#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 57
.
.
ইফাজ গুনগুন করতে করতে রুমে ঢুকলেন!উনাকে দেখতে পেয়ে আমি দ্রুত ইয়াশকে ছেড়ে চোখ মুঁছে উঠে দাড়ালাম!উনি কাছে এসে ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি হয়েছে?কাঁদছো কেনো?
আমি আস্তে করে বললাম,
– কে কাঁদছে?
উনি আমার কাছে এসে আমার চোখের পানি আঙ্গুলে নিয়ে বললেন,
– তাহলে এটা কি?
পাশ থেকে ইয়াশ বলে উঠলো,
– একটু আগে আম্মুর সাথে কথা বলে ওয়াশরুমে যেয়ে কান্না করে দিলো!
– কিহ্?
উনি আমার আরো কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
– আম্মু কিছু বলেছে?
আমি মাথা নেড়ে “না”সূচক উত্তর দিলাম!
উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন,
– আম্মু কিছু বলেছে?
– না!
– তাহলে?
আমি বেড থেকে ফোনটা নিয়ে সকলের রেকর্ড উনাকে শোনালাম!উনি ঠাঁই দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন!আমি উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ফ্লোরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম!ইয়াশ বেডের উপর দাড়িয়ে আছে!হঠাৎ উনি ইয়াশকে কোলে নিয়ে ড্রইংরুমে চলে গেলেন!টিভি অন করে কার্টুনের চ্যানেল দিয়ে ইয়াশকে বসিয়ে রুমে ব্যাক করলেন!কার্টুনের কথাগুলো এইরুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে!উনি রুমে আসার আগেই বারান্দায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম!উনি যে আমার কাজে রেগে গিয়েছেন সেটা উনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে!বারবার বলেছেন এই বিষয়টা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলতে!টেনশন না নিতে!তবুও আমি উনার কথা শুনছি না!
.
উনি দরজা ধাক্কাচ্ছেন!রাগীকন্ঠে বললেন,
– হিয়া!দরজা খুলবে নাকি কাল সকাল পর্যন্ত এখানে দাড়িয়ে থেকে ওয়েট করবো?
উনার কথাটা শোনামাত্রই আমার গলা শুঁকিয়ে গেলো!আমি কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে সাহস নিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম!উনি কোনোকিছু না বলে আমার সামনে আমার ফোনের সিম খুলে ভেঙ্গে ফেলে বললেন,
– তোমার এইসব টেনশন আর নিজের প্রতি কেয়ারলেসের জন্য যদি আমার বেবির কিছু হয়,তোমাকে আমি ছাড়বো না!
উনি আমার দুইবাহু ধরে ঝাঁকিয়ে আবার বললেন,
– আমি যে তোমার সাথে আছি,তারপরও কি তোমার হচ্ছে না?একের পর এক ভুল করছো!বারবার বলছি এতো স্ট্রেস না নিতে,প্রবলেম হবে!রিলেক্স থাকো…সবসময় একটা কথাই ভাবো তোমার বাবুদের বাবা আছে তোমার সাথে!পজেটিভ চিন্তাভাবনা করো অলওয়েজ!সবসময়…..
আমি উনাকে আর কিচ্ছু বলতে দিলাম না!শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম!উনি টাল সামলাতে না পেরে আমাকে নিয়ে সামান্য পিছিয়ে গেলেন!আমি উনার পিঠের শার্ট আঁকড়ে ধরে বললাম,
– উনাদের খুব জানাতে ইচ্ছে করছিলো!কিন্তু এক একজনের কথা শুনে মনের ভেতর যতটুকু সাহস এনেছিলাম সব একনিমিষেই ভয়ে পরিণত হয়েছে!
আমি ইফাজকে ছেড়ে মাথাউঁচু করে উনার সামনে দাড়িয়ে একহাত উনার বুকে রেখে বললাম,
– এইমুহূর্তে আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি আর কখনোই এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবো না!প্রমিজ!
– দেখা যাবে!
উনি আমার হাত ধরে ড্রইংরুমে ইয়াশের পাশে বসিয়ে ডাইনিং-এ চলে গেলেন!কিছুক্ষণ পর প্লেটভর্তি খাবার এনে আমাদের সামনে দাড়ালেন!একবার আমাকে খাঁইয়ে দিচ্ছেন তো একবার ইয়াশকে!ইয়াশ আমার কাধের সাথে হেলান দিয়ে খাচ্ছে আর কার্টুন দেখছে!
.
.
সকালের দিকে কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।বেড থেকে নেমে হেলেদুলে মেইনডোর অব্দি আসলাম!ম্যাজিক আই-এ চোখ রেখে দেখলাম তুলি এসেছে।আমি দরজা খুলে দিতেই তুলি হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমাকে সালাম দিলো!প্রতিত্ত্যুরে আমি সামান্য হেসে সালামের উত্তর নিলাম।বললাম,
– দেখে অনেক খুশী মনে হচ্ছে, কারন কি?
– আপা,আমি কি একটাবার আপনেরে জড়াইয়া ধরতে পারি?
– নিশ্চয়!
আমি হাত বাড়াতেই তুলি আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দিয়ে বললো,
– আমার বিয়া ঠিক হইছে!একমাস পর বিয়া!
আমি উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বললাম,
– বাহ্ এতো ভালো একটা খবর তুমি আমাকে এখন দিচ্ছো?কালরাতেই তো ফোন করে জানানো উচিৎ ছিলো!
তুলি ভাঙ্গা কন্ঠে বললো,
– সরি আপা,ভুল হইয়া গেছে।আসলে আমার কাছে আপনের নাম্বারডা ছিলো না,ভায়ের নাম্বার ছিলো।উনারে একবার ফোন দিতে নিয়াও দেই নাই।ভায়ের সাথে তো আমার সেরকম কোনো খাতির নাই যে খবরটা উনারে দিমু।
তুলির কথায় বোঝা যাচ্ছে সে অনেক লজ্জিত।আমি তুলিকে স্বাভাবিক করতে বললাম,
– ইট’স ওকে।একটু দাড়াও,আমি আসছি।
আমি ফ্রিজ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করে সেটা থেকে একটা মিষ্টি তুলিকে খাঁইয়ে দিলাম।বেচারী আবার লজ্জ্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– এহ্ হে রে…..মিষ্টির কথা তো ভুইলাই গেছিলাম।
– এতো ফর্মালিটিজ আমার সামনে দেখাতে হবে না।আমি এখান থেকে একটা মিষ্টি খেয়ে নিলাম,তুমি ভেবে নাও এটা তোমার দেওয়া মিষ্টি।
তুলি হাসলো,কিছু বললো না।কিন্তু কিছুক্ষণ হা হয়ে কি যেনো দেখছিলো?পরক্ষণেই লজ্জ্বামাখা মুখ নিয়ে কিচেনে চলে গেলো!কাল দুপুরের দিকে ইফাজ কিচেনের যাবতীয় সবকিছু কিনে এনেছেন।
.
আমি পেছন ঘুরতেই উনার সাথে ধাক্কা খেলাম!উনি খালি গাঁয়ে একটা ট্রাওজার পরে দাড়িয়ে আছেন!বুকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা!ভেঁজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের খানিকটা উপরে উঠে আছে!চোখের পাঁপড়ি ভেঁজা!ঠোঁটদুটো সতেজ হয়ে আছে!দাড়িতে পানি লেগে আছে!বামহাতে একটা টাওয়াল!মাশাআল্লাহ্!!!
– মিষ্টি কিসের?
উনি থুতনীতে হাত দিয়ে দাড়ি টানতে টানতে বললেন!আমি চমকে উঠে বললাম,
– হ্যা?
উনি ভ্রুঁ উঠিয়ে চোখের ইশারায় আমার হাতের মিষ্টি দেখিয়ে বললেন,
– এটা কিসের মিষ্টি?
– ওহ্!তুলির বিয়ে ঠিক হয়েছে,এটা তারই মিষ্টি!
আমি মিষ্টির প্যাকেট টেবিলে রেখে উনাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে এলাম।অনেকটা ধমকের সুরে বললাম,
– তুলিকে এভাবে নিজের বডি না দেখালেই কি চলছিলো না?
আমার কথা শুনে উনি ভ্রুঁ কুচঁকে বললেন,
– মানে?
– একদম ঢং করবেন না!এভাবে খালিগায়ে রুমের বাহিরে বেরুনোর মানে কি?তখন তুলি হা হয়ে কিছুক্ষণ আমার পেছনে তাকিয়ে ছিলো,তখন তো আমি খেয়াল-ই করিনি আপনি আমার পেছনে দাড়িয়ে!তারপরই তো লজ্জা পেয়ে কিচেনে চলে গেলো!খুব…না?
উনি আমার কথা শুনে হাসছেন! টাওয়াল ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে উনার সাথে একদম লাগিয়ে নিলেন!দুইহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ট্রাওজার-টা একটু টেনে দাও তো!দেখো…আন্ডারওয়ার বেরিয়ে….
– স্টপ….ছিঃ!তুলিকে এটাও দেখিয়েছেন!!!
আমি উনার মুখ ধরে চেঁচিয়ে উঠলাম!আমার কান্ড দেখে উনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন!আমি উনার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলাম!
কোমড়ে স্লাইড করতে করতে বললেন,
– আমি কেনো ও’কে এইসব দেখাতে যাবো?আমি ওরকম ছেলে না!আমার এই সবকিছু দেখার অধিকার একমাত্র তোমা….
– উফ্!হয়েছে….বুঝতে পেরেছি!
– বুঝতে পারলে ভালো!এখন একটু চুল মুঁছে দাও তো!
কথাটা বলেই উনি বেডে বসে আমার কোমড় টেনে উনার সামনে দাড় করালেন!আমি টাওয়াল ফ্লোর থেকে উঠাতে যাবো সেইমুহূর্তে উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,
– ওটা না,এটা দিয়ে মুঁছে দাও!
আমার শাড়ির আঁচল ধরে কথাটা বললেন!
আমি উনার হাত থেকে শাড়ির আঁচল ছাড়িয়ে উনার মাথা মুছতে মুছতে বললাম,
– এক-ই তো!
– উহু!মোটেও না!তোমার শাড়ির আঁচলে যেই পারফিউম আছে সেটা ওই টাওয়ালে 1%ও নেই!
কথাটা বলেই উনি আরো কাছে টেনে নিয়ে হাঁটুগেড়ে আমার সামনে বসে শাড়ির উপর দিয়েই পেটে একটা চুঁমু খেলেন!সাথে সাথেই আমি একইঞ্চি পিছিয়ে গেলাম!উনি তিনইঞ্চি কাছে টেনে নিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে কান পেতে বললেন,
– সোনামনিরা,শুনতে পাচ্ছো তোমাদের বাবাই-কে?
– পাগল হয়ে গেলেন নাকি?এখনো তো ও…..
– হয়েছে!আমি জানি…ওরা এতোদিনে যথেষ্ট বড় হয়েছে!
– ওরা,ওরা কেনো করছেন?কয়টা আছে ভিতরে?
– মেইবি তিন-চারটা!
– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্!!!দেখি ছাড়ুন….
উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ইয়াশের কাছে চলে এলাম!ইয়াশ এখনো ওঠে নি!আমি দ্রুত ইয়াশকে ডেকে তুলে ফ্রেশ করিয়ে রেডি করিয়ে দিলাম!ইয়াশকে ডাইনিং-এ পাঠিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং-এ চলে এলাম!তুলি ইয়াশের সামনে নাস্তা রেখে কিচেনে চলে গেলো।আমি তাড়াতাড়ি ইয়াশকে খাঁইয়ে দিলাম।উনাকে ডেকে বললাম,
– খেয়ে যান তাড়াতাড়ি!
উনি উল্টো আমাকে বললেন,
– রুমে নিয়ে আসো!আমার একদম সময় নেই!
ইয়াশকে খাওয়ানো শেষ করে ইয়াশকে ড্রইংরুমে ফোন দিয়ে বসিয়ে রেখে আমি ব্রেকফাস্ট নিয়ে রুমে চলে গেলাম!উনি টাই ঠিক করছিলেন!আমি পানির গ্লাস বেডসাইড টেবিলে রেখে উনার সামনে দাড়ালাম!উনি হাতে জেল ঘষে চুলগুলো পেছনের দিকে ব্রাশ করলেন!খাবার তুলে উনার মুখের সামনে ধরতেই উনি প্লেট-টা আমার হাত থেকে নিয়ে বেডে রেখে আমার চুলের ভেতর দুইহাত ঢুকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করে বসলেন!ছেড়ে দেওয়ার আগে ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে বললেন,
– ওই ব্রেকফাস্ট খাবো বলে রুমে ডেকেছি নাকি?বাট তোমার যদি ওইটাও খাওয়াতে ইচ্ছে করে খাওয়াতে পারো,প্রবলেম নেই!
বলেই উনি আমার হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
– হা করে না থেকে তাড়াতাড়ি শুরু করো লেইট হয়ে যাচ্ছে আমার!
.
.
(চলবে)