেন,
– আমার ইচ্ছের কোনো দাম নেই। আপা দুলাভাই পাত্র দেখছেন। হয় তো পছন্দও করে ফেলবেন। ভাইয়াও মত দিবেন।.. আমি ফিরে গেলে হয় তো বিয়েও হয়ে যাবে!.. তখন এ দেশকে যতই ভালোবাসি আর কখনো কী আসা হবে?
হঠাৎ কেমন যেন মন খারাপ লাগে মামার। লতার বিয়ের কথা শুনে তার মন খারাপের তো কোনো কারণ নেই! তবুও কেন হচ্ছে? বুঝতে পারলেন না উনি। হয় তো লতার প্রতি সমবেদনা থেকেই এই মন খারাপের সৃষ্টি! মেয়েটা বাংলাদেশকে ভালোবাসে, কিন্তু দেশে থাকার ক্ষমতা তার নেই। সত্যিই দাঁত থাকতে তার মর্যাদা দেয়ার ক্ষমতা নেই কারও!
_______________________________
রিসোর্টের রুমে বসে কী যেন কাজ করছিল বর্ষণ। সামনে ল্যাপটপ রেখে একটানা কী যেন টাইপ করে চলছে। কটেজে পাশের রুমেই আছে প্রদোষ। যে কী না এখন ঘুমাচ্ছে। এই অবেলায় ও কোন আক্কেলে ঘুমোতে গেল ব্যাপারটা ধরতে পারে না বর্ষণ। বিকেল সময়, কোথায় বাইরে বেরোবে, নতুন ইনফরমেশন কালেক্ট করবে, তা না অবেলায় ঘুম!
ঘুম তো ঘুম না, এক্কেবারে নাক ডাকা ঘুম। সমান তালে ‘প্যা পো’ করেই যাচ্ছে। শব্দের ঠেলায় নিজের ঘরে বসেও শান্তি পাচ্ছে না। বেক্কল টার ওপরে চরম মেজাজ খারাপ হচ্ছে! একসময় রাগে ফিকতে ফিকতে অসহ্য হয়ে ওঠে ওর। বারবার টাইপ ভুল হচ্ছে শুধুমাত্র ওর এই নাক ডাকানির শব্দে!
অসহ্য! দুম করে ল্যাপটপের ডালাটা বন্ধ করে দেয়। বাঁ’ হাত তুলে চালিয়ে ব্যাক ব্রাশ করে। রাগে চুল টেনে ধরে, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বসে থাকে। তবুও রাগ সংবরণ করতে না পেরে দ্রুত পায়ে নেমে হাঁটা দেয় প্রদোষের ঘরে।
বেতাল সুরে নাক ডাকছে প্রদোষ। নিঃশ্বাস নেয়ার সময় একরকমের শব্দ তো ছাড়ার সময় আরেক রকম! শ্বাস-প্রশ্বাসের দমকে সমান তালে তার বিশাল ভুঁড়িখান উঠা-নামা করছে। একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর ধুতি পরে ঘুমিয়েছে সে। সামন থেকে ঘুমন্ত এই ব্যক্তিটিকে দেখে দাঁত কিড়মিড় করে ওঠে বর্ষণ। “ব্যাটা, কাম নেই, কাজ নেই, শুধু ঘুম? দাড়া দেখাচ্ছি!” আশেপাশে কোন কিছু খুঁজে পায় না ও। জুতসই কিছু একটা পেলে ধরে আচ্ছামত কয়েকটা বারি মারতো মাথায়!
কিন্তু কিছু না পেয়ে সর্বশেষ আরেকটা কাজ করে বর্ষণ। বাঁ হাতের দু’টো আঙুল দিয়ে হঠাৎ ওর নাক চেপে ধরে। এক, দুই, তিন।
হঠাৎ ধড়ফড়িয়ে চিল্লিয়ে ওঠে প্রদোষ,
– ও মাগো, আগুন লেগেছে গো!.. বাঁচাও, বাঁচাও! ফায়ার সার্ভিস!
ওর চিৎকার শুনে বাঁকা হাসি দেয় বর্ষণ। নাক ছেড়ে দিয়ে ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে দেয়। উল্টো ঘুরে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে ওয়ার্নিং দিয়ে যায়,
– আগুন তো এখনো লাগে নি, বেঁচে গেলি! নেক্সট টাইম খালি তোর এই ‘প্যা পো’ শব্দ শুনতে পাই, দেখিস তখন…. ধুতির ভেতর আগুন লাগিয়ে দেব!
বলেই শীষ বাজাতে বাজাতে প্রস্থান করে সে। আর সদ্য ঘুম থেকে জাগ্রত প্রদোষ বোবার চাহনিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। বোকার মতো তাকিয়ে চিন্তা করে ওর দোষটা আসলে কোথায়? কেন এই অসময়ে এসে বর্ষণ তার কাঁচা ঘুমটা ভাঙলো? ইসস! কী সুন্দর স্বপ্ন সে দেখছিল!.. কী সুন্দর একটি মেয়ে আর সে হাতে হাত ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছে রিসোর্টের শান বাঁধানো রাস্তায়, মিষ্টি মিষ্টি প্রেমালাপ, আলতো করে প্রেমিকার ঘাড়ে মাথা রাখা, আর একটা সময় ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে চুমু… কতো কী যে করছিল!.. ধ্যাত! সব মাটি করে দিলো এই বর্ষণ!
– “ব্যাটা, তোর বিয়েই হবে না!”
মনে মনে বর্ষণকে উদ্দেশ্য করে অভিশাপ দিয়ে আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ল। আবার যদি সে ঘুমটা আসতো! সেই সুন্দর স্বপ্নটার বাকিটা দেখতে পারতো!
#চলবে——-