Unexpected_lover part_18

0
2444

Unexpected_lover
part_18
#Rimy_Islam

আমি অনেকটা সময় নিয়ে সহজ করলাম নিজেকে। চোখের পানি মুছে বলতে থাকি,
” সবাই নিজ নিজটা বলে গেলে। আমার পক্ষের কিছুই শুনলে না। শিলা আপুর ফোনে একদিন একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। আমি দেখি নাম্বার সেভ নেই। তাই দ্রুত ফোন ধরতে লাইন কেটে যায়। তার পরপরই একটা মেসেজ আসে।
‘ হাই বিউটিফুল!’
মেসেজের ধরন দেখে কোনোমতেই ভাবা সম্ভব না যে শিলা আপুর পরিচিত কেউ। তাছাড়া নাম্বারটাও সেভ নেই আর আজকাল অনেকেই মেয়েদের নাম্বার পেলেই হেন তেন ম্যাসেজ, কলের বন্যা শুরু করে। আমি সেরকই কিছু একটা ভেবেছিলাম। বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না ওটা শিলা আপুর বয়ফ্রেন্ড। আপু কখনো এ বিষয়ে আমার সাথে কথাও বলেনি। কিভাবে বুঝতাম? আমি তখন সবে কৈশোরে পা দিয়েছি। উৎফুল্ল, চঞ্চল মন কৌতুহল বশত মেসেজের রিপ্লাই দিই। এরপর কিছুদিন আপুর ফোন থেকে মেসেজেই যোগাযোগ হয়। কিন্তু আপু যদি জেনে যায়,তবে বাড়িতে সবাইকে বলে দিতে পারে।সেই ভয়ে আমি সেই অপ্রত্যাশিত প্রেমিককে বলে দিই,আমি মেসেজ না করলে যেন উনি না করেন। তাই হয়।সেভাবেই চলতে থাকে আমাদের রিলেশন।
এখন তুমি বলো আপু, তোমার ফোনে অনিবের নাম্বার সেভ করা ছিল না। এতে দোষটা কোথায় আমার?”

অনিব আর শিলা আপু থ মেরে শুনছিল। এবার আপু বলে উঠলো,
” আমাদের পরিবার সম্পর্কে তোকে নতুন করে বলে বোঝাতে হবে! জানিস না কেমন কঠোর! সেভ করে কি বিপদে পড়তাম নাকি! কে জানে তলে তলে তুই এতো পাঁকনা হয়েছিস? আমার সব কেড়ে নিলি। ”

অনিব এবার বললেন,
” তুমি যে সত্যি বলছ তার কি গ্যারেন্টি আছে? ”

আমি আবেগান্বিত হয়ে বললাম,
” আমাকে এখনো চিনলেন না? ভুলে গেলেন নিজের পাখিকে? কোনটা ঠিক বুঝবো? শিলা আপুর সাথে যে সম্পর্কে ছিলেন সেটা নাকি আমারটা?”

অনিব তাচ্ছিল্য হেসে বললেন,
” পাখি আমি শিলাকে ডাকতাম। তোমাকে শিলা ভেবেই ওই নামে সম্বোধন করেছিলাম। আমার ভালবাসায় পুরো অধিকার কেবল শিলার ছিল। তোমার অস্তিত্ব এসবে কোথায়? নিজেই ভেবে দেখো।”

আমি কিছু বলতে যাবার আগেই শিলা আপু বাধা দিলো।বললো,
” অনিব, আমরা দু’বোন একটু বাইরে যেতে চাই। উন্মুক্ত পরিবেশে খোলাখুলি কিছু বোঝাপড়া করা বাকি আছে। তুমি দয়া করে এসবে নাক গলাবে না। বর্ষা তুই আই আমার সাথে।”

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো বাইরে। অনিবের অফিস থেকে হেঁটে কিছুটা দূর গেলেই হাতিরঝিল। হাঁটতে শুরু করি সেদিকে। আমার এক হাত শক্তভাবে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে শিলা আপু।সেখানে গিয়ে দু’জনে বসি। কিছুক্ষণ কারো মুখে কথা ফুটলো না। এদিকে অজানা কারণে শঙ্কিত আমার মন। নতুন কি বলতে এনেছে শিলা আপু? এমন কি আছে যা অনিবের সামনে বলা গেল না?

শিলা আপু হঠাৎ কুটিল হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
” আহারে! তোর চেহারায় কত শোকের ছায়া পড়েছে! খুব খারাপ লাগছে।হাজার হলেও নিজের বোন তো। কিন্তু অনিব ঠিকই বলে,তুই এত বোকা! নিজের বোনকে চিনলি না?”

আমি ধিক্কারের স্বরে বলি,
” তোমাকে চিনি বলেই তো মনের একটা দৃঢ় বিশ্বাস, এসবের মাস্টার মাইন্ড তুমি। অনিবকে যখন এতই ভালবাসতে, তাহলে সামনাসামনি ওর সাথে কথা বলে সব ক্লিয়ার করোনি কেন? আমার কাঁধে সব দোষ চাপিয়ে বলতে কি কি হয়েছে। কেন বলোনি?”

” তুই আমার বোন। তোর উপর দোষ দেই কিভাবে বল!”

” এত ভালো তুমি না আপু। এবার খোলাভাবে বলো তো কিভাবে কি হলো?”

শিলা আপু হেসে বলতে লাগলো,
” শুধু তোকেই বলছি।এসব আবার অনিবের কানে ঢালতে যাস না। কারণ তোকে বিশ্বাস করবে না। আচ্ছা শোন তাহলে।
অনিবকে ভালোবাসি বললে কথাটা ভুল হবে। আমি জাস্ট পছন্দ করতাম ওকে। এমন একটা ছেলে অল্প বয়সে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে কে না চাইবে? আমিও চেয়েছিলাম,তবে হাজবেন্ড হিসেবে নয়। অনিব শুরু থেকেই ওর পুরো বায়োডেটা আমার কাছে গোপন করেছে। আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো বড় গাড়ি,বাড়ি থাকবে,এক কথায় পয়সাওয়ালা কাউকে বিয়ে করবো। তুই হয়তো ভাবছিস,অনিবের সবই তো আছে। সেটা তুই জানিস,এখন আমিও জানি।কিন্তু তখন তো জানতাম না। মধ্যবিত্ত, চাকরীর জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঠোকর খেয়ে বেড়ানো ছেলেকে কে চাই বিয়ে করতে? অনেকদিন থেকেই কেটে পড়ার ধান্দায় ছিলাম। তুই আমার পথ হাল্কা করে দিলি। শুরুতেই আমি টের পেয়েছিলাম যে তুই আমার ফোনে কিছু একটা করিস। এরপর অনিবের সাথে আমার আলাপ কম হওয়া শুরু হয়। কারণ তুই আমার অনুপস্থিতিতে ওর সাথে কথা বলতি। সব মিলিয়ে ঘাপলা বুঝতে পেরে আমিই তোদের পথ আরও সুগম করে দেই। আমি জানি এতে তোর বা অনিবের কারোর দোষ নেই। তোরা হলি আমার বলির পাঠা। আমি সেই তাল ধরে অনিবের সাথে ব্রেকাপ করি। ওইখানেই করি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। অনিব তার ভালো নাম দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় আমার জন্য। আমি না করে দেই। কারণ কিছুদিন শোকের নাটক চালু রাখতে চেয়েছিলাম। হঠাৎ অনিব যদি দেখে আমি ব্রেকাপ করেই বিয়ে করছি,তাহলে তুমুল কান্ড ঘটিয়ে বসত। সেই কথা মাথায় রেখেই বিয়ে ক্যান্সেল করি। নির্বোধ আমি একটুও বুঝিনি, ওই বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পেছনের লোক সয়ং অনিব। এরপর আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমার পরবর্তীতে ভালো ঘরেই বিয়ে হলো। সুখেও ছিলাম বেশ। যতদিন না তোকে অনিবের সাথে দেখেছিলাম।
সেদিন তোকে ওর সাথে দেখে যখন জানতে পারলাম, তুই অনিবের বউ। তখন সত্যি মনে হয়েছিল অনিব তোকে ধাক্কা মেরে পুকুরে ফেলে দিতে মন্দ হতো না। আমার অনিবের সাথে তুই সংসার করবি? এ হতে দিবো না।
এখন আসি মূল কথায়, তোর সাথে সোজা হিসেব। তুই অনিবকে ছেড়ে দে।আর আমি গিয়ে টুপ করে অনিবের গলায় ঝুলে পড়ব। ছোট বোন হয়ে বড় বোনের কথা অমান্য করবি? বল?”

আমার চোখে ঘোর অন্ধকার। আবছা জোনাকি পোঁকা জ্বলছে চোখের সামনে। মাথা ঘোরার পূর্বাভাস। আমি বা আপু কিছু বুঝে উঠার আগেই মাথা ঘুরে আপুর কোলে হেলে পড়ি।

চলবে………..
( এবার তো বুঝলেন বর্ষাই মূল নায়িকা। চিন্তা দূর হয়েছে সবার🙄🙄। আচ্ছা আরেকটা কথা, খুব শীঘ্রই গল্পটা শেষ হতে যাচ্ছে। আর দুইটা পার্ট সর্বোচ্চ। তবে চিন্তা নেই। নতুন একটা ধামাকা গল্প নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো।ভাবছি এবারের নায়িকার চরিত্র গ্রাম্য, চঞ্চল ধরনের দিবো🤔।শহুরে নায়ক-নায়িকার গল্প এত এত যে আর নতুন কোনো থিম মাথায় আসে না। আপনারা আবার এমন গল্প পড়বেন কিনা সেটা মূল বিষয়🙄বাকিটা আপনারা বলেন। শহুরে নায়ক,নায়িকা।নাকি গ্রামীণ? গ্রাম্য ছেলে-মেয়ের প্রেমের টুইস্ট হবে আলাদা।কমেন্ট করে জানাবেন প্রত্যেকে। আর নতুন গল্পে এভাবে সাথে থাকবেন তো? আশা করি থাকবেন🙂🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here