১০ মিনিট ধরে জ্যামে আটকে আছি।আর কতক্ষন বসে থাকতে হবে জানি না।অফিস ছুটি হয়েছে ঘন্টা খানেক হবে।আরদ্ধ হঠাত করেই আজ পার্কে ডেকেছে দেখা করার জন্যে।অন্যদিন সে নিজেই চলে আসে অফিসের সামনে আমাকে নেওয়ার জন্যে।কিন্তু আজকে ব্যতিক্রম। নিশ্চয়ই সিরিয়াস কিছু ঘটেছে।৫ মিনিট দেরী হলেই যে ছেলে ৫০ বার কল দিয়ে অস্থির করে তোলে সে আজ শুধু একটা মাত্র ম্যাসেজ দিয়েছে।
-কোথায় তুমি?
-এইতো চল এসেছি।আর ১০ মিনিট।জ্যামে আটকা পরেছি।
ম্যাসেজের রিপ্লাইটাও ছিল অতি সংক্ষিপ্ত।
-আচ্ছা আসো।
আরদ্ধ যখন বড় কোন ঝামেলায় পড়ে বা টেনশনে থাকে তখন সে এরকম শান্ত হয়ে থাকে।আরদ্ধের নিস্তব্ধতাকে এজন্যে আমি খুব ভয় পাই। ও যখন শান্ত থাকে তখন ভয়ংকর কোন চিন্তা ভাবনা ওর মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।কিন্তু হঠাত করে৷ আজ এমন কি হল….!?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই গন্তব্যে পৌছে গেলাম।রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখি আরদ্ধ পেছন ফিরে বসে আছে।পড়নে একটা কালো শার্ট আর ডার্ক ব্লু জিন্স।আমি এক কদম থেমে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।এই ছেলেটা আসলেই আমাকে পাগল করে ছাড়বে।পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে আরদ্ধের পেছনে দাঁড়ালাম।সামনে উকি দিয়ে দেখি ও হাতে ছোট একটা ডাল নিয়ে একটা একটা করে পাতা ছিড়ছে।কোন কিছু টস করছে হয়তো।ওর কাজে ব্যাঘাত ঘটল আমার হাতের ছোয়া পেয়ে।আলতো করে ওর চোখ দুটো চেপে ধরলাম।কয়েকসেকেন্ড পাথরের মূর্তির মত চুপ করে বসে থাকল সে। ঠিক তার কিছুক্ষন পরেই তড়িত বেগে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
.
.
আরদ্ধ দুহাতে শক্ত করে আমাকে জাপটে ধরে আছে।আমার ঘাড়ের উপর ও ঘন ঘন গরম নিশ্বাস ফেলছে।ওর প্রতিটা ছোয়া আমাকে পাগল করে তুলছে।আমি দু হাতে আরদ্ধকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম।খানিকক্ষন পর আরদ্ধ আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবার আগের জায়গায় গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল।আরদ্ধ মুখটা বাংলার পাচের মত করে রেখেছে।নিশ্চয়ই কোন কিছু নিয়ে চিন্তায় আছে।দুধে আলতা চেহারায় বিষন্নতার কালো ছায়া যেন কালবৈশাখী শুরু পূর্বাভাস।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে উঠলাম
-শুধু মাত্র জড়িয়ে ধরার জন্যে এত জরুরি তলব?
আরদ্ধ চোখ মুখ শক্ত করে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল।কিন্তু পর মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠল
-ইনা ড্যাড আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে।
আরদ্ধের কথা শুনে আমি হেসে বললাম।
-আরে এটা তো গুড নিউজ।তুমি তো কবে থেকেই বিয়ে করতে চাচ্ছ।আংকেলকে বলে বিয়েটা সেরে ফেল।
-ড্যাড তার বিলিওনিয়ার বন্ধুর বিলেত ফেরত মডার্ন মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
আরদ্ধের কথাটা শুনে আমি যেন জমে গেলাম।কি বলব ভাষা হারিয়ে ফেলেছি যেন।নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি মুখে বললাম
-বেশ তো।ক্ষতি কি!সে অন্তত আমার মতো তোমাকে জ্বালাবেনা।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই আরদ্ধ পাশ ফিরে আমার গলা চেপে ধরে দাতে দাত চিবিয়ে বলল
– তুমি আমার খুন করলেও আমি তোমাকেই চাই।বিয়ে করলে আমি শুধু তোমাকেই করব।
আরদ্ধ খুব শক্ত করে আমার গলাটা চেপে ধরেছে।আমার দম আটকে আসছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।চোখের কোনে পানি দেখে আরদ্ধ আমাকে ছেড়ে দিল।পাশ ফিরে শান্ত হয়ে বসল।আমি জানি এখন ওর নিজের উপর রাগ হচ্ছে খুব।আমার সামান্য কষ্টও সে সহ্য করতে পারে না।কিন্তু ওকে ছেড়ে যাবার কথা বললেই রাগ যেন সীমা ছাড়িয়ে যায় তার। আরদ্ধ কিছু বলবে তার আগেই আমি ওর ঠোট দুটোতে ঠোট ডুবিয়ে দিলাম।ঠোটে ঠোট বুলিয়ে ওর মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলাম বুকের মাঝে।আরদ্ধ ছোট বাচ্চাদের মত আমাকে জাপটে ধরে আছে।আমি ওর কপালে চুমু একে বললাম
-তোমার মনে আছে তুমি বলেছিলে তুমি শুধু আমার।নিজের জিনিস কিভাবে ধরে রাখতে হয় জানি আমি।
আরদ্ধ হালকা হাসার চেস্টা করে আমার হাত দুটো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
.
.
আরদ্ধকে বিদায় জানিয়ে বাসার দিকে পা বাড়াব তখনি পেছন থেকে হাত টেনে বলে উঠল
-আমাকে সাথে নেবে?
আমি হেসে মাথা নাড়ালাম।
ছেলেটা খুব কম কিছু চেয়েছে আমার কাছ থেকে।কিন্তু তার কোন চাওয়াই আমি অপূর্ন রাখিনি।
আমেরিকা থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে আরদ্ধ তার বাবার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির দেখাশোনা করছে ।আমি তখন সদ্য গ্রাজুয়েশন পাশ করে ইন্টার্ন এর জন্যে এপ্লাই করেছি।আরদ্ধের সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিল বেশ নাটকীয় ভাবে।আরদ্ধকে প্রথম৷ যেদিন দেখেছিলাম মনে হচ্ছিল যেন কোন জীবন্ত মেশিন।কাজের বাইরে কোন কিছুই যেন তার চোখে পড়ে না।দূর্ভাগ্যবশত যেদিন আমার ইন্টারভিউ এর ডেট ছিল সেদিন কোম্পানির ম্যানেজার হঠাত করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সম্পূর্ন দায়িত্ব এসে পড়ল আমার ঘাড়ে।কোম্পানির এত বড় একটা ডিলের প্রেজেন্টেশন এর দায়িত্ব কেন আমার ঘাড়ে দেওয়া হল এটা ভেবেই অবাক হচ্ছিলাম আমি।সব চিন্তা ঝেরে হালকা কনফিডেন্স নিয়ে কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করলাম। কনফারেন্স রুমে বস সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
-Ladies and gentlemen today we have gathered here for a very important deal between our company and Reowyat group of Industries. Let me introduce the Managing Director of Reowyat group of industries
-MR.Aroddo Reowyat.
নাম শুনে ওর দিকে তাকাতেই যেন আমার সব কনফিডেন্স হাওয়ায় ভেসে গেল।ভাষাহীন চোখে নিষ্প্রান ঠোটে ফাইলের চেক করছে আরদ্ধ।আশেপাশের সবাই হা করে তার প্রতিক্রিয়ার জন্যে বসে আছে।কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।বস যখন বললেন আমাদের কোম্পানির হয়ে প্রেজেন্টেশন দিবেন
-ইনায়াত আফরিন।
আমার নামটা শুনে আরদ্ধ এক দফা চোখ তুলে তাকিয়ে আবার ফাইল দেখায় মন দিল।…….
#ইচ্ছেপূরন(জেদ পর্ব ১)
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
{