#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ৩
,
,
,
—একটা কথা রাখবে নোমান?
—হুমম, বলো।
—বিয়েশাদি করে সংসারি….
আরমান খানের কথার মাঝেই বলে উঠলো নোমান,
—স্টপ ইট বাবা।আমি কোন বিয়ে টিয়ে করতে পারবোনা।
—কিন্তু কেনো?
নোমান কপাল কুঁচকে তাকালো আরমান খানের দিকে।পরক্ষনে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
—কেনোর কোন উত্তর নেই।বিয়ে করবো না মানে করবো না।
আরমান খান আশা ছাড়লেন না।ফের প্রশ্ন ছুড়লেন,
—না করার কোন কারন তো বলো।
নোমানের চোখটা যেনো জ্বলে উঠলো।আগুনের শিখার মতো দাউদাউ আগুন চোখ ফুটে বেরোতে চাইলো যেনো।
আরমান খানের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
—কি দরকার সেই জিবনসঙ্গীর যে কিনা অসুস্থ হলে অন্যজন তার পাশে না থেকে,সেবা করে সুস্থ করার চেষ্টা না করে ছুড়ে ফেলে দেয়?কি দরকার সেই জীবনসঙ্গীর যার অসহায়ত্বর সময় তাকে ফেলে অন্যকারো হাত ধরা যায়?
বিয়ে মানে তো জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন তাই না বাবা?এটা কি সত্যি নাকি শুধু কথার কথা?নাকি অভিনয়?
কি দরকার শুধু শুধু এই মিথ্যা নাটকের?জন্ম জন্মান্তর দুরে থাক যাকে এক জন্মেই তাকে ভুলে অন্য কাউকে নিয়ে জিবন শুরু করা যায়,কি দরকার সেই মিথ্যা সম্পর্কে জড়ানোর?
আরমান খান মাথা নিচু করে বসে থাকেন।এই একটা ভুলের জন্য তিনি ছেলের চোখে কতোটা নিচে নেমে গেছেন সেটা তিনি বুঝতে পারেন।
এসব কথা শোনার পর আর কোন কথা বাড়াতে ইচ্ছে হয়না তার।
,
,
,
খা খা রোদ্দুর মাথার ওপরে কড়া নাড়ছে।পথ ঘাট শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।
বাতাস দুরে থাক গাছের একটা পাতাও যেনো নড়ছেনা।
অপু ফিরছে ভার্সিটি থেকে।
হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তার।এতো গরমে জিবন ওষ্ঠাগত হয়ে আছে।এতোটা পথ হাঁটতে হাঁটতে আরও হাপিয়ে উঠেছে।রিকশা ডাকার ইচ্ছে হলেও ইচ্ছেটাকে প্রাধন্য দিচ্ছে না অপু।
রিকশা চড়ে টাকা ওড়ানোর মতো শৌখিন সে নয়।
টিউশনির সামান্য টাকায় পড়াশোনার খরচ,মায়ের ঔষধপত্রের খরচসহ যাবতীয় টুকটাক খরচ করতে হয় তাকে।অপুর ভাই শুধু খাওয়া বাদে কোন রকম ব্যায় বহন করে তাদের।
এসবের ভেতর রিকশায় ওঠার মতো বাড়তি খরচ সে করতে চায়না।
এই মধ্যদুপুরের গরমে হাসফাস করতে করতে জোরে জোরে পা চালায় সে।
গরমে শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়েছে।পেছনের জামার কাধ ভিজে চুপচুপ।
রাস্তায় হেটে চলা লোকদের ভেতর কেউ কেউ আড়চোখে তাকাচ্ছে সে দিকে।
ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই অপু আরও দ্রুত পা চালায়।
,
পেছন থেকে গাড়ির শব্দ পেছন ঘুরে তাকায় ঠিক তখনি ঘটে অঘটন।
সামনের ইটের টুকরোয় হোচট খায় সে।
এবং সাথে সাথেই ফট করে স্যান্ডেল টা ছিড়ে যায়।
অপু অসহায় দৃষ্টিতে স্যান্ডেলটা দেখে।
সেলাই করা কমদামি স্যান্ডেলটা ছেড়াতে অপুর দুঃখ আকাশ সম ভর করে।মাসের মাঝে এসে এমন অঘটন হতে হলো?
অপু ভেবেছিলো মাসটা কোনমতে এই স্যান্ডেলটা দিয়েই কাটাবে,সামনের মাসে টিউশনির টাকা পেলে একটা নতুন স্যান্ডেল কিনবে।
কিন্তু কি হলো এটা?
এখানে স্যান্ডেল সেলাই করা দোকানই বা কোথায় পাবে?
পুরোটা পথ কি সে খালি পায়ে যাবে।
মুহূর্তে সমস্ত রাগ গিয়ে পরে গাড়িওয়ালার ওপর।
কেন সে পেছন থেকে ওতো জোড়ে হর্ন বাজাবে?
তাহলে তো আর অপু পেছন ফিরে তাকাতো না?
স্যান্ডেলটাও ছিড়তো না।
তেড়ে এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।জানালায় পরপর কয়েকদফা টোকা দেয় অপু।
ড্রাইভার সামনের কাচ নামিয়ে উঁকি দেয়,বিরক্তি মাখা মুখ করে বলে,
—কি হয়ছে,কি চাই?
—হর্ন কেন বাজায়ছেন?
ড্রাইভার অবাক হয়ে বলে,
—আরে কি আশ্চর্য,হর্ন বাজায়ছি তাতে কি হয়ছে?
অপু আবার বলে,
—বিনা কারনে হর্ন বাজিয়ে ভয় কেনো দেখায়ছেন আমায়?আমি কি আপনার গাড়ির সামনে আসছিলাম?আপনার জন্য আমার স্যান্ডেলটা ছিড়ে গেলো।
ড্রাইভার কিছু বলার আগেই গাড়ির ভেতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে কেউ ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
—এতো ফালতু কথা কেনো বলেন জহির।যা ক্ষতি হয়েছে টাকা দিয়ে পুষিয়ে দিন।
কন্ঠ টা শুনে অপু চমকে ওঠে।এমন গম্ভীর রাগী কন্ঠ কোথায় যেন শুনেছে সে।কিন্তু কোথায় শুনেছে সেটা ঠিক মনে করতে পারেনা।
তারআগেই মাথায় আরেকটা কথা আসে।
লোকটা তাকে টাকা দিতে চেয়েছে?অপুকে কি ফকির মনে হয়?কতো অহংকারী লোক রে বাবা।এইজন্যই অপু বড়লোকদের দেখতে পারেনা।
অপু চোখ ছোট করে কাচ ভেদ করে ভেতরে থাকা মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করে,কিন্তু ব্যার্থ হয়।
হাতে থাকা ছোট ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আতকে ওঠে।
টিউশনির টাইম পেরিয়ে যাচ্ছে। দেরি করলে মাস শেষে বেতন কাটা যাবে তার।
সাতপাঁচ না ভেবে হাতে স্যান্ডেল ঝুলিয়ে খালিপায়েই হাটা শুরু করে সে।
,
গাড়ির কাচটাকে সামান্য নামিয়ে সেদিকে একবার চোখ রেখে আবার কাচ তুলে দেয় নোমান।
মুখে বিরবির করে,
—যত্তসব ছোটলোক।
,
,
,
চলবে……