#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-১৯
উনি বলেছিলেন উনি নাকি আমাকে ৬/৭ বছর আগে থেকেই চিনেন। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো আমি ওনাকে চিনতামই না। কখনো দেখিও নি। আমি কোন ক্লাসে পড়ি তখন সেটা উনি উল্লেখ করেন নি, জিজ্ঞেস করলে বললেন সে নাকি জানে না। আমাকে দূর থেকে শুধু দেখেছেন।
” পরিক্ষার পর বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা সবাই একসাথে সাজেক যাবো। আমি ছাড়া সবাই রাজি ছিলো। ওরা যখন প্ল্যান করতে ব্যস্ত তখন আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি। বাবা মা রেখে কোথাও যাওয়া, দূরে কোথাও বেড়ানো এইসব আমার একদম পছন্দ না। আমি কখনো যাইও নি, আর যাবোও না। ওখান থেকে পালিয়ে আসতেই রাস্তায় দেখলাম একটা মেয়ে ঝালমুড়িওয়ালার সাথে খুব জোরে জোরে কথা বলছে। অভদ্রতা আমার একদম পছন্দ না আর সেখানে এই মেয়ে রাস্তায় চিল্লাচ্ছে, এর কী বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই? দোকানের কাছে গিয়ে মেয়েটাকে কিছু বলবো তখনই শুনলাম মেয়েটা বলছে, ‘ মামা একেবারে ঢেলে ঢেলে আলু দিবেন ঠিকাছে? ঝোল কম দিলেও চলবে কিন্তু আলু কম দিলে আমি মানবো না। আ’ন্দো’ল’নও করতে পারি আলুর জন্য। তাই আলু দিবেন, বেশি করে ঝাল দিবেন। ‘
-‘ আমার কাছে অনেকেই ঝালমুড়ির জন্য আসে, কিন্তু তোমার মতো কেউ আসে না। তুমিই আমার দেখা প্রথম আজুবা! ‘
মেয়েটা হাসতে হাসতে বলেছিলো, ‘ আসবে কীভাবে মামা? আমার কপি তো একটাই। কেউ ফটোকপি করে নি যে…..
মেয়ের কথা শুনে সেখানেই অজ্ঞা’ন হয়ে গেছিলাম। পা’গ’ল ভেবে আর কাছে যাই নি, কিছু বলিও নি। এরপর প্রায় এক সপ্তাহের মতো ঘরবন্দী হয়ে থাকি যেন বন্ধুরা না খুঁজে পায়৷ যখন জানতে পারলাম ওরা চলে গেছে তখন বের হলাম। অবাক হওয়ার বিষয় সেদিন মেয়েটার সাথে আবার দেখা হয়ে গেছিলো। আগের সময়, আগের রাস্তা, আগের ঝালমুড়িওয়ালা তাই আমার চিনতে অসুবিধে হয় নি। মেয়েটা আজও চিল্লাচিল্লি করছিলো। রাস্তার মানুষজন ওকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখছিলো কিন্তু মেয়েটা পাত্তাই দিলো না। মনের সুখে চিল্লিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে তাকানোর সময় তার নেই। ওর চিল্লানোর মূল কারণ হলো আলু। লোকটা আলু কম দিয়েছে কেন এই নিয়ে করছে ঝগড়া। বয়স কত অনুমান করতে পারিনি কিন্তু খাটোখুটো সেই মেয়েটার চিল্লাতে কষ্ট হচ্ছিলো বুঝতে পারছিলাম। গলা উঁচু করে লোকটার সাথে কথা বলছিলো। ছোট তো কী হয়েছে? গলায় জোর আছে। মেয়েটার উপর বিরক্ত হতে হতে কেমন যেন একটু কৌতুহল জাগলো মনে। দাঁড়িয়ে দেখলাম ওকে৷ কিছুক্ষণ পর দোকান থেকে সরে জোরে জোরে বলতে আড়ম্ভ করলো, ‘ এই বেডা পা’গ’ল! এই বেডা টাকা বেশি নেয়। ১০ টাকার ঝালমুড়ি ৩০ টাকায় ও দিচ্ছে না। আপনারাই বলেন এর থেকে কী কিছু খাওয়া যায়? নিঃসন্দেহে এটা বা’টপা’রি। আমি ওনার থেকে আর ঝালমুড়ি খাবো না, আপনারা কেউ খাবেন না। আমি বইয়ে পড়েছি আগে দেশে রা’জাকার ছিলো, পাকি’স্তানি হা’না’দার বাহি’নী ছিলো যারা আমাদের উপর অনেক অত্যা’চার করেছে। আর ইনি ঝালমুড়ির নামে করছে, এটা কত খা’রা’প আপনারা জানেন? বোঝেন? আমি মুন এর বিচার চাই ‘
ওকে দেখতে আমার অনেক সমস্যা হচ্ছিলো কেননা ওইখানে অনেক মানুষ ওর কথা শুনছিলো। অনেক মানুষ দেখে আমি ভীড় ঠেলে সামনে যাই। ঝালমুড়িওয়ালা ওকে থামানোর আপ্রান চেষ্টা করছিলো কিন্তু কে শোনে কার কথা! হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটা মহিলা এসে মেয়েটার গালে থা’প্পড় বসিয়ে দিলো। আমরা সবাই অবাক৷ মেয়েটা তখন বলে উঠলো, ‘ আম্মু তুমি আমাকে মা’র’তে পারলে?তোমার একটাবারও কী বু’ক কেঁপে উঠলো না? ‘
-‘ এইসব ড্রামা বন্ধ করবি নাকি আরেকটা দিবো? ‘
ও আমাদের উদ্দেশ্য করে বলল, ‘দেখেছেন আপনারা? আপনারা দেখেছেন? আমার মা আমাকে কখনো মা’রে নি, আমার জন্মের পর কেউ আমার শরীরে একটা ফুলের টোকা দিতে দেয় নি। সেখানে সবার সামনে আমার মা আমাকে…. ‘
আর কিছু বলতে পারে নি। মহিলাটা ওর কানে ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। লোকজন সমালোচনা করার মতো হয়তো কিছু খুঁজে পায় নি, তাই কিছুই বলল না। কিন্তু কিছু কিছু লোক ঝালমুড়িওলার কাছে গিয়ে তাকে দু’চারটা ধম’ক দিলো, বাচ্চাদের কাছ থেকে এত টাকা কেন নিচ্ছে – এই নিয়ে। আমি আসল কাহিনি জানি তাই আমি আর ওইখানে থাকলাম না। আমি দাঁড়িয়ে থেকে স্পষ্ট দেখেছিলাম মেয়েটা ঝালমুড়িওয়ালাকে ৫ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, ‘ নিলে নেন নাইলে গেলাম ‘
লোকটা বলছিলো৫ টাকা দিয়ে এখন ঝালমুড়ি হয় না বড় প্যাকেট বেশি মুড়ি টাকাও বেশি।
মেয়েটা ওনাকে পাত্তাই দিলো না। ঝালমুড়ি মনে সুখে খেতে লাগলো৷ এক প্যাকেট শেষ আবার যখন চাইলো তখন লোকটা ঝালমুড়ি দিবে না বলে দিলো। আর এই মেয়ের এইসব শুরু। চেহারায় স্পষ্ট নিব্বি নিব্বি ভাব অথচ কতবড় স’র্ব’না’শ করে দিলো। মায়ের সামনেও অভিনয় ছাড়লো না। কত ভ’য়ং’ক’র মেয়ে। যেতে যেতেও অভিনয় করে গেলো। একে পাগ’লের ক্যাটাগরিতে ফেলবো নাকি কী করবো বুঝলাম না। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি ঝালমুড়িওয়ালার পক্ষ নিলাম। অনেক তর্ক-বিতর্ক হলো এরপর একটা সময় সবাই চলে গেলো৷ আমিও চলে আসলাম। মনে মনে দোয়া করলাম এই মেয়েকে যেন জীবনে আর চোখে না দেখি। কিন্তু আমার ভাগ্য! একদিন যেতে না যেতে ওকে আবার দেখলাম। আমি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন মেয়েটাকে দেখি ঝালমুড়িওয়ালার কাছে হাতজোড় করে কী যেন বলছে। আমি ভীষণ অবাক হলাম। একটু কাছে যেতেই শুনলাম,
-‘ আঙ্কেল পিলিস দেন ‘
-‘ ম’ইরা গেলেও না। ‘
-‘ জীবনেও এমন করবো না। বেশি না আমাকে আলুর একটা পিস দিয়েন, ভাঙ্গা দিলেও হবে সমস্যা নাই। আলু হইলেই হইছে৷ আর লো’ভ করবো না। আমি বুঝে গেসি লো’ভে পা’প পা’পে মৃ’ত্যু ।
-‘ বুঝলে এবার বাসায় যাও। আমার কাছে আর এসো না তো বাপু। এতো ঝা’মেলা আর নিতে পারি না। ‘
-‘ আঙ্কেল পিলিস ‘
-‘ যাও তো ভাই, সরো ‘
-‘ আঙ্কেল এমন করবেন না। পিলিস! আপনি জানেন আমি আপনাকে কেন আঙ্কেল ডাকি? কারণ আমার আঙ্কেল একটা দূর্ঘ’ট’নায় মা’রা গিয়েছে। আমি আপনার মধ্যে ওনাকে দেখি। আমাকে পিলিস একটু ঝালমুড়ি দেন ‘
লোকটা একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ দূর্ঘ’টনায় মা’রা গেসে? কিয়ের দূর্ঘটনা? ‘
মেয়েটা খেতে খেতে বলল, ‘ আলু.. ইয়া থুক্কু কী জানি? ( কিছুক্ষণ ভেবে) রাস্তা দূর্ঘ’টনা! ‘
কোমড়ে হাত দিয়ে উনি বললেন, ‘ কেন? হেয় কী রাস্তার লগে বা’রি খাইছে? ‘
-‘ আরে না না। এমনিই গাড়ি গাড়ি, ওই যে বড় বড় গাড়ি আছে না? ওইগুলা। ‘
বলেই হাটা ধরলো। লোকটা টাকা চাইলে দুই কয়েন দিয়ে বলল, ‘ একেবারে পাক্কা ১০ টাকা দিসি। কালকে বোনাস আলু দিবেন ‘
.
আমি কথা শোনার জন্য ওদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতেছিলাম মেয়েটাকে আসতে দেখে সোজা হয়ে দাড়ালাম। হাটতেছিলো আর কী যেন প্যাকেটে খুজতেছিলো৷ হাতে প্যাকেট থেকে কী যেন বের করে ফেলে দিলো। আমি ওর সামনেই ছিলাম। সেগুলো আমার জুতোর উপর পড়লো। তাকিয়ে দেখলাম মরিচ। রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাতেই ও ভোঁ দৌড় দিলো। ওর পেছনে আমিও গেলাম। মাথা আমার প্রচন্ড গর’ম। পাশের একটা গলিতে ঢুকে দেখলাম ও নাই। আশেপাশে তাকিয়ে ওকে খুজতেছি তখনই দেখলাম মধ্যবয়স্ক একজনকে জড়িয়ে ধরে ও এদিকে আসতেছে। আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো আমি ওদের কথপোকথন শুনছিলাম।
-‘ আঙ্কেল তুমি আমাকে বলছিলা আজকে আইসক্রিম খাওয়াবা। এখন খাওয়াও’
আমি ওর দিকে শুধু তাকিয়েই থাকলাম। একটু আগে ও যাকে মৃ’ত বলে কষ্ট পাচ্ছিলো সে বেঁচে আছে! লাইক সিরিয়াসলি? একটা মানুষ আলু আর ঝালমুড়ির জন্য এই পর্যায়েও যেতে পারে?
.
.
চলবে
( রিচেক দেই নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। আপনাদের যে প্রশ্ন ছিলো সেগুলোর উত্তর হয়তো পেয়ে যাচ্ছেন।)