#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 53
.
.
মাত্র আমাদের গাড়ি মেইনগেইট ভেদ করে মেইনরোডে নামলো সাথে সাথেই অন্য একটা গাড়ি আমাদের পাশ কাঁটিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকলো!
– ইয়াশ না!!!
– ইয়াশ না!!!
দু’জন একসাথে কথাটা বলে উঠলাম!ওই গাড়িটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় আমরা দুইজনই এক ঝলক ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে থাকা ইয়াশকে দেখেছি!উনি দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে ওই গাড়িকে ফলো করলো!গাড়িটা আমাদের ফ্লাটের সামনেই থামলো আর গাড়ি থেকে ইয়াশ নামলো!সাথে সাথে ড্রাইভার আঙ্কেলও নামলো!
মাই গুডনেস!!!যার জন্য আমি এতো কান্ড করে উনাকে রাজি করিয়ে আবার বাড়িতে ব্যাক করতে যাচ্ছিলাম সেই ইয়াশ কিনা নিজেই হুট্ করে চলে এলো!উনাকে কতকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিলাম,বাড়িতে গিয়ে মা’কে এই বলবেন সেই বলবেন!যাক ভালোই হলো এসবের কিছুই বলতে হবে না!
.
উনি গাড়ি থামালেন!আমি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ইয়াশকে পিছু ডাকলাম।ইয়াশ পেছন ফিরে তাকাতেই আমাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো!চোখ-মুখ-নাক সব লাল হয়ে আছে!নির্ঘাত কান্না করেছে! উনি গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার আঙ্কেলের কাছে গেলেন!আমি হাঁটুগেড়ে বসে ইয়াশের গালে হাত রেখে বললাম,
– ইশ্!কি অবস্থা করেছো চেহারার?
– ভাইয়া আমাকে না বলে স্কুলে রেখে এসেছিলো আর আম্মু মিথ্যা বলে আমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে।বাসার সবকিছু ভেঙ্গে রেখে এসেছি… হুম!
আমি ইয়াশের চোখের পানি মুঁছে দিয়ে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরলাম।উনি ড্রাইভার আঙ্কেলকে নিয়ে আমাদের কাছে আসলেন।ড্রাইভার আঙ্কেল ইয়াশের মাথার চুলগুলো ঝাকিয়ে বললেন,
– ওর নাম ভূমিকম্প রাখা উচিৎ ছিলো।বাপরে বাপ….পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছিলো।সেকি ভাঙ্গচুর!একবার দেখে আসো বাড়ির কি হাল করে এসেছে।বাড়ির প্রত্যেকটা জিনিস আবার নতুন করে কিনতে হবে।
আমি আর ইফাজ অবাক হয়ে ড্রাইভার আঙ্কেলের কথা শুনছি!আমার থেকে উনিই বেশি অবাক হয়েছেন।আমি জানতাম ইয়াশ এরকম একটা কিছুই করবে!
.
আমি ইয়াশকে নিয়ে ফ্লাটে চলে এলাম।ইয়াশ ভেতরে ঢুকেই ফিসফিস করে আমাকে বললো,
– ভাবি,ভাইয়াকে মানা করে দিবে আমাকে যেনো না মারে!
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– মারবে কেনো?
– ভাইয়ার রুমের ভাইয়ার পছন্দের সবকিছু নষ্ট করে ফেলেছি!
– মানে?
– ভাইয়া আমাকে রেখে এসেছিলো কেনো?তারজন্যই ওর সব জিনিস আমি নষ্ট করেছি!
আমি নিজেকে কিছুটা কঠিন করে বললাম,
– কাজটা একদম ঠিক করোনি!
ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– সরি…আর করবো না ওরকম।
– সত্যিই তো?
– হুম সত্যি!
ইয়াশকে বেডের উপর বসিয়ে নিজেও বসলাম ইয়াশের পাশে।দু’জন মিলে গল্প শুরু করে দিলাম!আজ ইয়াশ স্কুলে কি কি করেছে,বাসায় কি কি ভেঙ্গেছে, আন্টি কি কি বলে ইয়াশকে বোকা দিয়েছে সব বললো ইয়াশ আমাকে!
.
.
রাত ন’টা বাঁজে!উনি দুপুরের পর একবারও বাসায় আসেননি।এতক্ষণ বাহিরে বসে বসে কি করছেন কে জানে?কল দিলেও ধরছেন না!ইয়াশ আর আমি বসে বসে কার্টুন দেখছিলাম!ইয়াশ কার্টুন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরেছে!হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেশনে ফোন হাতে নিতেই দেখলাম উনি কল করেছেন!আমি রিসিভ করেই বললাম,
– এতোবার কল দিচ্ছি ধরছেন না কেনো?
– সরি…সরি!আমার আসতে একটু লেইট হবে!তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়েছি খেয়ে নিও!
– মানে?আপনি এখন কোথায়?
– আমি আছি একটা জায়গায়!তুমি আর ইয়াশ তাড়াতাড়ি ডিনার করে নিও!এতক্ষণে তো খাবার পৌছে যাওয়ার কথা!শোনো….না দেখে কখনো দরজা খুলবে না,মনে থাকবে?
– হুম!আসবেন কখন?
– একটু রাত হবে!আমি চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি আসার!ওকে….রাখছি তাহলে!
– ভয় হচ্ছে কিন্তু আমার!
উনি হেসে বললেন,
– টিয়াপাখি!আমি একদম ঠিক আছি!টেনশন করো না!
– যতক্ষণ না আসবেন ততক্ষণই আমি টেনশন করবো!তাড়াতাড়ি আসুন!
– এখন তো আমার মিষ্টি বউটার জন্য আমাকে তাড়াতাড়ি আসতেই হবে!
– হুম!আমি ওয়েট করছি….
– এখন রাখি?
– হুম!
.
– রাখো!
– হুম…
বলেই কেটে দিলাম!কেনো যেনো খুব ভয় করছে!অস্থিরও লাগছে খুব!পানি খাওয়া দরকার!বেড থেকে নেমে ডাইনিং-এর দিকে পা বাড়ালাম!ড্রইংরুমে পা রাখতেই কলিংবেল বেঁজে উঠলো!আমি দ্রুত মেইনডোরের কাছে গিয়ে ম্যাজিক আই-এ চোখ রাখলাম!একটা ছেলে দুইহাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে উল্টো দাড়িয়ে আছে!উল্টো কেনো দাড়িয়ে আছে ছেলেটা?খারাপ মতলব নয়তো?আমি একটা ঢোক গিললাম!তাড়াতাড়ি বেডরুমে এসে মোবাইল নিয়ে ব্যাক করলাম!আবার কলিংবেল বেঁজে উঠলো!আমি দ্রুত উনাকে ফোন দিলাম!সাথে সাথেই রিসিভ করলেন,
– হুম,বলো!
– একটা ছেলে খাবার প্যাকেট হাতে নিয়ে উল্টো দাড়িয়ে আছে!ভয় করছে!দরজা কি খুলবো?
আমার কথা শুনে উনি হেসে উঠলেন।হাসতে হাসতে বললেন,
– পরনে নেভি ব্লু শার্ট আছে নাকি দেখো?
– হ্যা…হ্যা…নেভি ব্লু শার্ট আর কালো প্যান্ট!
– হুম….পলক-ই!খোলো দরজা!
আমি ফোন না কেটে মাথায় ওড়না দিয়ে দরজা খুললাম!ছেলেটা হেসে আমার দিকে খাবারের প্যাকেটগুলো এগিয়ে দিয়ে বললো,
– ইফাজ ভাই পাঠিয়েছে!
আমি সামান্য হেসে হাত বাড়িয়ে প্যাকেটগুলো নিলাম!উনি ফোনটা পলককে দিতে বললেন।আমি ফোনটা পলকের দিকে ধরে বললাম,
– আপনার ভাই…..কথা বলুন!
পলক আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরেই বললো,
– জ্বী ভাই,বলেন।
– ……
– ইশ্!ভুল হয়ে গেছে ভাই।এখন থেকে আর উল্টো ঘুরে দাড়াবো না,সরি ভাই!
ছিঃ!উনি বলে দিলেন আমি যে পলককে ভয় পেয়েছি!ছিঃ ছিঃ…কি ভাবছে পলক আমাকে?ভীতুর ডিম?
– আচ্ছা ভাই!
বলেই পলক আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো!আমি পলকের হাত থেকে ফোনটা নিতেই পলক বললো,
– সরি….ভাবি!উল্টো ঘুরে দাড়ানো আমার একদম উচিৎ হয়নি!শুধু শুধু ভয় পাইয়ে দিয়েছি আপনাকে!
পলকের কথা শুনে আমি শুকনো গলায় ঢোক গিললাম!এখন আমার কি বলা উচিৎ?উনার পলককে কথাটা না জানালেই কি চলছিলো না?
আমি প্রতিত্ত্যুরে হেসে বললাম,
– ইট’স ওকে!ভেতরে আসুন….
– না ভাবি।অন্য একদিন…আজ আসি।
পলক সালাম দিয়ে চলে গেলো!আমি দ্রুত দরজা লাগিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম!
.
.
(চলবে)