একটাই আমার যে তুই পর্ব ৬

#আমার একটাই যে তুই❤️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব_৬

ইউসুফ ভাইয়াদের বিড়াট বাড়ি। এই বাড়ির নাম বৃষ্টি বিলাস। বৃষ্টি নাম ছিল নানুমার শাশুড়ির। তিনি মারাত্মক ভাবে বৃষ্টি পছন্দ করতেন!রাত-বিরাতে যখনি ঝুম ঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়তো! তিনি সব কাজ ছেড়ে ছুড়ে নেমে পড়তেন বৃষ্টিতে ভিজতে। আর নানুমার শ্বশুর তিনি তার অর্ধাঙ্গিনীর এই ভয়ানক অভ্যাসে খুব ইঞ্জয় করতেন তিনি আর মুগ্ধ নয়নে দেখতেন তার কাক ভেজে রমণীকে।মাঝে নিজেও তার সাথে যোগ দিতেন।

তাদের মাঝে মহাব্বত ছিল অনেক। তখন তারা থাকতেন কিশোরগঞ্জ। ময়মনসিংহ এসে তারা এই বৃষ্টি বিলাস বিড়াট রকমের বাড়িটি তৈরি করেন। এই বাড়িটির একটি বিশেষত্ব হচ্ছে আর তা হচ্ছে তিনতলার বাড়িটির প্রকন্ঠ ছাঁদ।এই ছাঁদটি দিনে এক রকম রাতে আরেক রকম।

সবচেয়ে বেশি ছাদটি আকর্ষিত হয়, বৃষ্টি, আর চন্দ্রিমা রাতে। আজ চন্দ্রিমা রাত। চারিদিক লাল-নীল আলো জ্বলে। ছাদের মাঝ বরাবর কার্পেট বিছানো। কার্পেট এনেছিলে কাদের মামা হজ্জ্ব করতে গিয়ে। বড় বড় ফুল আঁকা কার্পেট। লাল-নীল আলোর জন্য মনে হচ্ছে তারা হাসচ্ছে।

কার্পেটে, সাদা গদী বিছানো হয়েছে তার সাথে আছে ছোট ছোট বালিশ।আজ সারারাত আড্ডা হবে। সেই প্লানিংয়ে চলছে কাজ। প্রধান অতিথি হিসেবে আছে মিশুপি আর আয়ান জিজু। ফেরা নায়রে এসেছেন তারা।মূলত তাদের জন্যই এই সব আয়োজন। সব কিছু সেট করে কাজের লোক গুলো চলে গেলেন। আমি আমের আচার খাচ্ছি আর তাদের কর্মকাণ্ড দেখচ্ছি।

তখনি সাউন্ড বক্স নিয়ে উপরে উঠলেন ইউসুফ ভাই।তাকে দেখচ্ছি আর মুখের মাঝে “চ” শব্দ করে চেটে পুটে খাচ্ছি আচার আর তার দিক তাকিয়ে আছি। আমার মুখের করা শব্দের জন্য হয়তো ভাইয়া এদিক সেদিক তাকালেন।আমি কিছুটা আন্ধকারে বসে তাই দেখতে পেলেন না। তা বুঝতে পেরে দৌড়ে চলে গেলাম চিলেকোঠার ঘরের পিছনের দিক। সাথে আরো জোরে শব্দ করতে লাগলাম।

তিনি এদিক সেদিক খুঁজে দেখচ্ছেন। তা দেখে মুখ চেপে হাসচ্ছি আমি আর ঘরটির আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে তার কাজ দেচ্ছি।যখন লাষ্টবার উঁকি দিলাম “ও মা ইউসুফ ভাই নেই” কই গেল? এখানেই তো ছিল!

তখনি পিছন থেকে কেউ “ভাউ” বলতেই ভয়ে এক চিৎকার দেই। সাথে সাথে বুকে থুতু দিতে দিতে পিছনে তাকাতেই শক্ড আমি। সামনে ইউসুভ ভাই দাড়িয়ে। আমাকে ভয় পেতে দেখে হো হো করে হেসে দিলেন। যে আমার এতখন ভয়ে জান পাখি উড়ে যাচ্ছিল সব ভস্ম হয়ে গেল।আর আমি চেয়ে রইলাম মুগদ্ধ নয়নে তার হাসি মুখখানার দিক। হাসার সাথে সাথে তার গালের টোল আর খাঁচ টা নাড়া-চাড়া করছে বার বার।তার মুখের এই হাসির জন্য হাজারবার ভয় পেতে রাজি আমি।১০০ বার রাজি। তার হাসি দেখে সাথে সাথে হেসে যাচ্ছি আমি।উনার কান্ড দেখে এখন মনে হচ্ছে তিনি এই মাত্র চার্লি চ্যাপলিনের কোনো পর্ব দেখছেন তাই হাসতে হাসতে লুটপুট খাচ্ছেন।তখন তিনি হাসতে হাসতেই বললেন,,

–” তোর কলিজা যে এত ছোট জানা ছিল না আমার। তুই এত ভিতু! ভিতুর রানী!বলে আবার হাসতে লাগলেন তিনি।

আমি তখন গাল ফুলিয়ে ভেংচি কেটে দিলাম। আর বললাম,,

–“কচু জানেন? যতসব হুহ!

বলে চলে আসলাম সাথে সাথে সেখান থেকে। এখনো হেসেই যাচ্ছেন তিনি। এবার রাগ লাগচ্ছে। আরে বাবা হঠাৎ এমন করলে আমি কেন প্রধান মন্ত্রী ও ভয় পাবেন। আমিতো জনগন।

বাড়ির ছোট,বড় সবাই বসে কার্পেটের গদীতে।আয়ান জিজু আর মিশুপিকে ঘিরে বসে সবাই!তখন চলছিল ছোট খাট কথা। বড়রা কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন। আর আমি, তিথি, নুশরা, বুশরা, রাহুল ভাইয়া, ভাবী অার ইউসুফ ভাই আর পাশে লিয়া আপু।।গোল হয়ে বসে পড়লাম সবাই। আর শুরু হলো টোকাটুকি।মানে সব থেকে কমন বালিশ খেলা।বাড়ির কাজের মেয়ে বসে আছে সাউন্ড বক্সের সামনে। একটু পর পর গান বন্ধ করা তার দায়িত্ব। এতে সে মহাখুশী। মনে হচ্ছে যে পৃথিবীর সব থেকে মজার কাজটা সে পেয়েছে।

শুরু হলো গান। “বড় লোকের বেটি”..

গানের তালে তালে চলছে বালিশ ছুড়াছুঁড়ি। রাহুল ভাইয়ার কাছে আসতেই গান ওফ হয়ে গেল। সাথে সাথে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম সবাই,,

–” ভাইয়া আপুকে প্রপোজ করতে হবে। সেই প্রথম দিনের মতো! যেভাবে তাকে ভালবাসি বলেছিলে সেভাবে!”

সবাই তাই চাইলো।কিন্তু ভাইয়ার এক কথা,,

–” পাগল হয়েছিস তোরা? মাথা খারাপ তোদের আমার না! ছোটেদের সামনে এসব নাউজুবিল্লাহ! ”

তার কথায় পাত্তা দিলো না।তখন ইউসুফ ভাইয়া বলল,,

–“ধেই ধেই করে প্রেম করতে পেরেছো। এখন আমরা বলছি বলে ঢং করছো? তা হচ্ছে না।

সবাই ঠেলে ঠুলে দাঁড় করিয়ে দিল।ভাবী লজ্জায় লাল-নীল। রাহুল ভাইয়া দৌড়ে তখন নিচে চলে গেলেন। তার কাজে সবাই স্তব্ধ চলে কেন গেছে?তিনি কি রাগ করেছেন? আমাদের সাথে আবাক ভাবীও।সবার এই অবাকতার মাঝে হাজির হলেন রাহুল ভাই। হাতে তার টকটকে লাল গোলাপ। তা দেখে চিৎকার করে হাত তালি দিতে লাগে সবাই।

রাহুল ভাইয়া নিচে বসে হাটু গেড়ে। ভাবী মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে দেখেই মনে হচ্ছে লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে। সুযোগ পেলেই ছুটে পালাবে।

রাহুল ভাইয়া লাল গোলাপটি এগিয়ে দিয়ে বলল,,

–” তুমি কি আমার বাচ্চার মা হবে?”

–“ভাবী মিষ্টি হাসলো!আর মাথা নাড়ালো।”

রাহুল ভাইয়ার এমন প্রপোজ করা দেখে বিষম খেলো সবাই। কিছুক্ষণ পর হো হো করে হেসে দিল সবাই। তখন ইউসুফ ভাই বলল,,

–” এটা তোর ধারাই সম্ভব।বাহ্ কি প্রপোজ।”

তার কথা আবার হেসে দিল সবাই।রাহুল ভাই মুখ বাকিয়ে বলল,,

–“হে হে দেখ নিবো তুই কি করিস..!”

খেলা আবার স্টার্ট হলো। একে একে সবার পাল্লা এলো। লাষ্ট রইলাম আমি আর ইউসুফ ভাই।লিয়া আমাদের দেখে তেলে বেগুনে জ্বলছে।লাষ্ট পর্যন্ত সে চলেই গেল।। ইউসুফ ভাই মিটমিটিয়ে হাসচ্ছেন। তার হাসির কারণ কি? ধরতে পারলাম না আমি। আমি তার দিক তাকিয়েই। তখনি হুট করে চোখ মেরে দিলেন তিনি। আর আমার সব কিছু আউলা ঝাউলা হয়ে গেল। হাত থেমে গেল সাথে সাথে। তখনি বেদ্দপ কাজের মেয়ে রূপালী দিল গান বন্ধ করে। আর উইন হয়ে গেল ইউসুফ ভাই। আর আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,,

–” চিটিং করেছেন আপনি! চিটার ১ নাম্বার!”

তখনি দাঁত কেলিয়ে বললেন তিনি,,

–” হারলে সবাই তাই বলে বেবী”

তার কথায় রাগ উঠে গেল আমার।তখনি আবার বললেন তিনি,

–” এবার আমার কথা শুন্তে হবে তোর! আমি চাই তুই সেই বাগানে যাবি! আর একটি জিনিয়া ফুল তুলে নিয়ে আসবি!”

–” এটা তো খুব সোজা। এই যাবো আর নিয়ে চলে আসবো। হুহ!”

–” হে, হে জলদি যা”

আমি নাচতে নাচতে চলে আসলাম নিচে বাগানে।জিনিয়া গাছে থেকে ফুল ছিড়তেই হুট করে কিছু একটা পড়লো শরীরে আমার। সাথে সাথে হাত দিয়ে দেখি ” ওরে বাবা গো এতো সাপ” দিলাম এক চিৎকার আর উল্টা পাল্টা দৌড়। তখনি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলাম তাকিয়ে দেখি ইউসুফ ভাই আর তিনি হাসচ্ছেন। তার হাসির কারন বুঝতে পেরে তার বুকে কিল, গুতার বর্ষণ করে বসলাম।তখনি তিনি আমার হাত জোড়া শক্ত করে ধরে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,,

–“তুই আসলেই ভিতু রানী। ”

ফিসফিসানিতে তার শ্বাস শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে আমার কানে ঘারে।আর শরীরে বয়ে যাচ্ছে হীম শীতল বাতাস।মনে হচ্ছে আমি চলে যাচ্ছি এক অন্য জগতে।যেখানে কেউ নেই। আমি আর উনি ছাড়া।

বোরিং লাগতে লাগলো সবার। নতুন কি গেইম খেলা যায়? তাই ভাবচ্ছে বসে সবাই! তখনি চট করে মনে পড়লো ধাঁধাঁ ধরার কথা। চট করে মনে আসতেই বলেও দিলাম চট করে তাদের!সব ধাঁধাঁ ধরা হবে ছেলে দের বুদ্ধি পরীক্ষা নিবো আমরা! তারাও রাজি! তখনি বললাম প্রথম ধাঁধা,,

–” আচ্ছা বলুন তো, একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু চলছে না কেন? তেল আছে ফুল, যান্ত্রিক ত্রুটিও নেই! তাহলে কেন?”

সাথে সাথে আয়ান জিজু নড়েচড়ে বসে বলল,,

–” ড্রাইভার নেই! ”

সাথে হাত তালি দিয়ে উঠলেন সবাই। তখন ধাঁধাঁ ছুড়লো ইউসুফ ভাই,,

–“আচ্ছা এবার তোরা বল। তিন আক্ষরে নাম যার আকাশেতে উড়ে! প্রথম অক্ষর ছেড়ে দিলে মেয়েদের মাথায় বাস করে!তখনি সাথে সাথে তিথি বলল,,

–“ভাই এত সহজ ধাঁধাঁ। এটা শালিক। প্রথম অক্ষর মানে ‘শা’ ছেড়ে দিলে লিক! সিম্পল।

সাথে আমাদের দলের জয়ের কলরব পড়ে গেল। আর সবাই মনোযোগী হতে লাগলো ধাঁধাঁ খেলার দিক।খেলা এখন লাষ্টের দিক। প্রশ্ন করবো আমরা। টান টান সময় চলছে। ছেলেদের কঁপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।তখনি প্রশ্ন করলা আমি!

–” আপনারা তো জানেন মাকড়শা জাল বানায়! কি বানায় তো!”

–“হে বানায়! তো?”

–সেই জালে অন্য হাজার পোকা আটকায়। সেগুলো মাকড়শা খায় তা জানেন?

–“জানি”

–“মাকড়শা কেন আটকায় না? সেও তো একটা পোকা। সে কেন তার জালে আটকায় না?

আমার ধাঁধাঁ শুনে সবার মুখে চিন্তার ছাপ। কি হতে পারে?আমার পাঠকরা বলুন তো? দেখি কে কে পারেন??

চলবে,

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন! আর মাকড়সার ধাঁধাটা আপনাদের জন্য..! দেখি কে কেমন উত্তর দিতে পারেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here