#ধর্ষিতা_বউ
#৭ম_পর্ব
____________
প্রাপ্তি নিচে এসে নাস্তা রেডি করলো!তিনজনের জন্য আলাদা নাস্তা বেড়ে নিলো।মোনা এসে চেয়ারে বসলো।সায়ান রেডি হয়ে নিচে আসলো।তারপর একসাথে তিনজন নাস্তা করা শুরু করলো।মোনা হালকা কাশি দিয়ে বলল
-এতো রোম্যান্স বাব্বাহ।তোদের রোম্যান্সের কারনে আমার দেরি হয়ে গেলো।৯:৩০ এ উপস্থিত থাকতে হবে আমাকে মেডিকেলে।আর এখন ৯:১৫ টা বাজে অলরেডি।এখান থেকে যেতে কম হলেও ২৫ মিনিট লাগবে।
-আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না আমি তোকে ড্রপ করে দিবো।(সায়ান)
-এএহ হইসে।তুই আমাকে ড্রপ করতে যাবি তোর অফিস রেখে?তাওর আবার দেরি হয়ে যাবেনা?
-আপু আমাদের কারনেই তো তোমারে লেট হলো।তাই ও তোমাকে ড্রপ করে দিবে চিন্তা করোনা।(প্রাপ্তি)
-আরেহ ব্যাপার না।আমার নিজের ব্যাবসা।কিছু হবেনা একটু লেট করে গেলে।
-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।
তারপর সবার নাস্তা খাওয়া শেষ হলে সায়ান আর মোনা একসাথে বেরিয়ে যায়।প্রাপ্তি মোনাকে বলে,
-আপু আবার এসো। বেড়য়ে যেও আমাদের বাসায় আরেকবার।
-আচ্ছা আপুনি আসবো নি।
বলে বিদায় নিলো তারা।তারপর সকাল ১০ টায় শফিক কাচা বাজার করে দিয়ে গেলো।প্রাপ্তি সেগুলো কেটেকুটে দুপুরের রান্না সেরে নিলো।তারপর গোসল করে নামাজ পড়ে খাবার খেয়ে নিলো। দুপুরে খাওয়ার পরে একটু ঘুম দিলো প্রাপ্তি। হঠাৎ ওর ফোন এ একটা কল আসলো।রিসিভ করলো।
-আসসালামুয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।প্রাপ্তি আমি মোনা বলছি।
-হ্যাঁ আপু বলো।তোমার কাজ হয়েছে?
-হ্যাঁ কাজ তো শেষ।
-ওহ আচ্ছা ভালো।বাসায় গেছো ঠিকমতো?
-না আপু।
-কেনো?দিনের ২:১৫ বাজে এখনো বাসায় যাওনি কেনো আপু?
-আসলে খালামনিরা কেউ বাসায় নেই।ওরা রাঙামাটি গেছে।খালুর ব্যবসায়িক বনভোজনে।
-তোমাকে জানায়নি কেনো তারা?
-খালামনির একদমই মনে ছিলো না আমার কথা।আমি একটু আগে কল দেওয়ার পর বলল কথাগুলো।
-ওহ।তুমি এতো কিছু ভাবছো কেনো আপু?তুমি বাসায় চলে এসো!
-আচ্ছা ঠিক আছে।
এই বলে ফোন রেখে দিলো। তারপর ৩ টায় মোনা বাসায় সে পৌঁছালো।এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর খাওয়া দাওয়া করে দুইজনে মিলে ড্রইং রুমে আড্ডা দিচ্ছিলো।কথার ফাকে হঠাৎ করেই মোনা প্রাপ্তিকে জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা প্রাপ্তি একটা সত্যি কথা বলবে?
-কি কথা আপু?
-তুমি সুখে আছো তো?
-মানে?এটা আবার কেমন প্রশ্ন আপু?
-আহা!!আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তুমি।
-হ্যাঁ আপু অবশ্যই আমি সুখে আছি।সকালের ঘটনা দেখার পরেও এমন প্রশ্ন কেনো আপু?কোনো সমস্যা?
-না না তেমন কিছুনা।
-বলো আপু।কি হয়েছে।
-আসলে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে সায়ান তোমাকে মিথ্যে ঘোরের মধ্যে রেখেছে।
-মানে??
-মানে ও এখনো অন্য মেয়েদের সাথে রিলেশন মেইন্টেন করে।
-আপু!!!!(জোর গলায়)
-আমি মিথ্যা বলছিনা প্রাপ্তি।
-আপু তুমি এসব কথা কেনো বলছো?সায়ান সত্যি আমাকে ভালোবাসে।ও আমাকে মিথ্যে ঘোরে কেনো রাখবে বলো।
-কারন এটা ওর অনেক আগের স্বভাব।
-হ্যাঁ আপু আমি জানি ও আগে কেমন ছিলো কিন্তু এখন ও আগের মতো নেই।
-কিছুই জানো না তুমি প্রাপ্তি।
-শুনবেন আমি কি জানি?
-হুম বল দেখি কি জানো তুমি?
তারপর প্রাপ্তি মোনার কাছে সব কথা বলল।সারারাত ড্রিঙ্ক, সিগারেট খাওয়া,মেয়েদের নিয়ে ডুবে থাকা,জোর করে ওকে ভোগ করা,তারপর ওর সামনে রিয়ার সাথে কাটানো রাত সবকিছু বলল।রিয়া সায়ানের সাথে কি করেছে তাও বলল।তারপর সায়ানের মধ্যে এই পরিবর্তন এসেছে।
প্রাপ্তি মোনাকে সবগুলো কথা খুলে বলল।সবকথা শুনে মোনা বলল
-বিষয়টা তাহলে এমন দাঁড়ালো যে তুমি হচ্ছো সায়ানের রক্ষিতা এক প্রকারের আর ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই না।একটা মানুষ এতো সহজে…..
-না আপু এমন কিছু….
-আমাকে শেষ করতে দাও।আমার কথাগুলো শুনো আগে তারপর বলো।
-জ্বী আপু।
-একটা মানুষ এতো সহজে হঠাৎ করে চেঞ্জ হয়ে যায়না প্রাপ্তি।তুমি একটা শিক্ষিত মেয়ে।এতো বোকা হলে চলে!!লজিক দিয়ে বোঝার চেষ্টা করো যে কোনো কিছু।
-আপু তুমি কি আমার সংসার টাতে সন্দেহের বিষ ঢালতে চাচ্ছো?
-ছিঃ প্রাপ্তি!!কি বলো তুমি এসব।আমি তোমার খারাপ কেনো চাইবো বলো!!
-তাহলে তুমি এইভাবে কেনো বলে যাচ্ছো সায়ানের বিরুদ্ধে?আমি তোমাকে বারবার বলছি ও চেঞ্জ হয়ে গেছে।কিন্তু তুমি তোমার মতো করে মনগড়া কথা বলেই যাচ্ছো।
-উঁহু মনগড়া না প্রাপ্তি।রিয়াকে আমি চিনি।আমরা সবাই একসাথেই পড়াশুনো করেছি।সায়ান রিয়াকে নিয়ে কিছু টা সিরিয়াস ছিলো।আর সেই সিরিয়াসনেস টা এখনো কাটে নি।সায়ান এখনো রিয়ার সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করে যাচ্ছে।
-তোমার কাছে এসবের প্রমান কি?
-প্রমান আমার কাছে নাই বলে তোমাকে এতো কথা বলতে হচ্ছে মুখ খুলে।নাহলে তো প্রুভ দেখাতাম তোমাকে।শুনো প্রাপ্তি আজকে সকালে যখন আমি সায়ানের সাথে ছিলাম তখন রিয়া বারবার ওকে কল দিয়েই যাচ্ছিলো।ওরা হয়তো কোথাও দেখা করেছে।সায়ান অফিসে যায়না প্রাপ্তি ও রিয়ার সাথে ঘুরে বেড়ায় সারাদিন।ওদের কথা শুনে অন্তত এইটুকু আমি বুঝতে পেরেছি।
-ব্যাস আপু।আর একটা কথাও না সায়ানের বিরুদ্ধে।রিয়া ওকে অনেক জ্বালাতন করে ইদানিং।ও কথা বলেনা ওর সাথে এটা আমি খুব ভালো করে জানি।সকালেও ওই মেয়ে অনেকবার কল দিয়েছিলো কিন্তু সায়ান ধরে নি এটা আমি জানি।।ও এখন শুধু আমাকেই ভালবাসে।
-বিশ্বাস করা ভালো প্রাপ্তি।কিন্তু অন্ধবিশ্বাস ভালো না তোমার বিশ্বাসটা হচ্ছে অন্ধ।তাই তুমি চোখে আর কিছুই দেখতে পাচ্ছো না।সায়ান নিজের মুখে আমার কাছে স্বীকার করেছে ও তোমাকে ভালোবাসে না।ও শুধুই অভিনয় করে যাচ্ছে তোমার সাথে।এছাড়া আর কিছুই না।
-আপু প্লিজ চুপ করো।ওর বিরুদ্ধে আমি আর কিছু শুনতে পারবোনা।একটা কথাও না
-আচ্ছা ঠিক আছে চুপ করে গেলাম।তুমি ওর ধর্ষিতা বউ হয়েই থাকো।
-আপু….(চোখভরা পানি নিয়ে)
-তা নয়তো কি প্রাপ্তি!!আমি তোমাকে আমার ছোট বোনের মতো দেখি আর তুমি বল আমি তোমার সংসারে সন্দেহের বিষ ঢালতে চাই!!আমি তোমার খারাপ কেনো চাইবো বলো?তোমার উসিলায় আমি আজ বেচে আছি এখানে বসে আছি।আর আমি তোমার ক্ষতি কিভাবে চাইবো বলো?সায়ান তোমার স্বামী হয়েও তোমাকে ধর্ষণ করে। অন্য মেয়েদের সাথে রাত কাটায় এটা আমি মেনে নিতে পারিনা রে বোন।ও বৈধ ভাবে তোমাকে ধর্ষণ করে আর অবৈধ ভাবে অন্য মেয়ের সাথে মেলামেশা করে।এতো কিছু করেছে সে তারপরেও তার সামান্য কেয়ারে তুমি কিভাবে এতটা বিশ্বাস করে ফেললে তাকে?এতো বোকা তুমি এটা আমি আগে বুঝিনি।
-আপু আমার ভালো লাগছে নাআর এসব বিষয়ে কথা বলতে প্লিজ এখন চুপ করো তুমি।ওর আসার সময় হয়ে গেছে।ও এগুলো শুনলে ভীষণ কষ্ট পাবে।তুমি দুটো হাত জোর করি চুপ করো এবার।
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো প্রাপ্তি।মোনা আর কিছু বলেনি প্রাপ্তিকে।
তারপর মোনা আর প্রাপ্তি যারর যার রুমে চলে গেলো।কিছুক্ষন পরেই সায়ান বাসায় এলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিলো।
প্রাপ্তি এসে সায়ানকে সন্ধ্যার নাস্তা দিলো।সায়ান খাচ্ছিলো আর প্রাপ্তি পাশের চেয়ারে বসে বারবার সায়ানের দিকে দেখছে আর ওকে পড়ার চেষ্টা করছে।মোনা যা বলেছে তা কি সত্যি!!অনেক্ষন দেখকো প্রাপ্তি সায়ানকে।সায়ানের চোকে চোখ পড়তেই অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেয়।খাওয়া শেষে সায়ান প্রাপ্তিকে জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা এবার বল এতক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে কি আবিষ্কার করিলি?
-মানে?
-মানে কি আবার?এতক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ওইভাবে কি দেখলি আমাকে?
-বারে আমি বুঝি আমার বরকে দেখতে পারবোনা!??
-আরে পারবি না কেনো।অবশ্যই পারবি।
-তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন যে?
-আচ্ছা থাক তোর কিছু বলতে হবেনা।
-মোনা আপু এসেছে আবার।
-কই পেত্নীটা?
-আছে ওর রুমে ঘুমাচ্ছে মনে হয়।
-আচ্ছা থাক।ঘুমাতে দে।
তারপর ওরা দুইজন রুমে চলে গেলো।সায়ান শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলো।প্রাপ্তি পাশেই উঠে বসলো।তারপর বলল,
-আচ্ছা শুনুন,
-হুম বল।
-আমাকে নিয়ে একদিন লং ড্রাইভে যাবেন?আমার খুব ইচ্ছা যাওয়ার।
-হুমম।যাওয়া যায়।
-সত্যি?তাহলে চলেন কালকেই যাই?
-পাগল নাকি তুই?
-কেনো?(মন খারাপ করে)
-শীতটা আরো ভালো করে পড়ুক তারপর গিয়ে ভালো লাগবে। মজা লাগবে ঘুরতে।অনেক দূরে কোথাও যাবো।
-সত্যি তো??
-হ্যাঁ রে বাবা সত্যি।
-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।
তারপর প্রাপ্তি নিচে নেমে রাতের খাবার রেডি করলো।রাতে তিনজন একসাথে খাবার টেবিলে আসলো।মোনা কিছুটা মনমরা।সায়ান জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে তোর আবার কি হলো?মন খারাপ কেনো?
-কই কি হলো ঠিকই তো আছি।
-নাহ।তোকে আমি ৫ বছর চিনি।কি হয়েছে বল?
-আরে এতো জোর করছেন কেনো?আপুর শরীরটা একটু খারাপ তাই চুপচাপ।(প্রাপ্তি)
-ওহ আচ্ছা।
প্রাপ্তির এই কথা শুনে মোনা ভেতরে ভেতরে রেগে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।না পারছে কিছু বলতে না পারছে কি করতে!!
রাতে খাওয়ার পর সবাই যার যার মতো ঘুমাতে গেলো।
রাতে সায়ান আর প্রাপ্তি ঘুমাচ্ছে।সায়ান প্রাপ্তির অনেকটা কাছে এসেই ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলো।প্রাপ্তির চোখে ঘুম নেই।বারবার মোনার কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিলো।রাত প্রায় ১ টা।এমন সময় প্রাপ্তি আস্তে করে সায়ান্ব্র হাতটা ওর শরীর থেকে সরিয়ে বিছানা থেকে নামলো। নেমেই সায়ানের ফোন চেক করলো!সায়ানের ফোন এ কোনো লক দেওয়া ছিলোনা।তাই সহজেই প্রাপ্তি চেক করতে পারলো ওর ফোন। প্রাপ্তি সায়ানের ডায়াল লিস্ট,মেসেজ গ্যালারি সব কিছু চেক করলো কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই পেলোনা। শুধু ফোন-ই না সায়ানের শার্ট,প্যান্ট,কোর্ট সব ঘেটে দেখলো।কিন্তু কিছুই পেলো না। তারপর এসে ঘুমিয়ে পড়লো!।সকালে উঠে নাস্তা বানোর কাজ শেষ করে নিলো।সবাই একসাথে নাস্তা করে নিলো।সায়ান অফিসে চলে গেলো।তারপর প্রাপ্তি মোনাকে বলল
-আপু তুমি কেনো আমাকে কাছে সায়ানের বিরুদ্ধে এতগুলা মিথ্যা বলেছো?আমি কালকে ওর সব চেক করেছি কিন্তু সন্দেহজনক কিছুও পাইনি।তারমানে এই দাঁড়ালো যে তুমি মিথ্যা বলেছো আমাকে!!
-না বোন আমি এখন তোমাকে আর কিছুই বলতে চাচ্ছিনা এই ব্যাপারে।সময় হলে সত্যিটা নিজে থেকেই বেরিয়ে আসবে।আর কিছু বলবো না তোমাকে।(ঠোটের কোনে একটা মিথ্যা হাসি নিয়ে)
এই বলে মোনা প্রাপ্তির থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
–