Unexpected_lover
part_14
#Rimy_Islam
” আপনি আমায় খুঁজছেন বোধ হয়। গতকাল ফোন করেছিলেন?”
আমি চমকিত চিত্তে পেছনে ফিরে তাকায়। একজন কমবয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে।মনে মনে খুশি হই। অন্তত শিলা আপুর সাথে এসবের কোনো সংযোগ নেই ভেবে। আমি উৎফুল্ল হয়ে বলি,
” আসার জন্য ধন্যবাদ। চলুন বসি।”
আমরা মাঝের একটা টেবিল দখল করে বসলাম। এখন আর মেয়েটা খুব হাসি হাসি মুখে নেই। হয়তো আমাকে দেখে দুর্দিধায় পড়েছে।
আমি বলি,
” সরি, আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি। আমি বর্ষা। অনিবের ওয়াইফ। কিন্তু আপনার নামটা জানলে কথা বলতে সুবিধা হবে।”
মেয়েটা বললো,
” আমি লিজা। সরি, এখনো আপনাকে চিনতে পারিনি।”
আমি হতবাক হয়ে বলি,
” কি বলেন! এখনো চিনতে পারেননি? আচ্ছা অনিবকে তো চেনেন?”
” না। অনিব নামে কোনো ব্যক্তির সাথে আমার পরিচয় নেই। দেখুন, আমি বিবাহিত। ঘর- সংসারের কাজ ফেলে এসেছি।এই ভেবে যে খুব দরকারি কথা বলবেন। গতকাল আপনার কথা শুনে মনে হয়েছে আপনি খুব বিপদে আছেন।”
” আপু আমি সত্যি খুব বিপদে আছি। এই নাম্বারটা আমার হাজবেন্ডের ফোনে সেভ ছিলো।”
লিজা গভীর ভেবে বললো,
” হতে পারে। কিন্তু আমি উনাকে চিনি না।”
আমি বেবাক বনে গেলাম। বললাম,
” আপনার বর্তমান সিমটা আপনার না?”
মেয়েটি একটু ইতস্তত করলো। এরপর বললো,
” আসলে এটা আমার নাম্বার না। আমার বান্ধবী এ সিমটা আমাকে দিয়েছিল। ওর কাছে হয়তো কিছু জানতে পারবেন।”
আমি হতাশ হয়ে বলি,
” আপনার বান্ধবীর নাম, ঠিকানা একটু দেবেন প্লিজ?”
” হ্যাঁ ওর নাম তন্বী। কিন্তু সে তো এখন কানাডায় থাকে।শুনলাম ফ্যামিলিসহ সামনে মাসে বাংলাদেশে আসবে। তখন কথা বলে নিবে। আমি ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। ”
” সবই বুঝলাম। কিন্তু তন্বী আপু ফিরলে আমি জানবো কিভাবে? ”
লিজা হেসে বললো,
” আমি ফোন করে তোমাকে জানিয়ে দিব। বয়সে বোধ হয় তুমি ছোট। তাই তুমি বলছি।”
” না-না আপু, অসুবিধা নেই। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আজ তাহলে উঠি?”
” অবশ্যই।”
বাড়ি ফিরে এলাম হাজারো প্রশ্ন, কৌতুহল মাথায় নিয়ে। অনিবের গার্লফ্রেন্ড তাহলে এখন কানাডায় বর নিয়ে সেটেল্ড। কিছু মেয়ে পারেও বটে! কত সহজে একজনকে ভুলে নতুন ঘর বেঁধেছে। ভাবতেই আমার বুক ধক করে উঠে। আমিও কি সেসব মেয়েদের তালিকায় নয়? আমিও তো খুব সহজে আমার অচেনা প্রেমিককে ভুলে দিব্যি অনিবের সাথে সংসার করছি। প্রতিদিন কষ্ট সহ্য করছি। একবারো তো মনে হয় না ওর কথা! হঠাৎ খেয়ালে- বেখেয়ালে মনে হতেই তাৎক্ষণিক খারাপ লাগাটা ভর করে।কিন্তু স্থায়ী হতে তো পারে না।
আমি টিভির সামনে বসে আছি। খুব মনোযোগ দিয়ে ট্রাভেল এক্সপি চ্যানেল দেখছি। কত দারুণ সব জায়গা দেখায়। হঠাৎ অনিব এসে রিমোট কেড়ে নিয়ে বললেন,
” কি সারাদিন দেশ- বিদেশ ঘুরে বেড়াও। দেখি রিমোটটা দাও।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
” দেশ- বিদেশ ঘুরার কপাল আমার আছে? তাই টিভিতে দেখেই মনের খোরাক মেটাই।”
” খুব ভালো করো। আমার টাকা খরচ করতে হয় না। যাক গে, তোমার বান্ধবীর বয়স তোমার চেয়ে একটু বেশিই লাগছিল।”
কথাটা বলেই অনিব টিভিতে মন দেয়। আমি ভাবনায় বিরাজ করতে থাকি। আমার বান্ধবী কোথায় থেকে এলো? পরমুহূর্তেই মনে পড়ে অনিবকে সকালে বলেছিলাম বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। তাহলে উনি আমাকে ফলো করেছেন?
আমি চওড়া গলায় বললাম,
” আমার পেছনে লোক লাগিয়েছেন? নিজের স্বাধীনতা বলে কি আমার কিছু নেই?”
” বাংলাদেশে ডিভোর্সের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জানো তো?”
” তাতে আমার কি?”
” অনেক কিছুই। বউদের এই স্বাধীনতা নামক জিনিস দিতে গিয়েই এসব দূর্গতি। আমি সেই ভুল করবো না।”
” আপনি ভুল করবেন কেন? আপনি তো মহাপুরুষ। ”
” হুম,বলতে পারো। মহাপুরুষ না হলে মহাস্বামী তো বটেই! আচ্ছা তোমার কোনো প্রমিক নেই?”
” থাকলে কি ওর হাতে তুলে দিবেন?”
অনিব গম্ভীর হয়ে বললো,
” ওইসব ভালো দলের হাজবেন্ড আমি নই। ওই ছেলেকে তুলে এনে তোমার সামনে ইচ্ছেমতো পিটবো।”
আমি অবাক হবার ভঙ্গিতে বলি,
” বলেন কি! আপনি তো দেখছি সাংঘাতিক ছেলে!”
” হ্যাঁ এখন তুমি সরো। আমাকে টিভি দেখতে দাও।”
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত বাড়ছে। গতরাতেও মনে শান্তি ছিলো না। আজও নেই। কবে অনিবের গার্লফ্রেন্ড ওরফে তন্বী আপু ফিরবে আর কবেই আমি সব জানতে পারবো! শত শত দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুম আসে নাকি? সারারাত কাটে ঘরে, বারান্দায় পায়চারি করে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাড়িতে শিলা আপু এসে হাজির। অনিবের মুখ থমথমে। শিলা আপু দিব্যি উনার সামনে বসে পা নাচিয়ে চলেছে।
আমাকে দেখেই হেসে বললো,
” সারপ্রাইজ! এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠিস? সব নিয়ম বদলে গেছে দেখছি।”
সেদিনের শিলা আপু ব্যবহারে আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছি। তাই আগের মতো সেই টান বোধ আর হচ্ছে না। ঠোঁটে অনিচ্ছুক হাসি ঝুলিয়ে বলি,
” তুৃমি এখানে?”
” বোনকে দেখতে এলাম। তুই ভালো আছিস তো?”
” হ্যাঁ আছি ভালো। আজ থাকবে না চলে যাবে?”
” আরে নাহ। দুইদিন থেকে তবে যাবো।”
” তোমরা কথা বলো। আমি অফিস যাচ্ছি। “- বলেই অনিব কেটে পড়লো।
চলবে…………