real love পর্ব ২২

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 22
.
.
ইফাজ আমাকে প্লেটের অর্ধেক ভাত খাইয়ে ছেড়েছেন।কোনোমতে পেটের মধ্যে ঢুকিয়েছি।
.
আমি উঠতে যাবো সেই মুহূর্তে উনি আমার হাত টেনে উনার সামনে বসিয়ে বললেন,
– কোথায় যাচ্ছো?
– ডাইনিং এ।পানি খেতে।
– ওহ্!আমার জন্য একগ্লাস নিয়ে আসো।
.
আমি পানি খেয়ে উনার জন্য একগ্লাস পানি নিয়ে রুমে ঢুকে গ্লাসটা সামনে ধরে বললাম,
– নিন।
– হুম,রাখো।
আমি পানির গ্লাসটা রেখে চলে আসতে নিলেই উনি আমার হাত টেনে উনার সামনে বসিয়ে প্লেটটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
– নাও,শুরু করো!
– মানে?আমি আর খাবো না।
– উফ্!তোমাকে কে খেতে বলেছে।আমাকে খাইয়ে দাও।
– কিহ্!
– হুম,নাও তাড়াতাড়ি শুরু করো।
– আমি পারি না কাউকে নিজের হাতে খাওয়াতে!
– এ্যাহ্ আসছে!ইয়াশকে তো খুব সুন্দর করে খাইয়ে দিয়েছিলে।ইয়াশ কিন্তু আমাকে সব বলেছে।সো মুখ বন্ধ রেখে হাত চালাও।
উনার কথা শুনে আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ও তো পিচ্চি।আমি বড়দের খাইয়ে দিতে পারি না।
– আমিও তো পিচ্চি!নাও নাও তাড়াতাড়ি করো।
– আপনি পিচ্চি?
– হুম!
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে প্লেটের দিকে তাকালাম।উনার ঠোটেঁ রাজ্যজয়ের হাসি!
.
আমি ভাত মাখিয়ে এক লোকমা তুলে উনার মুখের সামনে নিতেই উনি আমার হাতের কব্জি ধরে মুখে নিলেন।তারপর আস্তে করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললেন,
– বাহ্!ঝাল তরকারি হঠাৎ মিষ্টি হয়ে গেলো কি করে!
কথাটা বলেই উনি দুষ্টু হাসি দিলেন।আমি চোখ সড়িয়ে দ্বিতীয় লোকমা তুলে উনার মুখে দিতেই উনি একটা কামড় দিলেন!আমি “আহ্” বলে শব্দ করলাম!উনি সাথে সাথেই আমার হাতটা ধরে কামড় দেওয়া জায়গায় একটা চুমো দিয়ে বললেন”সরি,বউ!আর হবে না!”
– ইচ্ছে করে কামড় দিয়ে এখন সরি বলা হচ্ছে!
আমার কথা শুনে উনি দুষ্টু হাসি দিলেন!
.
– কি হলো?দাও!
আমি আরেক লোকমা তুলে উনার মুখের কাছে নিয়েও আবার ফিরিয়ে আনলাম।আমার এরকম কান্ড দেখে উনি অবাক হয়ে বললেন,
– কি হলো এটা?
– আগে বলুন আর ওরকম করবেন না!
– ওকে!
আমি হাত বাড়াতেই উনি আবার কামড় দিলেন!এবার অনেকক্ষণ কামড় দিয়ে ধরে রাখলেন!কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলেন!
.
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
– আপনি আসলেই খারাপ!
– এতো মিষ্টি কেনো তোমার হাতের স্বাদ!উম্মম…ছাড়তে ইচ্ছে করছিলো না!
উনার কথাটা শুনেই আমি প্লেটটা উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে নামতেই উনি প্লেটটা সাইডে রেখে আমাকে উল্টোপাশ হয়ে উনার সাথে লাগিয়ে বসালেন!আমি পেছন ফিরে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার ডানহাতটা টেনে উনার ঠোটেঁর সামনে নিয়ে সবগুলো আঙ্গুল চেটেপুটে খেয়ে ছেড়ে দিলেন!
আমি হা হয়ে উনার সব উদ্ভট কান্ডগুলো দেখলাম!
.
উনি পানি খেয়ে আমার ওড়না দিয়ে মুখ মুছে চলে গেলেন!আমি উনার চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম!এইরকম কিছু দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
.
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে প্লেট আর গ্লাসটা নিয়ে ডাইনিং এ রেখে হাত ধুয়ে রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পরলাম।চোখদুটো বন্ধ করতেই উনার একটু আগের করা দুষ্টুমিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো!আমি চোখ খুলে ডানহাতের আঙ্গুলের দিকে তাকালাম।এখনো আঙ্গুলে উনার কামড়ের দাগগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে!আমি হাতটা বুকের ভেতর চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলাম।
.
দুপুর দুটোর দিকে ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে নাফিসাকে দেখতে পেলাম।ও ফোন চালাচ্ছিলো।আমাকে দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো।আমি আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলাম।মনে হচ্ছে কতকাল পর ঘুম থেকে উঠলাম!
.
– আপু।
নাফিসার ডাক শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম।
– কিছু না!
– মানে?
– সরি,ভুলে ডেকে ফেলেছি।
– কিছু একটা লুকাচ্ছিস আমার কাছে!বল।
– নাথিং।
– ওকে!না বললি।
.
আমি বিছানা ছেড়ে মাত্রই নামতে যাবো সেই মুহূর্তে নাফিসা আমার হাত টেনে ধরে বললো,
– আপু,ভাইয়া কিন্তু চলে গেছে।
– কিহ্!
– হুম,একটু আগেই চলে গেছে।তুই ঘুমাচ্ছিলি দেখে আর ডাকে নি।
নাফিসার কথা শুনে মনে হলো আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরলো!আমি কাদো কাদো স্বরে বললাম,
– উনার না কাল সকালের দিকে যাওয়ার কথা ছিলো!আর এভাবে আমাকে না বলে……..
আমি আর বলতে পারলাম না!গলা ভারী হয়ে আসছে!চোখ দিয়ে পানি পরছে!
.
নাফিসা হঠাৎ আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– ভাইয়া দিতে বলেছে!
আমি চিরকুটটা নিয়ে তাড়াতাড়ি খুলে দেখলাম কি লেখা আছে!
“ভালো থেকো!আর কখনো হয়তোবা আমাদের দেখা হবে না!যত দূরেই থাকি না কেনো মনেপ্রানে সবসময় তোমাকে সুখী দেখতে চাই!আমি দোয়া করি তোমার লাইফে আমার থেকেও বেস্ট কেউ আসুক!চলে যাচ্ছি!আমাকে আর খোজার চেষ্টা করো না!বিদায়!”
লেখাটা শেষ হতেই আমার পুরো পৃথিবীটা ওলট পালট হয়ে গেলো!হাত পা কাপঁছে!অঝর ধারায় চোখ দিয়ে পানি পরছে!হঠাৎ কি হলো উনার?কেনো এমন করলেন আমার সাথে?উফ্!আমার ভাবনাশক্তিগুলোও লোপ পাচ্ছে!ভাবতে পারছি না কিছু!চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে”কেনো করলেন এমন?”
নাফিসার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও চুপচাপ ফোন চালাচ্ছে!উনি যে এভাবে চলে গেলেন!তারজন্য সামান্যতম খারাপ লাগাও ওর চেহারার মধ্যে নেই!
ওর কেনো খারাপ লাগবে?ওতো ভালোবাসে নি উনাকে!আমি বেসেছি!খুব খুব ভালোবাসি আপনাকে!খুব!
.
আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে রুম থেকে বের হয়ে আম্মুর কাছে আসলাম!ফ্লোরে পা রাখতেই পারছি না!মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে যাবো!
আম্মু আমাকে দেখার সাথে সাথেই টিভি অফ্ করে আমার কাছে এসে বললো,
– হিয়া!এই অবস্থা কেনো তোর?কি হয়েছে?মা আমার,বল!
– উ…..উ…..উনি চ…
– আপু!ভাইয়া তোর জন্য মূল্যবান একটা গিফ্ট রুমে রেখে গেছেন!তাড়াতাড়ি যেয়ে দেখে আয়!
পেছন থেকে নাফিসা কথাটা বলে উঠলো।কথাটা শোনার সাথে সাথেই আমি আর একমুহূর্তও সেখানে না দাড়িয়ে দৌড়ে আমার রুমে এসে ঠাস্ করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।
বেডের উপর চোখ পরতেই মনে হলো আমি আমার জীবন ফিরে পেয়েছি!দরজা খোলার শব্দে উনি শোয়া থেকে উঠে বসলেন!আমাকে এই অবস্থায় দেখার সাথে সাথেই উনি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন,
– টিয়াপাখি!কাদছো কেনো? কি হয়েছে?
আমি উনার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম!হঠাৎ আমার এরকম জড়িয়ে ধরা উনি সামলাতে না পেরে আমাকে সহ শুয়ে পরলেন!উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন!আমি উনার পিঠের শার্ট শক্ত করে আকড়ে ধরলাম!জীবন গেলেও ছাড়বো না উনাকে!কেউ নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে!
.
প্রায় দশমিনিট আমি উনাকে ওভাবেই ধরে রেখেছি!উনিও কিছুই বলছেন না!শুধু চুপচাপ আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন!
.
– টিয়াপাখি!
– হুম!
– কি হয়েছে?
– কখনো ছেড়ে যাবেন নাতো?
– মানে?আমি কেনো তোমাকে ছেড়ে যাবো?
– প্রমিজ করুন!
– আই লাভ ইউ!
উনার কথাটা শুনে আমি আমার সর্বস্ব শক্তি দিয়ে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলাম মনে হলো এই বুঝি আমি উনার বুকের ভেতর ঢুকে যাবো!
আমার চোখ দিয়ে এখনও পানি পরছে!আমি উনার শার্টের সাথে চোখের পানি মুছে বললাম,
– আই লাভ ইউ টু!
আমার কথা শুনে উনি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন,
– কি বললে?আরেকবার বলো!
– আই লাভ ইউ টু!
– সত্যিই!!!
আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে আবার উনার বুকে মাথা রেখে বুকে একটা চুমো দিলাম!
আমার কান্ড দেখে উনি আমার দুইগাল ধরে উনার বুক থেকে আমার মাথাটা তুলে অবাক হয়ে বললেন,
– আই কান্ট বিলিভ,টিয়াপাখি!!! তুমি নিজে থেকে…….এ্যাই তুমি ঠিক আছো তো?
– হুম!
– আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না!
– ……
– নেশা করো নি তো আবার?
– ছিঃ!
.
প্রায় অনেকক্ষণ ধরে দুজনই চুপচাপ আছি!
উনি আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
– তখন ওভাবে কান্না করলে কেনো?
– নাফিসা ভয় দেখিয়েছিলো!তার জন্য!
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে উঠে বললেন,
– কিসের ভয়?তেলাপোকার নাকি টিকটিকির?
– উফ্!ওসব না!
আমি চিরকুটটা উনার হাতে দিয়ে বললাম,
– এটা পড়ুন!
উনি আমার হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে শুয়ে থেকেই পড়তে লাগলো।পড়া শেষে বলে উঠলেন,
– সামান্য এইটার জন্য তুমি কান্না করেছো!বিশ্বাস নেই আমার উপর?
– অনেক!কিন্তু তখন ও এমনভাবে বললো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
– পাগলি……..বলেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন!সাথে সাথেই নাফিসা রুমে ঢুকেই বলে উঠলো,
– আপু!সারপ্রা….oppss…sorry…sorry
নাফিসাকে দেখেই আমি উনাকে ছেড়ে দিলাম,উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুজনেই উঠে ঠিকঠাক হয়ে বসলাম!
.
নাফিসা চোখে হাত দিয়ে উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে ছিলো!
– সরি আপু!নক করে আসা উচিৎ ছিলো!
কথাটা বলেই ও আমাদের দিকে ঘুরলো!
ইফাজ বলে উঠলেন,
– দেখেই তো ফেলেছো!এখন সরি বলে লাভ কি!
– আপু যে এতোটা ইমোশোনাল হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি!
.
– তোকে আমি মেরে ফেলবো!
কথাটা বলেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলেন!
তারপর নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– কাজটা করে কিন্তু তুমি আমার সবচেয়ে বড় উপকার করেছো!
– সিরিয়াসলি?
– হুম!
– কি উপকার করেছি?
আমি উনার হাটুতে একটা চিমটি দিয়ে ইশারায় চুপ থাকতে অনুরোধ করলাম।কিন্তু উনি চুপ না থেকে বললেন,
– এই যে তোমার বোন যে আমাকে এতো ভালোবাসে লাইভে সেটা দেখতে পেলাম!
নাফিসা বেডে বসে উৎসুক কন্ঠে বললো,
– কি কি দেখলেন লাইভে?
– এই যে নিজে থেকে আমাকে জ…..
আমি উনাকে আর বলতে দিলাম না।সোজা মুখ চেপে ধরলাম।
উনি ছাড়ানোর চেষ্টা পর্যন্তও করছেন না!উল্টো নাফিসার অগোচরে আমার হাতের তালুতে চুমো দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছেন!মাঝে মাঝে কামড়ও দিচ্ছেন! আমি না পারছি চিৎকার করতে আর না পারছি ছাড়তে!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here