Real love পর্ব ৬৬

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 66
.
.
পরেরদিন সকালে আমি নাফিসাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।আব্বু বাসায় নেই,আম্মু একা।নাফিসারও সামনে পরীক্ষা।মলি আপু তো আমার কাছে আছেনই।শুধু শুধু নাফিসার থাকার দরকার কি?
সারাদিন মলি আপু আমার আশেপাশেই হাঁটাহাঁটি করেন।টুকটাক কথা বলা থেকে শুরু করে সবধরনের সাহায্য উনার কাছ থেকে পাচ্ছি।
রাতে ইয়াশকে মাঝখানে শুঁইয়ে দিয়ে দুজন দুপাশে শুঁয়ে পড়ি।আপু সারাক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হাসি-তামাশা,ভার্সিটি লাইফের বিভিন্ন ধরনের কুকীর্তি শেয়ার করে আমাকে সবসময় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন।একদম মনখারাপ হতে দিচ্ছেন না।অনিম ভাইয়া কিছু সময়ের জন্য এসে আবার চলে যাচ্ছেন।অনিম ভাইয়া একদিন হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন “আঙ্কেল এরকম হুটহাট কাজের প্রেশারে তিন-চারমাসের জন্য দেশের বাহিরে প্রায়ই যান!”অনিম ভাইয়া কথাটা বলার সাথে সাথেই জিভ কেটে বলেছিলেন “এইবার মনে হয় আঙ্কেল বেশিদিন থাকবে না,হিয়া!সম্ভবত এবার তাড়াতাড়িই চলে আসবে!”
সেদিন রাতেই উনাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম,”আপনি আসবেন কবে?”
উনি কিউট ভয়েস টোনে খুব সুন্দর করে আমাকে “টিয়াপাখি” ডেকে বলেছিলেন,”কাজ প্রায় কমপ্লিট!
কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাক করবো!”
আমি অনিম ভাইয়ার কথাটা বলতেই উনি বলেছিলেন,”এইবার এতো টাইম লাগবে না আব্বুর!আমি তো এবার সাথে থেকে হেল্প করছি!”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিন ফোন কেটে দিয়েছিলাম!
.
ইয়াশকে রাতে আগের নিয়মে আমিই পড়াই।শুধু পাশে উনি থাকেন না।উনি যখনই সময় পাচ্ছেন ফোন করে আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন।দিনের বেলায় বলতে গেলে সময়ই পান না।রাতে যা একটু সময় পান আমি প্রেগন্যান্ট বলে রাতজেগে কথা না বলে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে বলেন!প্রতিদিন সকালে উঠে ফোনটা আগে হাতে নেই।উনার “গুড মর্নিং মাই ডিয়ার টিয়াপাখি!” ম্যাসেজটা স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই আনমোনে ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুঁটে ওঠে!উনি বাংলাদেশের টাইম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে এইকাজটা করেন!আমি সাথে সাথেই রিপ্লেই দেই “গুড মর্নিং টুন-টুনিদের আব্বু!”
আমার ম্যাসেজ পাওয়ার সাথে সাথেই উনি বুঝে যান আমি ঘুম থেকে উঠেছি!সাথে সাথেই কল নয়তো ভিডিও কল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন!প্রতিদিন এভাবেই উনি আমার একাকিত্ব সকালের সঙ্গী হোন!একদিন তো ভুলে মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়েছিলো “এখন সকালের ব্রেকফাস্ট কিভাবে করেন?”
প্রতিত্ত্যুরে উনি হেসে বলেছিলেন “আমার টিয়াপাখির দুটো শাড়ি আমি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি!সেটা দিয়েই আমি আগের মতো সকালের আসল ব্রেকফাস্টটা সেড়ে ফেলি!দেন আব্বুর সাথে নকল ব্রেকফাস্ট করি!”কথাটা শোনামাত্রই চোখে জলের ভীড় জমেছিলো সেদিন!
মাঝখানে একটানা দুদিন উনি কথা বলতে পারেননি!কাজের প্রেশার অনেক!তিনদিনের মাথায় ফোন করে যখন ক্ষমা চেয়েছিলেন আমি কোনো কথা বলিনি!যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি ক্ষমা করেছি ততক্ষণই উনি আমার সাথে কানেক্ট ছিলেন।যেটা আটত্রিশ মিনিটের উপর চলে গিয়েছিলো!
.
দেড়মাসের মাথায় উনি বললেন,
– টিয়াপাখি!একটা কথা ছিলো,বলবো?
রাত দু’টার সময় উনি কল করে একটা কথা বলার জন্য পারমিশন চাচ্ছেন।আমি ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– রাত দু’টা বাঁজে!
– হুম জানি!
– গভীর ঘুমে নিমজ্জিত ছিলাম!
– সেটাও জানি!
– বাবুরাও ঘুমোচ্ছিলো!
– জানি!
– রাত দু’টোর সময় তাদের বাবা তাদের মা’কে কল করে একটা কথা বলার জন্য পারমিশন নিচ্ছে!তাদের বাবা কি কাজটা ঠিক করলো?
– খুশির খবর!তাই ভাবলাম গভীর রাতে স্পেশাল মানুষটাকে স্পেশালভাবে দেই!
আমি উঠে বসে বললাম,
– এইমুহূর্তে আমার কাছে খুশির খবর একটাই,সেটা হলো আপনার দেশে ফেরার খবর!
উনি কেঁশে বললেন,
– এখন যদি আমি বলি আমরা দেশে ব্যাক করছি!তুমি কি খুব খুশি হবে?
– কিহ্!!!
– ইয়েস!বাবুদের বাবাই আসছে!
– সত্যিই!!!
– …..
উনি চুপ!আমি বললাম,
– ফ্লাইট কখন?
– আমরা ফ্লাইটে!
আমি সাথে সাথেই মুখ চেঁপে নিজের ভেতর থেকে আসা আনন্দের চিৎকারটাকে কন্ট্রোল করে বললাম,
– তারমানে আজ!!!
– হুম!রাতের ঘুম হারাম করে দিলাম নাকি?
– একদম না!
উনি ফ্লাইটে আছেন বলে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারলেন না।কিছুক্ষণ কথা বলেই রেখে দিলেন।পাশে ইয়াশ ঘুমিয়ে ছিলো।ইয়াশের পাশে মলি আপু।আমি আস্তে করে বেড থেকে নেমে পা টিঁপে টিঁপে মলির আপুর কাছে যেয়ে ফিসফিস করে বললাম,
– আপু!ইফাজ আসছে!
আপ ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বললো,
– নড়েছে?নড়েছে?
আমি দ্রুত আপুর মুখ চেঁপে ধরে বললাম,
– ইয়াশ উঠে পড়বে,আস্তে!
আপু চোখ ঢলতে ঢলতে বললো,
– বেশি জোরে কিক মেরেছে?
– কেউ কোনো কিক মারে নি!ইফাজ ফ্লাইটে!উনি আসছেন!
আমার কথা শুনে আপু হাঁ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন!তারপর বললো,
– ওর না কয়েকদিন পর আসার কথা?
– হুম।
– তাহলে?
– জানিনা।
আপু কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– এতো রাতে তোমাকে জাগিয়ে খবরটা না দিলেই কি চলছিলো না?প্রেগন্যান্ট বউ,এমনিতেই এখন রাতে ঠিকঠাক ঘুমোতে পারে না তারউপর এইরকম একটা সারপ্রাইজ দিয়ে রাতের ঘুমটা নষ্ট করলো!আক্কেল বলতে কিছু নেই নাকি?
– আপু প্লিজ এভাবে বোকো না!কষ্ট পাই!
– হুহ্!কথাগুলো এমনি এমনি বলছি না!তোমাদের কাউকে নিয়ে আমার টেনশন না!আমার টেনশন তোমাদের বেবিকে নিয়ে!
– একটা রাতই তো!কিচ্ছু হবে না!
বলেই আমি কিচেনের দিকে পা বাড়ালাম।আপু দৌড়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
– কোথায় যাচ্ছো?
– কিচেনে।
– নো ওয়ে!এই অবস্থায় ওর জন্য স্পেশাল কিচ্ছু করতে হবে না।যাও শুঁয়ে পড়ো।
– আপু বেশি কিছু করবো না।যাস্ট মিষ্টিজাতীয় কিছু একটা করি,পাচঁমিনিট লাগবে!
– নো!নো!নো!
বলে আপু জোর করে আমাকে বেডে শুঁইয়ে দিয়ে বললেন,
– চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।বসে বসে আজরাত তোমাকে পাহারা দেবো।সো নো চালাকি!
– বেশি টাইম লাগবে না!প্লিজ?
– উফ্,হিয়া!আর একটা কথা বললে দেখো কি করি!চোখ বন্ধ করো!
আমি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করলাম।আমি শিওর আমি এখন কিচ্ছু করতে পারবো না।কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে একবার চোখ খুলে দেখলাম আপু কি করে?আপু সেভাবেই দাড়িয়ে আছে।চোখ রাঙ্গিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম।কিছুতেই ঘুম আসবে না আজরাতে!আপু পাশে বসে মাথায় হাত বুলানো শুরু করলো।ওহ্ মাই গড!প্লিজ আপু,হাতটা সড়িয়ে নাও!আমার ঘুম চলে আসবে!আমি ঘুমোতে চাই না!প্লিজ!
আপু আরো নিবিড়ভাবে হাত বুলানো শুরু করলো।আমি এইমুহূর্তে মোটেও ঘুমোতে চাচ্ছি না।
.
গরম নিশ্বাস আমার গালে পড়ছে!আমার পুরো দেহ বেধে রাখা।হাত-পা নাড়াতে পারছি না।নিশ্চয় আপুর কাজ।আমি জোরে একটা চিৎকার দিয়ে একঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলাম।আমার পায়ের উপর হাফপ্যান্টওয়ালা লম্বা একটা পা!আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে পাশফিরে বললাম “ইয়াশশশ!”
চোখের পলক ফেলার আগেই ইফাজ একটানে আমাকে শুঁইয়ে দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে বললেন,
– টিয়াপাখি!ইয়াশ মলির সাথে স্কুলে চলে গিয়েছে!
আমি সারাশরীর কেঁপে উঠলো!চোখদুটো ঝাঁপসা হয়ে এলো!আমি কাঁপাহাতে উনার গালে হাত রাখলাম!উনি কিউট একটা হাসি দিলেন!অন্যহাত উনার বুকের ঠিক মাঝখানটায় রাখলাম!উনি খালি গায়ে,উনার বুকের ভেতর কাঁপছে!প্রচন্ড জোরে জোরে কাঁপছে!আমি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম!ঘোর লেগে যাচ্ছে!উনি আমার কপালে চুঁমু খেয়ে ফিসফিস করে বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুঁম!
আমি কম্পিত কন্ঠে জবাব দিলাম!উনি আরেকটা চুঁমু দিয়ে বললেন,
– এটা কি পরেছো?
আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম! একচোখের পানি অন্যচোখের পাতার উপর দিয়ে দুইচোখের পানি মিলিত হয়ে গড়িয়ে উনার বাহুর উপর পড়লো!উনি চোখের পানি মুঁছে দিলেন!আমি চোখ নামিয়ে বললাম,
– মেক্সি!
– আমি রুমে ঢুকে যখন এই লুকে আমার ঘুমন্ত পরীকে দেখলাম….ওহ্ মাই গড!!!নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনি!মলি আর ইয়াশকে অন্যরুমে পাঠিয়ে দিয়ে কোনোরকমে শাওয়ার নিয়ে সেই যে বিসমিল্লাহ্ বলে জাপটে ধরে শুয়েছিলাম,আর ছাড়ার নাম নেই নি!তুমি তো দেখলাম খুব আরাম পেয়েছিলে!কি সুন্দর গুঁটিশুঁটি মেরে বাবু হয়ে এইবুকের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলে,মাই গড্….মনে হলো কতদিন আমার টিয়াপাখিটা তৃষ্ণার্ত ছিলো!!!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here