💞ভুল করে একবার,বল না তুই আমার 💞
Part-04
Writer _Raidah_Islam_Nova
খান ভিলা…….
রাতে মেহেক টি-টেবিলের ওপর বসে টম এন্ড জেরি দেখছে।
মাহিয়াঃ মেহেক,টেবিলের ওপর থেকে নাম।সোফায় গিয়ে বস।
মেহেকঃ মাম্মি, ডিস্টার্ব করো না।দেখছো না কার্টুন দেখছি।
মাহিয়াঃ এখন তো টিভিতে দেখছি একটু পরে তো বাস্তবে দেখতে হবে। টিভিতে মারামারি দেখে একটু পরে সত্যিকারে শুরু করবি।
মেহেকঃ 😊😊
কিছুখন পরে মেহের আর ওর বাবা অফিস থেকে ফিরলো।মিরাজ খান ফ্রেশ হতে চলে গেল। মেহের সোজা মেহেকের কাছে গিয়ে রিমোট নিয়ে খেলার চ্যানেলে দিলো।
মেহেকঃ ভাইয়া,কার্টুনের চ্যানেলে জলদি দে।
মেহেরঃ অনেকক্ষণ দেখছিস,যাঃ এবার ভাগ।
মেহেকঃ তুই ফ্রেশ হতে যা।জলদি রিমোট দে,নইলে
ভালো হবে না কিন্তু।
মেহেরঃ আমি রিমোট দিবো না।
মেহেকঃ দিবি না
মেহেরঃ না।
মেহেকঃ তাহলে দেখ,আমি তোকে কি করি।
মেহেক সামনে এগিয়ে এসে ওর ভাইয়ের হাতে জোড়ে কামড় বসিয়ে দিলো।
মেহেরঃ মাম্মি বাঁচাও,মাম্মি।ছাড় বলছি।আ আ আ।
লিমা ওদের কাহিনী দেখে ছুটে মাহিয়া খানের কাছে গেলেন।
লিমাঃ ভাবি, ভাবি,টম এন্ড জেরী তো বাস্তবে শুরু হইয়া গেছে। জেরী তো টমের হাত কামড় দিয়ো ধইরা রাখছে। কিছুতেই ছারতাছে না।
মাহিয়াঃ না— ঐ দুটো যেমন এই একটাও তেমন।
মাহিয়া খান গিয়ে মেহেককে কান ধরে টেনে উঠালেন।এতক্ষণ ধরে মেহেরের হাত কামড় দিয়ে ধরে রাখছিলো।হাত লাল হয়ে গেছে। দাঁত গুলো বসে গেছে। আরেকটু থাকলে কেটেই যেতো।
মেহেকঃ মাম্মি – ই ই ই ই। লাগছে,ছারো উহু লাগছেতো।😣
মাহিয়াঃ লাগুক, লাগার জন্যেই তো ধরেছি।দেখতো ওর হাত টাকে কি করছিস্? ।
মেহেকঃ ছোট্ট করে কাম ( কামড়) দিসি।(বাচ্চাদের মতো করে বলল)
মাহিয়া খান মেহেকের কান ছেড়ে দিয়ে মেহেরের দিকে ঘুরলো।মেহের হাত ধরে মুখ টিপে হাসছে।
মাহিয়াঃ মেহের,আমার কাছে আয়। হাতে ঔষধ লাগিয়ে দেই।
মাহিয়া খান মেহেরের হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে।মেহেক মুখ গোমড়া করে সোফায় বসে রয়েছে।মেহের ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ভেংচি কাটলো।
মেহেরঃ খুব ভালো হয়েছে।দিবি আরো কামড়,কই জলদি আয়।আবার কান মলা খাবি।
মেহেকঃ মাম্মি ই ই ই ই….
মাহিয়াঃ চুপ, একদম মা বলে ডাকবি না।দেখতো
হাতটা কি করেছিস? দাঁত গুলো বসে লাল হয়ে গেছে।
মেহেকঃ তাইলে কি কমু?🙄
মেহেরঃ কিচ্ছু বলবি না আমার মাম্মিকে।মাম্মি বলেতো একদম ডাকবি না।
মেহেকঃ ও বাবার বউ রাগ করছো কিনু?☺
মাহিয়াঃ আবার দুস্টুমি করছিস।
তখনি মিরাজ খান সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো।
মেহেকঃ বা–পি-ই ই ই 😭
মাহিয়াঃ শুরু হয়ে গেলো। এখন বাপ- বেটির ড্রামা দেখতে হবে।
মিরাজঃ কি হয়েছে মা-মণি?
মেহেকঃ তোমার বউ আমাকে মারছে।ই ই ই ই 😫
মিরাজঃ আমার বউ তোমার কি হয়?
মেহেকঃ কিচ্ছু হয় না। সেই তো বললো তাকে আর মাম্মি বলে ডাকতে না।
মিরাজঃ ঠিক আছে বলো না।
মাহিয়া খান, মিরাজ খানের দিকে চোখ লাল করে তাকালো।
মাহিয়াঃ তোমার আশকারা পেয়ে মেয়েটা দিন দিন বেয়াদব হচ্ছে।
মিরাজঃ তুমিই তো ওকে মা বলতে না করেছো।
মাহিয়াঃ বলবো না তো কি করবো? দেখোতো ছেলেটার হাতে কামড় দিয়ে কি করেছে?
মিরাজঃ সামান্য একটা কামড়ইতো দিয়েছে। সেটা ও তোমার ছেলে সহ্য করতে পারলো না।
মেহেকঃ ঠিক বাপি। সবাইকে আচ্ছা করে বকে দাও।
মাহিয়াঃ এখন তো সামান্য কামড়ই বলবে।তোমার মেয়ে দিয়েছে না,যদি আামার ছেলে দিতো তাহলে সারা বাড়ি মাথায় তুলতে তোমরা দুই জন।
মেহেরঃ বাপি, তুমি সবসময় ওর পক্ষে কথা বলো।
মেহের রেগে উপরে ওর রোমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। আর মেহেক সোফায় বসে হাসছে।
মেহেকঃ খুব ভালো হয়েছে।শয়তান একটা। আবার লাগতে এলে কামড় দিয়ে গোশত উঠিয়ে ফেলবো। ইশ,মাম্মির জন্য ভালোমতো কামড়টা দিতেই পারলাম না।
খাবার টেবিলে……
মেহেরকে ওর মা এবং মেহেককে ওর বাবা খাইয়ে দিচ্ছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে ভেংচি কাটলো।
মাহিয়াঃ এত বড় হয়ে গেছে তা-ও এই দুটোকে এখনো খাইয়ে দিতে হয়।জীবন টাকে তেজ পাতা বানিয়ে ফেললো।
মেহেক ও মেহের ওর মায়ের কথায় একটু ও কান দিলো না।
মেহেকঃ বাপি,তুমি আমাকে মীর- দের কলেজে ভর্তি কেন করেছো?
মেহেরঃ তুই যে গ্রেড পেয়েছিস তাতে যে তোকে ঐ কলেজে নিয়েছে এটাই বেশি।
মেহেকঃ চুপ কর তুই । আমি তোর সাথে কথা বলছি না। বাপি, অন্য কলেজেও তো ভর্তি করতে পারতে?
মিরাজঃ ঐ কলেজ তো ঢাকার নামকরা কলেজ। ঐ কলেজে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় মা- মণি।
মেহেকঃ না,বাপি কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি ঐ কলেজে পড়বো না।টি. সি নিয়ে অন্য কলেজে চলে যাবো।
মাহিয়াঃ যে গ্রেড পেয়ে কোন রকম পাস করেছিস তাতে অন্য কোনো কলেজ তোকে নিবে না।ঐ কলেজে ও নিতো না। শুধু তোর বাবার বন্ধু বলে নিয়েছে।
মেহেকঃ বা- পি- ই-ই -ই
মেহেরঃ বাপি বলে চিৎকার করে কোনো লাভ নেই। তোকে ঐ কলেজেই পড়তে হবে।
মেহেকঃ তুই ভর্তি করেছিস, তাই না।আমাকে ঐ কলেজে ভর্তি করার জন্য বাপিকে বুদ্ধিটা তুই দিয়েছিস?
মেহেরঃ হুম 😊।তুই যে বিচ্ছু মেয়ে কে জানে কার মাথা,নাক ফাটিয়ে চুপচাপ বাড়িতে আসবি। ঐ কলেজে থাকলে তা হবে না। আমি সান ও সাদ কে বলে দিয়েছি সবসময় তোকে চোখে চোখে রাখতে।তাছাড়া অন্য মানুষও রেখে দিয়েছি।তুই কখন কোথায় যাবি,কি করবি? সব খবর আমি অফিসে বসেই পাবো।
মেহেকঃ কি ই ই ই ই ই? তোকে তো আমি….( চিৎকার করে)
মেহের আগে ছুটছে ওর পেছনে পেছনে মেহেক ছুটছে। পুরো ড্রয়িং রুম চক্কর দিয়ে মেহের উপরে উঠে গেল। পেছনে পেছনে মেহেক ও চলে গেলো।
মাহিয়াঃ না,এদের নিয়ে আমি আর পারি না।দুটোই আমাকে পাবনায় ভর্তি করবে।
মিরাজঃ সিট বুকিং করে রাখবো।পরে যদি না পাও।
মাহিয়াঃ তুমিও শুরু করলে।ধূর,আর ভালো লাগে না।
মাহিয়া খান উঠে গেলেন।মিরাজ খান আপন মনে হাসছেন।
মীর ভিলা…..
সানের মনটা খুবই খারাপ। মেহেকের সাথে খুব বেশিই রুড বিহেভ করে ফেলেছে। ও এমনটা করতে চায় নি।৩ বছর আগের রাগটা হঠাৎ করে উঠে গিয়েছিল।অথচ মেহেককে এই ৩ বছরে কতবার লুকিয়ে দেখেছে।ওর ওপর সারাক্ষণ নজর রেখেছে। সবসময় মেহেক কে চোখে চোখে রেখেছে। সানের মনে সর্বদাই একটা ভয় কাজ করতো,যদি নজরে না রাখলে মেহেক হারিয়ে যায়। তখন ওকে পাবে কোথায়?ওর গায়ে একটা আঁচড় ও লাগতে দেয়নি।হয়তো এতো দিন পর সামনাসামনি হওয়ায় রাগ উঠে গেছে।সান কাবার্ড থেকে গিটার বের করলো।অনেক দিন ধরে গিটারটা ধরা হয়নি।হঠাৎ আজ গান গাইতে ইচ্ছা করছে।গিটারে সুর তুলে গান ধরলো।ওর গানের গলা খুব ভালো।
♪♪♪♪পারি নি ভূলতে তোকে, পারি নি এই মন ফেরাতে,
শূন্য এই হ্রদয় আমার, চায় তোর মাঝেই হারাতে।
ভুল করে একবার,বল না তুই আমার (২)
মন চায় শুধু শুনতে ♪♪♪♪♪
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
পরের দিন……
মেহেক গেইটের সামনে বাইক রেখে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে চোরের মতো ঢুকলো।চারি পাশ আগে ভালো করে দেখে নিলো।সান আর সাদকে কোথাও না দেখে বুকে ফু দিলো।কিছুদূর যেতেই রংধনু গ্রুপকে দেখতে পেলো।
শাবাবঃ কি খবর মাম্মা?
মেহেকঃ owsam
নূরিঃ কি ব্যাপার কালকে ওভাবে পালালি কেন?
মেহেকঃ কই পলাইছি বেশি চোখে দেখছোত?
শাবাবঃ তইলে পাগলা কুত্তার মতো ছুটলা কেন?
মেহেকঃ আমি কাউরে ভয় পাই যে পলামু।( ভাব নিয়ে)
নূরিঃ পরশুতো নবীন বরণ।
ববিঃ তো কি প্ল্যান?
রাইমঃ কীসের প্ল্যান?
আফজাঃ ড্রেস প্ল্যানের কথা বলছি।
মেহেকঃ সেটা পরে দেখা যাইবো নে।( কায়সারের দিকে ঘুরে) ঐ ব্যাডা ঐ তুই মাইয়াগো শার্ট পইরা আইছোত কে?
কায়সারঃ ঐ তোরে কে কইছে এটা মাইয়াগো শার্ট?
নূরিঃ একে তো শর্ট,তার মধ্যে আবার রাণী গোলাপি কালার। দেইখাই বুঝা যাইতাছে এটা মাইয়াগো শার্ট।
কায়সারঃ এটা স্টাইল।
শাবাবঃ বোনের শার্ট পইরা আইয়া কও এডা স্টাইল।
রাইমঃ ফাইজলামির জায়গা পাও না।
কায়সারঃ হয়েছে আমার সাথে পরেও লাগতে পারবি।চল ক্লাসে যাই।
সবাই ক্লাসে দিকে রওনা দিলো। ববি একটু পেছনে ছিলো। মোবাইলে কি যেনো দেখছে।হঠাৎ সাদের সাথে ধাক্কা খেলো।সাদও ওকে খেয়াল করে নি।দুজন দু দিকে পরলো।
ববিঃ মা গো আমার কোমড়ডা গেছেরে।কেডা ধাক্কা দিলো রে।চোখে দেহেন না কানা নাকি।
সাদঃ চোখ উপরের দিকে তাকিয়ে হাঁটলে তো পড়বাই। ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়ে কত কথা।
ববিঃ আমি চোখ উপরের দিকে দিয়ে হাঁটি। আর আপনি কি চোখ মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটেন।
সাদঃ কি ই-ই-ই ফাইজলামি পাইছো?
ববিঃফাইজলামিতো আপনি পাইছেন।
সাদঃ তোমাকেতো আমি…..
কিছু বলার আগেই ববি ওর হাই হিল দিয়ে সাদের পায়ে একটা পাড়া দিয়ে সামনের দিকে ছুটলো।
সাদঃ আঃ আমার পা।
রিকঃ কি হয়ছে দোস্ত?
সাদঃ ঘোড়ায় পাড়া দিছে।
ক্লাস রুমে……..
স্যার ক্লাস নিচ্ছে।মেহেক ব্যাগের উপর মাথা রেখে দিব্যি ঘুমাচ্ছে।এতো চেঁচামেচিতে ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে না।নূরি ব্যাগের ভেতর ফোন রেখে ফেসবুক চালাচ্ছে।ববি আর আফজা লুকিয়ে লুকিয়ে বাদাম খাচ্ছে। রাইম,শাবাব পাবজি খেলছে।কায়সার চুপ করে বসে রয়েছে। সবার পেছনে থাকায় স্যার ওদের দেখতে পাচ্ছে না।
নূরিঃ ঐ হির উঠ না।
মেহেকঃ কি হয়ছে? স্যার দেখছে।(ঘুম ঘুম চোখে)
নূরিঃ না।
মেহেকঃ তাইলে আমারে জালাইতাছত কে?নূরি পাথর।
নূরিঃ ওয়াশ রুমে যাবো।
মেহেকঃ যাঃ না করছে কে?
নূরিঃ তুই যাবি আমার সাথে।
মেহেকঃ পারমু না। তুই যাঃ।
নুরিঃ প্লিজ, চল না।( অনুরোধের সুরে)
মেহেকঃ ঠিক আছে চল।
(চলবে)