ফিরোজা
পর্ব ২
কুহূ আর দাঁড়ালো না। সোজা চলে গেল জেমির ঘরে।
জেমি লাল বেনারসি পড়ে বসে আছে। হয়তো সাজিদই বলেছে শাড়ি পরতে।
তার তো আবার শাড়ি পরা মেয়ে খুব পছন্দের।।
_ আহা, মেহেদিটা নষ্ট করলো কে, আপি? ( জেমি )
_ তোর বিয়ে কে ঠিক করেছে জেমি? ( কুহূ )
_ কেন, আপি? ( জেমি )
_ উত্তর দে। ( কুহূ )
_ যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে। ( জেমি )
_ ভালোবাসিস তাকে? ( কুহূ )
জেমি একধ্যানে বলা শুরু করলো,
হ্যাঁ। তাকে আমার খুব ভালো লাগে।
খুব ভালোবেসে ফেলেছি তাকে।
তার আর্মি কাটিং চুল, স্থির দৃষ্টি, চাপ দাঁড়ি, সুঠাম দেহি শক্তিশালী একটি মানুষ।
সুন্দর চেহারা। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণ।
এমন এক মানুষকে কেউ কি না ভালোবেসে থাকতে পারে?
জেমির বর্ণনায় বুক ফেটে কান্না আসছে কুহূর।
আজ হয়তো সে জেমির অবস্থানে থাকতো। জেমির অবস্থানে থাকলে সে আজ পূর্ণতার দেখা পেত। তবে কেন তার সাথেই এমন হলো! সুখরা কেন তার সাথে বেঈমানী করলো! তার কাছে এসেও চলে গেল!
জেমি খুবই লজ্জা পাচ্ছে। হবু বরের সম্পর্কে কতগুলো কথা বলে ফেললো। যতই কুহূ তার বন্ধু হোক তবুও সে তো বড়।
এত বর্ণনা দেওয়া তার ঠিক হয় নি ।
কুহূর নিরবতা তাকে আরও লজ্জা দিচ্ছে। কুহূ নিশ্চয় জেমির কথার সাথে সাজিদের বর্ণনা মিলাচ্ছে। এরজন্যই সে নিরব।
এমনটাই ধারণা জেমির। তবে সে তো বুঝতে পারছে না কত বড় ভুল ধারণা পোষণ করছে সে।
কুহূ কিছু বললো না। শুধু বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে বললো,
তুই কাবাব মে হাড্ডি হয়েছিস নাকি আমি! তা আমার জানা নেই। তবে সাজিদের সাথে তোর আটটা বছর আগে পরিচয় হলে ভালো হতো।।
হনহন করে নিজের ঘরে ঢুকলো। দরজায় দোর দিবে কিনা তা নিয়ে ভাবলো ৷ তারপর খোলায় রেখে দিলো এ ভেবে সবাই এখন বরকে নিয়ে ব্যস্ত।
ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি বের করলো।
পাঁচ বছর আগেও এর মূল্য ছিল অনেক তবে আজ এটা পুরোপুরি মূল্যহীন।
ডাইরিটা খুললো কুহূ।
সুখময় কিছু স্মৃতি।
স্মরণ করাটা কি ঠিক হবে?
শেষবারের মতো নাহয় করায় যাক।।
# কলেজ প্রথম বর্ষের শেষ দিন প্রায় সন্নিকটে।
আর চার কি পাঁচ দিন। সেই আনন্দে কুহূ তার এফরনটা কলেজ বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে ছুঁড়ে দিলো। তার খেয়ালই রইলো না এটা মেইন রোড।
এ ঘটনার এক মিনিটের মাঝে আর্মি জিপ পাশাপাশি চলা শুরু করলো।
কুহূ পিছনের দিকে বসা ছিল ঠিক সেখানে।
_ Excuse me. আপনার ইয়ে পড়ে গেছে।
আর্মি পোশাক পরা খুবই ইয়াং ম্যান।
গেট আপ দেখে মনে হচ্ছে আর্মি অফিসার।
দেখতে বেশ কিউট তো।
কুহূ জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
ইয়ে টা কি?
কুহূ ততক্ষণে আর্মি অফিসারের নাম দেখে নিয়েছে। সাজিদ আকন্দ।
সাজিদ তার মস্তিষ্কে সম্পূর্ণ এফর্ট দিয়েও জিনিসটার নাম খুঁজে বের করতে পারলো না। তাই এফরনটা দেখিয়ে বললো,
এই কটিটা।
_ ও এফরন! ( কুহূ )
_ ইয়েস ওটাই। ( সাজিদ)
_ কিন্তু এটা তো আমার দরকার নেই। ( কুহূ)
সাজিদের রাগ হলো । তবে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলিয়ে বললো,
মিস, এটা আমারও দরকার নেই।
তাই আপনার কাছে থাকলেই ভালো হয় না!
_ তাও ঠিক। ( কুহূ)
কুহূ হাত বাড়িয়ে এফরনটা নিলো।
_ আর হ্যাঁ। কিছু দরকার না হলে ডাস্টবিন আছে সেখানে ফেলবেন। এইটা মেইন রোড। আপনার ছোট ভুলের জন্য অনেক বড় দুর্ঘটনা হতে পারতো। ( সাজিদ)
কুহূ সরি বললো ঠিকই তবে সাজিদ শুনলো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে চলে গেল।
এ ঘটনা ঘটার ঠিক একদিন পর। কুহূ এ ঘটনা প্রায় ভুলেই গেছে৷
আজ কলেজ বাস যাবে না কিছু সমস্যার কারণে।
কুহূ আবার রাস্তা পার হতে ভয় পায়। তাই তো রংপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ গেটের ঠিক সামনের রাস্তাটায় পার হতে পারছে না।
তার যখন মনে হলো এখন পার হওয়া যেতে পারে। সে পার হওয়া শুরু করলো।
সাইকেল থেকে বাঁচতে গিয়ে সে জিপের সামনে পড়লো।
জিপের এক চাকা তার পায়ের উপর দিয়ে গেল।
সাজিদ গাড়িতে বসেই বিড়বিড় করে বললো,
এ মেয়ে কি মরার জন্য আমার গাড়িই পেল! ও আল্লাহ। আবার সেই পাগল মেয়ে।
সাজিদ জিপ থেকে নেমে কিছু কড়া কথা শোনাতেই যাবে কিন্তু কুহূর কান্নায় থেমে গেলো। বিশেষত তার প্রশ্নে,
” আমি কি এখন মারা যাবো? ”
সাজিদ হাসবে নাকি বিরক্তি পোষণ করবে বুঝতে পারলো না। তার নজর গেল নেইম প্লেটের দিকে।
সোনালী প্লেটে কালো রং ঝলঝল করে দেখাচ্ছে ফিরোজা নূর।
সাজিদ আচমকা বলে উঠলো,
ফিরোজা রংটা সুন্দর তবে সুন্দর নও।
সাজিদ নিজের মনের বিরুদ্ধে বললো,
না মেয়েটা তো সুন্দর। তাকে ফিরোজা রংয়ের শাড়িতে বেশ লাগবে। বেশ লাগবে কি পার্ফেক্ট লাগবে। তবে এ মেয়ের নাকে ও চোখে সমস্যা আছে। নাকটা বোচা আর চোখগুলো অতিরিক্ত ছোট। রেগে বা তীক্ষ্ণ নজরে তাকালে তো চোখ দেখায় যাবে না। ওর মুখের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ঠোঁট জোড়া।
ছোট কিন্তু শেইপ আর রংটা সুন্দর ।
সাজিদ হয়তো আরও কিছুক্ষণ গবেষণা করতো যদি না তার ড্রাইভার তার ধ্যান ভাঙ্গাতো – স্যার, কি করবো? আপনার মিটিং আছে। মেয়েটাও ব্যথা পেয়েছে। এখন মেয়েটাকে নিয়ে কি করবো?
_ পদ্মা সেতুতে গিয়ে পদ্মা নদীতে টুপ করে ফেলে দেও।
ড্রাইভার চিন্তিত হলো ৷ স্যারের মুডরভালো হলো কীভাবে! একটু আগেও তো খারাপ ছিল। আবার না কখন চেইতা যায়।
সাজিদের এতক্ষণে মনে পড়লো মেয়েটা সত্যিই ব্যথা পেয়েছে। সাজিদ কুহূর সামনে গিয়ে বসলো।
_ আমি কি মারা যাবো? ( কুহূ)
সাজিদ বিরক্ত হলো ঠিকই তবে বললো,
মারা গেল এতক্ষণে যেতেন না?
_ তাও তো কথা। জানেন, আমি মরতে চাই না। সকলে আমাকে অনেক ভালোবাসে ৷ কিন্তু আমার কোথাও যাওয়া পছন্দ না। তবে আমি নানু বাড়ি যায় শুধু তিনটি প্রাণীর জন্য। আমার মা, আমার বোন দীপ্তি আর আমার মামাতো বোন জেমি। আর যদি জড়পদার্থ বলেন তাহলে বলবো উপন্যাস আবারও উপন্যাস এবং নতুন জামাকাপড়।
কথাগুলো একদমে বলে নাক টানলো কুহূ।
_ আমি শুনতে চেয়েছি? ( সাজিদ)
_ না। কিন্তু আমি মরার আগে বলে যাচ্ছি। যাতে আপনি আমার পরিবারকে বলতে পারেন। ( কুহূ )
এই মেয়ের সামনে বসে থাকলে তাকে যে এই নাটক সহ্য করতেই হবে তা বুঝতে পেরে সাজিদ ড্রাইভারকে দিয়ে এক মহিলা আর্মি আনালো। তারপর তার মাধ্যমে জিপে তুললো। জিপ দিয়ে তাদের সিএমএস এ পাঠিয়ে দিয়ে নিজে সাইকেল নিয়ে মিটিং য়ে গেল।
চলবে.,.





