#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-১৪
ওনার সামনে সেই কখন থেকে ঘুর ঘুর করতেছি আর উনি আমার পাত্তাই দিচ্ছে না। চা খাচ্ছে আর পেপার পড়তেছে। কেউ ভাব্বেন না আমি অযথাই ঘুরতেছি তার পেছনে, কারণ আছে৷ আমি বলছি আমি একটু কেনাকাটা করবো উনি যেন আমার সাথে যায়, বান্দা রাজি তো হয়েছিলো। কিন্তু আমি যখন টাকা নিলাম তখন উনি বলে দিলেন যাবেন না। কারণ জিজ্ঞেস করলে বললেন, সে তার বউকে নিজের টাকায় সবকিছু কিনে দিবেন। আমিও বললাম, না আমি আমার টাকায় কিনবো। সেও বলে দিলো এমন করলে আমার সাথে যাবেন না। আমি এরপর বললাম ঠিকাছে আমি নিজেও চলে যাবো। সে ভদ্রলোকের মতো দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলো। সেই থেকে আমি আশেপাশে ঘুরতেছি অথচ উনি পাত্তাই দিচ্ছে না। আমার থেকে আমার টাকাগুলিও নিয়ে নিয়েছে, কতবড় তেলা’পোকা। তোর সাথে তেলা’পোকার বিয়ে হলে আমি সবাইকে বিরিয়ানি খাওয়াইতাম।
.
দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর ওনার পায়ের উপরে রাখা মাটির ব্যাংকটার তাকিয়ে আছি। ব্যাংক টা আমার দিকে কী অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার চিল্লায় গাইতে মন চাচ্ছে,
“‘ ও ট্যাকা, ও পাখি তুমি
উইড়্যা উইড়্যা আসো……
উইড়্যা উইড়্যা আইসা তুমি
আমার ডালে বসো “‘
হায়য়য়! একটু উইড়্যা যদি আসতো আমার কাছে। আমি ওনার সামনে দাঁড়ায় বললাম, দেন না
-‘ ওকে দিলাম না ‘
-‘ দিতে বলছি আমি ‘
-‘ প্রথমে তো না দিতে বললা ‘
-‘ দিতে বলছি ‘
-‘ মানুষের মুখ প্রথমে সত্য কথা বের হয় জানো? ‘
-‘ এতো কিছু আমি জানি টানি না, আমাকে টাকা দেন ‘
-‘ আমার কাছে টাকা নাই। ‘
-‘ আপনার টাকা চাই নাই, আমার টাকা দেন আপনি জানেন? আমি না খেয়ে এই টাকা কত কষ্টে জমাইতাম। ‘
-‘ মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে না খেয়ে জমাতে কে বলছিলো? এখন টাকা নাই ‘
-‘ আয়ায়ায়ায়ায়ায়া
-‘😒 ইস আমার কান! ‘
-‘ চুপ! আমার টাকা দেন ‘
-‘ দূরে যাও ‘
রাগে দুঃখে বারান্দায় এসে বসে থাকলাম। গাছ গুলাকে দেখতেছিলাম৷ হঠাৎ দেখলাম টবের ভেতর একটা ছোট কিছু একটা নড়তেছে। কাছে গিয়ে দেখলাম তেলা’পোকা। মেজা’জ খারা’প আছে এখন তেলা’পোকা ফেলাপোকাকে ভ’য় পাই না। হাতের কাছে পুরোনো একটা ঝাড়ু পেলাম সেটা দিয়ে দিলাম বা’রি। তেলা’পোকাটা টব থেকে পড়ে গেলো। উলটা হয়ে হাত-পা কীভাবে যেন নাড়াচ্ছে। নিজেকে হঠাৎই সাহসী মনে হলো। আমি এই তেলা’পোকাকে ভ’য় পেতাম? কী বোকা ছিলাম আমি, ছিঃ
নিজেকে সাহসী মনে করছিলাম এমন সময় হাত থেকে ঝাড়ুটা পড়ে গেলো। তেলা’পোকাটার গা ঘেঁষে মেঝেতে পড়লো। ওমনি তেলা’পোকাটা ঠিক হয়ে গেলো৷ হঠাৎই উড়াল দিয়ে আমার গায়ে পড়লো। ওরে বাবা বলে এক চিল্লান দিয়ে দৌড় দিলাম। রুমে এসে দৌড়াচ্ছি আর ফাজি’ল তেলা’পোকাটা আমার পিছনে। আয়ায়া বলে চিল্লাচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি , সোফায় তাকিয়ে দেখলাম উনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বিছানা থেকে চাদর নিয়ে ধেরাম করে একটা বা’রি দিলাম আর তেলাপোকাটা মেঝেতে পড়ে গেলো৷ ওনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
-‘ একটা মেয়ে বিপ’দে পড়েছে আর আপনি হাসছেন! লজ্জা করে না? ‘
উনি এখানো হাসতেছে৷ রাগে দুঃখে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আম্মু আব্বু কথা বলতেছিলো আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো৷ চুপ হলো কেন? কী ষড়’যন্ত্র করতেছে আমার নামে? আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম, ‘ আমার নামে কী বলছো? কী অ’নি’ষ্ট ছড়াচ্ছো? কী দু’র্নাম করছো? বলো! জবাব দাও! উত্তর দাও ‘
-‘ থাপ্পড় খাওয়ার আগে এইখান থেকে যা, বে’ক্কেল ‘
আব্বু বলল, ‘ তোমার মা তোমার ভালোর জন্য বলছিলো ‘
-‘ ওওওও, আমার ভালো! তোমার এই গুনবতী, বুদ্ধিমতী বউ আমার ভালো চায়? আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে?’
-‘ মামনি তুমি এখন বড় হয়েছে। মায়ের সাথে এভাবে কথা বলে না। যাও তৈরি হও। হৃদয়ের বোন আসবে ‘
-‘ ননদ আসবে কেন?’
আম্মু বলল, তোর শ্বাশুড়িও আসবে ‘
-‘ কেন? ‘
-‘ আসবে এমনিই ‘
-‘ শ্বশুর আসবে না?’
আম্মু কিছু না বলে চলে গেলো। আব্বুর পাশে বসে বললাম, শ্বশুর কেন আসবে না?
-‘ উনিও তোমার বাবা হয় মা ‘
-‘ আমার শ্বশুর ডাকতে দারুণ লাগে 🤭’
-‘ এগুলো বলে না ‘
-‘ শ্বাশুড়ি কে শ্বাশুড়ি ডাকতে দারুণ লাগে ‘
-‘ এগুলো বলতে হয় না ‘
-‘ ননদ কে ননদিনী ডাকতে দারুণ লাগে ‘
-‘ এগুলো বলবে না ‘
-‘ আমার ভাল্লাগে। জামাইকে জামাই ডাকতে তো আরও ভাল্লাগে ‘
আব্বু এবার উঠে চলে গেলো। আম্মু কোথা থেকে যেন এসে আমার মাথায় বা’রি দিয়ে বলল, বাপের সামনে এমন করতে লজ্জা করে না?
-‘ না করে না। জামাইকে জামাই বলবো না তো কী বউ বলবো নাকি? ‘
-‘ থা’প্পড় খাবি মুন। যা এইখান থেকে ‘
-‘ হুম,, চলেই তো যাচ্ছি। আর আসবো না। শ্বশুরবাড়ি একটাবার খালি যাই আর আসবো না ‘
-‘ আসিস না। আমার ঘরবাড়ি পরিষ্কার থাকবো ‘
-‘ মানে কী? আমি কী সব ময়লা করে দেই নাকি? কত বড় অপ’মান! সবাই খালি অপ’মান করে। ট্রাস্ট মি একদিন আমি সবার প্লেট থেকে গুনে গুনে আলু খাবো। একটা একটা করে হিসাব নিবো। ‘
.
.
দুপুরের দিকে শ্বাশুড়ি আর ননদ আসলো। খাওয়া দাওয়ার পর সবাই বসে গল্প করছিলো তখন আমি গিয়ে বললাম, জানেন? আপনার ছেলেকে একটু বলেছিলাম আমাকে যেন বাহিরে একটু ঘুরতে নিয়ে যায়। উনি মানা করে দিলো। সাথে একটা থাপ্প’ড় ও দিয়েছে জানেন? ‘
উনি আহাম্মকের মতো আমার দিকে তাকায় আছেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে শয়’তানি হাসি দিলাম। মনে মনে চিল্লায় ওনাকে বলছি, ” এটা কেন বলছি জানেন? ওইদিন আমাকে দিয়ে খিচুড়ি রান্না করাইছিলেন। আমার আলু খাওয়া আটকাইছিলেন। আমি ভুলি নাই। মনের দাগ কখনো যায় না। আমি প্রতি’শোধ নিতে আসছি। মেনে কাহা থানা? মে লটুং ঙ্গি। হাহ হাহ হা।
আমার শ্বাশুড়ি ইতিমধ্যে ঘর আকাশে তুলে ফেলছেন। উনি চিল্লাচ্ছে আর ওনাকে বকতেছেন। শেষে বললেন, এখনই যেন আমাকে নিয়ে বের হয়। আমি নাচতে নাচতে রেডি হলাম। উনিও রেডি হলো। এরপর আমরা দুজনে বের হলাম।
.
.
.
প্রায় একঘন্টা যাবত ঘুরতেছি। একটা জামাও পছন্দ হচ্ছে না। ওনাকে বললাম, দেখছেন একটা জামাও সুন্দর না।
উনি বললেন, ‘ সাবধানে ভালো করে দেখো পছন্দ হবে। তাছাড়া তোমার হাতে হীরা গেলেও কয়লা হয়ে যাবে ‘
মুগ্ধ নয়নে ওনার দিকে তাকালাম। উনি এতো ভালো কথাও বলেন? কিন্তু হঠাৎই খেয়াল হলো উনি ভালো কথা বলেন নি। উনি বলেছেন ” তোমার হাতে হীরা গেলেও কয়লা হয়ে যাবে ” আর আমি শুনেছি ” তোমার হাতে কয়লা গেলে হীরা হয়ে যাবে। ” হায় হায়! উনি আমাকে আবারও অপ”মান করলেন?
-‘ আপনি আমাকে আবারও অপ”মান করেছেন ‘
উনি কিছু না বলে নিচে চলে গেলো। আমি হনহন করে থার্ড ফ্লোরে এসে পড়লাম। আমাকে উপরে দেখে উনি ফোন দিলেন,
-‘ ওইখানে কী করো?’
-‘ ডান্স করি দেখবেন?’
-‘ নিচে আসো বাসায় যাবো ‘
-‘ না। ‘
-‘ এমন কেন করছো?’
-‘ কেমন? আমি রাগ করেছি এইবার আমার রাগ ভাঙ্গান ‘
-‘ কীভাবে?’
-‘ ওই যে বয়ফ্রেন্ডরা যেভাবে জানু, বাবু, সোনা বলে সেভাবে ‘
-‘ ছিঃ নিচে আসো ‘
-‘ কীসের ছিঃ? বলেন নাহলে আমি আসবো না ‘
-‘ আচ্ছা ঠিকাছে বলছি’
-‘ হুম বলেন ‘
-‘ বউ প্লিজ নিচে আসো ‘
-‘ ফাটাফাটি এবার সাথে একটু বেবি, আরও কিছু যোগ করেন আরও দারুণ শোনা যাবে ‘
-‘ বেশি বেশি করতেছো ‘
-‘ ঠিকাছে বাই ‘
-‘ আচ্ছা! শোনো,, (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) ভালো বউ, পিচ্চি বউ, ন্যাকা বউ, ঢংঙ্গি বউ, পিলিস আসো৷ বাসায় যাবো। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। পিলিস বউ আসো৷ ‘
.
.
.
চলবে