#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১৮
,
ঘড়ির কাটা এখন ১টার ঘরে।
চারিদিকে শুনশান নিরবতা।মাঝে মাঝে দু’একটা নাম না জানা নিশাচর পাখি ডেকে উঠছে।
দেয়ালে টানানো ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটা টিকটিক করে শব্দ করে ছুটে ছলেছে।
তার সাথে পাল্লা দিয়ে শব্দ করছে অপুর হার্টবিট।
অতিরিক্ত টেনশনে অপুর মাথা ব্যাথা করছে।
এসি রুমে থেকেও গা ঘামছে।ভিজে চিপচিপে হয়ে গেছে সে।
মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে ঠান্ডা পানিতে গোছল করলে একটু ভালো হতো।
কিন্তু এতো রাতে গোছল করলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে সে ভয়েই অপু গোছলের চিন্তা বাদ দিলো।
রুমের একপাশ থেকে আরেকপাশে পায়চারি করতে লাগলো।
টেনশনে অপুর মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
এতো টেনশন করা যায় নাকি?
রাত আটটা নাগাদ অনিক ফোন দিয়েছিলো অপুর কাছে।অপু খুশি মনে লাফাতে লাফাতে ফোন রিসিভ করেছিলো।
যতোই সে ভাইয়ের উপর রেগে থাকুক না কেনো,ভাই ফোন দিলে এক নিমিষে রাগ গায়েব হয়ে যায় অপুর।
কিন্তু ফোন রিসিভ করে অনিক ভালোমতো একটা কথাও বলেনি,এমনকি একবার জিজ্ঞেস ও করেনি যে অপু কেমন আছে।
মায়ের আজ রাতে হার্টের অপারেশন সে কথাই জানাতে কল দিয়েছিলো সে।
অপু বলেছিলো,আগে কেনো জানায়নি যে আজ রাতে মায়ের অপারেশন?
অনিক তখন রাগারাগি করে অনেক কথা শুনেয়েছিলো অপুকে।তারপর আরকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খট করে ফোন রেখে দিয়েছিলো অনিক।
অপুর খুব খারাপ লেগেছিলো।কিন্তু খারাপ লাগাটা মায়ের জন্য চিন্তার নিচে চাপা পরে গেছে।
আগে বললে হয়তো অপু মায়ের কাছে যেতে পারতো,কিন্তু এতো রাতে শশুড় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে অপুর মন সায় দেয়নি।
যদিও আরমান খান কিছু বলতেননা,তবে মিসেস রিচি?সে কিছুতেই ছাড় দিতো না অপুকে।
অপুর এখন কান্না পাচ্ছে, হাউমাউ করে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।
এতোক্ষণ যাবত সারা ঘরময় হাটতে হাঁটতে অপুর পা টাও ব্যাথায় টনটন করছে।
মাথা ব্যাথাটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
চা খেলে হয়তো মাথা ব্যাথা কমতে পারে এই ধারনা নিয়ে অপু রুম থেকে বের হলো।
মায়ের অপারেশন হয়েছে নাকি আরও পরে হবে,এসব জানার জন্য অপু বারকয়েক অনিকের নাম্বারে কল করলো।
কিন্তু অনিক রিসিভ করলোনা।
অপুর টেনশন আরও বাড়লো।এবার টেনশনে হাত পাও কাঁপা শুরু হলো।
অপু বারবার কল করতে করতে সাবধানে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো।
এতো রাতে রুজি খালা আর নয়না খালা অবশ্যই ঘুমিয়ে গেছে।
সে কথা ভেবে অপু নিজেই কিচেনে গেলো।
কেতলিতে পানি গরম করতে দিয়ে আবার কল করতে লাগলো অনিকের নাম্বারে।
পানি গরম হয়ে এলে,কাপে চিনি,পানি, টি ব্যাগ দিয়ে নেড়ে হাতে তুলে নিলো অপু।
এমন সময় সিড়ির ওপর থেকে নোমানের গলা ভেসে এলো,
সে বললো,
—রুজি,এককাপ কফি দিন তো আমায়।
এতো শুনশান অন্ধকার রাতে হঠাৎ করে নোমানের গলা শুনে অপু চমকে উঠেছে।
বুকে ফু দিলো সে।
কিচেন থেকে বেরিয়ে সিড়ির দিকে উঁকি দিলো অপু।
নোমান নেই।কথাটা বলে সে আবার নিজের রুমে চলে গেছে।
আজ নোমান আরমান খানকে হাসপাতাল থেকে এনে এ বাড়িতেই থেকে গেছে।
নোমান থাকবে বলে অপু অন্য রুমে শিফট হয়েছে।
নোমান তো আর অপুকে বউ বলে মানে না যে এক রুমে থাকবে।
যদিও নোমান অপুকে অন্য রুমে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেনি তবু অপু নিজেই অন্য রুমে এসেছে।
নোমানের সাথে থাকলে তো অপুকে সোফায়ই শুতে হবে।আর শুনতে হবে নানাধরনের অপমানজনক কথা।তারচেয়ে বরং অন্য রুমে থাকাই ভালো।
অপু খুব সাবধানতার সাথে নোমানের কফি বানালো।
এবার মনে করে সে চিনি দিলোনা।
এর আগে তো এই চিনি নিয়েই তাকে কতো কথা শুনতে হয়েছিলো।
ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে উঠে নোমানের রুমের সামনে দাড়ালো অপু।
রুমে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না সে।
অনেক চেষ্টা করে বুকে সাহস জমিয়ে দরজায় টোকা দিলো।
ভেতোর থেকে নোমান বললো,
—কাম ইন!
অপু রুমে ঢুকে সাবধানে টেবিলের ওপর কফির কাপ রাখলো।
নোমান তখন লেপটপে মুখ গুজে আছে।
কফির কাপ রেখে অপু মানে মানে কেটে পরতে চাইলো।
নোমান ততক্ষণে মুখ তুলে চেয়েছে।
অপুকে দেখে সে কপাল কুঁচকে ফেললো।
মেয়েটা থ্রী পিস পরেছে।
যদিও তাকে দেখতে ভালো লাগছে তবুও নোমানের ভালো লাগলোনা।
বিয়ের পর যে দুদিন নোমান বাড়িতে ছিলো তখন মেয়েটা শাড়ি পরতো।
শাড়ি পরে সারা বাড়ি টুকটুক করে ঘুরে বেড়াতো।
একদম বউ বউ লাগতো তাকে।
কিন্তু এখন? এখন কেনো শাড়ি পরেনা সে?সে কি বউ বউ সাজে আর থাকতে চায়না?মেয়ে সাজতে চায়?কার জন্য?
ফোনে কথা বলা ওই প্রেমিকের জন্য?
নোমান বলে উঠলো,
—শাড়ি পরোনা কেন এখন তুমি?
অপু ততক্ষণে দরজার কাছে এসেছিলো।
নোমানের কথা শুনে ঘুরে তাকালো।
প্রশ্নটা মাথায় ঢুকতে একটু যেনো সময় লাগলো।
বুঝতে পারতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।
নোমান অপুর মুখ থেকে উত্তর শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলো।উত্তর না পাওয়ায় হতাশ হলো।
লেপটপ বন্ধ করে,সোফা থেকে উঠে দাড়ালো।
হাত দিয়ে মাথার সিল্কি চুলে বারকয়েক চিরুনি মতো করলো।
অপুর মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো,
—কথা বলো?
অপু নিশ্চুপ হয়ে কাঠ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
তার কন্ঠ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
গলার কাছে সব কথা আটকে আসছে।
নোমান এবার বেশ বিরক্ত হলো।
একটু রাগী গলায় বললো,
—কথা বলছো না কেনো?বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে গেলে তো ভালই বলতে পারো।দাঁত কেলিয়ে হাসতেও পারো।
অপু বিস্ময় ভরা কন্ঠে বললো,
—বয়ফ্রেন্ড?
—এইতো!বয়ফ্রেন্ডের কথা বলার সাথে সাথে মুখে কথা ফুটে গেলো।
অপু অবাক হলো।তার বয়ফ্রেন্ড কোথা থেকে আসলো?আর কবেই বা তার সাথে দাঁত কেলিয়ে হাসলো?কি বলছে টা কি নোমান।
অপু অবাক চাহনি দিয়ে নোমানের মুখের দিয়ে তাকালো।
হঠাৎ অপুর ফোন বেজে উঠলো।অনিক ফোন দিচ্ছে।
অপু ভয়ে ভয়ে নেমানের দিকে তাকালো।
নোমান অপুর দিকে রাগী চেহারায় তাকিয়ে আছে।
দেখেই মনে হচ্ছে সে ভয়ংকর রেগে যাচ্ছে।
কিন্তু কেনো?অপুর মাথায় ঢুকলো না।
হয়তো ফোন বেজে উঠেছে সেইজন্য?
অপু টুক করে কল কেটে দিলো।
নোমান খানের সামনে সে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারবেনা।
তারচেয়ে রুমের বাইরে গিয়ে কল ব্যাক করবে।
নোমান তীক্ষ্ণ চোখে অপুর ফোন দেখলো।
মাথায় রাগগুলো দপদপ করে জ্বলে উঠলো।
মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড আছে।সত্যি আছে।
নয়তো নোমানের কথার জবাবে কেনো বললো না যে তার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।
তাছাড়া এতো রাতে নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কেউ ফোন দেয়না।
আবার নোমান সামনে আছে দেখে কল কেটেও দিলো?
এতোটা সাহস হয়েছে মেয়েটার?
নোমান রাগে চিৎকার করে বললো,
—এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো?কেনো দাড়িয়ে আছো?
আউট,আউট ফ্রম মাই রুম!
,
,
চলবে……