My First Crush পর্ব -৩০

#My_First_Crush
#পর্ব-৩০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

আজ অফিসে শাড়ি পরে এসেছে হৃদি। নীল রঙের পরিপাটি সুতি শাড়িতে দারুণ লাগছে তাকে। গলায় ঝোলানো আইডি কার্ড। হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। কেবিন থেকে বারবার হৃদির দিকেই উঁকিঝুঁকি মারছে রাইয়ান। হিসেবে শাড়িতে এই প্রথমই রাইয়ান হৃদিকে দেখলো। কারণ বিয়ের সময় তো ঠিকমতো খেয়ালই করেনি। রাইয়ান লক্ষ করলো হৃদিকে ওখানকার আধুনিক পোশাকে তো ভালো লাগতোই কিন্তু তার চাইতে বেশি যেন বাঙালি বেশেই তাকে অধিক ভালো লাগছে। হোক না সেটা শাড়ি অথবা সেলোয়ার কামিজ। বাঙালি মেয়েদের বাঙালি পোশাকেই সবথেকে সুন্দর মানায়। হৃদিও যেনো তাই। শাড়িতে সৌন্দর্য যেন সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তার। খানিকবাদেই দরজা ঠেলে ভেতরে আসলো হৃদি। হাতের একটা ফাইল বাড়িয়ে ধরে বলল,
‘আমার মনে হয় তোমার প্রতিদিন অফিসে আসার কোন প্রয়োজন নেই। মাঝে মাঝে এলেই যথেষ্ট।’
রাইয়ান বলল, ‘কেন? আমার কি ভালোভাবে ইন্সপেকশনের কাজ করা উচিত না? ভালোভাবে নজর না রাখলে সবকিছু ঠিক করবো কিভাবে! তুমি তো জানোই আমি আমার কাজ নিয়ে অনেক সিরিয়াস।’
হৃদি বিড়বিড় করে বলল, ‘সিরিয়াস না ছাই!’
‘কি বললে?’
‘কিছু না।’
এই বলে হৃদি চলে যেতে লাগলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হুট করে রাইয়ান ডেকে বসলো, ‘হৃদি!’
হৃদি পিছনে ফিরে বলল, ‘কি?’
রাইয়ান বলল, ‘আমার একটা সবুজ রঙের ফাইল খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘তো আমি কি করবো?’
‘আচ্ছা, তাহলে আমি মি. জাহিদকে ডাকি।’
হৃদি মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো রাইয়ানের দিকে। রাইয়ান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে রইলো। অগত্যা এগিয়ে এসে টেবিলের উপর খোঁজা শুরু করলো হৃদি। রাইয়ান বলল,
‘ওদিকে না আমার এই পাশের ড্রয়ারে রেখেছিলাম বোধহয়।’
হৃদি মনে মনে ভাবতে লাগলো, হাত বাড়ালেই তো ড্রয়ারটা খুলে দেখা যায়। এতটুকুর জন্য অন্য কাউকে বলতে হয়!

হৃদি রাইয়ানের পাশে এসে দাঁড়ালো। ড্রয়ার খুলে দেখলো নেই। এরপর নিচের ডেস্কে ফাইলের স্তুপ থেকে খুঁজতে লাগলো। রাইয়ান পাশ থেকে নির্দেশনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
‘এই তো এদিকে, এটার নিচেই বোধহয়।’
রাইয়ানের কথামতো হৃদি আরেকটু ঝুঁকে ফাইলগুলো একটা একটা করে দেখতেই যাবে এর মাঝেই হঠাৎ টুপ করে হৃদির গালে চুমু দিয়ে বসলো রাইয়ান। হৃদি ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়লো। আর কিছুই করেনি এমন একটা ভাব নিয়ে টেবিলের উপর থাকা ফাইলটিতে চোখ বুলাতে লাগলো রাইয়ান। হৃদি মুখ হা করে বলল, ‘এই, এটা কি করলে হ্যাঁ?’
রাইয়ান তাকাচ্ছে না বলে হৃদি হাত ধরে রাইয়ানকে এদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘এদিকে তাকাও, এদিকে তাকাও বলছি। তুমি আমাকে কিস করলে কিভাবে? আমি কিন্তু অফিসের সবাইকে বলে দেবো। বলবো জাহিদ ভাইকে?’
রাইয়ান গালে হাত দিয়ে মিটিমিটি হেসে হৃদির কথা শুনতে লাগলো। রাইয়ানের মধ্যে কোন ভাবান্তর না দেখে আরো ক্ষেপে গেলো হৃদি। এমন সময় কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো জাহিদ। হৃদিকে আগে থেকেই সেখানে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক মুখে বলল,
‘হৃদি, তুমি এখানে! আমি আরো তোমাকে মি. রাইয়ানের কেবিনে আসতে বলার জন্যই ডাকতে গিয়েছিলাম।’
রাইয়ান হঠাৎ মুখ খুললো। বলল,
‘মি. জাহিদ, মিস হৃদি আপনাকে কিছু বলতে চায়।’
এবার হৃদির মুখ আরো হা হয়ে গেলো। জাহিদ বলল,
‘কি বলবে হৃদি?’
রাইয়ান বলল, ‘হ্যাঁ, বলুন মিস হৃদি, কি বলতে চান।’
হৃদি ইশারায় কটমট করে তাকালো রাইয়ানের দিকে। রাইয়ান হাসি হাসি মুখ করে রইলো। এদিকে জাহিদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো হৃদির দিকে। হৃদি আর না পেরে জোর করে মুখে হাসি টেনে থেমে থেমে বলল,
‘এমন জরুরী কিছু না জাহিদ ভাই। এমনি।’
জাহিদ ‘ও’ বলে সহজ হয়ে গেলো। হৃদি আস্তে আস্তে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। এতক্ষণে জাহিদের খেয়াল হলো হৃদির চলে যাওয়া। ভারী চশমার ফাঁকে কুঞ্চিত ভ্রু যুগল টেনে বলল,
‘আরো যা! হৃদি আবারো চলে গেলো!’
রাইয়ান একটা ফাইলে সাইন করতে করতে বলল,
‘সমস্যা নেই মি. জাহিদ। আমরা অন্য সময়ও আলাপ করতে পারবো।’

কেবিন থেকে বেরোতেই মুনিয়ার মুখোমুখি পরে যায় হৃদি। হৃদিকে দেখেই মুখ ভার হয়ে যায় মুনিয়ার। মুনিয়া মেয়েটা যে হৃদিকে খুব একটা পছন্দ করে না ব্যাপারটা হৃদি বুঝে৷ তবুও সে মুখে হাসি টেনে মুনিয়াকে বলে,
‘গুড মর্নিং মুনিয়া।’
প্রতুত্তরে মুনিয়া মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়,
‘গুড মর্নিং!’
হৃদি চেষ্টা করে মুনিয়ার সাথে কিছু ভালো ভালো কথা বলার। কিন্তু বুঝতে পারে না আর কি বলা যায়। কিছু সময় চলে যায় নিরবতায়। এর মাঝেই মুনিয়া বলে উঠে, ‘এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে? তোমার কি কোন কাজ নেই। অবশ্য কিছু মানুষের তো কাজ না করেও ভালো ভালো সুযোগ সব পায়।’
কথা বাড়াতে ইচ্ছে করে না হৃদির। কথা কাটাকাটির স্বভাব তো তার কোন কালেই ছিল না। হৃদি জানে না মুনিয়া কেন তাকে নিয়ে এরকম ভাবে। মুনিয়ার ধারণা হৃদি না থাকলে কাজের ক্ষেত্রে ভালো সুযোগগুলো সব তার হতো। তাই প্রথম থেকেই হৃদির জয়েন করায় চরম অখুশি সে।

হৃদির চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই কেবিন থেকে বেরোতে নেয় রাইয়ান। রাইয়ানের যাবার পথে তাড়াতাড়ি সামনে এসে তাকে আটকে ফেলে মুনিয়া। রাইয়ানের ভ্রু সংকুচিত হয়। মুনিয়া বিগলিত হয়ে হেসে বলে, ‘মি. রাইয়ান, আমি আপনার বোঝার সুবিধার্থে আমাদের অফিসের ওয়ার্ক এক্টিভিটি নিয়ে একটা চার্ট বানিয়েছি।’
এরপর মুনিয়া মুখে একটা লাজুক ভাব এনে ইচ্ছে করে চুলগুলো ধীরভাবে কানে গুঁজে গলাটা আকর্ষিত করে বলল, ‘কাল সারারাত জেগে আমাকে এটা বানাতে হয়েছে। আমি আশা করছি, আপনার এতে উপকার হবে। আপনার ইনচার্জে যাকে রাখা হয়েছে সে তো অতো দক্ষ না। যদি আমি থাকতাম তাহলে না যেন কতো সুবিধে করে দিতে পারতাম আপনার।’
‘আপনি কি হৃদির কথা বলছেন?’
‘হুম, সেই তো। এই তিন মাস আগেই আমাদের অফিসে জয়েন করেছে। শুনেছি বিদেশ থেকে এসেছে। কেউ কেউ বলে বিয়ে হয়েছে, কেউ কেউ বলে হয়নি। কি জানি রহস্য কি! বিদেশে থাকা মেয়েদের তো আবার চালচলন ঠিকঠাক থাকে না।’
কথাটা একপ্রকার ব্যাঙ্গাত্মক করেই বলে মুনিয়া। রাইয়ান কাঠখোট্টা গলায় বলে, ‘কেন আপনি কি ওখানে গিয়ে দেখে এসেছিলেন নাকি?’
মুনিয়া বিগলিত ভাবে বলতে নেয়, ‘না, তবে…..
রাইয়ান মাঝপথে থামিয়ে বলে, ‘তাহলে, আন্দাজে কথা বলেন কেন? আর যতদূর আমি জানি, একটা অফিসে স্টাফদের ওয়ার্ক এথিকস দেখেই তাদেরকে বিভিন্ন অপরচুনিটি দেওয়া হয়। যেহেতু আপনি পাননি তার মানে ঘাটতি টা আপনার মধ্যেই আছে। আর এই চার্ট হৃদি আমাকে আরও দু দিন আগেই পাঠিয়েছে। এটা খুব করে হলেও দু তিন ঘন্টার কাজ। আর সেটা বানাতে যদি আপনার সারা রাত লেগে যায় তাহলে আপনার ব্রেনের কার্যকারিতা সম্পর্কে অবশ্যই সন্দেহ রাখতে হয়।’

কথাটা বলে মুনিয়াকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় রাইয়ান। মুনিয়ার মুখ থমথমে হয়ে উঠে। ছোট থেকেই অত্যন্ত সুন্দরী সে। যাকে বলে একদম চোখ ধাঁধানো। আজ পর্যন্ত কোন ছেলে তাকে ইগনোর করেছে এমন কখনো হয়নি। এই প্রথম কোন ছেলে তার সাথে এভাবে কথা বলল। অপমানে গজগজ করতে থাকে মুনিয়া।
___________________________________________________

(রাইয়ান)
অফিস আওয়ার শেষ হলে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে হৃদি। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হই আমি। প্যান্টের পকেটে দু হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকি হৃদির পাশে। আড়চোখে দেখে সেটা টের পেয়ে হৃদি সামনে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠে,
‘তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
আমি বললাম, ‘কেন এখানে দাঁড়ানো কি নিষেধ? এমন কোন সাইনবোর্ড তো দেখছি না।’
‘অফিসের কেউ যদি দেখে ফেলে কি ভাববে?’
‘যা সত্যি তাই ভাববে?’
শাসনের চোখে আমার দিকে তাকায় হৃদি। কথার মধ্যেই বাস এসে পরে। হৃদি উঠে পরে। পেছন পেছন উঠতে যাই আমিও। দরজা মুখেই আমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে হৃদি প্রশ্ন করে,
‘তুমি এখানে উঠছো কেন? তোমার জন্য না গাড়ি আছে!’
আমি বললাম, ‘এখানে তো লোকাল বাস লেখাই দেখছি। লোকাল বাসে তো সবাই উঠতে পারে তাই না!’
কন্ট্রাক্টর বলে উঠলো,
‘এই যে আপা, একটু চালু করেন। মানুষ দাঁড়ায় আছে তো।’
এই লোকাল বাস নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভালো না। তবুও এই কয় দিনে কিছুটা হলেও সয়ে গেছে। বাসের সিট খালি নেই একটাও। হৃদি মাঝখানে গিয়ে হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি তাকে পাশ কাটিয়ে হৃদির পেছনের লোকটাকে ঠেলে সরিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দু পাশে দুই হ্যান্ডেলে হাত রেখে হৃদিকে আবৃত করে রাখলাম বাকি লোক থেকে। বাস চলতে শুরু করলো। শুরু হলো আবার সেই ঝাঁকি খাওয়া। একটুপর খেয়াল করলাম বারবার পেছনের লোকটা শুধু আমার সাথে ঘেঁষে যাচ্ছে। একসময় বিরক্ত হয়ে আমি পেছনে ঘুরে বললাম,
‘কি ভাই, আমার তো চুলকানি হয়নি তবুও আপনি শুধু আমাকে সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছেন কেন? পেছনে তো আরও জায়গা আছে। একটু সরে দাঁড়ান না!’
লোকটা পান চিবোতে চিবোতে একটু সরে দাঁড়ালো। মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো হৃদি। সেটা লক্ষ করে আমি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
‘যাক! অবশেষে তোমার হাসিটা দেখতে পেলাম। ব্যাপারটা একটু বিরক্তিকর হলেও এতে যদি তোমার মুখে হাসি দেখা যায় আমি এরকম কান্ড বারবার করতেও কিন্তু রাজী আছি।’
হৃদি হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক মুখভঙ্গি দেখানোর চেষ্টা করলো। আর আমি মিটিমিটি হাসতে লাগলাম।

যথাসময়ে বাস থামিয়ে আমাদের নামিয়ে দিলো। বাকিটা রাস্তা হেঁটেই যাওয়া যায়। আমরা হাঁটা ধরলাম।পথিমধ্যে একটা খাবারের ভ্যানগাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো হৃদি। খাবারটা আমার কাছে অজানা। জীবনে এই প্রথম দেখলাম আমি। ডালের মতো কিছু একটা বড় পাত্রে রাখা। ছোট ছোট গোলাকার বলের মতো ক্রিসপি একটা জিনিস। যেটা বিক্রেতা হাত দিয়ে ফুটো করে ডাল ভরে তরল কিছু একটা উপর দিয়ে দিয়ে প্লেটে করে খেতে দিচ্ছে। পরে জানতে পারলাম এই অদ্ভুত খাবারটার নাম ফুসকা। নামটাও একটু অদ্ভুত। আমার কাছে দেখতে কিছুটা অস্বাস্থ্যকর লাগলো। খেতে ইচ্ছে করলো না। কিন্তু হৃদি এতো আগ্রহ করে খাচ্ছে বলে আমিও নিলাম। আমারটা যখন বানানো হচ্ছিল তখন হৃদি বিক্রেতাকে বলে দিলো,
‘ঝাল কম করে দিতে।’
ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগলো। যদিও এতদিনে এখানকার অধিক ঝাল খাবার কিছুটা আয়ত্তে আনতে পেরেছি আমি। তবুও আমার জন্য হৃদির এই বলে দেওয়া আমার মনে ভালো লাগার পরশ বুলিয়ে দিলো। এর মানে হৃদি এখনো আমার কেয়ার করে। সব আশা শেষ হয়ে যায়নি। আমার ফুসকা এসে পড়লো। এবার আমি পড়লাম আরেকটা গ্যাঁড়াকলে। খাবো কিভাবে? চামচ দিয়ে উঠিয়ে খেতে গিয়ে দেখি ঠিকমতো সুবিধার লাগছে না। মুখের কাছে নিতেই ঠাস করে পুনরায় প্লেটে পড়ে গেলো। এবার হৃদিকে দেখে আমিও হাত দিয়ে ধরলাম। মুখের কাছে নিয়ে কিভাবে খাবো বুঝতে পারলাম না। দাঁত দিয়ে একটু কামড়াতেই গড়গড় করে পানিগুলো নিচে পরে গেলো। জামা কাপড় নষ্ট হয়ে গেলো আমার। হৃদি এবার হেঁসে ফেললো। পাশ থেকে একটা ছোট বাচ্চা ছেলে ( সম্ভবত সেই বিক্রেতার হেল্পার) আমাকে চড়া করে ডেকে বলল, ‘সাহেব, এইভাবে খাইলে হইতো না। পুরাটা মুখে একসাথে দিতে হইবো। পুরাটা। বড় করে একটা হা করেন।’
ছেলেটার কথা মতো আমি মুখ হা করলাম। ছেলেটা আবারো বলল, ‘আরো বড় হা করেন।’
এবার আমি আরো বড় হা করলাম। এক ধাপেই দিয়ে দিলাম পুরো ফুসকাটা মুখের ভেতরে। এরপর খেয়াল করলাম অদ্ভুত এই খাবারটার টেস্ট। টক, ঝাল কম্বিনেশনটা দারুণ। একে একে এভাবে আমিও খেতে লাগলাম। মোটামোটি ভালোই লাগলো। ইউএস ফিরে জিশানকে এই অদ্ভুত খাবারটার কথা অবশ্যই বলবো।

রাতে সোফায় বসে বসে হৃদি টিভি দেখছিল। তার পাশে বসা ছিলাম আমিও। টিভিটা একদম ছোট। তবে নতুন। এই ঘরে এই একটা জিনিসই সম্ভবত নতুন। আর সবই সেকেন্ড হ্যান্ড। যদিও একটা সোফা, একটা খাট, প্লাস্টিকের ওয়ারড্রব আর টেবিল ছাড়া আর খুব বেশি আসবাবপত্র নেই। আমি বুঝতে পারলাম হৃদির স্বল্প বেতনের টাকায় বাসার ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসেই প্রয়োজনীয় কিছু না কিছু কিনতে গিয়ে হৃদির হিমশিম খেতে হয়। হয়তো একারণেই সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসগুলো কিনেছে হৃদি। এসব কিছু যখনই আমার খেয়াল হয় আমার মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ হৃদির এরকম পরিস্থিতির জন্য আমিই দায়ী। কতক্ষণ আমার দৃষ্টি এমন ছিল আমি জানি না। হঠাৎ হৃদির ডাকেই আমার ঘোর ভাঙলো। হৃদি বলল,
‘এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
‘তুমি এমন কঠিন পথ কেন বেছে নিলে হৃদি? দোষটা তো আমি করেছিলাম। শাস্তিটা নিজে কেন নিলে?’
হৃদি নিজের দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
‘এসব কথা হঠাৎ কেন উঠাচ্ছো রাইয়ান?’
খানিকসময় চুপ থেকে আমি এগিয়ে এলাম একটু। ধরা গলায় বললাম,
‘আরেকটা সুযোগটা কি আমায় দেওয়া যায় না হৃদি?’
হৃদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠলো, ‘না, যায় না।’

কথাটা বলেই হৃদি দ্রুত উঠে চলে গেলো নিজের রুমে। আমি ব্যথিত মন নিয়ে পড়ে রইলাম সেখানেই। বুকের মধ্যে হু হু করে আবারো বইতে লাগলো সেই তীব্র হাওয়া।
___________________________________________________

মাঝরাতে হুট করেই কারেন্ট চলে গেলো। একটু সময় পেরোতেই গরমের অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে গেলো রাইয়ানের। চোখ ডলতে ডলতে সে উঠে বসলো। সোফার নিচের তাক হাতড়ে বের করে আনলো একটা হাত পাখা। পুনরায় শুয়ে নিজের গায়ে বাতাস করতেই যাবে তখনই তার হাত থেমে গেলো। চোখ গেলো হৃদির রুমের দিকে। আস্তে আস্তে হৃদির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো সে। নিঃশব্দে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকলো। হৃদির ঘুম তখনও ভাঙে নি। ঘুমের ঘোরেই গরমে উসখুস করছে। রাইয়ান ধীর পায়ে হৃদির বিছানার পাশে বসলো। নিজের হাত পাখাটা দিয়ে বাতাস করতে লাগলো হৃদিকে। ভ্যাপসা গরমের মাঝে পাখার শীতল হাওয়া গায়ে লাগতেই নড়াচড়া একদম বন্ধ হয়ে গেলো হৃদির। ঘুমন্ত মুখে ছড়িয়ে পড়লো একটা প্রশান্তির আভা। বাতাসের ধাক্কায় কিছু চুল হৃদির মুখের সামনে এসে পড়লো। হাত দিয়ে সেগুলো কানে গুঁজে দিলো রাইয়ান। মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো তার। হৃদির ঘুমন্ত মুখের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো। কারেন্ট আসার কোনো নাম নেই। আর ওদিকে পুরো রাত জুড়েই চলতে থাকে রাইয়ানের অনবরত হাত পাখা।

ঘড়ির কাটার মতোই কিছু কিছু সময়েরও কিভাবে নিজ স্থানে ফেরার মতো পুনরাবৃত্তি ঘটে তাই না! একটা সময় হৃদি যেই মানুষটার জন্য নিজের উর্ধ্বে গিয়ে সবটুকু দিয়ে তার জন্য যেকোন কিছু করতো আজ সেই আবেগহীন, স্বার্থপর, আত্মমুখী স্বভাবের ছেলেটাও একইভাবে হৃদির জন্য নিজের উর্ধ্বে চলে গেছে। ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষটির ভালো থাকা এভাবেই বুঝি সবচাইতে বেশি মুখ্য হয়ে পড়ে। নিজের চাইতেও।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here