October Darkness
পর্ব চার
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
🍁
আয়রা বের হয়ে দেখলো মিলি দাড়িয়ে আছে,দৌড়ে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো.. তার বুকটা এখনো সজোরে জোরে জোরে ধুকপুক করেই চলছে..মিলিও ভয় পেয়ে গেছে এই অচেনা পরিবেশে আয়রার হারিয়ে যাওয়াটা।।
“আপু তোমাকে ঘুরতে বলেছিলাম??তুমি দেখি আমারে হারিয়ে দিয়েছো তোমাকে খুজতে যেয়ে??জানো কত ভয় পেয়ে গেছিলাম??আর এই জঙ্গলে হিংস্র জানোয়ারে ভরে আছে,আর তুমি এতো ভিতরে গেলা কিভাবে” মিলি আয়রাকে টেনে নিয়ে মেইন রোডে আসতে আসতে বললো।।
আয়রা কিছু বললো না শুধু তার মনে পরছে ওই দমকা বাতাস আর ঠান্ডা নিঃশ্বাস,সে ফিল করছে এখন পিছনে কেও ছিলো!!কে ছিলো??আর এতো গভীর জঙ্গলের ভিতরে গাড়ি কি করছে??বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনে,এদিকে মিলি নানান কথা বকবক করছে।।
“আপু স্কার্ফ কই তোমার?? মিলি আয়রাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো।।
আয়রা তাৎক্ষণিকভাবে গলায় হাত দিলো,খুজে বেড়াচ্ছে স্কার্ফ কই তার..তারপর মনে হলো ওই দমকা বাতাসে তার স্কার্ফ টা মনে হয় উড়ে গেছে,কি একটা অদ্ভুত পরিবেশ ছিলো, মনে পরতেই রুহ কেপে উঠছে..কথা বলতে বলতে তারা বাড়ি পৌছ্র গেছে,চাবি খুলে ভেতরে গেলো..বাড়ির লোক এখনো আসে নি..হাফ ছেড়ে বাচলো মিলি।।
আয়রা নিজের রুমে যেয়ে লম্বা ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে,শ্বাস নিতে যেয়ে মনে হচ্ছে গলায় আটকে যাবে..কি দমবন্ধকর পরিবেশ ছিলো!! আয়নার সামনে দাড়িয়ে জ্যাকেট খুলে ফেললো,জামার বোতাম খুলতে যাবে ওমনে চোখে পরলো তার ঘাড়ে কেমন কালচে দাগ..মনে হচ্ছে কারো আঙ্গুলের দাগ,কেও প্রেশার দিয়ে জায়গাটা ধরে ছিলো কিন্তু কে ধরবে আর কখন??নাকি নিজে নিজেরে দেবে দিয়েছে এইভাবে??উফফ আজকে সব প্রশ্নের ঝুলি মনে আমার কোলে এসে বসেছে,আর জান থাকতে ওই জায়গাতে যাবে না..জামা চেঞ্জ করে ঢোলা পায়জামা আর ঢোলা শার্ট পরে নিলো।।
আয়রা নিচে এসে দেখলো রান্না আছে তবে মিলি খেতে চাইছে না,কি আর করা তখন বিফ বের করে বিরিয়ানি রান্নস করতে বসলো..ঘন্টা দুয়েকে মাঝে সেটাও হয়ে গেলো,মিলির অনেক পছন্দ হয়েছে দুই প্লেট তার ফিনিশ হয়ে গেছে।।
আজ রাতে মিলি মুভি দেখবে বলছে, সে আমার সাথে দেখবে..আমার মুভিফ্রিক স্বভাব তবে মাঝেমধ্যে দেখি কিন্তু যখনি শুনলাম হরর ফিল্ম তখন আমারে পায় কে?ও দেখবে দেখুক,আমি দেখবো না..আজ যা হয়েছে তারপর ত ভুলেও না..আমার শখের স্কার্ফ উড়ে গেলো..মামার বাড়িতে ওয়াফাই থাকার কারনে মিলি কানেক্ট করে দিলো,যেহেতু সিম নাই ওয়াফাই এ বসে এটা সেটা দেখা যাবে।।
রাতে ইউটুবে রান্নার রেসিপি দেখতে দেখতে মোবাইল বুকের উপরে নিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে..একটা কালো আবছায়া বারান্দায় হাজির হলো,হাওয়ার গতিতে আয়রার কাছে উপস্থিত হলো..ঘাড়ে যে কালচে দাগ ছিলো সেখানে দুইটা আঙ্গুল দিয়ে ছুয়ে দিলো,এমন শীতল স্পর্শ পেয়ে আয়রা চট করে চোখ খুললো..চোখ খুলে দেখলো বারান্দার পর্দা উড়ছে,বাতাসে উড়ছে এইভেবে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো..আয়রার কম্বল মুড়ি দেয়া দেখে,ছায়াটা সেখান থেকে সরে গেলো।।
সকালবেলা,
সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে,লেট করে ঘুমানোর কারনে সে উপস্থিত ছিলো না,আয়রা এসে রুটি ছিড়ে মুখে পুরে দিলো..নানী অনেকক্ষন যাবত আয়রাকে দেখছে,আয়রা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করছে কি?নানীর মুখটা আজ খুব বেশি গম্ভীর লাগছে।।
“আয়রা?তোমার এডমিশন করে দিয়েছি আমি” রাজ্জাক জানালো।।
“বাট মামু এতো জলদি??” আয়রা জিজ্ঞেস করলো।।
“হ্যা?ওই যে গতকাল যার বাসায় ইনভাইটেশন আসছিলো না?ওখানে গিয়ে বললাম তোমার কথা,তার একটা কানেকশন আছে এখানকার একটা ফ্লোরিডা ভার্সিটিতে, সেখানে তোমাকে এডমিট করাতে বলে” রাজ্জাক জানালো।।
মামী কি মনে করে তরকারির বাটি ঝন করে শব্দ করে ডাইনিং এ রাখলো,আমি চমকে তাকালাম কিন্তুন নানী ইশারায় চোখ খাবারের দিকে চোখ দিতে বললো,মামাও থতমত খেয়ে গেছে..আমিও চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলাম।।
“আচ্ছা শুনো?৩দিন পর ভার্সিটি আমি নিয়ে যাবো সাথে,রাস্তাও চিনা হবে তুমিও একা চলতে পারবে?” রাজ্জাক আমতা আমতা করে বললো।।
আয়রা নিঃশব্দে খাবার খেয়ে ডাইনিং ত্যাগ করলো,নানী তার পিছু পিছু গেলেন..আয়রা ঘরে এসে নানী ধপ করে দরজা লাগিয়ে দিলেন।।
“কাল কোথাও গেছিলি??” নানীর কড়া জবাব।।
“হ্যা?তুমি জানতে না??মিলি ত বললো ও মামাকে জানিয়ে গেছে” আয়রা উত্তর দিলো।।
নানীর ক্যান জানি মনে হচ্ছে আয়রার উপর বদনজরের প্রভাব পরেছে,কখনো আয়রার চোখের নিচে কালো দাগ পরে নি..আজ কেন পরলো??তাও এখানে এসে..অবশ্য সে যখন অসুস্থ হতো কিংবা কারোর ছায়া পরতো তখন এরকম হতো কিন্তু সাথে সাথে কেটেও যেতো..চিন্তায় নানীর মাথা ফেটে যাচ্ছে।।
৩দিন পর,
পাউরুটিতে বাটার মাখিয়ে দিচ্ছে নানী আয়রাকে,আয়রা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে..রাজ্জাক ও রেডি হয়ে নিচে এসেছে রওনা দেয়ার জন্য আয়রাকে নিয়ে।।
সবাই যে যার মতো নাস্তা শেষ করে,রাজ্জাক মিলি আর আয়রাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো..মিলিকে প্রথমে তার কলেজে ড্রপ করলো,তারপর রাজ্জাক আয়রাকে রাস্তায় এটা সেটা দেখিয়ে রাস্তা চিনিয়ে দিচ্ছে তার ভার্সিটির।।
প্রায় ১৫মিনিট পর সে তার ভার্সিটির সামনে আসলো,রাজ্জাক আয়রাকে গাড়িতে নামিয়ে দাড় করালো..ফ্লোরিডা শহরে সবচেয়ে বড় ভার্সিটি.. এতো উচু উচু দালান,চারপাশে হরেক দেশের হরেক রকমের মানুষ..সবার পরনে শীতের পোষাক,ভার্সিটির উপরে লিখা “Miami Night angle University” বড় বড় অক্ষরে লিখা..আয়রা বেশ কয়েকবার বিড়বিড় করে পরলো..রাজ্জাক ভার্সিটির গেটে দাড়িয়ে তার বন্ধুকে কল করলেন..উনি ইনফো দিলেন আয়রার সবকিছু সাবমিট করা আছে এখন ক্লাস এটেন্ড করলেই হবে..রাজ্জাক আয়রাকে সব ইনফো দিলো কোন রকমের ক্লাস হবে,আর ফোন ত আছেই..উনি নিউ সিম ঢুকিয়ে দিয়ে নেট কানেকশন এক্টিভেট করে দিলেন..রাজ্জাক আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন নিজের অফিসে,জানিয়ে গেলেন কোন সমস্যা হলে কল দিতে নাম্বার তা আছে ফোনে সেভ করা।।
আয়রা তার মামাকে বিদায় দিয়ে তার পায়ের দিক বাড়ালো ভার্সিটির দিকে,সবাই কত ব্যস্ত..সবার হাতে কফির ওয়ান টাইম গ্লাস..কেও খাচ্ছে কেও অন্যকিছু নিয়ে ব্যস্ত..আবার কেও স্মোক করছে,ঠিক নাই কে কি করছে সবাই নিজ গতিতে ব্যস্ত।।
আয়রা রেড লেগিংসের সাথে রেড কুরতি পরেছে উপরে রেড জ্যাকেট,গলায় স্কার্ফ..মানানসই আছে এখানকার সাথে চলতে হবে এমন কথা নই..আয়রা পা বাড়ালো যখন,তখন একটা ব্ল্যাক কালারের মার্সিডিজ শা শা করে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে গেলো,একটু হলে আয়রার উপর দিয়ে যেতো গাড়িটা..আয়রা সাইডে চেপে গেছে,বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেললো..কিন্তু মেয়েদের আর্তনাদ বেড়ে গেলো,তারা খুব জোরে চিল্লিয়ে বলছে,
“দ্যা মোস্ট ড্যাশিং ইজ হেয়ার” কিন্তু কি নাম বলছে এইটা আয়রা বুঝলো না,শ্বাস ফেলে ফোনের মাধ্যমে নিজের ক্লাসরুমের খোজ লাগালো..মিনিট পাচেক পর নিজের ক্লাসরুম পেয়েও গেলো,তারপরেও কনফার্ম করার জন্য কাওকে জিজ্ঞেস করতে যাবে..দেখলো সামনে স্যুট পরা ব্যক্তি হনহন করে হেটে চলে গেলো,আয়রার মুখের সেই ঠান্ডা বাতাস লাগলো..এমন বাতাস লাগাতে আয়রা চোখ বুঝে নিলো,কিছু যে জিজ্ঞেস করবে সে উপায় ও নেই..কিন্তু এই ব্যক্তিটি কে??
“এক্সকিউজ মি??আয়রা একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো।।
” ইয়েস?”মেয়েটি উত্তর দিলো।।
আয়রা জিজ্ঞেস করলো এটা এই ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুম কিনা,মেয়েটি হ্যা বলেছিলো..আয়রা কনফার্ম হয়ে ভিতরে গেলো,কি পরিষ্কার ক্লাসরুম..ফ্রেশারদের এখানে ক্লাস হবে।।
কিছুক্ষন পর ক্লাস শুরু ও হয়ে গেলো..যেহেতু ইংলিশে সবকিছু তারপরেও আয়রা ফোনে রেকর্ড অন করে নিয়েছে,বুঝতে অসুবিধা হইলে এটা থেকে শুনবে।।
ক্লাসরুমে একটু হৈচৈ এর আওয়াজে আয়রার টনক নড়লো,সে এতোক্ষণ খাতায় কিছু একটা টুকতে ব্যস্ত ছিলো..কিন্তু এরকম হুড়মুড়িয়ে সবার হুমড়ি খেয়ে পরার কারন খুজতে বের করতে যেয়ে দেখলো, তার ক্লাসের স্যার যেখানে দাড়িয়ে আছে সেখানে অতি ফর্সা ছেলে,নাকটা উচু হয়ে আছে..চেহারাতে গাম্ভীর্যতায় পরিপূর্ণ, রাগটা মনে হচ্ছে নাকের ওই ছোট্ট ঢিবি তে বসে আছে..দেখতে??বলা বাহুল্য, আয়রা নিজের লাইফে এতো সুন্দর ছেলে কখনো দেখে নি..আর চোখ গুলো কেমন ব্রাউন কালার।।
“হ্যা মিস্টার এডউইন!!” স্যার বললো।।
চলবে🍁
কেমন হয়েছে জানাবেন,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।