কোন আলো লাগলো চোখে পর্ব ১

হাত ছাড়ুন।
– ছাড়বো না।খুব ইগো তোমার? রাহাত মিনুর হাত দুটো দেয়ালে চেপে ধরে আছে।
– লাগছে আমার হাতে, ছাড়ুন বলছি!
মিনুর বারবার বলার পরেও রাহাত হাত ছাড়লো না।মিনু কাতর হয়ে বললো – খিদা লাগছে তো ছাড়ুন না।মা ডাকছে।
বাহির থেকে রাহাতের মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে – কই রে মিনু মা খেতে আয়।
-মা, মিনুর খিদে নেই। বাহিরে খেয়ে আসছে, তুমি খেয়ে নাও!’
মিনু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে দেখছে রাহাতকে।কি মিথ্যা! মিথ্যুক একটা! ইচ্ছে করছে…. বিড়বিড়িয়ে বললো মিনু।
-এক পা বের হবে না রুম থেকে। সারাদিন এখানেই বসে থাকবে।
– একশো বার বের হবো। স্বামীত্ব দেখান আমাকে?!
-‘ হ্যা,দেখাই।মেরে হাত-পা ভেঙে ফেলে রাখবো যদি একপা বের হয়েছো।’ বলেই রাহাত বেরিয়ে গিয়ে রেহানা বেগমকে বললো – মা, মিনু তো খেয়ে এসেছে। তুমি খেয়েছো?
– হা বাবা খেয়েছি।কিন্তু তুই তো কিছুই খেলিনা!
– মা, আমার একদম খিদে নেই। তুমি চিন্তা করো না। খিদে পেলে খেয়ে নিবো।মিনু তো আছেই।
– আচ্ছা, বাবা।সবদিকে খেয়াল রাখবি কিন্তু,সপ্তাহ খানেকের ব্যাপার। পারবি তো?
– পারবো মা।তুমি চিন্তা করোনা তো। কখন বের হবে?
– এইতো আধঘন্টার মধ্যেই তোর ছোট খালার বাসা থেকে তাকে নিয়ে যেতে হবে।
– আচ্ছা, মা।সাবধানে যাবে আর গিয়ে ফোন দেবে।
– আচ্ছা।আমি মিনুকে বলে বের হয়ে যাবো খন।নিরু কই?
– মা,টায়ার্ড বোধহয়। সবে অফিস থেকে ফিরলো!
– ‘আচ্ছা, আমি যাচ্ছি ওকে বলে আসি।’ বলেই রেহানা বেগম মিনুর রুমে চলে যান।গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে দরজা লক করা!
রাহাতের মনে পড়তেই মায়ের পিছনে দৌড়ে গেল।
– কিরে দরজা লক কেন?!!
– আসলে, ভুলে লক করে ফেলেছি! মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো রাহাত।
রেহেনা বেগমে মুখটিপে হাসলেন। ভুলে নয়,ইচ্ছে করেই যে লক করেছে সেটা উনি বেশ বুঝতে পেরেছেন।
ভেতরে ঢুকে বললেন – কিরে মা,আমি তো চলে যাচ্ছি এখন, সব কিছু খেয়াল রাখতে পারবি তো?
– পারবো মা।আপনি একদম চিন্তা করবেন না।
আপনি ঔষধ গুলো নিয়েছেন তো?
-এই রে,নিয়েছি কিন্তু ব্যাগে নেয়া হয়নি!
– আচ্ছা মা,আমি দিচ্ছি বলে রাহাত বেরিয়ে গেলো।
– সাবধানে থাকিস মা।
– ঠিক আছে মা,আপনি ঔষধ গুলো সময় মতো খাবেন আর সাবধানে যাবেন।
রেহানা বেগমকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ড্রাইভারকে সাবধানে যেতে বলে দিল রাহাত। জামাল অনেক পুরনো এবং বিশ্বস্ত ড্রাইভার। অনেক বছর ধরে আছে উনাদের বাড়িতে।
রেহানা বেগমের স্বামী গত হয়েছেন পনেরো বছর আগেই। উনার দুই ছেলে এক মেয়ে।সবার বড় মেয়ে, শোভা। স্বামী আর দুই সন্তানের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় আছে।ছেলে রিজভী কানাডায় আছে। এক বছর হলো স্ত্রী আর একমাত্র সন্তান অর্পাকেও নিয়ে গেছে। রাহাত সবার ছোট। পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস দেখছে। এতোদিন রেহানা বেগম সব সামলিয়েছেন।রাহাত পড়াশোনা শেষ করার পর উনি সব তার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
রাহাতের বিয়ে হয়েছে ৪-৫ মাস।উনার দায়িত্ব থেকে হালকা হলেন।
গ্রামের বাড়িতে উনার খালা অসুস্থ, মৃত্যুসজ্জায়।উনাকে দেখতে রেহানা বেগম ছোট বোনকে নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন।
রেহানা বেগমকে বিদায় দিয়ে মিনু নিজের রুমে চলে আসলো। পেটে পোকা মরে যাচ্ছে। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।
এমন সময় রাহাত রুমে ঢুকে- ‘ মিনু,সত্যি করে বলবে ছেলেটা কে?’
অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে – বলব না!বলেই মিনু জানালার পাশে বসে পড়লো। রাহাত বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
রাহাতের ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যা ৭ টার পরে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ মিনু কথা মনে পড়তেই তাকিয়ে দেখে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ছে। মুখ কালো হয়ে গেছে। কেঁদেছে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মিনুর খুব খিদে পেয়েছিলো মনে পড়তেই রাহাতের বুক টা কেঁপে উঠলো।
মেয়েটাকে খেতে দেয়নি সে!
খিদে নিয়ে বসেছিলো মিনু!
– এইযে, উঠুন। খাবার খাবেন।
গায়ে হাত পড়তেই ঘুম ভাঙলো মিনুর।
– খাবো না।খিদে নেই।
– উহহ! খিদে নেই!! ঢং!চুপচাপ খেতে চলো।
– বলছিতো খিদে নেই। আপনি কানে শুনতে পান না? রাগে ফেটে যাচ্ছে মিনু।
রাহাত বুঝতে পারলো এভাবে কাজ হবে না। সে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষন পর প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিয়ে আসলো।
– হা, করো।
– আমি খাবো না।
কয়েকবার বলার পরেও যখন মিনু খাবার মুখে নিলো না, তখন রাহাত এক হাতে মুখে ধরে খাবার পুরে দিলো মুখে।
-‘ তুই খাবিনা! তোর ঘাড় খাবে!’
মিনু খাবার ফেলে দিতে চাইলো।
– খবরদার! ফেললো কিন্তু উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবো।
এই লোকটা পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। কিনা কি করে বসবে! তারচেয়ে খাবার খেয়ে নেয়াই ভালো আর খিদেতে পেটের নাড়িভুড়ি বের হবার দশা! এতো মান দিয়ে যখন খাওয়াচ্ছে তখন পেট শান্তি করা দরকার। মনে মনে খুশি হয়ে ভাবছে মিনু- যাক নিজে গিয়ে যেচে খেতে হয়নি!
চলবে…..
#গল্প-কোন_আলো_লাগলো_চোখে
পর্ব-১
writer -Rose

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here