real love পর্ব ৫১

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 51
.
.
পরেরদিন সকালের দিকে আমি ইয়াশকে নিয়ে ইফাজের সাথে নতুন ফ্লাটে উঠলাম!ইয়াশের স্কুল এখান থেকে অনেক দূর!আন্টি ওকে আমার সাথে পাঠাতে চাচ্ছিলেন না কিন্তু আমি আগেরদিন রাতে ইয়াশকে সব বলেছি যারফলে ইয়াশের জেদের কারনে ওকে আমার সাথে আনতে সুবিধা হয়েছে!
.
ফ্লাটে ঢুকতেই আমি চমকে উঠলাম!আমার বার্থডের সেই সাজটা এখনো ওভাবেই আছে!বেলুনগুলো নিচে পড়ে আছে!তারমানে আমার বার্থডের পর উনি আর একবারও ফ্লাটে পায়ের ধূলো দেননি!অনেকগুলো বেলুন চুপসে আছে!ইয়াশ আমার হাত টেনে ভেতরে নিয়ে বেলুনগুলো আমার দিকে ছুড়তে লাগলো!আমি সেগুলো ধরার চেষ্টা করলাম!আনফরচুনেটলি সবগুলোই হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে!ইয়াশ লাফিয়ে লাফিয়ে সবগুলো বেলুন ফাটালো!আমি হার্টশেপের লাল একটা বেলুন তুলে উনার সামনে ধরলাম!ঠোঁটের ইশারায় উনাকে বললাম “আই লাভ ইউ”
উনি আমার কান্ড দেখে চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন!আমার হাত থেকে বেলুনটা নিয়ে ফাঁটিয়ে ফেললেন!আমি ঠোঁট উল্টিয়ে রাগ করার ভঙ্গিমা করতেই উনি নিচ থেকে সেইম আরেকটা বেলুন তুলে আমার সামনে ধরে আমার মতো ঠোঁটের ইশারায় বললেন “আই লাভ ইউ টু”
আমি হেসে উনার হাত থেকে বেলুনটা নিয়ে আমার পেটের উপর ধরে ইশারায় বললাম “ইওর লাভ!”
.
আমার কান্ড দেখে উনি কিউট একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতেই আমি উনার সামনে থেকে চলে আসলাম!ইয়াশ বেলুন ফাঁটাতে ব্যস্ত!আমি বেডরুমের দিকে পা বাড়ালাম!বেডরুমের দরজা খুলতেই দেখলাম ফুলের পাঁপড়িগুলো পঁচে চাদরের সাথে লেপ্টে আছে!ছিঃ!
আমি শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে বেডের কাছে গিয়ে একটানে চাঁদর ফ্লোরে ফেলে দিলাম!আলমারি খুলতেই দেখলাম আলমারির মধ্যে সব শাড়ি রাখা!না আছে কোনো শার্ট-প্যান্ট আর না আছে আদারস্ ক্লোথ!এটা নিশ্চয় উনার কাজ!আমি ড্রইংরুমে এসে উনাকে কয়েকটা চাদর আনতে বললাম!উনি বললেন,
– এখন আমি ক্লান্ত!পাশের রুমের চাদরটা আপাতত বিছিয়ে রাখো!
বাহ্!বুদ্ধিটাতো মন্দ নয়!আমি দ্রুত পাশের রুম থেকে চাদরটা নিয়ে আমাদের বেডরুমে পারলাম!
কিচেনে এসে দেখলাম কিচেনের উপর-নিচ পুরো ফাঁকা!একটা পিঁপড়াও নেই কিচেনে!জিনিসপত্র থাকলেই না পিঁপড়া থাকবে!খাবো কি তাহলে আজ?
.
আমি কিচেন থেকে সোজা ড্রইংরুমে এসে উনাকে কিচেনের যাবতীয় সবকিছু কিনে আনতে বললাম!উনি সোফায় শুয়ে বললেন,
– আমি বাইরে থেকে খাবার কিনে আনবো!কিচেনে ঢুকতে হবে না তোমার!
উনার কথা শুনে আমার নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য মাথামোটা মনে হলো!আমি তো উনাকে বলতেও পারতাম বাহির থেকে খাবার কিনে আনুন!বাসায় খাওয়ার মতো কিছুই নেই!
সেটা না বলে আমি কিচেনের যাবতীয় জিনিসগুলো কেনো আনতে বললাম?
.
আমি চুপচাপ বেডরুমের দিকে পা বাড়ালাম!ইয়াশ পেছন পেছন আসলো!দুজন বেলকুনিতে চলে গেলাম!সুন্দর একটা দোলনা ঝুলানো!আমি ইয়াশকে নিয়ে দোলনায় বসে পরলাম!পা দিয়ে ফ্লোরে সামান্য ধাক্কা দিয়ে পা’দুটো উপরে তুলে ফেলছি!ইয়াশ দাড়িয়ে পরলো!একহাতে আমার কাধ অন্যহাতে দোলনা ধরে দাড়িয়ে আছে!ইয়াশ আমাকে বললো,
– কাল আমি স্কুলে যাবো কিভাবে?
– কেনো?গাড়িতে যাবে!তোমার ভাইয়ার সাথে!
– স্কুল তো এখান থেকে অনেকদূর!ভাইয়া জীবনেও নিয়ে যাবে না!
– তো সমস্যা কি?আমি নিয়ে যাবো!
আমার কথা শুনে ইয়াশ লাফ দিয়ে পাশে বসে পরলো!আমার একহাত জড়িয়ে ধরে বললো,
– সত্যিই?
– হুম!
.
উনি বেলকুনিতে এসে বললেন,
– কি হচ্ছে এখানে?
আমি ইয়াশ দু’জনই উনার দিকে তাকালাম!ইয়াশ বলে উঠলো,
– কাল ভাবী আমাকে স্কুলে দিয়ে আসবে।তুমি যাবে?
ইয়াশের কথা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– একদম না টিয়াপাখি!এখন থেকে আমি যেটা যেটা করতে বলবো ঠিক সেটা সেটাই করবে!কথার এদিক সেদিক হলেই কপালে দুঃখ আছে…বলে দিলাম!
– তাহলে ইয়াশকে কাল স্কুলে নিয়ে যেতে হবে!পারবেন?
– সম্ভব না!
– তাহলে দেখছি আমাকেই নিয়ে যেতে হবে!
আমার কথা শুনে উনি রেগে গিয়ে বললেন,
– রাগ উঠাচ্ছো কিন্তু তুমি আমার!
– এখানে রেগে যাওয়ার কি হলো?আপনি ইয়াশকে নিয়ে যাবেন,আমাকেও নিতে দিবেন না!ও যাবে কিভাবে তাহলে?
– আমি কালই ইয়াশকে বাসায় দিয়ে আসবো!আম্মু নিয়ে যাবে!
উনার কথা শুনে আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,
– খবরদার না!আমি বাসায় আবার ফেরত পাঠানোর জন্য কি ইয়াশকে নিয়ে এসেছি?সারাদিন নিজে থাকবে অফিসে পড়ে এদিকে আমাকে একা রেখে!এতো বড় ফ্লাটে একা একা আমি কি করবো?আমি যতদিন এই ফ্লাটে থাকবো ঠিক ততদিন ইয়াশও আমার সাথেই থাকবে!
– এভাবে চিল্লানোর কি হলো?জানোনা প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এভাবে চিৎকার করতে নেই?ভালোভাবে বললেই তো বুঝে যাই!
উনার কথা শুনে আমি নিচুস্বরে নরমকণ্ঠে বললাম,
– কাল ইয়াশকে স্কুলে নিয়ে যাবেন!এবার ভালোভাবেই বলেছি…বুঝতে পেরেছেন?
উনি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
– ঠিক আছে!ঠিক আছে!জ্বালিয়ে মারলো দুইজন!ইয়াশটাকে আমি দেখে নিবো…..বড় হোক আগে!
.
উনি দুপুর,বিকাল,রাত তিন ওয়াক্তের খাবারই বাহির থেকে নিয়ে এসেছেন!রাতে ডিনার করে আমি ইয়াশকে নিয়ে বেডরুমে শুঁয়ে পরলাম!ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ভাবি,কতদিন পর আবার তোমার সাথে ঘুমাবো,তাইনা?
– হুম!এতোদিন আসোনি কেনো?
-আম্মু বলেছে আমাদের ওই বাড়িতে নাকি একটা জ্বীন আছে!প্রতিরাতে জ্বীনটা নাকি তোমার উপর ভর করে! সাথে সাথেই তুমি নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলো!তখন কাছে যাকে পাও তাকেই মেরে ফেলো!
কথাগুলো ইয়াশ ফিসফিস করে বললো!ইয়াশ ভয়ে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আজ তো ও আর আসতে পারবে না তোমার কাছে,তাই না?
আমি কি উত্তর দিবো খুঁজে পাচ্ছিনা।এটা নিশ্চয় ইফাজের কাজ।বাঁজে লোক একটা!আমি ইয়াশের মাথায় চুঁমু দিয়ে বললাম,
– নাহ্!এই বাসায় ওই জ্বীন আর আসতে পারবে না!
.
উনি রুমে ঢুকে আমার পাশে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে টিভি অন করলেন।আমি উনার দিকে মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– এতোরাতে টিভি কেনো অন করলেন?সারারাত টিভি দেখার মতলব?
উনি আমার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন,
– হুম!
– চলবে না!গেস্টরুমে গিয়ে দেখুন,যান!
– সাউন্ড বেশি জোরে দিবো না!
– তারপরও আমার কানে আসবে!ঘুমাতে পারবো না!তখন কিন্তু আমি অসুস্থ হ….
– হুশ!এগুলো কোন ধরনের কথা!যাচ্ছি তো আমি!আর কোনোদিন শুনলে হয়?
বলেই উনি পাশ থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলেন!আমি উনাকে ডাকতেই উনি পেছন ফিরে তাকিয়ে বললেন,
– কিছু লাগবে?
– এতোদিন ইয়াশকে রাতে আমার থেকে দূরে রাখার টেকনিকটা আমি জেনে গিয়েছি!
আমার কথা শুনে উনি হেসে কাছে এসে আমার আর ইয়াশের কপালে একটা চুঁমু দিয়ে চলে গেলেন!
.
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে তিনজন একসাথে আগে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।লাগেজ থেকে ইয়াশের স্কুলড্রেস বের করে ইয়াশকে রেডি করিয়ে দিলাম।উনি শার্ট-প্যান্ট পরে মিররের সামনে দাড়িয়ে টাই ঠিক করছিলেন!আমি বেড থেকে ব্লেজার-টা নিয়ে উনার পেছনে দাড়ালাম!উনি মিররের ভেতর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কিউট একটা হাসি দিলেন!আমিও হেসে ব্লেজার-টা ধরতেই উনি হাত ঢুকিয়ে ব্লেজার-টা পরে নিলেন!হঠাৎ পেছন ফিরে আমার দুইগালে হাত রেখে কপালে একটা চুঁমু দিলেন!ইয়াশ বেডের উপর লাফাচ্ছিলো!উনি ইয়াশের হাত ধরে টেনে কাছে এনে ইয়াশের কপালেও একটা চুঁমু দিলেন!ইয়াশও ভাইয়ের কপালে চুঁমু দিলো!বেড থেকে লাফ দিয়ে নেমে ইয়াশ আমার হাত ধরে ড্রইংরুমে চলে এলো।উনি ইয়াশের ব্যাগটা পেছন পেছন এনে ইয়াশের হাত ধরে বললো,
– তাড়াতাড়ি চলো!লেইট হয়ে যাচ্ছে!
.
আমি ইয়াশকে ছেড়ে মেইনডোর খুলে দিলাম!ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আসি ভাবী!
আঁচমোকা উনিও আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– সাবধানে থাকবে কিন্তু!কোনো প্রবলেম হলে ফোন করবে!আর ওয়াশরুমে ঢুকতে সাবধানে ঢুকবে!এলোমেলো ঘোরাফেরা না করে চুপচাপ শুঁয়ে থাকবে!মেইড রাখা উচিৎ!আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি কি করা যায়!
আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
– হয়েছে হয়েছে!এতো টেনশন করার কিচ্ছু নেই!তাড়াতাড়ি আসুন লেইট হয়ে যাচ্ছে!
আমার কথা শুনে উনি হেসে কঁপালে আরেকটা চুঁমু দিয়ে বললেন,
– সাবধানে থাকবে কিন্তু!
বলেই বেরিয়ে গেলেন!ইয়াশ হাত নেড়ে টাটাহ্ দিলো!আমিও হাত নেড়ে ফ্লাইং কিস দিয়ে টাটাহ্ দিলাম!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here