#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-২৫
সকালবেলা,,
দুজনেই জেগে আছে। কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। দুজনেই লজ্জা পাচ্ছে। মুন পেছনে তাকালো, হৃদয় কে অন্যদিকে ঘুরে থাকতে দেখে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো৷ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো হৃদয় এখনো আগের মতো করেই শুয়ে আছে। পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো হৃদি দাঁড়িয়ে কার সাথে যেনো ফোরে কথা বলছে।
-‘ কার সাথে কথা বলো হুম?’
-‘ আম্মু আব্বু আসতেছে, আমাকে বলেছিলো রুটি আলুভাজি করতে আমি করেছি। খেয়েও নিয়েছি। এখন তোমরা খেয়ে নাও। আমার কোচিং-এ যেতে হবে। ‘
বলেই হৃদি চলে গেলো৷ মুন একটা প্লেটে দুইটা রুটি আর একটু ভাজি নিয়ে খেতে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর হৃদয় আসলো৷ মুন হৃদয়কে আসতে দেখে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে, প্লেটের দিকে তাকালো। হৃদয়ও মুনের দিকে একবার তাকিয়ে উলটোদিকে ফিরে গেলো৷ হৃদি তখন ব্যাগ কাধে নিয়ে এইদিকেই আসছিলো হৃদয় কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। ডাইনিং টেবিলে মুনকে খেতে দেখে আরও অবাক হলো। মুন হৃদয়ের দিকে তাকাচ্ছে না, হৃদয়ও মুনের দিকে তাকাচ্ছে না উলটো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।
-‘ তোমরা দুজন দুদিকে কী করছো? ‘
-‘ হৃদি আমাকে কিছু খেতে দিবি? অনেক ক্ষুধা পেয়েছে ‘
-‘ ভাবিকে বললেই হতো, আমার দেরি হচ্ছে ‘
-‘ আচ্ছা আমিই নিয়ে নিচ্ছি ‘
বলেই রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। হৃদি একবার মুনের দিকে তাকিয়ে হৃদয়ের পিছু পিছু রান্নাঘরে গেলো। ফিসফিস করে বলল, ‘ তোমরা কী ঝ’গড়া করেছো?’
হৃদয় প্লেট হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। হৃদি তো জানে না ওদের মাঝে ঝগড়া থেকেও মারাত্ম”ক কিছু হয়েছে, তাই তো দুজন দুজনের সাথে চোখে চোখ মেলাতে পারছে না। হৃদিকে কিছু না বলে ডাইনিং রুমে আসলো। মুনের খাওয়া মাত্রই শেষ হয়েছে সে রান্নাঘরে যাচ্ছিলো তখনই হৃদয়ের সাথে ধাক্কা খেলো। একবার চোখাচোখি হতেই দুজন চোখ নামিয়ে নিলো। হৃদয় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, মুনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদি ওদের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কী হয়েছে তোমাদের? এমন করছো কেন? একবার মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো আরেকবার মাথা নিচু করে। ‘
মুন রান্নাঘরের দিকে ছুট লাগালো। হৃদয় ড্রইংরুমের বড় সোফায় বসে পড়লো। খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। হৃদি দুজনের দিকে তাকিয়ে ” পাগ’ল মেলা সব পাগ’ল মেলা ” বিরবির করতে করতে চলে গেলো। মুন দরজা লাগিয়ে চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে, হৃদয়ের খাওয়া শেষ করে ডাইনিং রুমে এসে দেখে মুন দাঁড়িয়ে আছে। মুনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ও আবারও সোফায় গিয়ে বসলো।
মুন চেয়ার ধরে আমতা আমতা করছে আর মনে মনে একশো একটা আফসোস করছে। কাল রাতে বাসর করাটা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। মনে মনে ” বাসর করার পরিনা’ম বাসর করার পরিনা’ম” বিরবির করতে করতে রুমে চলে গেলো। ওদিকে হৃদয় উঁকি মে’রে দেখলো মুন আছে কিনা। মুনকে কোথাও না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রান্নাঘরে যেতে যেতে বলল ” ল’জ্জা ল’জ্জা সব দো’ষ এই ল’জ্জার ”
______________________
দুপুরের দিকে বাবা মা বাড়ি আসলেন। ওনারা আসার পর থেকে হৃদয় আর মুনকে স’ন্দেহের চোখে দেখছেন। দুজন এমন ব্যবহার করছে যেনো এরা সাব্লেটে ভাড়া থাকে , কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। বাবা মায়ের কাছে গিয়ে বললেন, ‘ ওরা এমন করতেছে কেন?’
-‘ কী জানি। বেডা মানুষের কোনো ঠিক-ঠিকানা আছে? সকালে এক, দুপুরে এক, আর রাতে আরেক ঢং ধরে ‘
বাবা মায়ের দিকে “😒” এই ইমোজির মতো তাকাতে তাকাতে চলে গেলো।
মুন খাটের একপাশে হেলান দিয়ে বসে আছে৷ হৃদয় চশমা ছাড়া বই পড়ছে আর একটু পর পর চোখ ডলছে৷ মুনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ভাবছে ‘ইসস একটু যদি দিয়ে যেতো ‘। ওদিকে মুন চশমার দিকে তাকিয়ে ভাবছে ‘ এসে একটু যদি নিয়ে যেতো চশমা টা, এর এতোই ল জ্জা কোথা থেকে আসে? চশমা ছাড়া বই পড়তে পারে অথচ বউয়ের সাথে একটু সেধে সেধে কথা বলতে পারে না? এতোই ল জ্জা? ‘
হৃদয় মুনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে ‘ এসে একটু দিয়ে গেলো না! থাক আজ চশমা ছাড়াই বই পড়বো আমি এতোটাও কা না নই ‘
হঠাৎ মুন দাঁড়িয়ে গেলো। মুনকে হঠাৎ দাঁড়াতে দেখে হৃদয় ভরকে গেলো। একটু কেশে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো। মুন যে হৃদয়ের দিকেই তাকিয়ে সেটা হৃদয় ভালো মতোই বুঝতে পেরেছে। মুন ধুপধাপ কদম ফেলে হৃদয়ের গা ঘেঁষে বসে পড়লো। হৃদয়ের কপালে চিকন ঘাম দেখা দিলো। শার্টের হাতা দিয়ে ঘাম মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। মৃদু স্বরে বলল, ‘ একটু দূরে গিয়ে বসো ‘
মুন আগের মতো করেই বসে আছে। হৃদয় মুনের দিকে তাকিয়ে ওকে দেখলো। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ করে মুন বলল, ‘ এভাবে তাকাবেন না। নজ র লেগে যাবে যে। আম্মু কপালে টিপ দেওয়া কবেই ছেড়ে দিয়েছে ‘
হৃদয় দাঁড়িয়ে গেলো। জোরে জোরে কতগুলো নিঃশ্বাস নিলো। পড়ার টেবিলের উপর বইটা রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মুন মন খারা প করে বসে থাকলো। ও চেয়েছিলো সবকিছু স্বাভাবিক করতে এখন হৃদয় যে এতো অস্বাভাবিক আচরণ করবে এটা কে জানতো?
ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখলো হৃদয় নেই। মাকে জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন বাহিরে গিয়েছে। দরজার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এরপর লাফাতে লাফাতে রান্নাঘরে চলে। একটা বড় বাটিতে মুড়ি নিলো। তরকারি থেকে আলু নিলো, ঝোল নিলো সেগুলো মাখালো এরপর সোজা ড্রইংরুমে চলে গেলো৷ মা টিভি দেখছিলেন মুনকে মুড়ি খেতে দেখে বললেন, ‘ ভাত খাবে না? মুড়ি আনলে যে? ‘
-‘ খেতে ইচ্ছে করছে না। ‘
-‘ ওও ‘
-‘ আপনি খাবেন? ‘
-‘ না, তুমি খাও ‘
মুন নিজের মতো করে মুড়ি খাচ্ছে মা মাঝেমধ্যে ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। এরপর হঠাৎ বললেন,
-‘ তোমার এখান থেকে আমাকে একটু মুড়ি দিবে? ‘
মুন খুশি হয়ে দৌড়ে রান্নাঘর থেকে একটা বাটি নিয়ে আসলো। বাটি ভর্তি মুড়ি মায়ের দিকে এগিয়ে দিতেই উনি খেতে আরম্ভ করলেন। মুন মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
-‘ জানো? আমার শ্বাশুড়ি আর আমি এই সোফাতে বসে আগে মুড়ি মাখানো খেতাম। আমার মা মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসলে আমরা তিনজনে মিলে খেতাম। মনে হতো আমরা তিন বান্ধুবি! অনেক সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো ‘
মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো মুন, এই বুঝি দুই এক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো! কিন্তু না পড়লো না। উনি শক্ত হয়ে মুড়ি খাচ্ছেন আর খুব মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছেন।
চলবে
( রি-চেক দেই নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। পরবর্তী পর্বে শেষ করে দেই? কী বলেন?)