My First Crush পর্ব -০৯

#My_First_Crush
#পর্ব-০৯
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

ফ্লোরিডাকে বলা হয় চির বসন্তের দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্টেটগুলোতে যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচেই থাকে বেশিরভাগ সময়, সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার শেষ স্টেট ফ্লোরিডায় বছরের প্রায় বারো মাসই থাকে বসন্ত। আবহাওয়া চমৎকার। অনেকটা বাংলাদেশের মতো। এখানে চারপাশে সবুজের সমারোহ। পরিষ্কার ঝকঝকে পাকা প্রশস্ত রাস্তাগুলোর দুপাশে ছবির মতো সাজানো সারি সারি গাছ। গাছের ডালপালা জুড়ে সবুজ পাতার মেলা। সবকিছু এত সবুজ যে চোখ জুড়িয়ে যায়। এমনই এক সবুজে ঘেরা পাকা রাস্তা দিয়ে আমি হেঁটে চলছিলাম। রাস্তাটা খুব নির্জন। মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ছে না। আমি এসেছিলাম আমার কফিশপের জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনতে। এখন ফেরার জন্য গাড়ি পাচ্ছি না। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে এসেছি। আমার পরনে হালকা ম্যাজেন্ডা কালারের স্কার্ট। পায়ে হোয়াইট কালারের এক জোড়া স্নেকার্স। দু হাতে কিছু ব্যাগপত্র। হাঁটতে হাঁটতে আমি রাস্তার মোড়ে চলে এলাম। এমন সময় একটা ক্যাব রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে আমি হাত নাড়িয়ে থামতে ইশারা করলাম। কিন্তু থামলো না। অগত্যা কিঞ্চিৎ বিরক্তি আর হতাশ মুখে পেছনে ঘুরতেই দেখলাম আমার ঠিক বিপরীত মুখের রাস্তায় একটি গাড়ি গাছের সাথে সংঘর্ষ হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ধোঁয়া বের হচ্ছে গাড়ি থেকে। আমি সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গেলাম। গাড়ির ভাঙা কাঁচের জানালা দিয়ে দেখলাম সুদর্শন একজন ইংরেজ যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় সিটে পরে আছেন।
___________________________________________________

জেরিনের পাশ ঘেঁষে একটা বৃহদাকার কুকুর হেঁটে গেলো। তবুও জেরিনের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না। অন্যসময় হলে সে লাফিয়ে আকাশে উঠে যেতো। কুকুর ভীষণ ভয় পায় সে। তবে আজ কথা ভিন্ন। আশেপাশের জাগতিক বিষয় ভুলে গিয়ে সে আজ ব্যস্ত একজনকে খুঁটিয়ে দেখতে। বেশ খানিক সময় ধরে সে জিশানকে ফলো করে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে গ্রে কালারের হুডি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরনে জিশান গাড়ি থেকে নেমে একটা অফিস বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর জেরিন দাঁড়িয়ে আছে একটা মোটা গাছের পেছনে। আড়াল থেকেই জিশানের দিকে নজর রেখে চলেছে সে। এমন সময় জিশান ফোন কানে নিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ, রাইয়ান আমি তোর অফিসের নিচেই দাঁড়িয়ে আছি। তুই নিচে আসবি নাকি আমি আসবো?’
জেরিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ফোন রেখে জিশান যখনই বিল্ডিংয়ের ভেতর প্রবেশ করতে যাবে জেরিন তাড়াতাড়ি জিশানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে আটকে বলল,
‘এই যে মিস্টার, থামো।’
সামনে দাঁড়ানো বব কাট চুলের মেয়েটির মুখে বাংলা শুনে জিশান চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে বলল, ‘সরি, তুমি?’
জেরিনের কাট কাট কথা, ‘কেন বন্ধুর বিয়েতে বুঝি দেখোনি! ব্রাইডালের একমাত্র ফ্রেন্ড বলতে ছিলো তো শুধু একজনই। নাকি বন্ধুর দিক থেকে কখনো নজরই সরাও না।’
এমন রসকষহীন কথা শুনে জিশান অন্যদিকে তাকিয়ে একবার নিজের চোখের মণি ঘোরালো। তারপর আবার জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তো, বলুন আমার বন্ধুর বউয়ের একমাত্র বান্ধবী, আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?’
জেরিন একবার জিশানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায় যাচ্ছিলে?’
জিশানের সহজ উত্তর, ‘আমার বন্ধুর কাছে।’
জেরিন নাক ফুলিয়ে বলল,
‘তোমার কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই। ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে। কোথায় একটু পার্সোনাল স্পেস দেবে তা না! যখন তখন ওদের বাসায় চলে যাচ্ছো।’
‘এটা ওদের বাসা?’
জেরিন আশেপাশে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। জিশান ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
আবারও বিল্ডিংয়ের ভেতর যেতে উদ্যত হলে জিশানকে থামিয়ে জেরিন বলল,
‘তুমি তো ভালোই! থামানোই যাচ্ছে না একেবারে। আর এসব কি ছোট মোটো প্যান্ট পড়ে বন্ধুর সাথে দেখা করতে আসো!’
‘আমার প্যান্টে কি সমস্যা? আমি কি জব ইন্টারভিউ দিতে এসেছি? এই তোমার মাথায় কি কোন সমস্যা আছে? থাকলে বলতে পারো আমার একটা সাইক্রিয়াট্রিস্ট বন্ধু আছে। আমি ডিসকাউন্টের সাথে পরে অ্যাপায়েন্টমেন্ট নিয়ে দিতে পারি। এখন আমার তাড়া আছে।’
জেরিন দাঁত কিড়মিড় করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিশান ভেতরে চলে গেলো। জেরিন নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলল, ‘বেশ, আমিও পুরোপুরি খতিয়েই দেখবো। কি চলছে না চলছে বের করে তবেই ছাড়বো। আমার ফ্রেন্ড আর তার হাসবেন্ডের লাইফে আমি কোন থার্ড পার্টি ঢুকতে দেবো না। জেরিনকে বোকা বানানো এতো সহজ না।’

এদিকে জিশান রাইয়ানের কেবিনে ঢুকেই বলল, ‘রাইয়ান, তাড়াতাড়ি চল। অ্যালেন এক্সিডেন্ট করেছে।’
জিশান রাইয়ানকে নিয়ে সোজা চলে এলো হসপিটালে।
রিসেপশনিস্টের কাছ থেকে জেনে এলো অ্যালেনের কেবিন নম্বর। সেখানে গিয়েই অবাক হলো দুজন। দেখলো হৃদি বসে আছে কেবিনের বাইরে। বরাবর হৃদিও সমান অবাক হলো রাইয়ানকে দেখে। এগিয়ে এলো ওদের দিকে। রাইয়ান জিজ্ঞেস করলো,
‘তুমি এখানে?’
ঠিক তখনই একটা নার্স এসে হৃদিকে বলল,
‘তোমার বয়ফ্রেন্ডের কোন মেডিকেল হিস্ট্রি আছে?’
জিশান আর রাইয়ান দুজনেই একসাথে ভ্রু কুঁচকে তাকালো হৃদির দিকে। হৃদি দ্রুত অস্বীকার করে বলল,
‘না, না সে আমার বয়ফ্রেন্ড না। আমরা তো স্ট্রেঞ্জার। আমি রাস্তায় তাকে এক্সিডেন্ট অবস্থায় পেয়ে নিয়ে এসেছি।’
জিশান এবার নার্সের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আপনি আমার সাথে আসুন। অ্যালেন আমাদের বন্ধু। আমি আপনাকে বলছি।’

খানিকবাদেই ডক্টর বের হলো কেবিন থেকে। তার থেকেই জানা গেলো অ্যালেন ঠিক আছে। গাড়িতে থাকা এয়ার ব্যালুনের জন্য তেমন বড় কোন ক্ষতি হয়নি। মাথায় একটু চোট পেয়েছে। জ্ঞান ফিরতে খানিক সময় লাগবে। তবে হসপিটালে আনতে বেশি দেরি হলে ব্লিডিংয়ের জন্য আরো সমস্যা হতে পারতো।
এরপর রাইয়ান অ্যালেনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর রাইয়ানের সামনে এমন উইয়ার্ড সিচুয়েশনে পড়ার অস্বস্তির জন্য হৃদিও সেই ফাঁকে সেখান থেকে চলে এলো।
___________________________________________________

বিকেলের পড়েই পরিবেশে বাতাসের আধিক্য যেন একটু বেশি হয়ে গেলো। ফ্লোরিডায় আরেকটি চমৎকার বিষয় হলো এখানে প্রতিদিন বেশ কয়েকবার করে বৃষ্টি হয়। আর বৃষ্টি পনেরো মিনিটের বেশি কখনো থাকে না।
হৃদি ভাবলো বুঝি বৃষ্টি নামবে। বারান্দা থেকে জামাকাপড় নামাতে লাগলো সে। এমন সময় হৃদির কমলা রঙের ফুলতোলা একটা পাতলা স্কার্ফ হাত থেকে নিচে পড়ে গেলো। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে ঠিক গিয়ে পড়লো একটা বড় গাছের ডালে। হৃদি উপর থেকে উঁকি দিয়ে দেখেই তাড়াতাড়ি ছুটলো স্কার্ফ নামাতে। বিল্ডিং থেকে নেমে গাছটির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো সে। যেই ডালটিতে স্কার্ফ বেঁধেছে সেটা বেশ ভালোই উঁচু বলা যায়। হৃদি কোমরে হাত রেখে ভাবতে লাগলো কি করা যায়। অগত্যা প্যান্ট একটু টেনে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠতে লাগলো গাছে। গাছের উপরে উঠে সেই মোটা ডালটিতে গিয়ে নামিয়ে নিলো স্কার্ফ। গাছে তো উঠে পরলো কিন্তু এখন নামতে গিয়ে দেখে আর নামতে পারছে না হৃদি।। নিচে তাকাতেই মাথায় চক্কর দিয়ে উঠলো তার। এতো উঁচু ডাল থেকে নামবে কিভাবে সে? হৃদি ভয়ে ভয়ে একবার নিচে তাকায়। আবারো চোখ মুখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেলে। আস্তে আস্তে নামার জন্য ঘুরতে চেষ্টা করে সে। পড়ে গেলে কি হবে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ হাত ফসকে পড়েও যায়। দু হাত দিয়ে শুধু ডাল ধরে ঝুলতে থাকে। হৃদি কাঁদো কাঁদো স্বরে বিলাপ শুরু করে দেয়। নিচের দিকে একবার চোখ নিয়েই ভাবতে থাকে লাফ দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই আর৷ আরো একবার ভয়ে ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের মতো বলতে থাকে,
‘প্লিজ প্লিজ আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে নিও। আমার হাত পা যেন না ভেঙে যায়। প্লিজ আল্লাহ প্লিজ!’
বিলাপ করতে করতেই হৃদি ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ডাল থেকে হাত ছেড়ে দিলো। ঠিক সেই সময়েই রাইয়ান এসে পেছন থেকে হৃদির কোমর জাপটে ধরে ফেলে নামিয়ে দিলো তাকে। অবাক হয়ে চোখ খুললো হৃদি। বেঁচে গেছে বলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। রাইয়ান বলল,
‘কি করছিলে?’
হৃদি হাতের স্কার্ফ দেখিয়ে বলল, ‘এটা উপর থেকে পড়ে ডালে বেজে গিয়েছিল। সেটা নামাতে গিয়েছিলাম।’
‘হেই, এটা নামাতে গাছে উঠা লাগে! এটা দিয়েই তো নামাতে পারতে।’
রাইয়ানের হাতের ইশারার দিকে তাকিয়ে হৃদি দেখলো গার্ডেনের দিকে বিল্ডিংয়ের গা ঘেঁষেই একটা লম্বা কাঠের দন্ডের মতো দাঁড় করানো। হৃদি বলল,
‘আমি খেয়াল করিনি।’
রাইয়ান ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসির রেশ ফুটিয়ে একবার মাথা নেড়ে ভেতরে যেতে উদ্যত হলো। তারপর আবারো থেমে হৃদির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বাসায় চলো।’
হৃদিও আস্তে আস্তে চলে গেলো রাইয়ানের সাথে।

এরপর রাত হলো। রাইয়ান তার স্টাডি রুমে বসে অফিসের কাজ করছিলো। এমন সময় দুটো কফির মগ হাতে হৃদি এলো সেখানে। একটা রাইয়ানের দিকে দিয়ে আরেকটা নিজে নিয়ে চেয়ার টেনে সেখানেই বসে পড়লো। সামনে বসে বসে রাইয়ানের কাজ দেখতে লাগলো হৃদি। এক ফাঁকে হৃদি জিজ্ঞেস করলো,
‘রাইয়ান, তোমার বন্ধু যার এক্সিডেন্ট হয়েছিল তার কি অবস্থা এখন?’
‘জ্ঞান ফিরেছে। এখন ঠিক আছে।’
হৃদি হড়বড় করে বলল, ‘তখন হসপিটালে নার্সের ওমন কথায় তুমি কিছু মনে করোনি তো?’
‘মনে করার কি আছে? তুমি তো ভালো কাজই করেছো। নার্সই ভুল বুঝেছে।’
রাইয়ান কিছু মনে করেনি শুনেই স্বস্তিতে বসলো হৃদি। রাইয়ান কফিতে একটা চুমুক দিয়ে হৃদির দিকে তাকালো। তারপর মগ রেখে বলল,
‘কিন্তু এই, আমি শুনেছি যেখানে এক্সিডেন্টটা হয়েছে ঐ জায়গাটা খুবই নির্জন। তুমি এমন জায়গায় একা একা কেন যাও? এটা কিন্তু সেফ না। ধরো, সেখানে কোন খারাপ দুষ্ট ছেলের দল তোমার পিছু নিলো তখন তুমি কি করতে?’
হৃদি ভাবনার ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
‘তখন আমি পেছনে ঘুরতাম আর বলতাম…..
তারপর হঠাৎ মজার ভঙ্গিতে রাইয়ানের দিকে আঙ্গুল তাক করে হেসে জোরে বলে উঠলো,
‘স্ট্যাচুউউউ!’
রাইয়ান চাপা সুক্ষ্ম হাসির সাথে চোখ সরু করে তাকালো হৃদির দিকে। হৃদি হাসতে লাগলো। তারপর খানিক পর বলল, ‘আসলে আমি গিয়েছিলাম কফিশপের জন্য মালামাল কিনতে। শুনেছিলাম ওখানকার একটা শপে এখানকার তুলনায় স্বল্প মূল্যে
বিক্রি হয়। কিন্তু গিয়ে দেখি সেই একই৷ তেমন কিছু আনতে পারিনি। এসব ব্যবসায় বাজেট ম্যানেজ করাটা যে এতো কঠিন। আমি তো ঠিকমতো সামলাতেই পারি না।’
হৃদির মুখ ভোঁতা হয়ে গেলো। রাইয়ান বলল,
‘বাজেট ম্যানেজ! নিয়ে আসো তো তোমার ফাইলটা।’
হৃদির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বলল,
‘তুমি আমার হেল্প করবে?’
‘চেষ্টা করে দেখতে পারি।’
হৃদি আনন্দিত হয়ে চলে গেলো বাজেট সম্পর্কিত ফাইল আনতে। ফিরে এসে চেয়ার টেনে নিয়ে এবার রাইয়ানের পাশে গিয়ে বসলো। রাইয়ান ফাইল খুলে সবকিছু ভালো করে দেখে নিলো একবার। তারপর হৃদিকে বলল,
‘একেক সময় একেক শপ থেকে ইনগ্রেডিয়েন্টস না কিনে তুমি কিন্তু একটা শপের সাথেই যুক্ত থেকে মালামাল কিনতে পারো। সবসময় তার থেকেই যদি কেনার কথা বলো তাহলে নিশ্চয়ই একটা ভালো ডিসকাউন্টের সাথে নির্দিষ্ট একটা এমাউন্ট ম্যানেজ করতে পারবে।’
অপচয় হচ্ছে এমন কিছু বিষয় বাদ দেওয়ার কথা বলে রাইয়ান বাজেট নিয়ন্ত্রণের আরো বেশ কিছু ট্রিকস হৃদিকে বুঝিয়ে দিয়ে প্রোপার একটা বাজেট চার্ট তৈরি করে দিলো। হৃদি সব বুঝতে পেরে খুশি হয়ে উঠলো। আবারো কোন ফাজলামো করতে গেলে রাইয়ান কলম দিয়ে ওর মাথায় টোকা দিয়ে মনোযোগ দিতে বলল। এভাবেই কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে ওদের সামান্য হাসি ঠাট্টাও চলতে লাগলো আর কাজও।
___________________________________________________

দিনের মধ্যে আমার সবথেকে প্রিয় মুহুর্তের কথা যদি বলতে চাই তাহলে বলতে হয় চোখ খোলার পর সকালের এই মুহুর্তটি। যখন আমি সদ্য ঘুম ভাঙা মুখ নিয়ে সামনে তাকাই আর দেখতে পাই বিছানার উপর ঘুমে মগ্ন রাইয়ানের নিশ্চুপ মুখটি। এই মুহুর্তটা খুব করে বিশেষ, কারণ আমি যতক্ষণ ইচ্ছে বিনা দ্বিধায়, বিনা জড়তায় রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি। আমি আনমনেই হেসে উঠলাম। দেখলাম রাইয়ান আমার দিক বরাবর পুরোপুরি কাত হয়ে শুতে গিয়ে তার এক হাত বিছানার বাইরে চলে এলো। আমি সোফা থেকে নেমে রাইয়ানের সামনে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসলাম। রাইয়ানের হাতটা খুব সাবধানের সাথে তুলে দিলাম বিছানার উপর। বসে বসে মুচকি হেসে রাইয়ানকে আরো কাছ থেকে দেখাটা উপভোগ করতে লাগলাম। চুপচাপ ঘুমন্ত রাইয়ানকে দেখতে কতই না ভালো লাগছে! আমার মনে হয় রাইয়ানের চেহারাটা এতো আকর্ষণীয় লাগার মূলে আছে তার এই ঘন কালো ভ্রু যুগল। যেগুলো নিজের দিকে নজর কেড়ে রেখে সবসময় তার মুখে একধরণের গাম্ভীর্যের ভাব ফুটিয়ে রাখে। আমি আঙ্গুল কাছে নিয়ে দুই ভ্রুর উপর দিয়ে আঁকার মতো করলাম। হেসে উঠলাম নিজে নিজেই। হঠাৎ আমার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো। খেয়াল করলাম রাইয়ানের সাথে এই পর্যন্ত আমার একটাও সেলফি নেই। সেটা না হয় এই সুযোগেই তুলে ফেললাম। আমি সোফার পাশ টেবিল থেকে ফোন আনতে গেলাম। এসে দেখি রাইয়ান আবার চিৎ হয়ে শুয়ে পরেছে। আমি বিছানার পাশে আরো ঘেঁষে বসে দুজনের একসাথে সেলফি তোলার চেষ্টা করলাম। ক্লিক করতেই যাবো রাইয়ান তার মুখটা বাম দিকে নিয়ে গেলো। বিছানার পাশে যা একটু ফাঁকা জায়গা পেলাম সেখানেই এক পায়ে ভর দিয়ে কোনমতে উপরে উঠলাম। রাইয়ানের মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে ফোনটা বাড়িয়ে ধরলাম। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুজনের চেহারা পুরোপুরি ক্যামেরায় আসছে না। অগত্যা আমি আরো একটু রাইয়ানের গালের কাছে মুখটা নিলাম। ঠিক এমন সময় রাইয়ান তার মুখটা আবারো সোজা করতেই আমার ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁটের খুবই হালকা ভাবে স্পর্শ লাগলো। কারেন্টে শক খাবার মতো করে ছিটকে উঠতেই পড়ে যেতে নিলাম আমি। তৎক্ষণাৎ চোখ খুলে রাইয়ান আমার হাত ধরে আবারো টান দিতেই আমি গিয়ে পড়লাম তারই উপর। আমি শকড হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। রাইয়ানও চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে বলল,
‘কি হয়েছে?’
আমি গুটিশুটি মেরে বসে মাথা নেড়ে ইশারায় বোঝালাম কিছুনা। রাইয়ানের চোখ ঘড়ির দিকে পরায় কথা কাটা পড়ে গেলো। খেয়াল চলে গেলো অন্য দিকে। সে ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘ওহ নো, আজকে আমার মিটিং আছে। দেরি হয়ে গেলো।’
রাইয়ান তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আর আমি চোখ মুখ কুঁচকে আস্তে করে নিজের মাথায় একটা টোকা দিলাম।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here