ভালোবাসা তুই পর্ব ১১

#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ১১
#লেখিকা_সাদিয়া_আক্তার

________________________
ইরার মাথায় আর কিছুই আসছে না সে কি করেবেদোটানায় পরে গেলো। আর কিছু না ভেবে দৌড়ে ফাহিমের রুমের দিকে ছুটলো। ইরা ফাহিমের রুমে গেলো তাকে খুজঁতে।
—–ভাইয়া, ভাইয়া!

ফাহিম শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে বলে,
—–আরে আরে!কি হয়েছে?এভাবে জোরে জোরে চিল্লাছিস কেন?আর তোর চোখে পানি কেনো ইরা?কে কি করেছে বল?তোর ভাই এখনো মরে নি।শুধু অবসরে আছি।(কিছুটা রেগে)

—–না ভাই।এমন কিছু না।ভাই তুমি অভিযোগটা ফিরিয়ে নাও প্লিজ!

—–ফিরায় নিবো মানে?
—–ভা ভাই ত তূর্যকে জ জেল থেকে বের করার জন্যে।

—–মানে কি?কিছুই বুঝতে পারছি না তোর কথা।তোর ভাইকে যে মেরেছে তাকে তুই কেনোই জেল থেকে বের করতে চাচ্ছিস?আর সেই তূর্য গুন্ডাটাকেই তুই কি করে চিনোস?কে হয় তোর?

—–ভা ভাইয়া আ আমি আমি তূ তূর্যকে ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি ভাইয়া।তুমি অভিযোগটা তুলে নাও।

—–ওয়াট!তুই কি বলছিস?তুই ওই শালা তূর্যকে ভালোবাসিস?

—–জ্বি ভা ভাইয়া।

—-চুপ।একদম চুপ।আমি কখনোই মেনে নিবো না ওই তূর্যের সাথে তোর সম্পর্ক। সবচেয়ে বড় কথা আমিরের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তোর।আব্বু পাকা কথাও দিয়ে দিয়েছে সো এখন আর কোনো কিছু বলে লাভ নেই।যত দ্রুত সম্বব বিয়ে করার জন্যে নিজেকে আর নিজের মনকে রেডি করবি ততোই ভালো হবে তোর জন্যে।
(বলেই রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো ফাহিম)

ইরা অজোরে কেঁদেই চলছে।কি করবে বুঝতে পারছে না।না পেরে আমিরকে কল করে।অপর পাশ থেকে আমির কল রিসিভ করেই বলে,
——হ্যালো ইরা।
——আ আমির আমির প্লিজ আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন খুব জরুরি কথা আছে।
——অকে।কোথায় আসবো?
——আমাদের বাসার দুই গলির পর যে ক্যাফেটা আছে ওইদিকে।
——অকে আসছি।

🍁

আমির ক্যাফেতে ঢুকে দেখে ইরা বসে ওয়েট করছে ।আমির ইরার কাছে গিয়ে পাশে থাকা চেয়ার টা টেনে বসে পরে।
——বল ইরা।তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেনো?

——আমির আমি শুনলাম আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে আর আব্বু ডেটও ফিক্সড করে ফেলেছে।এইটা কি সত্যি?

আমির কিছুটা হেসে উত্তর দেয়,
—–হ্যা এইটা সত্যি।
—–বাট আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
—–হুম বল কি বলতে চাও।তবে একটা কথা জেনে রাখো আমি ডিসিশন চেঞ্জ করতে পারবো না।

——আমি তূর্যকে ভালোবাসি।
——তূর্য?ওহ তো তোমার ভাইয়ের ক্রিমিনাল।
——তা আমি জানি না।আমি শুধু জানি আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
——তোমার আমাকেই বিয়ে করতে হব।(টেবিলে হাত দিয়ে আঘাত করে)
——আমির আপনাকে আমার ভালো ফ্রেন্ড ভাবতাম আর সেই আপনি আমার সাথে জোর করছেন বিয়ের জন্যে?
——প্রয়োজন হলে জোর করবো।তোমাকে আমি ভালোবাসি সেই প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম।
——বাট আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
—–তুমি ভালোবাসো কিনা তা এখন জানতে চাইনি। বাট ওই ক্রিমিনালটার সাথে তোমাকে আমি কোনোভাবেই মেনে নিবো না।আর তুমিও বা কিভাবে তোমার ভাইয়ের ক্রিমিনালটাকে ভালোবাসতে পারো?

—–ইরা কিছুই বলতে পারছে না।তাই চুপ করেই আমিরের কথাগুলো শুনে যাচ্ছে।
——অকে আমি এখন উঠি আমার তারা আছে।সবাইকে দাওয়াত দেওয়া, বিয়ের সব কিছু এরেঞ্জমেন্ট করার কিছু কাজ আছে।আমি আসি।
ইরা রাগে অন্যদিকে মুখেবুজে আছে।রাগে কটমট করছে।

—–তোমাকে বাসায় ড্রপ করে দেই।
—–তার কোনো দরকার নেই।
—–দরকার আছে।আজ বাদে দুইদিন পর আমার বউ হবে তুমি।

—–হ্যা হয়নি তো এখনো।সো এখন অন্তত আমাকে আমার মতো থাকার স্বাধীনতা দিন প্লিজ।
বলেই ইরা চলে যায়।

🍂

রিয়াদ তূর্যের গ্রেফতারের কথা শুনে দৌড়ে ছুটে আসে পুলিশ স্টেশনে।
——তূর্য দোস্ত!কি রে তুই এখানে কেনো।মানে কি কিভাবে আমাকে বলবি?
——সব তোকে বলছি।
তূর্য রিয়াদকে সেদিনের ঘটনা থেকে শুরু করে তার জেলে যাওয়ার অবধি সব ঘটনায় খুলে জানায়।রিয়াদ শুনে বলে,
—–দোস্ত তুই চিন্তা করিছ না।আমি তোকে যেভাবেই হক বের করে ছাড়বো এখান থেকে।

কিছুক্ষনপর চৈতী আসে তূর্যের সাথে দেখা করতে।তূর্য হাজতের এককোনায় বসে আছে।
চৈতী এসে তূর্যকে বলে,
——-ভাইয়া,ভাইয়া।

তূর্যের চিন্তার ঘোর কাটে। তূর্য বলে,
——হ্যা বলো চৈতী। কেমন আছে ইরা?
——ভাইয়া ই ইরার ব বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
তূর্য রেগে যায় তা শুনে।রেগে বলে,
——মানে?কি বলতেছো?

——জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে আমিরের সাথে।দুইদিনপর বিয়ে।
——-না এইটা হতে পারেনা।(সজোরে দেওয়ালে ঘুষি দিয়ে)
——এটাই সত্য ভাইয়া।
——আমার এখান থেকে যে করেই হক বের হতে হবে।তুমি রিয়াদকে কল করো তো হারি আপ।
——অ অকে করছি ভাইয়া।
চৈতী রিয়াদকে কল করে।রিয়াদের ফোন বেজে উঠতেই কল রিসিভ করে,
——হ্যালো চৈতী বল।

—–রিয়াদ। তূর্য ভাইয়া কথা বলবে।নাও বলেই তূর্যের হাতে ফোনটা দেয়।

তূর্য বলে,
—–হ্যালো,হ্যালো রিয়াদ তুই আমার লোয়ারের সাথে কথা বলেছিস।
——হ্যা বলছি।

——কি বলল?আমাকে আজ বা কালকের মধ্যে বের করার ব্যবস্থা কর।

——আজ বা কালকের মধ্যে কিছুই করা পসিবল না।উনার অফিস বন্ধ থাকবে কাল।আর সেদিন ওই লোয়ার কোনো কেইস সলভ করে না।তোর জামিন হবে দোস্ত।এইটা সিউর থাক বাট আরও দুই থেকে তিনদিন লাগবে।

এই কথা শুনে তূর্যের মাথায় আর কিছুই ধরছে না।রাগ টার ক্রমাগত বেরেই চলছে।এখন কি হবে?ইরাকে কি এভাবেই হারিয়ে ফেলবে?তা তূর্য কিছুতেই হতে দিতে চাইনা।তবে বের কিভাবে হবে এখান থেকে।তূর্যের ইচ্ছে করছে জেল ভেঙে বের হয়ে যেতে।সবার সাথে লড়ে যেতে চাইছে আজ তার মন।

🍂

দুইদিন পর,
অনেক জাকজমকভাবেই সজ্জিত হলটি।চারদিকে ফুলে ফুলে সাজনো হয়েছে।কারণ আজ ইরার বিয়ের দিন।চেয়েও কিছু করতে পারছে না।আমিরকেই বিয়ে করতে হবে।আমির তার পরিবারের সব সদস্যদের এমনভাবে ধরে ফেলেছে সবাই শুধু আমিরেরই সাপোর্টে।ইরা যদি বাসা থেকে ভেগে যায় হয়তো সে ভালো থাকবে কিন্তু তাতে শুধু সেই ভালো থাকবে।কিন্তু তার চলে যাওয়ার পর তার পরিবার সমাজের কুরুচিপূর্ণ কথার আক্রমণের শিকার হবে।তাই শুধু নিজের ভালো থাকার কথা ভুলে একটা মেয়ে তার পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করেই হয়তো এমন মানুষের কাছে নিজেকে সপে দেয় যাকে সে কখনোই ভালোবাসইনি।আর এভাবে অনেক ভালোবাসা টাকা,সম্মানের কাছে হেরে যায়।ইরাও সেই চিন্তা থেকে আলাদা কেউ একজন নয় তাই তাকেও মনের সাথে জোর দিয়ে আমিরকে বিয়ে করতে হবে।

🍂

কনে সেজে বসে আছে ইরা স্টজে।একটুপর কাজি আসবে।চৈতী ইরার মেকাপের আড়ালের লুকিয়ে থাকা কষ্টটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে।ইরা আজ একটু বেশি সেজেছে এই জন্যে না তার বিয়ে।এজনেই যে তার ফ্যকাসে মুখ, চোখের পানি,ফোলা লাল চোখ গুলো যাতে কেউ বুঝে ফেলতে না পারে।চৈতী ঠিকি বুঝেছে।বাট সেও আজ কিছু বলছে না।ইরার কাছে গিয়ে শক্ত করে হাতটি চেপে ধরে রাখলো চৈতী নিজের হাতের সাথে।ইরার কাজিনরা সবাই ব্যস্ত জামাই আবদারে।সবার মুখে হাসি।তা দেখে ইরাও নিজেকে শ্বান্তনা পেলো।

কিছুক্ষণ পর কাজি আসলো ইরার কাছে।ইরা কিছু শুনতে চাচ্ছে না।শুধু কবুল বলার শব্দটায় কানে আসলো।কবুল বলে বিয়ের কাজ সম্পুর্ণ করলো।

___________________
চলবে🌿

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here