ধর্ষিতা বউ পর্ব ৪

#ধর্ষিতা_বউ
#৪র্থ_পর্ব
__________

বাসায় ঢুকতেই প্রাপ্তির মা তাকে গলায় জড়িয়ে ধরলো।কতদিন পরে ওর সাথে দেখা হয়েছে।প্রাপ্তির ছোট ভাই দৌড়ে এসে আপু বলে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।বছর ৭/৮ হবে।প্রান্ত নাম।প্রাপ্তির জান এটা।প্রাপ্তির বাবা তখন বাসায় ছিলেন না।ব্যবসার কাজে ঢাকার বাইরে ছিলেন।তারপর প্রাপ্তির মা প্রাপ্তি কে নিয়ে রুমে গেলো।মা মেয়ে মিলে অনেক গল্প করলো!
হঠাৎ করেই প্রাপ্তির হাতের পোড়া দাগটার উপরে ওর মায়ের নজর পড়লো।তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
-তোর হাতে কি হয়েছে?এইভাবে দাগ পড়ে গেলো কেনো?
-আরে মা কিছু না।রান্নার সময় তেল পড়ে গেছিলো।
-কিছু না মানে কি!তুই দেখ তো কতটা ছড়িয়ে গেছে পোড়াটা।
-কিছু হবে না মা।ঠিক হয়ে যাবে।
-কিছু লাগাস নি এটাতে?
-লাগিয়েছিলাম।ও একটা মলম এনে দিয়েছিলো সেটাই লাগিয়েছি।
-এখন এই দাগটা কিভাবে যাবে?অনেকটাই কালচে হয়ে গেছে।
-চলে যাবে মা। ও বলেছে ভিনেগার লাগালে দাগ চলে যাবে।
-হুম বাসায় আছে লাগিয়ে নিস।
-আচ্ছা।
মা মেয়ে একসাথে দুপুরের রান্নার আয়োজন করলো!কতো খুনসুটি করলো মা মেয়ে একসাথে।কি যেনো মনে করতেই প্রাপ্তির মা ওকে জিজ্ঞেস করলো,
-সায়ান তোকে ভালোবাসে তো মা?
-হ্যাঁ মা সায়ান আমাকে অনেক ভালোবাসে।
-তুই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস না তো।তোর মুখ থেকে কেমন যেনো মনে হচ্ছে।
-কি যে বলো না মা।ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।এই দেখো আজকে আমাকে এই ফোন টা দিলো।দেখো কতো দামী।সিমও আছে দুইটা।
-এগুলো দিলেই ভালোবাসে?
-আরে না মা।ও এমনিতেও আমার অনেক যত্ন নেয়।অনেক আদর করে আমাকে।আচ্ছা মা বাবা কবে আসবে?
-আরো ৩ দিন পরে আসবে।
-ওহ আমি তো বিকালেই চলে যাবো।
-কেনো?থাকবি না কয়দিন?
-না মা।ওর খাওয়া দাওয়া কষ্ট হবে।আমাকে চলে যেতে হবে।
-তুই কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস বারবার।
-কি বলো মা এসব।এড়িয়ে যাবো কেনো?
-আমার দোহাই।তুই সত্যি করে বল কি হয়েছে।
-মা!!!!
প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছে।প্রাপ্তির মায়ের আর বুঝতে বাকী রইলো না যে তার মেয়ে ভালো নেই।প্রাপ্তি বলল,
-আচ্ছা মা ধর্ষণ কাকে বলে??
-মানে?হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?
-কারো মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তার সাথে জোরাজুরি করে তার শরীরকে উপভোগ করার নাম ধর্ষণ না??
-হ্যাঁ।কিন্তু তুই এগুলা কেনো জিজ্ঞেস করছিস?
-জানো মা,আমি না নিয়মিত বৈধ ভাবে আমার স্বামী দ্বারা ধর্ষিত হই।আমি সায়ানের ধর্ষিতা বউ।(একটা কষ্টের হাসি মুখে নিয়ে কথা টা বলল)
-তুই এতদিন আমাদেরকে কিছু জানাস নি কেনো?
-জানিয়ে কি লাভ হবে মা?সবসময় দাদীকে,তোমাকে বলতে শুনেছি বিয়ের পরে স্বামীই মেয়েদের সব।আগে আমি ভাবতাম পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো। কারো উপরে নির্ভর করে থাকতে হবেনা আমাকে।স্বামী ভালো না হলেও নিজের পথ নিজে খুজে নিতে পারবো।কিন্তু এই বিয়ে জিনিসটা আমার পুরো ধারনা টা কে বদলে দিলো।আমাকে বুঝিয়ে দিলো সংসার,স্বামী যেমনই হোক না কেনো এটাই একটা মেয়ের শেষ ঠিকানা।তবে আমি সায়ানকে আমার করে নিবোই যে কোনো মুল্যে।আমি তো আল্লাহ্‌র রহমতে কোনো দিক থেকে কম না।আল্লাহ্‌ তো আমাকে সব দিয়েছেন!তাহলে আমি কেনো পারবোনা আমার স্বামীকে নিজের করে নিতে!আমাকে পারতেই হবে আমি পারবো।
প্রাপ্তির মা কথাগুলো শুনে বলল
-আমার ছোট প্রাপ্তিটা কতো বড় হয়ে গেলো।কতকিছু বুঝে ফেলেছে।আল্লাহ্‌ ভরসা মা,আমার দোয়া তোর সাথে রইলো।সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস!
-হ্যাঁ মা দোয়া করো।
-মায়ের মনকে কখনো ফাকি দেওয়া যায়না রে মা।মায়েরা সবই বুঝে যায় তাত কোন সন্তান কি সমস্যায় আছে।এটা তাদের একটা আলাদা শক্তি।
-হ্যাঁ মা জানি।আচ্ছা মা দাদীকে দেখছি না।দাদী কোথায়?এতো সময় হলো আসলাম এখনো খবরই নাই।
-তোর দাদী কয়দিনের জন্য গাজীপুরে গেছে।মন ছুটেছে অনেক তাই তোর বাবা সাথেই গেছে।তোর বাবা সেখানে দিয়ে তারপর কাজে গেছে।
-ওহ
দুপুরে প্রাপ্তির ফোন এ একটা কল আসলো।রিসিভ করে বুঝতে পারলো সায়ান।সায়ান বলল,
-কি করো?
-এইতো মায়ের সাথে গল্প করছি।আপনি কি করেন?
-এইতো অফিসের কাজকর্ম করছি আর কি।তেমন কাজ নেই খালি জরুরি ফাইল গুলোতে সাইন করে দেওয়া,কর্মচারীদেরকে কাজ বলে দেওয়া।এইতো।
-ওহ
-হুম।আচ্ছা শুনো..
-হুম বলেন।
-না কিছুনা।দুপুরে খেয়েছো?
-হুম। আপনি খেয়েছেন?
-হুম দুইটা কলা আর পাউরুটি।
-কেনো?
– এখানে আজকে খাবার আসেনি।তাই।
-ওহ।আচ্ছা এখন রাখি।
-ওকে।বাই।
-আল্লাহ্‌ হাফেয
-আল্লাহ্‌ হাফেয।
বলে প্রাপ্তি ফোন রেখে দিলো।তার মাথায় অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিলো।হঠাৎ করে সায়ানের এই পরিবর্তন,আমার প্রতি কেয়ার,আমাকে মোবাইল দেওয়া, ফোন দেওয়া,কিছুই বুঝতে পারছি না।
বিকালে প্রাপ্তির যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।ও রেডি হয়ে নিলো।ওর মা বলল,
-কয়টা দিন থেকে যা না রে মা।
-না মা।৪ টা বেজে গেছে।৬ টার মধ্যেই সায়ান বাসায় এসে পড়বে।আমার ফিরতে দেরি হলে ওর খাওয়া দাওয়া সমস্যা হবে।
-আমি বুঝি রে মা।কিন্তু কিছু করার নেই এই মুহুর্তে।(কাঁদো কাঁদো গলায়)
-একদম কাঁদবে না তুমি।তুমি ভরসা রাখো তোমার মেয়ের প্রতি।দেখো আমি সব ঠিক করে নিবো।ইনশাআল্লাহ।আর আমার মনে হচ্ছে আমার প্রতি একটু হলেও ওর ভেতরে ভালোবাসা আছে মা।আজকে ওর মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখেছি আমি।বাকীটা আল্লাহ্‌ ভালো জানেন।আমাকে হাসিমুখে বিদায় দাও মা।
তারপর মায়ের থেকে হাসিমুখে বিদায় নিলো প্রাপ্তি।
রিকশা দিয়ে গেলে ৩০ মিনিট লাগবে বাসায় পৌঁছাতে। প্রাপ্তি একটা রিকশা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
এদিকে প্রাপ্তির যাওয়ার ২০ মিনিট পরেই সায়ান প্রাপ্তিদের বাড়িতে আসলো প্রাপ্তিকে পিক করার জন্য।প্রাপ্তির মা সায়ানকে দেখেই বলল,
-বাবা তুমি?আসো বাবা ভেতরে আসো।
-না মামী যাবো না।প্রাপ্তিকে বলেন রেডি হয়ে আসতে আমি নিচে দাঁড়াচ্ছি।
-প্রাপ্তি তো অনেক্ষন আগেই চলে গেছে বাবা।এইতো ২০/২৫ মিনিত হবে।
-ওহ।আচ্ছা মামী তাহলে আজকে আসি।আবার আসবো নি অন্য একদিন।
সায়ানের কথাবার্তা শুনে প্তাপ্তির মা একটু স্বস্তি পেলো।হয়তো প্রাপ্তি ঠিকই বলেছে।সায়ানের মধ্যে পরিবর্তন আসছে।
সায়ান বাসায় পৌছে ৪:৫০ এ।বাসায় গিয়ে দেখে প্রাপ্তি এখনো বাসায় আসেনি।শকিককে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো-তোর ভাবীকে আসতে দেখেছিস?
-না ভাইজান।দেখি নাই।ভাবি আহেন নাই।
-ওহ আচ্ছা।
সায়ান কল এর উপর কল দিয়েই যাচ্ছিলো দুটো নাম্বারেই।দুটো নাম্বারই বন্ধ।সায়ান অনেক চিন্তায় পড়ে গেলো।কোথায় চলে গেলো মেয়েটা!!এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।প্রাপ্তির কোনো খোজ নেই।কিছু না বলে কোথায় যাবে ও।ওর কোনো বিপদ হয়নি তো!!!
অস্থির হয়ে পড়েছে সায়ান।তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো প্রাপ্তিকে খুঁজতে। যাওয়ার সময় শফিককে বলে গেলো প্রাপ্তি ফিরে আসলে যেনো তাকে কল দেয়।

🖋🖋To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here