#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 49
.
.
ইয়াশ হাতে চকলেট বক্স নিয়ে রুমে ঢুকে বক্সটা আমার পাশে রেখে বেডের উপর থেকে একটা বালিশ নিয়ে এলোপাথারি ইফাজকে মারতে শুরু করলো।উনি এমনভাব করছেন দেখে মনে হচ্ছে অনেক ব্যাথা পাচ্ছেন।আসলে উনি বিন্দু পরিমানও ব্যাথা পাচ্ছেন না।আমি চুপচাপ দু’জনের কান্ড দেখছি।উনি ইয়াশকে থামতে বললেন।ইয়াশ থামলো না।ইয়াশ রেগে বললো,
– তখন বললে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাবিকে পাঠিয়ে দিবে।একঘন্টা হয়ে গেলো তুমি পাঠাও নি।কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে ভাবিকে?একটু আগে রুমে এসে কাউকে যে দেখতে পেলাম না।
– তোমার ভাবি ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলো দেখো কি অবস্থা হয়েছে!
ইয়াশ এতক্ষণে আমার দিকে ভালোভাবে তাকালো।ইয়াশ বালিশ ঢিল মেরে ফেলে দিয়ে আমার কাছে এসে বললো,
– এটা কেনো পরেছো?
আমি ইয়াশকে কোলে বসিয়ে বললাম,
– ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলাম।শাড়ি একেবারে ভিঁজে গিয়েছিলো।তোমার ভাইয়ার শার্ট-প্যান্ট ওয়াশরুমে আগে থেকেই রাখাছিলো,তাই সেগুলো পরেই বেরিয়ে এসেছি!
ইয়াশ খিলখিল করে হাঁসছে।হাসতে হাসতে বললো,
– তোমাকে কেমন কেমন যেনো লাগছে!ভাইয়া-ভাইয়া টাইপ!
বলেই ইয়াশ বেড থেকে নেমে আমার হাত টেনে বললো,
– আম্মুর রুমে চলো!আম্মুকে দেখাবো!
ইয়াশের কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে কেঁশে উঠলাম।ইফাজ ইয়াশকে একপ্রকার জোর করে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।যাওয়ার সময় ইশারায় আমাকে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিতে বললো!ইয়াশ একবার কিছু মুখ দিয়ে বের করলে সেটা করেই ছাড়ে!উনি সেই ভয়েই হয়তোবা এভাবে জোর করে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন!
.
রাতের দিকে আমি কিচেনে আন্টিকে হেল্প করছিলাম!উনি ডাইনিং-এ বসে ইয়াশের সাথে ইয়াশের ফ্রেন্ডের নিয়ে গল্প করছে।
.
আন্টি আঙ্কেলকে ডাকতে উপরে চলে গেলো!মনি কিচেন থেকে তরকারি নিয়ে ডাইনিং-এ রেখে আসলো।আমি হাত মুছে ইয়াশের পাশের চেয়ারে বসে পরলাম।উনি আমার অপজিট চেয়ারে বসা।আন্টি আঙ্কেল দুজনে ডাইনিং-এ এসে চেয়ার টেনে বসলেন।মনি কিচেন থেকে দু’টো দুধের গ্লাস আনলো।একটা গ্লাস আমার সামনে রাখলো আরেকটা ইয়াশের সামনে।মনি আন্টির পাশে বসলো।এই দুধ জিনিসটা দেখলেই মুখ তেঁতো হয়ে যায়।প্রতিটা দিন এই জিনিসটা খেতে হয়।
.
ডিনার শেষে রুমে এসে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে শুঁয়ে পরলাম।কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল-ই করি নি।উনার ডাকে মিটমিট করে চোখ খুলে তাকাতেই উনি বললেন,
– কাল যেই পেনড্রাইভ-টা দিয়েছিলাম কোথায় রেখেছো সেটা?
আমি ঘুম চোখে উঠে হেলেদুলে আলমারি থেকে পেনড্রাইভ-টা বের করে দিলাম।উনি পেনড্রাইভ-টা নিয়ে বেডের উপর লেপটপ নিয়ে বসে পরলেন।এখন নিশ্চয় মধ্যরাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করবেন।আমি চুপচাপ শুঁয়ে পরলাম।কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে দিয়েছেন উনি।আর ঘুম আসছে না।উনাকে কিক মেরে এইমুহূর্তে অফিসে পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে!কি দরকার ছিলো আমার ঘুমটা ভাঙ্গানোর।একটু খুঁজলেই পেনড্রাইভটা পেয়ে যেতো।বিরক্তিকর….
ইদানিং বেশি ঘুম পায়।শোয়ামাত্রই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাই।কিন্তু এইমুহূর্তে আর ঘুম আসছে না।তবুও চোখ বন্ধ করে রাখলাম।অনেকক্ষণ হয়ে গেলো।তারপরও যখন ঘুম এলো না আমি সরাসরি উঠে উনার লেপটপটা ঠাস্ করে বন্ধ করে দিলাম।উনি চমকে উঠলেন!চোখ বড় বড় করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি! আর ইউ ওকে?আবার কোনো দুঃস্বপ্ন দেখলে নাকি?
আমি উনার কলার চেঁপে ধরে বললাম,
– আমার কাঁচাঘুম এভাবে নষ্ট করলেন কেনো?আমার আর ঘুম আসছে না!কিন্তু এইমুহূর্তে আমি ঘুমাতে চাই!যেভাবেই হোক আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিন।
– ওহ্!এই কথা!দেখি শুঁয়ে পড়ো আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি!
উনার কথা শুনে আমি উনার কলার ছেড়ে শুঁয়ে পরলাম।উনি লেপটপটা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।কঁপালে একটা চুঁমু দিয়ে বললেন,
– সরি!
আমি কোনো কথা বললাম না।উনি আবার বললেন,
– সরি!
আমি উনার বুকে চুঁমু দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম “ইট’স ওকে!”
আমার কান্ড দেখে উনি আমাকে আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!
.
.
সকালে উঠে রুমের সবকিছু ঠিকঠাক করে গুঁছিয়ে রাখছিলাম আর গুনগুন করে গান গাচ্ছিলাম!
আসবে আমার ঘরে
আমার ছোট্ট সোনা;
ভরিয়ে দেবে খুশীর আলোয়
তার জোছনা;
আসবে আমার ঘরে…..
.
– কে আসবে?
আমি চঁমকে উঠে পেছনে তাকালাম!উনি টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে কথাটা বললেন!আমি বুকে থুঁথুঁ দিয়ে বললাম,
– কে আসবে?
– আমি কিভাবে বলবো?তুমিই তো মাত্র বললে!
– কই?আমি ওরকম কিছুই বলি নি!ছড়া পরছিলাম!
আমার কথা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– সিরিয়াসলি!!!
– হুম…
– আমাকে শোনাও তো একটা!
আমি জানতাম উনি এখন এই কথাটাই বলবে!আমি ফুঁরফুঁরে মনে বলতে শুরু করলাম,
হাট্টিমাটিম টিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম;
তাদের খাঁড়া দু’টো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম;
.
উনি হাসতে হাসতে বেডের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছেন!আমি সেদিকে ভ্রুঁক্ষেপ না করে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।উনি নিশ্চয় ভাবতে পারেন নি আমি সত্যি সত্যিই ছড়া বলতে শুরু করবো!মজা পেয়েছেন ভীষন!মাঝে মাঝে এরকম দু’একটা ছড়া শোনানো উচিৎ!ব্যাপারটা মন্দ হবে না!
.
আন্টির রুমে চলে আসলাম!রুমে কাউকে দেখতে পেলাম না।না আন্টি আর না আঙ্কেল!কিচেনে এসেও আন্টিকে পেলাম না।মনিকে জিজ্ঞেস করতেই মনি বললো ইয়াশকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছে।আমি আর কথা না বাড়িয়ে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে মনির সাথে আমিও রান্নায় লেগে পরলাম।উনি রুম থেকে চিৎকার করে আমাকে ডাকছেন।অনেকক্ষণ ডাকার পরও যখন আমি কোনো সাড়া দিচ্ছিলাম না তখন মনি কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– ভাইজান যে ডাকতেছে আপনের কানে কি ঢুকতেছে না?
– ঢুকছে তো!
– তাইলে যাইতেছেন না ক্যা?
আমি মনির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আচ্ছা!বলো তো….তোমার ভাইজান আমাকে কোনো কাজে ডাকছে নাকি অকাজে?
আমার কথা শুনে মনি ভ্রু কুঁচকে বললো,
– আপনের কি হয়ছে?এরকম উল্টাপাল্টা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেছেন ক্যা?
– আমার কিচ্ছু হয়নি।এমনি জিজ্ঞেস করলাম।থাক বলতে হবে না…
বলেই আমি কিচেন থেকে বেরিয়ে এলাম!উপরে উঠে রুমে উঁকি দিলাম দেখতে যে উনি কি করেন?উনি খালি গায়ে একটা প্যান্ট পরে বেডের উপর বসে আছেন।আমি রুমে ঢুকে উনার সামনে দাড়িয়ে বললাম,
– ডেকেছিলেন আমাকে?
উনি আমাকে আপাদমস্তক দেখে বললেন,
– গিন্নি লুক!
উনার কথা শুনে আমি ভ্রুঁ কুঁচকে আমার দিকে তাকাতেই দেখলাম কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুঁজে রাখা!আমি দ্রুত আঁচলটা ছেড়ে দিলাম!আমার কান্ড দেখে উনি হেসে আমার কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
– ভালোই তো লাগছিলো!
বলেই আঁচলটা নিয়ে কোমড়ে গুঁজে দিলেন!আমি অপ্রস্তুতভাবে বললাম,
– কিচেনে ছিলাম তাই আচঁ….
উনি আর বলতে দিলেন না!আমার মুখ চেঁপে ধরে উঠে দাড়ালেন!আমি ভয়ে চোখের পলক ফেলার আগেই উনি কিছু একটা করে বসলেন!যেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম!আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনি ঠোঁটে দুষ্টুহাসির রেখা ফুঁটিয়ে তুলে বললেন,
– এতক্ষণ আমাকে অপেক্ষা করানোর মিষ্টি একটা শাস্তি!
আমি উনার বুকে কয়েকটা কিলঘুষি মেরে চলে আসতে নিচ্ছিলাম উনি পেছন থেকে হাত টেনে ধরে বললেন,
– এখন কোথাও যাওয়া চলবে না!এখন আমি রেডি হবো!যতক্ষণ রেডি হবো চুপচাপ আমার সামনে দাড়িয়ে থাকবে!
.
.
(চলবে)