Unexpected_lover part_13

0
1928

Unexpected_lover
part_13
#Rimy_Islam

কাজের মেয়েটার নাম ঝুমি। মাঝবয়সী একজন মহিলা। ঘরের কাজ কম, সারাদিন আমি কি করি,কোথায় যাই সমস্ত খবর অনিবকে পৌঁছানো তার মূল কর্ম।

ঘর আলাদা হলেও দিনের মধ্যে হাজারবার অনিবের ঘরে যাই। ল্যাপটপটা হাতলে ভিডিও ডিলিট করতে। একবার ডিলিট হলেই ব্যাগ পেটরা নিয়ে পালিয়ে যাবো এখান থেকে। মনে মনে গাঢ় প্ল্যান করেছি। কিন্তু ওইযে কথায় বলে, ‘ সেয়ানে সেয়ান চেনে’। অনিব এরপর থেকে ল্যাপটপ কখনোই রেখে যান না। তাছাড়া রেখে গেলেও এখন দরজা লক করে যান। যার চাবি থাকে উনার কাছে। সব আশা ছেড়ে কেবল রুমের আশেপাশে উঁকিঝুকি করেই দিন পার করছি। হয়তো আমার উঁকিঝুঁকির কথা ঝুমির মাধ্যমে অনিবের কানে এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে।
একদিন হঠাৎ অনিব আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন,
” ল্যাপটপ লাগবে বললেই পারো! এতো কষ্ট করতে হবে? পাগলি বউ আমার! তোমার জন্য কোন কোম্পানির ল্যাপটপ কিনবো তাই বলো? ”

আমি নিশ্চুপ। অনিব আবারও বললেন,
” নতুন চাইলে এনে দিবো। কিন্তু ভুলেও এটার ধারে কাছে ঘেঁষবে না। কারণ পারবে না। শুধু শুধু শরীরের কষরত দরকার আছে কি? এখন যাও।”

সোজা রুমে চলে এলাম। বুঝে নিলাম এই যাত্রায় উদ্ধার মিলবে না। আর কখনোই মুক্ত হতে পারবো না। কিন্তু এর মাঝে বড় কোনো রহস্য আছে। প্রথম প্যাঁচ শুরু শিলা আপুর থেকে। সেদিন দেখা হতে অনিব যখন আমাকে নিজের বউয়ের পরিচয় দিলেন, তখন শিলা আপু বলেছিলো যে, সে আগেই ভেবেছিলাম এমন কিছুই হয়েছে। ‘ কি অর্থ তার কথার? আর আমি কেন অনিবকে বিয়ে করেছি, কেন পালিয়েছি একবার জিজ্ঞেসও করে দেখেনি। কিছু একটা আছে যা এখনো খোলাসা হয়নি। কিংবা হয়তো হয়েছে। শুধু আমার অজানা।
রাত-দিন একজোট করে আমি অনিবের পাহারায় লেগেছি। উনার প্রতিটা ধাপ, কথা ফলো করছি। ইদানিং অনিবকে খুব আপন লাগে। কেনো লাগে বলতে পারি না। হয়তো ঠুংকো সংসারে সত্যিই মন বসে গেছে। তাই ঘৃণার মানুষকেও ভালো লাগতে শুরু করেছে।

একদিন বসে বসে ভাবছিলাম। অনিবের গার্লফ্রেন্ড ছিল। ওই মেয়ের সাথে কথা বললে কেমন হয়? অনিব সম্পর্কে অনেক গোপন তথ্য জানা যাবে। পরে এই তথ্য কাজে লাগিয়ে অনায়াসে অনিবকে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আপত্তি ঘটে নাম্বার জোগাড় নিয়ে। অনিব নিশ্চয়ই দিবে না, আর উনাকে বলাও যাবে না। একমাত্র উপায় মিতি। দিতির বয়স ভারী হওয়ায় ওর পেট থেকে কিছু বেরোবে না।
একদিন সকালে সোজা চলে গেলাম শাশুড়ীর বাড়ি। ভাগ্য সহায় হওয়ায় বাসায় কেবল মিতি একা। শাশুড়ী মা দিতিকে নিয়ে কোচিং গেছে।
ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলা বরাবরই আমার স্বভাবের পরিপন্থী।
তাই সোজা প্রশ্ন করলাম,
” আচ্ছা মিতি, আমি কিছু জানতে চাইলে বলবে?”

” অফ কোর্স ডিয়ার ভাবি। প্রশ্ন করেই দেখো!”

” খুব ভালো মেয়ে। আচ্ছা বলো তো, অনিবের সাথে যে মেয়ের সম্পর্ক ছিল তার নাম কি?”

মিতি গভীর ভেবে বললো,
” মনে পড়ছে না। নেক্সট প্রশ্ন?”

আমি হতাশ হয়ে বলি,
” ও। তাহলে ওই মেয়ের ঠিকানা বা ফোন নাম্বার কিছু তো আছে?”

” ঠিকানা জানবো কিভাবে? এত আদিখ্যেতা আমি দেখাই না। তবে নাম্বার আছে। ভাইয়ার ফোন থেকে একবার লুকিয়ে নাম্বার নিয়ে সেভ করে রেখেছিলাম। ”

আমি খুশিতে টগবগ করে বললাম,
” জলদি দাও আমাকে।”

” আচ্ছা থামো। পুরনো সিমে নাম্বারটা আছে। ওটা খুঁজে ফোনে পুরে দেখি কি হয়।”

মিতি আধাঘন্টা অনেক ঘাঁটাঘাঁটির পর সিমটা খুঁজে ফোনে পুরলো। এরপর খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,
” এইতো পেয়েছি। সেভ করে নাও।”

আমি নাম্বার সেভ করে নিয়ে সেদিনের মতো বিদায় নিয়ে চলে আসি। অপেক্ষা করতে থাকি রাত হবার। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে। তড়িঘড়ি রাতের খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিই। তারপর আরাম করে বিছানায় বসে ফোন হাতে নিলাম। অনিব এ ঘরে আসবে না। তাই নিশ্চিত মনে সেই নাম্বারে কল করি। প্রথমবার ধরলো না। দ্বিতীয়বার কল করতেই ধরে।
” হ্যালো! ”

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
” জ্বি এই নাম্বারের মালিক কি আপনি?”

ওপাশে তিক্ত কণ্ঠে বললো,
” কি আজব! আমাকে ফোন করে এখন উল্টো বলছেন এই নাম্বার আমার কিনা? কাকে চান বলুন তো?”

” তাহলে আপনাকেই চাইছি। কিন্তু কেন চাইছি তা ফোনে বলা সম্ভব না। কাল দেখা করি কোথাও?”

” আচ্ছা আপনার পরিচয় তো বলবেন। কে আপনি? আমি কি চিনি আপনাকে?”

” পরিচয় পর্ব কালকে সারবো। আর আপনি আমাকে চিনবেন না। তবে আমি আপনাকে চিনি। কাল কোথায় আসবেন বলুন।”

একটা কফি শপের নাম বলে মেয়েটা রেখে দেয়। আর সাথে সাথে ভয় সঞ্চার হয়। সত্যি ওই নামে কোনো কফি শপ আছে তো? মেয়েটা আসবে তো? হাজারো প্রশ্ন মাথায় নিয়ে অস্বস্তিকর রাত পার করি।
পরদিন সকালে রেডি হয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম অনিবের সাথে। অনিব আমাকে ভালোমতো দেখে বললেন,
” কোথাও যাওয়া হচ্ছে? ”

” হুম।”

” কোথায়?”

” বান্ধবীর সাথে দেখা করতে।”- তড়িৎ উত্তর আমার।

” এতদিন কোনো বান্ধবী ছিলো না। নতুন ফোন কিনে দিতেই সব উদয় হলো? নতুন সিমে কি কোম্পানি থেকে সবার রিলেটিভ, ফ্রেন্ডদের নাম্বার সেভ করে দিচ্ছে? ”

” কি আজব প্রশ্ন! সিম কোম্পানি আমার রিলেটিভ, ফ্রেন্ড চিনবে কোথ থেকে? আমার মাথায় সবার নাম্বার সেভ থাকে বুঝলেন?”

” যাও।কিন্তু ছেলে ঘটিত কোনো কিছু হলে আস্ত রাখবো না। চিড়িয়াখানার একটা গাঁধাকে ধরে তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।”

” ফাজিল লোক একটা।”

বলেই গটগট করে বেরিয়ে এলাম। রাস্তায় নেমে অটো নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি কফি শপের নাম ঠিক আছে। তাহলে ভুল ঠিকানা দেয়নি মেয়েটা। আমি দরজা ঠেলে শপে ঢুকে পড়ি। বুক দুরুদুরু করছে। কোন মেয়ে চিনবো কিভাবে? ফোন করতে হবে। ফোনটা হাতে নিয়ে মেয়েটার নাম্বার ডায়াল করি। ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ বললো,

” আপনি আমায় খুঁজছেন বোধ হয়। গতকাল ফোন করেছিলেন?”

আমি চমকিত চিত্তে পেছনে ফিরে তাকায়।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here