ফিরোজা
পর্ব ৪
# কুহূ বলা শুরু করলো,
” শুক্রবার। খুবই শুভদিন। বাকি পাঁচ দশটা দিনের মতোই স্বাভাবিক দিন। শুধু ফিরোজার জন্যে বিশেষ। কারণ আজ সাজিদ আসবে।
কুহূ গোসল করে ফিরোজা রঙের শাড়ি পড়লো।
একটু সাজাগোজু করলে কি হয়!
কুহূ ভিজা চুলেই একটু সাজলো।
সাজিদ আসবে বিধায় সে হাতে মেহেদি দিয়েছে।
কলিং বেল বাজলো। নিশ্চয় সাজিদ চলে এসেছে। কুহূ কানে ঝুমকা লাগাতে লাগাতে ঘড়ির দিকে তাকালো।
৯ টা ৭ বাজে। ঝুমকাটা লাগাতে একটু সময় লাগলো। তারপর দরজা খুললো।
প্রথম কাজই জড়িয়ে ধরা তবে সাজিদ আজ আর জড়িয়ে ধরলো না।
উত্তেজিত হয়ে ভিতরে ঢুকে বললো,
সে কোথায়?
কুহূ বিস্মিত হয়ে বললো,
কে?
_ চিনতে পারছিস না এখন! ভাব ধরছিস আমার সামনে। তোর প্রেমিকের কথা বলছি। রনির কথা। ( সাজিদ )
_ রনি ভাইয়া আমার প্রেমিক হতে যাবে কেন? রনি ভাইয়া তো………
এমন সময় ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো রনি। গায়ে শুধু টাওয়াল দেওয়া।
সাজিদের রাগ বাড়লো।
_ তোর প্রেমিক না তাহলে এখানে কেন?
_ আমি সত্যিই জানি না। ভাইয়া আপনি এখানে কেন? কিভাবে এসেছেন? ( কুহূ )
_ নাটক করছো কেন? ধরা তো পড়েই গেছি তাহলে সত্যিই বলো। কাল রাতে তুমিই তো ডেকেছিলে। ( রনি )
_ ছিঃ ফিরো, ছিঃ। ( সাজিদ )
_ এই আপনি মিথ্যা বলছেন কেন?
সাজিদের হাত ধরে বললো,
বিশ্বাস করো উনি মিথ্যা বলছে। আমি এ বিষয়ে কিচ্ছু জানি না ।
সাজিদ হাত ঝারা দিয়ে বললো,
কিচ্ছু জানো না? তাহলে জুতা কার?
রনি পড়ে দেখালো জুতাটা তার।
তার হবেই তো কারণ জুতাটা তো সত্যিই রনির ৷
কুহূ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় নন্দিনীকে চাবি দিয়ে যায়। সেই হয়তো এসেছিল রনিকে নিয়ে।
_ তুমি বিশ্বাস করো সাজিদ,
আমি কিচ্ছু করি নি।
_ আমার পবিত্র ঘরটাকে কেন অপবিত্র করলে ফিরো? আমায় তুমি ভালোবাসো নি বললেই পারতে। চলে যেতাম। কেন প্রতারণা করলে এভাবে?
আম্মু ঠিকই বলেছিল তুমি আমার টাকার জন্যই আমার জীবনে এসেছিলে!
কুহূ অঝোরে কান্না করেছিল। যে পাপ সে করে নি সে পাপের জন্য পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিল।
তবে কোনো লাভ হয় নি। প্রচুর অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সাজিদ কুহূকে।
সাজিদ একবারও ভাবে নি চাবিটা শুধু তার কাছে না তার মায়ের কাছেও আছে।
একবার যদি এ কথা সে চিন্তা করতো তবে হয়তো সে আমারই থাকতো! ”
কুহূ কাঁদছে। বহুদিন পর সে কাঁদছে। বুকে ব্যথাও বাড়ছে । তবে কোথায় যেন এক টুকরো শান্তি অনুভব করলো কথাগুলো বলতে পেরে।
দীপ্তি কুহূকে জড়িয়ে ধরে আছে।
_ জানিস, আপি। এগুলো শুধু আমাকে তাড়ানোর এক পরিকল্পনা ছিল তা আমি বুঝতে পারি ১ সপ্তাহ পরে। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে। এটা অবশ্য রনিই আমাকে দিয়েছিল। তবে সব ধ্বংস করে উপকার করলে কোনো লাভ আছে!
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে – রনি পিছনের দরজা দয়ে ঘরে ঢুকছে। তার হাতে চাবি স্পষ্ট। সে ঘরে ঢুকেছে ঠিক ৯ টা ৫ এ।
_ এটা কখনো দেখাস নি সাজিদকে?
_ না।
_ দেখ। ছোট ছোট ভুল জীবনে হয়েই থাকে। ছোট্ট একটা ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে এত বড় কাহিনী করার কোনো মানে হয় না। তুই ফুটেজটা সাজিদকে দেখা।
_ ভেবেছিলাম দেখাবো। যদি না সাজিদ এমনটা না করতো!
‘ আকন্দ ভিলা থেকে চলে আসার পর আমি ছোট একটা বাসা নিয়েছি। দুইরুমের ছোট বাসা। টিনসেট বিল্ডিং। মোটামুটি ভালোয় গুছিয়ে ফেলেছি। মা, রুনাকে পাঠিয়েছে আমার সাথে থাকার জন্য।
রুনার জন্যই একটু হাসি খুশি ছিলাম।
একদিন কলিং বেল বাজলো। সাথে সাথে দরজায়ও টোকা পড়লো।
কুহুর এই নতুন বাসা কেউই চিনে না তাই পরিচিত মানুষ আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কুহূ তাই বেশ কৌতূহল নিয়ে দরজা খুললো। সামনে আর কেউ না স্বয়ং সাজিদ।
কুহূর মনে হলো সাজিদ হয়তো সব জেনে তার কাছে ক্ষমা চায়তে এসেছে।
তাকে আবার ফিরিয়ে নিতে এসেছে।
তবে সাজিদ হাত দিয়ে ইশারা করে আর্মিদের ভিতরে প্রবেশের নির্দেশ দিলো।
তন্নতন্ন করে তারা যেন কি খুঁজছে।
কুহূ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুধু।
রুনা বাসায় নেই। চাল-ডাল কেনার জন্য বাহিরে গেছে।
দেখে মনে হচ্ছে খুঁজছে কম ভাংচুর করছে বেশি। কুহূ প্রতিবাদ করলো না শুধু তাকিয়ে রইলো।
ভাংচুরের সর্বোচ্চ তান্ডবলিলা চালাচ্ছে সাজিদ । সে বেছে বেছে নিজের দেওয়া জিনিসগুলোই নষ্ট করছে ৷
একটা কাঁচের শো-পিচ আছাড় দিয়ে ভাঙলে তার কিছু খণ্ড গিয়ে কুহূর গালের একপাশে কেটে গেল। মৃদু স্বরে কুহূ একবার শুধু ‘আহ’ উচ্চারণ করলো।
থেমে গেল সাজিদ। এরমধ্যে খবর এলো যা সে খুঁজছিল তা বাসায়ই আছে।
সৈন্যরা এসে বললো,
কোথাও ডায়মন্ডের রিং পাওয়া যায় নি।
কুহূর বুক ফাটলো তবে মুখ ফাটলো না। সেদিন থেকে কান্নাও থেমে গেল।
ততক্ষণে রুনা এসে কান্নাকাটি শুরু করেছে।
_ আফা, আম্মারে একটা ফোন দেই। আবার কই? ( রুনা )
কুহূর শক্ত কণ্ঠ শোনা গেল,
না।
সাজিদ বেরিয়ে যাওয়ার সময় টেবিলে একটা এটিএম কার্ড রাখলো।
তারপর বেরিয়ে যেতে যেতে শুনতে পেল।
_ রুনা। ( কুহূ )
_ জ্বি আফা। ( রুনা )
_ কার্ডটা কোনো ভিখারিকে দিয়ে আয়। ( কুহূ)
রুনা বাহিরে গিয়ে আবারও ফিরে এসে বললো,
দিয়া আইছি আফা ৷
_ ভালো করেছিস। ( কুহূ )
_ কারে দিছি জানো আফা?
কুহূ চুপ রইলো।
_ যে লোকটা খালি পোশাকে ছিল তারে। কারণ এত ক্ষমতা আছে, টাহা আছে তার একটা আংটির জন ভাংচুর করন লাগে!
কুহূ বেশ কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে দেখেছিল রুনাকে।
_ আফা। একটা কথা কই?
_ বল।
_ আহেন আমরা পুলিশের কাছে যায়। যাইয়া একটা রিপোর্ট কইরা আহি।
_ আইনের লোককে কখনো আইন দিয়ে ঠেকানো যায় না রে রুনা। ‘
একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেললো কুহূ।।
_ তাহলে এখন তুই কি করতে চাস? ( দীপ্তি)
_ কিচ্ছু না। যেমন আছে তেমনই থাকবে। ( কুহূ)
_ তুই ফুটেজটা দেখাবি না? ( দীপ্তি)
_ দেখাবো না কেন! দেখাবো। অবশ্যই দেখাবো। তবে ওর অষ্টম বিবাহ বার্ষিকীতে। অথবা সাজিদের মরার আগে অর্থাৎ শেষ বয়সে। যাতে ধুঁকে ধুঁকে মরে।
_ কিন্তু —
_ মনে রাখিস কসম দিছস। কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবি না। যা দরজা খোল আপি। মা আসছে। ( কুহূ )
দীপ্তি সত্যিই খেয়াল করে নি। দরজাটা খুলে দেখে সত্যিই মা এসেছে।
কুহূর মা কুহূকে খাইয়ে দিচ্ছে। কুহূও চুপচাপ খাচ্ছে।
কে জানে এমন দিন আবারও কখনো আসবে কিনা!
# অবশেষে সব ছেড়ে নতুন গন্তব্যের জন্য চুপিচুপি গাড়িতে উঠলো কুহূ।
২ ঘণ্টা পর ফ্লাইট। সে এখন টাকার অদূরে অবস্থান করছে।
গাড়ি চলছে স্বাভাবিক গতিতে।
কুহূ বিয়ে কার্ডটা খুললো। কনের নাম – জান্নাতুল জেমি ও বরের নাম – সাজিদ আকন্দ ।
উভয় লেখায় ঝলঝল করছে ।
দুই লাইন গান গাইতে মন চাচ্ছে।
গাইবে না গাইবে না করেও গুনগুনানো শুরু করলো। গান তার ইমোশনকে প্রতিফলন করছে স্পষ্টভাবে।
” দুচোখ আমার অন্ধ হোক
বন্ধুর পাশে অন্য লোক
কেমন করে সইবো আমি –
এমন অবিচার!! ”
আল্লাহ তো তার চোখ অন্ধ করবে না।
তাই সে নিজেই চলে যাচ্ছে। যাতে দূরে কোথাও অন্ধের মতোই থাকতে পারে।।
চলবে.,.





