real love পর্ব ৩৮

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
#Part_38
.
.
উনি এঁটো হাত দিয়েই শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন!
– উফ্…মরে গেলাম!আস্তে ধরুন!
– ইশ্!টিয়াপাখি…এইমুহূর্তে তোমাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে!
– অসম্ভব!!!দেখি…ছাড়ুন!
– উহু!
– আহ্!দম নিতে পারছি না!
– তুমি আবার শাড়িতে এইসব সুঁই লাগিয়েছো?কালরাতেই না মানা করেছি এইসব সুঁইপিন না লাগাতে!রাতে দেখলে না এইসব হাঁবিজাঁবি খুলতেই আমার একঘন্টা লেগে গিয়েছিলো!
– আপনি এখন পিন খোলার জন্য কেনো উঁঠেপড়ে লেগেছেন?আমি নিচে যাবো!ছাড়ুননন….
– হুশ্!
বলেই উনি শাড়ির পিনটা খুলেই জোর করে আমার ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলেন!
.
.
সাড়ে বারোটার দিকে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নামতেই দেখলাম রিলেটিভস্ সবাই এসে গেছে!আমার দিকে সবার নজর পরতেই কাজিনগুলো এসে একে একে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– বাব্বাহ্!আপির তো দেখি একদিনেই গ্ল্যামার একশোগুন বেড়ে গিয়েছে!উম্মম… সব ভাইয়ার কাঁরসাজি,রাইট?
– মুখে লাগাম লাগা অসভ্যগুলো!
.
নাফিসা ওদের কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেই কান্না করে দিলো!আমি নাফিসার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
– কাঁদছিস কেনো?
– রাতে একা একা শুঁতে হয় আমাকে!গল্প করতে পারি না!শত শত কথা পেটের ভেতর আটকে রাখি!তুমি জানোই তো আমার পেট কত পাতলা!আজ বাসায় যেয়ে আমার সাথে ঘুমাবে,হুম!
– পাগলি!উনাকে রাজি করাতে পারলে আমার কোনো আপত্তি নেই!
– ভাইয়া কই?সেই কখন দেখেছিলাম!একবার দেখা করেই লে পাত্তা!
.
নাফিসার কথা শুনে আমি একটু কেঁশে বললাম,
– এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলো!মাত্রই উঠে রেডি হচ্ছে!চল তোরা….বসে কথা বলি!
মিম বললো,
– আপু!চাচ্চু তোমাকে আর ভাইয়াকে আজ তোমাদের বাংলোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে!কিন্তু আমরা চাই তুমি আজ রাতে ভাইয়াকে নিয়ে দাদুর ফ্লাটে থাকো!তাহলে আমরা একটু গল্প করতে পারবো!ফ্লাটটা পুরো ফাঁকা পড়ে আছে!আমরা অন্নেক সুন্দর করে পুরো ফ্লাট সাঁজিয়েছি!শুধুমাত্র তোমাদের জন্য!প্লিজ….তুমি একটু চাচ্চুকে বুঝিয়ে বলো!
– আচ্ছা!ঠিক আছে!
.
আমি ওদের বসিয়ে রেখে কিচেনে আসলাম!মনি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলাম না!
– মনি,আন্টি কোথায়?
– মাত্রই রুমে গেলো!এতক্ষণ আপনেরে খুজতেছিলো!আমাকে ডাকতে পাঠাইছিলো,যহন দেখলাম ভাইয়ের রুমের দরজা লাগানো অমনি চইলা আইছি!
মনির কথা শুনে আমি দ্রুত কিচেন থেকে বের হলাম।ভাবলেশহীনভাবে একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলো!কোথায় কি বলতে হয় কিচ্ছু জানেনা!
.
আন্টির রুমে ঢুকেই দেখলাম আন্টি টাওয়াল দিয়ে চুল মুচছেন!মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হলো মনে হয়।আঙ্কেল আলমারিতে কিছু একটা খুঁজছেন।
আন্টি আমাকে দেখতে পেয়েই বললেন,
– ওইতো হিয়া মা এসে গেছে।তুমি যেনো কি বলতে চেয়েছিলে,বলো।
আঙ্কেল আলমারি লাগিয়ে আমাকে বেডে বসিয়ে নিজে পাশে বসে বললেন,
– কথাগুলো পরেও বলা যেতো।কিন্তু সময় বলেও একটা ব্যাপার আছে!আমি খুবই ব্যস্ত মানুষ!বাড়িতে থাকার সময়টুকুও পাই না!আসলে ডেকেছিলাম…তোমার স্টাডির ব্যাপারে কিছু কথা বলবো বলে!
.
আঙ্কেলের কথাটা শুনেই আমার মাথায় বাঁজ পরলো!এখানেও পড়াশোনা!আঙ্কেল আবার আব্বুর মতোই পড়াশোনার ব্যাপারে স্ট্রিক্ট নয়তো!ওহ্ মাই গড!!!
.
আঙ্কেল আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
– আমি যেমন ভালো মানুষ তেমনি কিন্তু খুব রাগী!স্টাডি নিয়ে ফাঁকি দেওয়া আমি একদম সহ্য করবো না!আমার স্বপ্ন আমার দুইছেলের বউ-ই হায়ার এডুকেটেড হবে!ইয়াশের অত্যাচারে আমরা প্রায় বিরক্ত হয়ে পরেছিলাম যার জন্য এতো তাড়াতাড়ি তোমাকে এ-বাড়িতে নিয়ে আসা!এরমানে এই নয় যে তুমি ফ্রিলি স্টাডি অফ দিয়ে ঘুরে বেরাবে!আমি…..
ইয়াশ ভাবি বলে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে পরলো!আঙ্কেল আর কিছু বলতে পারলেন না!আন্টি বললেন,
– আসছে….তোমার ছোট ছেলে!
আঙ্কেল আর কিছু না বলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে চুপচাপ উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন!আন্টি রুম থেকে চলে যেতে যেতে বললেন,
– সামলাও এখন একে!
.
ইয়াশ তিনটা চিপস্ এর প্যাকেট বুকের সাথে চেঁপে ধরে আছে!আমি চিপস্ গুলো পাশে রেখে ইয়াশের দুইহাত ধরে টেনে কাছে এনে বললাম,
– কি হয়েছে সোনাটার?
ইয়াশ আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
– সিঁড়ি দিয়ে যখন উঠছিলাম ভাইয়া তখন নিচে নামছিলো!আমাকে দেখেই ভাইয়া আমার থেকে একটা চিপস্ নিয়ে সাথে সাথেই ছিঁড়ে খেতে শুরু করলো!আর নিচের ওই আপুগুলো আমাকে দেখেলেই শুধু বলে ওঠে “ইয়াশ! আমি তোমাকে বিয়ে করবো!”
.
ইয়াশের কথা শুনে আমার প্রচুর হাসি পেলো!কিন্তু হাসলাম না!হাসি আটকে রেখে বললাম,
– আপুগুলো তো খুব পঁচা!ছিঃ ছিঃ…..এতো পিচ্চি একটা ছেলেকে বিয়ে করতে চায়!
ইয়াশ একটা চিপস্ পাশ থেকে নিয়ে বললো,
– খুলে দাও!
আমি চিপস্ এর প্যাকেটটা খুলে দিয়ে বললাম,
– ইয়াশ,আজ আমার সাথে একটা জায়গায় যাবে?
– কোথায়?
– আমাদের বাসায়!
– হুম যাবো!হা করো…
ইয়াশ একটা চিপস্ আমাকে খাইয়ে দিলো!
.
হঠাৎ উনি রুমে ঢুকলেন!নেভি-ব্লু কালার শার্ট ইন করে পরেছেন!একেবারেই ফরমাল লুক!
শার্টের হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে বললেন,
– রিপন এক্সিডেন্ট করেছে!হসপিটালে এডমিট!আমি দেখতে যাচ্ছি!তুমি ওদের সাথে চলে যেয়ো!আমি হসপিটাল থেকে সরাসরি তোমাদের বাসায় চলে যাবো!
.
কথাটা বলেই উনি আমার আর ইয়াশের কপালে একটা করে চুমো দিয়ে বেরিয়ে গেলেন!
ইয়াশ বললো,
– ভাবি…
– হুম!
– রিপন কে?
– তোমার ভাইয়ার ফ্রেন্ড হবে হয়তো!
– ওহ্!
.
.
পাঁচটার দিকে আমরা রওনা দিলাম আমাদের বাসার উদ্দেশ্যে!বাহির
ে মাগরিবের আজান দিচ্ছে!
বাসায় পৌছতে প্রায় আধাঘন্টা লেগে গেলো!এ্যাপার্টমেন্টের একেবারে সামনে মাইক্রো থামানো হলো!ইয়াশকে নিয়ে নেমে আমি আগে আগে হাঁটতে লাগলাম!আব্বু বোনদের নিয়ে পেছন পেছন আসছে!
.
বাসার সামনে এসে কলিংবেল চাঁপতে হলো না!মেইনডোর হাট করে খোলা!মেইনডোর ভেদ করে বাসার ড্রইংরুমে ঢুকতেই দেখলাম আম্মু তিনচাচির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে!আমাদের দিকে আম্মুর নজর পরতেই আম্মু একপ্রকার দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো!
কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর ছেড়ে দিয়ে বললো,
– কত্ত বড় হয়ে গেছিস মা!
– এ্যাহ্…..বললেই হলো!একদিনে মানুষ কখনো বড় হয় নাকি?
আমার কথা শুনে আম্মু হেসে আমার থুতনীতে চুমো খেয়ে বললো,
– ইফাজ কই?
– উনি সাতটা-আটটার দিকে আসবেন!উনার এক ফ্রেন্ড হসপিটালে ভর্তি!তাকে দেখতে হসপিটালে গেছেন!
– ওহ্!
ছোট চাচি কাছে এসেই ইয়াশকে কোলে তুলে নিলো!একে একে সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো!
.
আমি সোফায় বসতেই ইয়াশ জোর করে ছোট চাচির কোল থেকে নেমে আমার পাশে এসে একদম ঘেষে বসলো!
মেজো চাচি জিজ্ঞেস করলেন,
– হিয়া,ওরা সব কই?
– আসছে!লিফ্টে মনে হয়!
– ওহ্।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আব্বু,চাচ্চু,ফু
প্পি,কাজিনগুলো সবাই একসাথে বাসায় ঢুকলো!আমি আর ইয়াশ আস্তে করে কেটে পরলাম!এখন এখানে মাছের বাজার বসবে!
.
.
আমি রুমে এসে ইয়াশকে বেডের উপর বসিয়ে বললাম,
– আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি,হুম?
– আচ্ছা!
আমি ইয়াশকে আমার ফোনটা দিয়ে আলমারি থেকে একটা লং-কামিজ বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম!
.
শাড়িটা চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দেখলাম বেডের উপর ইয়াশকে ঘিরে কাজিনগুলো বসে আছে!আপু ইয়াশকে কোলে নিয়ে আছে!আমি শাড়ি সোফায় রেখে ওদেরকে সরিয়ে বেডের একদম মাঝখানে বসে পরলাম!ইয়াশ লাফ দিয়ে এসে আমার কোলে বসলো!
আমি আঙ্গুল দেখিয়ে সবগুলোকে রুম থেকে বের হতে বললাম!সাথে এও বলে দিলাম “তিনঘন্টার ভেতর যেনো আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করতে না আসে!আমি এখন ঘুমাবো!”
আমার কথা শুনে আপু বলে উঠলো,
– তোর তো এই রুমে থাকা চলবে না!আমরা সবাই মিলে কি সুন্দর করে ওই ফ্লাটটা সাজালাম!চল…চল…এখানে আর এক মুহূর্তও না!
.
সবগুলো জোর করে দাদুর ফ্লাটে নিয়ে এলো!আমি পুরো ফ্লাটে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম!কোনো ফার্নিচার নেই!ড্রইংরুমে শুধু সোফা রাখা!চারপাশে ডিফারেন্ট কালারের গোলাপ লাইন করে ঝুলিয়ে রাখা!ফ্লোরে গোলাপের পাঁপড়ি ছড়িয়ে আছে!বেডরুমে ঢুকেও সেই একই সাঁজ দেখতে পেলাম!
.
.
ওরা আমাকে রুমে রেখে চলে গেলো!আমি ইয়াশকে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে পাশে আমি শুয়ে পরলাম!ইয়াশের মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম!ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ভাবি…
– হুম!
– জানো,কয়েকদিন পর আমাদের বাড়িতে নতুন বাবু আসবে!
– মানে?
– তুমি আসার আগেরদিন রাতে আমি ভাইয়ার কাছে শুয়ে ছিলাম!ভাইয়া ওইদিন বলেছিলো আমাদের বাড়িতে নাকি কয়েকদিন পর মাহিনের মতো আরেকটা বাবু আসবে!
ইয়াশের কথা শুনে আমি চঁমকে উঠলাম!
ইয়াশ আবার বলতে শুরু করলো,
– ভাইয়া ওইদিন আমাকে অনেক আদর করেছিলো!তোমার মতো মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলো!
ইয়াশের কথাগুলো শুনে আমি ইয়াশের কঁপালে দুটো চুমো দিয়ে ডিভলি জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here