# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part: 21
.
.
ইফাজ ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই কোনোরকমে আমি বেড থেকে উনার ফোনসহ চলে আসি।সরাসরি আম্মুর কাছে এসে ফোনটা আম্মুর হাতে ধরিয়ে দিয়েই আমি ওখান থেকে রুমে চলে আসি।নাফিসাকে রুমে দেখলাম না।হয়তোবা স্কুলে চলে গিয়েছে।ভালোই হলো।
.
আমি রুমের দরজা লাগিয়ে আলমারি থেকে কম্বল বের করে বিছানায় যেয়ে সরাসরি কম্বলের নিচে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরলাম।এখনও আমার হাত পা কাপঁছে!শরীরও কাপঁছে!বুকের ভেতর ধুকধুক করছে!কেনো এমন করেন উনি!এক এক সময় এক এক স্টেপে আমার সাথে হার্টবিট কাঁপানো রোম্যান্স না করে কি উনি থাকতে পারেন না?ঘড়ির টাইম ধরে পাক্কা পাচঁমিনিট উনি আমাকে আটকে রেখেছিলেন!একমিনিট আগেও ছাড়েন নি!বজ্জাত একটা!আন্টির কথা খুব মনে পড়ছে!আন্টি তুমি তোমার ছেলেকে ঠিক চিনেছো!আসলেই তোমার ছেলে একটা বজ্জাত!বজ্জাত না বজ্জাতের ওস্তাদ!পাচঁমিনিটে উনি ত্রিশবারের মতো আমার পেটে আঙ্গুল দিয়ে উনার নাম লিখেছেন!সাথে তো চুমো ফ্রি!এখনো যে আমি বেচেঁ আছি এটা আমার ভাগ্য!
.
চুপচাপ কম্বলের নিচে শুয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।আর হাতের সাথে হাত ঘষে নিজেকে নরমাল করার চেষ্টা করছি!
.
হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে কম্বলের ভেতর থেকেই জিঙ্গেস করলাম,
– কে?
– কে যেনো কল দিয়েছে!ইফাজকে ফোনটা দিয়ে আয়!
উফ্!যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়!
এবার উনার কাছে গেলে উনি নির্ঘাত একঘন্টার কথা বলে একঘন্টা ই আমাকে আটকে রেখে উনার সেই বিশ্ববিখ্যাত রোম্যান্স শুরু করবেন!
.
আমি কম্বলের নিচ থেকেই আম্মুকে বললাম,
– তুমি দিয়ে আসো!আমি পারবো না!
আম্মুর আর কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না!হয়তোবা চলে গেছে!
.
আমি কম্বলটা সড়িয়ে উঠে বসলাম।নাফিসার ফোনটা টেবিলের উপর রাখা ছিলো।উঠে ফোনটা নিয়ে বালিশের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পরলাম।নাফিসার আইডি আগে থেকেই লগইন করা ছিলো।ওর আইডিতে ঢুকে নটিফিকেশন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম!
.
হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে একজনের ম্যাসেজ আসায় টুং করে শব্দ হলো!ম্যাসেজ ওপেন করেই দেখলাম “কি করো,বউ?”
ম্যাসেজটা দেখার সাথে সাথেই লাফ দিয়ে উঠে বসলাম!নিক নেইম জিজু দেওয়া!চোখ বড় বড় করে ম্যাসেজটা কয়েকবার দেখে নিলাম!ঠিক দেখছি তো!হ্যা,এইটা ইফাজ!উনি পাঠিয়েছেন ম্যাসেজটা!কিন্তু উনি জানলো কিভাবে এটা নাফিসা না আমি!
.
আমি কাঁপাকাঁপা হাতে ম্যাসেজটা ডিলেট করে ফোনের পাওয়ার অফ করে টেবিলে রেখে দিলাম!ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আটটা পনেরো বাজে!
.
হঠাৎ দরজার কে যেনো নক করলো!আমি দরজা খুলে দেখলাম আম্মু দাড়িয়ে আছে!আমাকে দেখেই আম্মু হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করলো!আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কি হয়েছে?এভাবে টানছো কেনো?
– ইফাজকে ডেকে আন!ডাইনিং এ সব রেডি!
কথাটা শুনেই মনের মধ্যে ভয় চলে আসলো।কিন্তু আম্মুকে বুঝতে দিলাম না।চেহারায় কিছুটা বিরক্ত ভাব ফুটিয়ে তুলে বললাম,
– একটু আগেই তো গিয়েছিলে ফোনটা ফেরত দিতে।তখন খেতে আসার কথা বলো নি কেনো?
– বলেছিলাম তো!কিন্তু বললো একটু পর আসছে!খাবার তো এদিকে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।তুই একটু জোর করে নিয়ে আয়!
আম্মুর লাস্ট কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মনে মনে বললাম”হাহ্!আমি করবো জোর!তাও আবার উনাকে!”
.
– কি হলো যা!
– হুম!
– তাড়াতাড়ি!
আম্মু কিচেনে চলে গেলো!আমি পাচঁমিনিট ওখানেই দাড়িয়ে ছিলাম!বুকে থুথু দিয়ে এক কদম দুই কদম করে উনার রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম!দরজা একটু খোলা!আমি হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে পুরোটুকু খুলে ফেললাম!উনি ফোনটা চার্জে দিচ্ছিলেন।দরজা খোলার শব্দে উনি দরজার দিকে তাকাতেই আমার উপর চোখ পরলো!ফোনটা রেখে উনি আমার কাছে আসতেই আমি বলে উঠলাম,
– ব্রেকফাস্ট করবেন,চলুন!আম্মু ওয়েট করছে!আপনাকে নিয়ে যেতে বললো।
ইফাজ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বললেন,
– হুম!
– কি হুম?আম্মু এখনই যেতে বললো!চলুন!কাজ থাকলে পরে করবেন!এখন চলুন!
আমার কথা শুনে উনি যেই একহাত দূরে দাড়িয়ে ছিলেন সেটা একইঞ্চিতে কমিয়ে আনলেন!সাথে সাথে আমার শরীরের সেই অদৃশ্য কাঁপুনি বৃদ্ধি পেলো!আমি নিচের দিকে তাকিয়ে শক্ত করে দুইহাত দিয়ে ওড়না চেপে ধরলাম!
.
হঠাৎ উনি উনার একপা দিয়ে আমার একপা স্পর্শ করতেই মনে হলো আমি পায়ে কিছু একটার সাথে শক খেলাম!আমি পা টা সড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি শক্ত করে চেপে ধরলেন!
.
উনি ডানপকেট থেকে ডানহাতটা বের করতেই আমি ভয়ে উনার পকেটে রাখা বামহাতসহ ডানহাতটা চেপে ধরলাম!আমি জানি উনার হাতদুটো একসেকেন্ড ও ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই!তারপরও চেষ্টা করলাম!
উনি হাতদুটো ছাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করছেন না!আমি তো উনার এরকম নিরবতা দেখে ভয়ে শেষ!নিশ্চয় অন্যকোনো মতলব আছে!
.
আমি ভয়ে চোখ তুলে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি হাসছেন!উনার মুখে হাসিটা দেখে কিছুটা হলেও বুকে সাহস পেলাম!এখন উনাকে জোর করলেও জোর করা যায় উনি কিছু করবেন না!আমি উনার পায়ের নিচ থেকে আমার পা টা সড়িয়ে উনার বামহাত ছেড়ে দিয়ে ডানহাত ধরে ডাইনিং এ নিয়ে আসলাম!চেয়ার টেনে উনাকে বসিয়ে আমি রুমে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই উনি আমার হাত খোঁপ করে ধরে ফেললেন!উনার পাশের চেয়ার টেনে বললেন,
– তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো?বসো!
– আপনি খেয়ে উঠুন!আমি পরে খাবো!
– উহুম!পরে না!এখনই খাবে,বসো!
– ওকে!হাতটা ছাড়ুন!আম্মু চলে আসবে!
– আগে বসো!
আমি চুপচাপ চেয়ারটা অন্যহাত দিয়ে আর একটু টেনে বসে পরলাম!
.
– কি হলো!বসলাম তো!আম্মু চলে আসবে,ছাড়ুন!
হঠাৎ উনি আমার হাতটা টেনে হাতের উল্টোপিঠে একটা চুমো দিয়ে ছেড়ে দিলেন!আমি চোখ বড় বড় করে একবার উনাকে দেখছি একবার আম্মু দেখে ফেললো কিনা সেটা দেখছি!
.
কিছুক্ষন পরই আম্মু হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বের হলো।আম্মুকে দেখামাত্রই আমি খাবার বাড়তে শুরু করলাম!উনার প্লেটে ভাত দিলাম!আম্মু তরকারি দিলো!ভাতের থেকে তরকারি বেশি হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে!আমি আরো একচামচ ভাত উঠিয়ে উনার প্লেটে দেওয়ার আগেই উনি আমার হাত চেপে ধরে বললেন,
– কি করছো?অলরেডি অনেক দিয়ে ফেলেছো!আমাকে এতো না দিয়ে নিজে একটু বেশি বেশি করে খাও!
উফ্!আম্মুর সামনে কথাটা না বললেই কি চলতো না উনার?
উনার কথা শুনে আম্মুও উনার সাথে তালমিলিয়ে বলতে শুরু করলেন,
– এভাবে বলে কোনো কাজ হবে না,ইফাজ!ওকে বেত দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে খাওয়াতে হবে!
– হুম,আন্টি!এখন থেকে সেটাই করতে হবে।আমি অর্ডার দিয়ে একটা বেত বানানোর ব্যবস্থা করছি!
উনার কথা শুনে আমি হা হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!আমার জন্য বেত অর্ডার দিবেন?বেত দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে খাওয়াবেন?
হুহ্!আমার প্রতি এতোটা নির্মম উনি জীবনেও হবেন না!
আমি খেতে শুরু করলাম।
.
উনি খেতে খেতে বললেন,
– আন্টি, আঙ্কেল কোথায়?
– বাসায় নেই।সকালেই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেছে।
– ওহ্!
.
আম্মু গ্লাসে পানি ঢেলে ইফাজের দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে কিচেনে চলে গেলো।আমি খাওয়া বাদ দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি সত্যি সত্যি বেত অর্ডার দিবেন নাকি?
– কেনো?ভয় পাচ্ছো?
– ভয় পাওয়ার কি আছে?
– তাহলে এভাবে ভীতুস্বরে কথা বলছো কেনো?
উনার কথা শুনে আমি গলার স্বর স্বাভাবিক করে বললাম,
– মোটেও আমি ভীতুস্বরে কথা বলছি না।আমি ওতোটাও ভীতু না!
– হুম!জানি!
– কি জানেন?
– তুমি যে ভীতু না সেটা জানি!
উনার কথা শুনে আমি কাদো কাদো স্বরে চোখ নামিয়ে বললাম,
– আপনি জানেন আমি ঠিক কতটা ভীতু!শুধু শুধু না জানার ভান করছেন কেনো?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি!তোমাকে না মেরে কিভাবে খাওয়াতে হয় সেটা আমি খুব ভালোভাবেই জানি!টেনশন নিয়ো না!নিজের বউকে টর্চার করার মতো হাজবেন্ড আমি না!
আমি উনার কথা শুনে দৃঢ়চিত্তে বলে উঠলাম,
– শুনুন,আপনি যত যাই করেন না কেনো,আমার খাওয়া বাড়বে না!
– ওহ্,রিয়েলি?
– হুম!
– ওকে!
– কি ওকে?
– পরে বলি!আগে খাওয়া শেষ করো!
.
আমি আর খেলাম না।সরাসরি হাত ধুয়ে রুমে চলে আসলাম।কম্বলটা ভাজঁ করে আলমারিতে রেখে শুয়ে পরলাম।রাতে মাত্র তিনঘন্টা ঘুমিয়ে ছিলাম।একটু শুয়ে থাকলে চোখে ঘুম আপনাআপনিই চলে আসবে।আমি বালিশে মুখ গুজেঁ উপুড় হয়ে শুয়ে পরলাম।
.
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আমার মনে হলো আমার পায়ে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে!কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলাম!সুড়সুড়ি দেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে!আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না!এই কাজ উনার ছাড়া আর কারোরই নয়!
.
ভয়ে আমি তড়িঘড়ি করে উঠে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি খাবার প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছেন!উনি প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– শুরু করো!
আমি প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্লেটপুরো ভর্তি করে খাবার এনেছেন!উনি যেহেতু এনেছেন আমাকে আজ সব পেটের ভেতর ঢুকিয়েই ছাড়বেন!আজ নির্ঘাত আমাকে বমি করতেই হবে!আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কার জন্য?
– তোমার জন্য!
– মাত্রই তো খেয়ে আসলাম!
– তুমি নিজেও জানো তুমি কি খেয়েছো!বেশি কথা না বলে চুপচাপ শুরু করো!
– আমার ক্ষুধা নে…..ওকে ওকে খাচ্ছি!
“নেই” বলার আগেই উনি চোখ রাঙ্গিয়ে কাছে চলে আসলেন!উফ্…..খাবার দেখেই বমি বমি ভাব শুরু হয়েছে!
.
আমি ঠিক পাচঁ লোকমা মুখে দিয়েই আর দেওয়া সম্ভব হলো না!আমি এক নিশ্বাসে বলে দিলাম,
– আর সম্ভব না!
– ….
– প্লিজ!
– নাও হা করো!
– আমার বমি বমি লাগছে!বমি করে দিবো এখন!
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
– আমি তো এখনও শুরুই করলাম না টিয়াপাখি!তার আগেই তোমার এরকম খাওয়ার প্রতি অনীহা আর বমি বমি ভাব আমার কিন্তু সুবিধার মনে হচ্ছে না।আশেপাশে কোনো হসপিটাল আছে নাকি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।চেকআপ করাতে নিয়ে যাবো!
– কিহ্!
.
.
(চলবে)