লাস্ট স্টেশন পর্ব-৪+৫

#লাস্ট_স্টেশন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৪

বেয়াইয়ের জরুরী ডাকে রাতে আবারও তূর্ণার বাবা-মা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন। শাশুড়ি ও দুই ননদের সাহায্যে তৈরী করা খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে সে। মুরব্বিরা আগে খেয়েছেন, ছেলেমেয়েরা পরে।

খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে নাদিফের বাবা ওবায়দুর রহমান বেয়াই-বেয়াইনকে নিয়ে গল্প করতে বসে গেলেন। ছেলের সিদ্ধান্ত জানালেন। সব শোনে তূর্ণার বাবা জামাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “যত দূরেই যাও, বাবা। ঈদের আগে মেয়েটাকে নিয়ে গ্রামে ফিরো। মেয়ে ছাড়া ঈদ করে শান্তি পাব না।”

নাদিফ ঝটপট হিসেব কষে ফেলল। যেহেতু আর দেড় মাসের মাথাতেই কোরবানির ঈদ, ততদিনে তূর্ণার মাঝে থাকা দ্বিতীয়জনও বেড়ে উঠবে। কতটা বাড়বে? সবার চোখে পড়বে কী?

সমাধান দিল তূর্ণাই। দূর থেকে বলল, “শহরে আবার ঈদ করা যায় না কি! ঈদ তো গ্রামেই সুন্দর।”

তূর্ণার বাবা হায়দার আলী বলে ফেললেন, “তাহলে যাচ্ছিস কেন?”

বিপদ বুঝে টুপ করে সরে পড়ল তূর্ণা। আবেগের ঠ্যালায় পড়ে কী বলে ফেলল, সেটা বুঝেই এখন নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছে হলো। এদিকে নাদিফ চোখদুটোকে রসগোল্লা বানিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কী বিপদ!

মনোয়ারা বেগম নবদম্পতির মনের অবস্থা টের পেয়ে বললেন, “সংসার তো ওরা করবে ভাইজান। ওদেরটা ওরাই বুঝুক। আজকাল দূরে থাকলে বেশিরভাগ সম্পর্কেই ফাটল ধরে যাচ্ছে। তারচেয়ে ওরা কাছাকাছি থাকলেই বরং ওদের জন্য ভালো হবে।”

হায়দার আলী উপরনিচ মাথা নেড়ে বললেন, “এ বিষয়ে আমি একমত বেয়াইন। আপনি ঠিক বলেছেন। ওরা যাক, কী বলেন? ঈদে যদি না-ও আসতে পারে, আমরা গিয়ে দেখে এলাম।”

“জি, এটাও ভালো হবে।”

মুরব্বিদের মাঝখানে ছোটোরা কেউ থাকতে চাইল না। নাদিরা ও নাজিফা ভাই-ভাবীকে টেনে নিয়ে লুডু খেলতে বসেছে। নাদিরা ও ভাই একদলে… আর নাজিফা ও তূর্ণা আরেক দলে।

খেলা চলল রাত দেড়টা পর্যন্ত। নাদিরা হাই তুলতে তুলতে বলল, “আমার আর ভালো লাগছে না। আমি ঘুমাতে যাচ্ছি।”

তূর্ণা ননদিনীকে আটকাতে বলল, “খেলা শেষ করে যাও।”

“হবে না ভাবী। চোখ জ্বলছে।”

নাদিরা যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর নাজিফাও বাহানা বের করে চলে গেল। লুডুর সবগুলো গুটি গুছিয়ে হাঁটুতে হাত রেখে বসে থাকল তূর্ণা। ভেবেছিল, দুই বোনের সাথে খেলতে খেলতে রাত শেষ করে ফেলবে। গতকালের মতো একজনকে বিছানায় ও আরেকজনকে ডিভানে ঘুমাতে হবে না। অন্তত ওরা থাকলে খেলাচ্ছলে সময়টা কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু তা আর হলো না। দুইবোন ঘুমের অজুহাত দিয়ে টুপ করে পালিয়ে গেল।

নাদিফ নিজেও বিছানার একপাশে পা ভেঙে বসে খেলছিল। তূর্ণাকে চুপচাপ দেখে বলল, “আপনি বরং ঘুমান। রাত অনেক হয়েছে।”

তূর্ণা চিন্তিত চেহারায় বলল, “আপনি কী করবেন?”

“জেগে জেগে তারা গুনব।”

“এভাবে খুবই অস্বস্তি লাগে।”

“কিছু তো করার নেই, ম্যাডাম। রাতটা কেটে যাক কোনোমতে, কাল ঢাকায় ফিরে ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে।”

“কী করবেন? একদিনে বাসা খুঁজে পাবেন?”

নাদিফ মোবাইল বের করে ডিভানে গিয়ে বসে জবাব দিল, “এটা সম্ভব?”

“তাহলে? থাকব কোথায়?”

“এ্যাক্সট্রা রুম আছে। যতদিন না বাসা খুঁজে পাচ্ছি, ততদিন ওইরুমে থাকবেন।”

“আর অন্যরা? মানে আপনার আশেপাশে যারা আছে, তাদের কী বলবেন?”

“সেটা সময় এলে দেখব। এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।”

এইটুকু বলে, তূর্ণার দিকে একপলক তাকিয়ে তাকে নিঃশব্দে বসে থাকতে দেখে বলল, “বাতি নিভিয়ে দিই?”

গতকাল যে মানুষ তাকে পর্যাপ্ত স্পেস দিয়েছে, সম্মান ও অভয় দিয়েছে, আজ সে-ই মানুষ তার কোনো ক্ষতি করবে না। অন্তত একটা নারীর দুর্বলতার সুযোগ কোনো পুরুষ নিতে পারে না। যারা নেয়, তারা কাপুরুষ। এই কয়েকটা ঘণ্টায় নাদিফকে তার আর যা-ই মনে হোক, অন্তত কাপুরুষ মনে হয় না। বরংচ তাকে অনায়াসে সুপুরুষের তকমা দেয়া যায়।

ভাবনা থামিয়ে নির্ভয়ে মাথা নেড়ে তূর্ণা বলল, “হম… নিভিয়ে দিন।”

বাতি নেভানোর পর তূর্ণা ঘুমিয়ে পড়লেও জেগে থাকল নাদিফ। তার দু’চোখে ঘুম এলো না। হলুদ রঙের মুড লাইটের আলোয় সামনে থাকা নারীকে কী নিষ্পাপই না দেখাচ্ছে! খুব করে দম নিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফোনের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। ঘুমালে চলবে না। গতরাতের মতো আজকের রাতটাও জেগে থাকতে হবে।

***

পরদিন সকালে বাবা-মায়ের অনুমতির পর তূর্ণাকে নিয়ে বের হলো নাদিফ। যাওয়ার পথে সেদিনের তিন সাক্ষী ও নিজের বিশ্বস্ত বন্ধুকে সাথে নিল। সবাই-ই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসে অপেক্ষা করল, তূর্ণার স্বামী কায়েসের জন্য। কিন্তু তার আসার লক্ষ্মণ দেখা গেল না।

অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থেকে নাদিফ বাধ্য হয়ে কায়েসের নম্বরে ফোন করল। প্রথম দু’বার কল দেয়ার পরও কেউ যখন রিসিভ করল না, তখন সে তূর্ণাকে বলল, “আমার মনে হচ্ছে, মামলা করে দেয়া উচিত। ছেলেটা সহজে আপনাকে ডিভোর্স দিবে না।”

একদিকে বিশ্বাস ভাঙার যন্ত্রণা, আরেকদিকে নিজের অনাগত বাচ্চা ও মানসম্মান। সবকিছু নিয়ে পেরেশানিতে পড়ে গেল তূর্ণা। মাথা এমনিতেও কাজ করছে না। ভেবেছে, দু’জনের সম্মতিতে সাক্ষীকে উপস্থিত রেখে খুলা তালাক নিয়ে নিবে, কিন্তু না; ওই অমানুষ তাকে এখানেও প্যাঁচে ফেলার জন্য কাহিনী করছে।

মাথাভরা যন্ত্রণা নিয়ে তূর্ণা বান্ধবীর হাত চেপে বলল, “আমি কী করব রে, সাজি? আমার সব কেমন এলোমেলো লাগছে।”

সাজি ঘড়িতে সময় দেখল। বিকেলে ওরা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চুক্তিপত্রও সাথে আছে। শুধু যার সিগনেচার দরকার, সেই নেই। খানিকক্ষণ চুপ থেকে সে নিজেই কায়েসের নম্বরে ফোন দিল। রিসিভ্‌ হওয়ার পর ফোনটা ধরিয়ে দিল নাদিফের হাতে।

নাদিফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আধঘণ্টা সময় দিচ্ছি, এরমধ্যে যদি না আসিস, তোর সব নোংরামি আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেব। ভিডিয়ো পাঠাচ্ছি, ভেবে দেখ কী করবি! জেলে যাবি! না কি ডিভোর্স দিবি। বউ নিয়ে সংসার করার খুব শখ না? সব শখের বারোটা বাজিয়ে দেব।”

নিজের ফোনে থাকা ভিডিয়োটা কায়েসের হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করার কয়েকমিনিট পর রিপ্লাই এলো, “আমি আসছি। তোমরা অপেক্ষা করো।”

আধঘণ্টা লাগল না, কায়েস এলো পঁচিশ মিনিটের মাথায়। রাগে ও ঘৃণায় চোখমুখ গুলিয়ে উঠল তৃণার। তাকালও না ঠিকঠাক। দ্রুতহাতে চুক্তিপত্রে নিজের নাম বসিয়ে সেটা ঠেলে দিল কায়েসের দিকে। কায়েস নিজের দুই বন্ধুর দিকে তাকিয়ে কিড়মিড় করে বলল, “তোরা বেঈমানী করতে পারলি?”

তূর্ণা সহ্য করতে না পেরে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল কায়েসের গালে। বলল, “বেঈমানী ওরা নয়, তুই করেছিস! সাইন কর তাড়াতাড়ি। নয়তো আমি এক্ষুণি কোর্টে যাব।”

উপস্থিত সবার সামনে মৌখিক ও লিখিত দুই ভাবেই তালাকের ঝামেলাটা মিটমাট করে, সাক্ষীদের সাইন নিয়ে, কায়েসকে ওখানে রেখেই তূর্ণাকে নিয়ে বের হয়ে গেল নাদিফ। সাথে সাজি ও তার বন্ধুও গেল।

কায়েস ধুম করে টেবিলে আঘাত করে নিজের দুই বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ওর মাথায় এসব কে ঢুকিয়েছে?”

দু’জনের মধ্য থেকে একজন বলল, “কে, কী ঢুকিয়েছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তোর মধ্যে থাকা দুই নম্বরি আচরণ। তুই কীভাবে পারলি, একটা মেয়ের স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করতে? তূর্ণা চাইলেই তো পারত, তোর নতুন বউকে সব সত্য বলে দিতে! তা-ও কেন বলল না? ও তোকে ভালোবেসেছিল রে হারামি। মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিল। আর তুই কী করলি! সব শেষ করে দিলি। এখন আবার রাগ দেখাচ্ছিস?”

কায়েস ফোঁসফোঁস করে গর্জন করল কিছু সময়। তবে দু’জনের কেউ সেটাতে গুরুত্ব দিল না। আলগোছে বেরিয়ে পড়ল। ওরা যাওয়ার পর সে একা বসে বিড়বিড়াল, “এত সহজে ছেড়ে দেব, তোমায়? এই বাড়াবাড়ির শেষ দেখে ছাড়ব।”

ফেরার পথে চুক্তিপত্রটা ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিল তূর্ণা। এইটুকু কাজ করতে তার কত কষ্ট হয়েছে, কতটা মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটা তার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে না। তবে লাল হওয়া চোখদুটো দেখে স্পষ্ট, অনেক কষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছে। কারও সামনে নিজের দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে চাইছে না দেখেই, শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

বাড়ি এসে সবকিছু খুব দ্রুতই গুছিয়ে নিল নাদিফ। নাজিফা ও নাদিরা হাতে-হাতে ভাবীর কাপড়চোপড় ভাঁজ করে লাগেজে রাখল। সাথে সব দরকারী জিনিসও যত্ন নিয়ে ঢুকিয়ে দিল। নিজেদের তৈরী করা আচার ও চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরী সিরিঞ্জ পিঠা দিতেও ভুলল না।

বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি সবার থেকে বিদায় নিয়ে সিএনজিতে উঠল তূর্ণা। তার মা রাজিয়া বেগম কেঁদে গাল ভাসিয়ে ফেলছেন, অথচ পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে সে নিজে। এক সময় মায়ের কান্না থামাতে বলল, “ওহ মা… এভাবে কাঁদলে আমি যেতে পারব?”

রাজিয়া বেগম আঁচলে মুখ চেপে বললেন, “তুই কি বুঝবি সন্তান দূরে থাকার কষ্ট?”

তূর্ণা উত্তর দিল না। মুখ নামিয়ে নিল। নাদিফ শাশুড়িকে ভরসা দিয়ে বলল, “আপনি চিন্তা করবেন না, মা। আমি তো আছিই।”

হায়দার আলী জামাইয়ের একটা হাত ধরে বললেন, “বিশ্বাস করে তোমার হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছি। আমি জানি, তুমি তার পূর্ণ মর্যাদা রাখবে।”

একটা হতাশার নিঃশ্বাস বের হয়ে এলো বুক ছিঁড়ে, তা-ও নিজেকে ধাতস্থ করে নাদিফ বলল, “জি, ইনশা’আল্লাহ। এবার তাহলে আসি?”

বাবা-মাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “ছুটি পেলে আসব। চিন্তার কিছু নেই। তোমরা নিজেদের শরীরের যত্ন নিয়ো।”

এরপর আলগোছে বাবা ও মায়ের মাথায় চুমু খেয়ে, দুইবোনকে আগলে নিয়ে বলল, “তোরা কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবি। ফাঁকিবাজি করলে, ধরে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেব।”

দুইবোনে কান্নারত মুখে হেসে ফেলল। তূর্ণার কাছে গিয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে দু’জনেই বলল, “প্রতিদিন ফোন করবে কিন্তু। আমরা অপেক্ষায় থাকব।”

তূর্ণা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ল শুধু। এরপর নাদিফ পিছনের সিটে বসলে সিএনজি ছেড়ে দিল।

বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ঠিকই ছিল তূর্ণা। বাস ছেড়ে দেয়ার পর তার চোখ বেয়ে হুড়মুড়িয়ে জলের ফোয়ারা ছুটল। না আটকাতে পারল আর না মুছতে চাইল। সিটে হেলান দিয়ে শব্দহীন কান্নায় নিজেকে ব্যস্ত রাখল। একটানা কাঁদতে কাঁদতে মাথাব্যথা শুরু হলো, সাথে পেটের অস্বস্তি। তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকায় সে ভুলেই গিয়েছিল, তার মোশন সিকনেস আছে। যতক্ষণে বুঝল… ততক্ষণে সময় শেষ। সামনে থাকা পলিথিন টেনে এনে হড়বড়িয়ে বমি করে ভাসিয়ে দিতে লাগল।

নাদিফ মাথা হেলিয়ে দিয়েছিল সিটে। পরপর দু’রাত ঘুমাতে পারেনি। লম্বা জার্নিতে তার আবার ঘুম হয় ভালো। তবে ঘুমটা এতটাও গাঢ় হয় না। সচেতনতা অবলম্বন করেই চোখ বন্ধ করে। আজও তা-ই করল। মাত্রই চোখ ভার হয়ে এসেছিল, এরমধ্যে তূর্ণার বমি দেখে ঘাবড়ে গেল সে। কী করবে বুঝে উঠতে পারল না।

মিনিট দশেক পর তূর্ণা স্বাভাবিক হলো। পাশে থেকেও নাদিফ তাকে ছোঁয়ার সাহস করল না। শুধু পানির বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “বাস থামাতে বলব?”

পলিথিনটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে তূর্ণা দু’দিকে মাথা নেড়ে, কুলি করল। ভেজা টিস্যু বের করে মুখ মুছে নিল। সিটে হেলান দিয়ে বলল, “আপনাকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি।”

নাদিফ কিছু বলার আগেই তূর্ণার মাথা তার কাঁধের কাছটায় স্পর্শ করল। তূর্ণা বলল, “বকবেন না প্লিজ! একটু ঘুমাই? ঘুমালে আর বমি আসবে না।”

কাঁধটা অল্প একটু নামিয়ে তূর্ণাকে ঘুমানোর অনুমতি দিয়ে বলল, “ঘুমান। তবে হ্যাঁ, ভাড়া দিতে হবে। আমি কিন্তু ফ্রিতে কিছু করছি না। এ পর্যন্ত যত খরচ করেছি, সব সুদে-আসলে পরিশোধ করবেন। রাজি?”

“রাজি। চাকরি পেলে সব দিয়ে দেব। প্রমিস্‌।”

ঘুমঘুম চোখের এই উত্তর শোনে মুচকি হেসে নাদিফ বলল, “মনে রাখবেন কিন্তু!”

***

চলবে…

#লাস্ট_স্টেশন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৫

বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন সময়ে তূর্ণার ছবি দেখার পরপরই তাকে ভালো লেগেছিল নাদিফের। তা-ই বাবা-মায়ের থেকে তাড়া পেয়ে মনে হয়নি, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আরও সময় নেয়া উচিত। যেহেতু দুই পরিবার মিলে বিয়ে ঠিক করেছিল, আর সে নিজেও ছুটি পাচ্ছিল না, তা-ই দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে বিয়ে, সম্পর্ক ও পবিত্র বন্ধন নিয়ে সুপ্ত একটা অনুভূতি মনের মধ্যে লালন করে চলেছিল সে। যে অনুভূতি… তূর্ণার জীবনের চরম সত্যির কাছে হার মেনে নিয়েছে প্রথম রাতেই। মানুষ ঠিক কতটা বোকা, কতটা আত্মসম্মানহীন ও দুর্বল মন-মানসিকতার হলে এমন একটা ভুল করতে পারে আর আবার সেই ভুলের একাকী ভোগান্তি গ্রহণ করতে পারে… ঠিক জানা নেই তার। তূর্ণাকে জানার পর অন্তত এইটুকু সে নিশ্চিত হয়েছে, এই ধরনের মেয়েরা চলতে পথে দশবার হোঁচট খায়। শুধু তাই নয়, খুব দ্রুতই অন্যকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই বিশ্বাসের সূত্র ধরেই মেয়েটি তার সহযাত্রী হয়ে গেল, অথচ এই যাত্রার নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্যই নেই। হবেও না হয়তো। হওয়া সম্ভবও না।

মানুষের জীবনে কাদা লাগানো খুব সহজ। যে কেউ, যেকোনো একটা ছুঁতো খুঁজে পেলে খুব করে চেষ্টায় থাকে, কীভাবে মানুষটাকে হেয় করা যায়, অপমান করা যায়। বিশেষ করে তূর্ণার মতো মেয়েদের। এরা দুর্বল বলেই মানুষ এদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এরা বাস্তবতার কঠিন ছোবলের দংশন কতটা বিষাক্ত হতে পারে তা জানে না বলেই… অল্প সময়ের আবেগের নাম দেয় ভালোবাসা। এরপর সে-ই ভালোবাসা তাদের জীবনে কী পরিমাণ সুনামি নিয়ে আসে, সেটা যতক্ষণে বুঝে, ততক্ষণে সব শেষ হওয়ার পথ ধরে। জীবন হয়ে যায় দুর্বিষহ।

নাদিফ তূর্ণার ভুলকে প্রশ্রয় দিতে নয় বরং নিষ্পাপ একটা বাচ্চার সুস্থ জীবনের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটা বছর তার পাশে থাকবে… একজন ভালো বন্ধু হয়ে। বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখার সাথে সাথে এই মিথ্যে গল্পের কথা বাবা-মাকে জানিয়ে দিবে। এখন জানালে সবাই হয়তো তৎক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিষ্পাপ ভ্রুণটাকে মেরে ফেলার জোর দিবেন বেশি। এবং এটাই হত তাদের বিচার। অন্তত একটা ভুলকে কেউ জাস্টিফাই করতে চাইত না। গোড়াতেই এর পতন ঘটিয়ে দিত। এর থেকে সবাই শুধু একটা মেয়ের দিকে কলঙ্কের দাগ দিতই না, তার গোটা জীবনের সব শান্তি কেড়ে নেয়ার খেলায় নামত।

চরিত্রে একবার দাগ লেগে গেলে সে দাগ আর মোছার সুযোগ থাকে না। তূর্ণার মতো মেয়েরা দাগ লাগানোর আগে দশবার ভাবে না, যখন লেগে যায়… তখন সেটা মুছতেও পারে না। উল্টে সস্তা আবেগের ঢালি সাজিয়ে অন্যের সামনে নিজের অসহায়ত্ব ও বোকামির প্রকাশ ঘটায়। অথচ এই সত্যি বিয়ের আগে বলে দিলে আজ নাদিফকেও এত দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়তে হত না। মিথ্যে মিথ্যে কারও দায়িত্ব নেয়ার নাটক সাজাতে হত না।

তূর্ণার এই ছেলেমানুষীকে প্রশ্রয় দিয়ে হয়তো জীবনটাকে নাটকের মতো ভাবা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, আদতে এতটাও সহজ জীবন নয়, হবেও না। আজকের পর তো আরও না। তূর্ণা হয়তো বুঝতে পারছে না, ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেয়া চুক্তিপত্রটা যেদিন সকলের সামনে প্রকাশ পাবে… সেদিন তার উপর দিয়ে ঠিক কী যাবে! যে লুকোচুরির খেলায় সে নেমেছে, সেটার পথ যে আজ সে নিজ হাতে বন্ধ করে দিয়েছে, এইটুকু বোধ কি তার মধ্যে জাগ্রত হয়নি? না কি এখনও সে ঘুমের ঘোরে আছে?

একটা কথা সত্য যে তূর্ণার জীবনের এই সিদ্ধান্তের জন্য নাদিফ তাকে জোর করেনি। তার সে-ই অধিকারও নেই। সমস্ত সিদ্ধান্ত তূর্ণা নিজে নিয়েছে আর সে শুধু… পথটাকে সহজ করে দিয়েছে।

পুরোটা রাস্তা নাদিফ চিন্তায় অস্থিরচিত্তে বসে কাটিয়ে দিল… অথচ তূর্ণা কী অবলীলায় তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। আশ্চর্য! একটা মানুষ, এতটা ম্যানারলেস কী করে হয়? এখন তো কিছু বলাও যাচ্ছে না। সমস্যা নিজেই যেচে কাঁধে নিয়েছে, সামাল দিতেও হবে। ফুঁস করে দম নিয়ে বাসের ভীড় কমার অপেক্ষায় রইল নাদিফ।

তূর্ণা আস্তেধীরে চোখ খুলল। চারপাশে তাকিয়ে অন্ধকার দেখে জানতে চাইল, “চলে এসেছি?”

নাদিফ উত্তর দিল, “হুঁ…। নামতে হবে এখন।”

“এখান থেকে আপনার বাসা কত দূর?”

“বেশি দূরে না। পনেরো মিনিট লাগবে।”

“আচ্ছা।”

একঘুমে কেউ এত স্বাভাবিক হয়? নাদিফ হা হয়ে কয়েক সেকেন্ড তূর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, যেন কোনো চিন্তাই নেই। কী আশ্চর্য!

তূর্ণা সোজা হয়ে বলল, “কই, নামুন!”

নাদিফ সহজ হলো। দৃষ্টি সরিয়ে সামনের ভীড় কমেছে কি না সেটা দেখে আলগোছে নেমে পড়ল। দু’জনের লাগেজ বের করে একটা রিকশা নিল। এই সময়টায়ও তূর্ণা বেশ সহজ ও প্রাণবন্ত আচরণ করল। মেয়েটা হয়তো সব ভুলে স্বাভাবিক হতে চাইছে।

রিকশায় পাশাপাশি বসতে গিয়ে নাদিফের অস্বস্তি বেড়ে গেল। সেই তুলনায় তূর্ণা বেশ স্বাভাবিক। সে এদিক-ওদিক চোখ ঘুরিয়ে বলল, “বাপরে… চারিদিকে কী উঁচু উঁচু বিল্ডিং! ভূমিকম্প হলে এগুলো ভাঙে না?”

নাদিফ উত্তর না দিয়ে রিকশাচালককে বলল, “মামা একটু দেখে যাবেন।”

তূর্ণা উত্তর না পেয়ে কথা বাড়াতে চাইল না। তবে চুপও থাকতে পারল না। আগ্রহী চোখে বলল, “আপনি যে মেয়েটাকে ভালোবাসেন সে কি ঢাকা শহরেই থাকে?”

নাদিফ যথেষ্ট বিরক্ত হলো। এ মেয়ের সমস্যা কী? এত বকবক করছে কেন? উত্তর না দিলে থামবে না ভেবে বলল, “সেসব জেনে আপনার কাজ কী?”

“ওমা! কাজ নেই মানে! আপনি যে আমার উপকার করলেন। আমাকেও তো আপনার জন্য কিছু করতে হবে।”

“আমার জন্য কিছু করতে হবে না। ধন্যবাদ।”

“কেন?”

ত্যক্তবিরক্ত গলায় নাদিফ বলল, “যে মেয়ে নিজের জন্য কিছু করতে পারে না, সে আমার জন্য কী করবে? আমার সমস্যা আমি-ই দেখব। এরজন্য আপনাকে ঝামেলায় ফেলব না।”

“ওহ…। এইটুকুতে বিরক্ত হয়ে গেলেন?” মুখ ফুলিয়ে প্রশ্ন করল তূর্ণা।

নাদিফ উত্তর দিল, “বিরক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক না? কোথায় আপনি ওই অমানুষটার নামে মামলা করবেন, ফ্যামিলিকে জানিয়ে তাকে হাজতে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। তা না করে তাকে একেবারে সুযোগ দিয়ে চলে এলেন! এটা কি ঠিক হলো?”

“লোক জানাজানি হলে আমারই তো সমস্যা হবে, বলুন! বাবা-মা জানে মেরে ফেলবে।”

“এমনিতেও… আপনি কি আদৌ বেঁচে আছেন? এটাকে বেঁচে থাকা বলে? আজ আপনি একটা সমস্যার জন্য আমার কাছে সাহায্য চাইলেন, আমি করে দিলাম। ভবিষ্যতে আপনি যখন আবার কোনো সমস্যায় পড়বেন, তখন কী করবেন?”

“সেটা নাহয় সময় এলে ভেবে দেখব।”

“ভেবে দেখব নয়, এখন থেকে ভাবুন! কারণ সবাই আমার মতো হবে না। আমি আপনার অনাগত বাচ্চার সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলেও অন্যরা করবে না। এমন অনিশ্চিত জীবন নিয়ে পথ চলতে গেলে প্রতিমুহূর্তে কটু কথা শুনতে হবে, মানুষের চড়-লাথি হজম করতে হবে। দিনশেষে দেখা গেল, আপনার মানসিক শান্তিটাই নেই। শুনুন, জীবনটা নাটক সিনেমা নয়। আপনি এটাকে যতটা সহজভাবে ভেবে নিচ্ছেন, এতটা সহজও জীবন না।”

“আমি তো বলছিই… বাচ্চার জন্ম হয়ে গেলে আমি আর আপনার কোনো সাহায্য নেব না। এরমধ্যে যা খরচ হবে, সব শোধ করে দেব।”

“বাচ্চাটাকে সবার সামনে কীভাবে প্রকাশ করবেন?”

“বলে দেব কোনো এতিমখানায় অথবা কোনো ডাস্টবিনে পেয়েছি।”

এটা আদৌ সম্ভব? কেউ নিজের বাচ্চাকে এইভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে? মানুষ কত সহজে সবকিছুর সমাধান পেয়ে যায়!

তূর্ণার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা শোনে নাদিফ বলল, “এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে? আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবেন?”

তূর্ণাকে উলটোদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতে দেখে নাদিফ বলল, “এইযে একটা সমস্যায় নিজে জড়ালেন, আমাকেও টেনে নিলেন, এর ফল কত ভয়াবহ হতে পারে জানেন?”

“এখন এত কথা বলছেন কেন? আগে বলে দিলেই পারতেন।”

“প্রথমত, আপনি আমাকে ঘটনাটা বলেছেন দেরীতে; ফলে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্পর্কটাকে হাসির পাত্র সাজাতে চাইনি। দ্বিতীয়ত, আপনার ঠকে যাওয়া জীবনের গল্প শোনে একটুখানি করুণা হয়েছে। তৃতীয়ত, আপনার সম্মান ও অনাগত বাচ্চার সুস্থ-সুন্দর জীবন ও সামাজিক অবস্থান। চতুর্থত, সন্তানের জন্য নেয়া আপনার পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং অনুরোধ। সবমিলিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমি যদি এইটুকু পথ আপনাকে সাহায্য করি… হয়তো কলঙ্কের কালি ও লোকের অকথ্য গালিগালাজ থেকে বেঁচে যাবেন। দেখুন, আমি চাইলেই কিন্তু সবাইকে দিয়ে ওইদিনই আপনাকে অপদস্ত করতে পারতাম। অন্যকেউ হলে হয়তো তা-ই করত! কিন্তু কী জানেন! আমার চিন্তাভাবনাটা একটু ভিন্ন। আমি হয়তো সবার মতো গালি দিতে পারি না, দুটো পরিবারের মানুষ ও সামাজিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছি না। হয়তো আপনার বাবা-মাকে সবার সামনে দোষী সাজাতে পারছি না। এমনকি আপনাকে কটু কথা শুনাতেও পারছি না। এইটুকু আমার ব্যর্থতা ও অতি ভালোমানুষি আচরণের জন্য। আর দিনশেষে কী হয় জানেন? এরাই খুব বাজেভাবে ঠকে যায়!”

তূর্ণা এত কথা আমলে নিল কি না স্পষ্ট হতে পারল না নাদিফ। এইযে মেয়েটার এই বোকা বোকা সিদ্ধান্তের ফল ভোগ করছে সে, এর জন্য কাকে দায়ী করবে? এই মেয়েটাকে না কি নিজেকেও? উত্তর না পেয়ে আবারও বলল, “আপনি কি বুঝতে পারছেন, আমি কী বলছি?”

“আমি এখুনি এত চাপ নিতে চাইছি না। হ্যাঁ, আমার জন্য আপনি নিজের জীবনে অশান্তি টেনে এনেছেন, এরপর হয়তো আপনার জীবন সাজানো আরও কঠিন হয়ে যাবে। আমার জন্যও তাই। আপাতত আমার কাছে আর কোনো সমাধান নেই। জানি, একা পথচলা কঠিন… তবে অসম্ভব কিছু না। আর যদি কায়েসের উপর মামলা করার কথা আসে সেখানেও দিনশেষে দাগটা আমার চরিত্রে এসে লাগবে। আসলে… সবদিক দিয়ে বিপদে আমি-ই পড়ব। আপনার উপর কৃতজ্ঞতা, আপনি অন্তত বুঝেছেন। এখানে অন্য কেউ হলে… এতক্ষণে সব কথা বাবা-মায়ের কানে চলে যেত… আর আমাকে আমার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে হত।”

কথা বলতে বলতে গন্তব্যে এসে পৌঁছালে রিকশা থামিয়ে, ভাড়া মিটিয়ে, নিজের বাসার সামনে এসে দাঁড়াল নাদিফ। তূর্ণা তাকে অনুসরণ করল। রাত থাকায় সামনের বিল্ডিং ঠিক কতটা উঁচু খেয়াল করল না। সে নাদিফকে অনুসরণ করে লিফটে পা রাখল। এরপর একটা ফ্লাটের সামনে এসে দাঁড়াল।

সে-ই সময় বিপরীত পাশের ফ্লাট থেকে বের হলো হলুদ সালোয়ার-কামিজ পরা এক তরুণী। কাঁধে ভ্যানিটিব্যাগ। চোখে চশমা। হাতে অ্যাপ্রোন। নাদিফের সাথে অচেনা একটা মেয়েকে দেখে আড়চোখে একবার শুধু তাকাল এরপর দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে লিফটে উঠে চলে গেল।

তূর্ণা জিজ্ঞেস করল, “মেয়েটা কে?”

নাদিফ যতক্ষণে ঘাড় ফেরাল, ততক্ষণে লিফট নিচে চলে গেছে। সে কাউকে দেখতে না পেয়ে বলল, “কোথায়?”

“একটা মেয়ে বের হলো ওই ফ্লাট থেকে। হাতে অ্যাপ্রোন ছিল, সম্ভবত ডাক্তার।”

বুঝতে পেরে নাদিফ বলল, “ওহ… সাফা!”

“পরিচিত?”

“তেমন না… তবে মাঝেমধ্যে দেখা হয়।”

তূর্ণার চেহারায় কিঞ্চিৎ গাম্ভীর্য নেমে এলো, তবে সেটা সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে বুঝতে দিল না।

নাদিফ লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে বাতি জ্বালিয়ে বলল, “আসুন।”

তূর্ণা ভেতরে গেল। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ ফ্লাট দেখে বলল, “খুব সুন্দর তো! একা মানুষের এত বড়ো বাসা লাগে?”

“বাবা-মায়ের জন্য। মাঝেমধ্যে বাবা-মা ও বোনেরা এখানে আসে তো, তাদের সুবিধার কথা ভেবেই এখানে উঠেছিলাম।”

“ওহ…।”

“আপনি ফ্রেশ হোন, আমি অনলাইনে খাবার অর্ডার দিচ্ছি।”

“কেন? আমি রান্না করে নিতে পারব।”

“আমি এতটাও নির্দয় নই। হতে পারব না। আপনি অসুস্থ জেনেও এইমুহূর্তে রান্নাবান্নার ঝামেলায় আপনাকে ঠেলে দিতে পারব না। তাছাড়া আপনি আমার মেহমান। মেহমানের উপর এত অত্যাচার করা অশোভনীয়।”

‘মেহমান’ শব্দটা তূর্ণার চিন্তা বাড়িয়ে দিল। হাঁটতে হাঁটতে যত ভাবতে গেল, ততই তার ভাবনা প্যাঁচিয়ে গেল। একসময় মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেল। সে-ই ভয় তার সমস্ত অস্তিত্বে কাঁপন ধরিয়ে দিল।

***

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here