#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৩
নিস্তব্ধ রাত। চারপাশে মানুষের কোনো অস্তিত্ব, সারাশব্দ নেই। শোনা যাচ্ছে শুধুমাত্র ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। গা ছ*ম*ছ*মে পরিবেশ। এমন সময় একটা প*রি*ত্যা*ক্ত বাড়ির সামনে একটা কালো গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে নেমে আসলো একজন লোক। তার সাথে আরও কিছু লোক নামলো। লোক টা পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। পিছন পিছন বাকি লোকগুলোও আসতে লাগলো। বাড়ি টা দেখলে মনে হবে এটা কোনো ভূ*তে*র বাড়ি। অন্য কেউ হলে হয়তো ভ*য় পেতো। কিন্তু সেই ব্যক্তির মাঝে ভ*য়ে*র লেশমাত্র নেই।
ভিতরে প্রবেশ করতেই একটা লোক এগিয়ে আসলো। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,
— বস আপনি আসলেন তাহলে?
লোক টা চেয়ারে পায়ের উপর পা তু*লে বসে পড়লো। পা নাচাতে নাচাতে বললো,
— হ্যা রে কাল্লু। আসতে তো আমাকে হতোই। আমার উদ্দেশ্য যে এখনো সফল হয়নি! এমপি আবরার বিয়ে করেছে শুনেছিস তো নাকি?
কাল্লু অবাক হয়ে বললো,
— কি বলেন বস? বিয়ে করে ফেলেছে?
লোক টা চোখ বন্ধ করে বললো,
— হু। কেন তুই জানতিস না?
কাল্লু মুখ গো*ম*ড়া করে বললো,
— কিভাবে জানবো বস? সারাদিন তো এই ভূ*তে*র ঘরে ঢুকে থাকি। তবে আমার কিছু প্রশ্ন আছে বস…
লোক টা চোখ বন্ধ অবস্থায় ই বললো,
— কি প্রশ্ন কর।
কাল্লু কৌতূহলি কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— আচ্ছা বস আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন? আর এমপি বিয়ে করে ফেললো তারপরও আপনি এতো শান্ত কি করে? আর এতদিনে আপনি এমপি কে মা*রা*র কোনো চেষ্টাই বা করলেন না কেনো?
লোক টা চোখ খুলে হাসলো। যেনো সে জানতো কাল্লু এমন কিছুই প্রশ্ন করবে। সে শান্ত কণ্ঠে বললো,
— সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। সেই সময় ওই আবরার আমাকে ধরার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। তখন যদি আমি ওকে মা*রা*র চেষ্টা করতাম তাহলে নিজেই হয়তো ফেঁ*সে যেতাম। তাই নিশ্চুপ ছিলাম আমি। যাতে করে আবরার শা*লা আমার কথা ভুলে যায়। আর এতদিনে ওর মাথা থেকে হয়তো আমার ব্যাপার অনেকটাই বেরিয়ে গেছে। ঠিক এই সময়টার অপেক্ষাই আমি করছিলাম। যখন ও আমার কথা অনেকটাই ভুলে বসবে তখন ওর উপর অ্যা*টা*ক করবো আমি। তবে শা*লা নিজে আর নিজের পরিবার কে এতো ক*ড়া সি*কি*উ*রিটির মধ্যে রাখে যে কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
কাল্লু বুঝলো তার বসের প্ল্যান। তার বস বড্ড চালাক এটা মানতেই হবে। সে উদাস কণ্ঠে নিজের বস কে বললো,
— বস আমার আর এমন লাইফ ভালো লাগছে না। কিছু একটা করুন। আর কতদিন এই ভূ*তে*র বাড়িতে থাকবো? বাইরেও যেতে পারি না। যদি ওই এমপির লোকেরা ধরে ফেলে!
কাল্লুর কথা শুনে শ*য়*তা*নি হাসি দিলো লোক টা। হুট করে নিজের পকেট থেকে গা*ন বের করে কাল্লুর দিকে তা*ক করলো সে। চ*ম*কে উঠলো কাল্লু। ভী*ত কণ্ঠে তো*ত*লাতে তো*ত*লাতে বললো,
— ব… বস ক… কি করছেন?
লোক টা এবার শব্দ করে হাসতে লাগলো। তার হাসির শব্দে অ*ন্ত*রা*ত্মা কেঁ*পে উঠলো কাল্লুর। লোক টা হাসতে হাসতে বললো,
— কেনো তুই ই তো বললি তোর আর এমন লাইফ ভালো লাগছে না। তাই তোকে এমন লাইফ থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করছি!
কাল্লু বোধহয় এবার কেঁ*দে*ই ফেলবে। সে কাঁ*প*তে কাঁ*প*তে হাত জো*র করে বললো,
— এটা কি বলছেন বস? আমি ম*র*তে চাই নি। আমি বাঁচতে চাই। এমন করবেন না বস। এতগুলো বছর ধরে আপনার গো*লা*মী করছি। আপনি কি করে আমার সাথে এমন টা করতে পারেন?
লোক টা নিজের গা*ন কাল্লুর বুক বরাবর তা*ক করে বললো,
— মাঝে মাঝে মালিক কে বাঁচাতে গো*লা*মদের জীবন ত্যা*গ করতে হয় জানিস না? তুই আর কোনো কাজের নেই। ওই আবরার শা*লা তোকে পেলে আমিও ধরা পড়ে যাবো। তুই আমার অনেক বেশি কাছের লোক ছিলি তাই তোকে মা*র*তে চাই নি। কিন্তু এখন আমার মা*র*তেই হবে তোকে। নাহলে আমার এতো বছরের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে তা তো আর আমি হতে দিতে পারি না।
কথা শেষ করেই কাল্লুর গায়ে শু*ট করে দিলো লোক টা। মাটিতে লু*টি*য়ে পড়লো কাল্লু। চি*র*ত*রে চোখ বন্ধ করার আগে চোখের সামনে ভে*সে উঠলো পরিচিত একটা মুখ। কানে বা*জ*তে লাগলো কিছু কথা।
— “লো*ভে পা*প, পা*পে মৃ*ত্যু”।
হ্যা এই কথা তাকে তার স্ত্রী বলেছিলো। একটা এতিম মেয়ের সাথে প্রেম ছিলো তার। প্রেম করে বিয়ে করেছিলো দুইজন। মেয়ে টা তাকে বড্ড ভালোবাসতো। কিন্তু যখন জানতে পারে সে খা*রা*প কাজ করে তখন অনেক বুঝিয়েছিল মেয়ে টা তাকে। পা*পে*র রাস্তা থেকে ফিরে আসতে বলেছিলো। কিন্তু কাল্লু তার একটা কথা শুনে নি। টাকার লো*ভে অ*ন্ধ ছিলো সে। এতোটাই অ*ন্ধ যে নিজের স্ত্রী কে মা*র*ধ*র করতো সে। একদিন তার স্ত্রী কে এতোটাই মা*র*ধ*র করেছিলো যে মেয়ে টা না ফেরার দেশে চলে যায়। তখন এই বসের সহায়তায় নিজের স্ত্রী কে মাটি চা*পা দিয়েছিলো সে। সব স্মৃতি আজ তার চোখের সামনে ভা*স*ছে। আজ হয়তো তার মৃ*ত্যু*র পর তাকেও কোনো এক জায়গায় মাটির নিচে চা*পা দেয়া হবে। নিজের লো*ভে*র শাস্তি পেয়ে গেলো সে। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো কাল্লুর।
বস লোক টা চেয়ার থেকে উঠে কাল্লুর নাকের সামনে হাত দিয়ে চেক করলো সে ম*রে*ছে কিনা। শ্বাস পড়ছে না দেখে উঠে দাঁড়ালো সে। নিজের সাথে থাকা লোকদের বললো,
— লা*শ মাটি চা*পা দিয়ে দিও। কেউ যেনো এর হ*দি*স না পায়।
সবাই মাথা ঝা*কা*লো। লোক টা আর দাঁড়ালো না। দা*প*টের সাথে হেঁটে বেরিয়ে গেলো সে। যেনো কিছুই হয় নি।
——
— বন্যাআআ! তুমি কি আমায় ভা*সি*য়ে দিবে তোমার ক্রো*ধে*র বন্যায়!
বি*র*ক্ত হলেন মিসেস বন্যা। মনে মনে বললেন,
— বুড়ো হয়ে গেলো, তবুও আগের স্বভাব ছুটলো না।
মিসেস বন্যা কে পা*ত্তা দিতে না দেখে আব্বাস আহমেদ দুঃ*খি দুঃ*খি কণ্ঠে বললেন,
— ও গো বন্যা, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না আমার হা*হা*কার? আর কতক্ষন রা*গ করে থাকবে? এবার তো কথা বলো? আমার কর্ণ তোমার গলার মিষ্টি মধুর স্বর শোনার জন্য আ*কু*পা*কু করছে।
মনে মনে হাসলেন মিসেস বন্যা। বুড়ো টা কে একটু শা*স্তি দেয়া দরকার। তাই কোনো কথা বললেন না তিনি। চুপচাপ শুয়ে পড়লেন। একটু আগে আব্বাস আহমেদ ভু*ল*ব*শত মুখ ফ*স*কে বলে ফেলেছেন আবরারের বিয়েতে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি সব টা জানতেন। তারপর থেকেই মিসেস বন্যা মুখে তা*লা মে*রে বসে আছেন। তাকে না জানিয়ে কি করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো? ছেলে নাহয় তার অমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিন্তু এই বুড়ো সব জেনেও তাকে বললো না কেনো? কথা বলবেন না তিনি, কিছুতেই বলবেন না।
বউ কে কথা না বলেই শুয়ে পড়তে দেখে হ*তা*শ হলেন আব্বাস আহমেদ। বউ টা তার বড্ড জে*দি। একসময় এই জে*দে*র প্রেমেই পড়েছিলেন তিনি আর আজ…. হা হু*তা*শ করতে করতে তিনি ও শুয়ে পড়লেন। মনে মনে নিজের ছেলে কে ব*ক*তে ভুললেন না। ছেলে তার আরামে বউ নিয়ে আছে আর সে এক অ*স*হায় পুরুষ। তার বউ তার সাথে কথা বলছে না, ফিরেও তাকাচ্ছে না, পা*ত্তাও দিচ্ছে না। সব তার ওই ব*দ ছেলের জন্য হয়েছে।
——
ফুলে সজ্জিত কক্ষে গাল ফু*লি*য়ে বসে আছে আহি। রাদিফ অনেকক্ষণ ধরেই কথা বলার চেষ্টা করছে আহির সাথে। কিন্তু আহি পা*ত্তা দিচ্ছে না। কারণ একটাই। সে বাবার বাড়ি থেকে আসতে চাচ্ছিলো না। আর রাদিফ তাকে ধ*ম*কে ধা*ম*কে নিয়ে এসেছে। বিষয় টা এমন নয় যে সে বাবা মাকে ছেড়ে আসতে চাচ্ছিলো না। বিষয় টা হলো সে বান্ধুবী কে ছেড়ে আসতে চাচ্ছিলো না।
রাদিফ গালে হাত দিতে অ*স*হায় চোখে তাকিয়ে আছে নিজের বউয়ের দিকে। শেষে না পেরে হ*তা*শ কণ্ঠে বললো,
— হয়েছে তো! আর কতক্ষন গাল ফু*লি*য়ে রাখবে? আজকের রাত টা আমাদের জন্য কতো স্পেশাল বলো। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আ*ব*দ্ধ হলাম আমরা। আর তুমি সেই থেকে গাল ফু*লি*য়ে বসে আছো। এবার তো একটু কথা বলো। চকলেট দিলাম, ফুল দিলাম, গিফট দিলাম তবুও তোমার রা*গ গ*ল*ছে না?
রাদিফের দিকে একবার ত্যা*ড়া চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো আহি। আহি কে এবারও কোনো কথা না বলতে দেখে রাদিফ অ*ভি*মা*ন করে বললো,
— আচ্ছা যাও তোমার বান্ধুবীর কাছে। কথা বলতে হবে না আমার সাথে। আমি আজকেই চলে যাবো। তুমি থাকো তোমার বান্ধুবী কে নিয়ে।
রাদিফ কে সত্যি সত্যি উঠতে দেখে দ্রুত এগিয়ে আসলো আহি। রাদিফের কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো। বাঁকা হাসলো রাদিফ। শেষমেশ তার বউ টা লাইনে আসলো। আহি রাদিফের বুঁকে মাথা রেখে বললো,
— আমি রা*গ করেছি আর আপনি আমার রা*গ না ভা*ঙি*য়েই চলে যাচ্ছেন?
রাদিফ এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
— রা*গ ভা*ঙা*নোর চেষ্টা করি নি বলছো?
থ*ত*ম*ত খেলো আহি। আসলে এতক্ষন ধরে তার রা*গ ভা*ঙা*নোর জন্য অনেক চেষ্টাই করেছে রাদিফ। নিশ্চুপ হয়ে রাদিফের বুঁকে লে*প্টে রইলো আহি। মনোযোগ সহকারে তার হৃদস্পন্দন শুনতে লাগলো। রাদিফ আহির চুলে নাক গু*জে ফিসফিস করে বললো,
— বউয়ের রাগ ভা*ঙ*লো তবে?
আহি লাজুক স্বরে বললো,
— হু…
হাসলো রাদিফ। হঠাৎ মাথা উঁচু করলো আহি। উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,
— রা*গ তো ভে*ঙে গেছে। আচ্ছা আপনি কি যেনো বলছিলেন আবার চলে যাবেন… কবে যাবেন?
হা হয়ে গেলো রাদিফ। এ কেমন বউ রে বাবা! বান্ধুবীর সাথে বাপের বাড়িতে রাজত্ব করবে বলে জামাই কে ভা*গা*নোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। রা*গ হলো রাদিফের। তার কোনো দাম নেই নাকি? সে আহির উন্মুক্ত ঘাড়ে একটা কা*ম*ড় বসিয়ে দিলো। ফিসফিস করে বললো,
— আমাকে রা*গি*ও না আহি। আর একটা ফা*ল*তু কথা শুনতে চাচ্ছি না এখন।
অ*ভি*মান হলো আহির। তার কথা ফা*ল*তু মনে হয়? সে রাদিফের কোল থেকে নামতে চাইলে শ*ক্ত করে আঁ*ক*ড়ে ধরলো রাদিফ। কা*ম*ড় দেয়া জায়গায় আলতো করে চু*মু বসিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— ইটস রোমান্স টাইম জান। সো আর একবারও বি*র*ক্ত করবে না। এতক্ষন অনেক স*হ্য করেছি। এবার তোমার স*হ্য করার পালা।
ল*জ্জায় গাল লাল হয়ে আসলো আহির। সে তো শুধুমাত্র রাদিফ কে জ্বা*লা*নোর জন্য এমন করছিলো। আর তার ব*জ্জা*ত জামাই তাকে কিভাবে ল*জ্জা দিচ্ছে! নিজের ল*জ্জা লু*কা*তে রাদিফ কে ঝা*প্টে ধরে তার বুঁকে মুখ গু*জ*লো আহি। রাদিফ ও আলতো হেসে নিজের প্রিয়তমা কে আগলে নিলো।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। আজকের পর্বে আবরার আরশি নেই। অনেকেরই হয়তো ভালো লাগবে না। তবে পার্শ্ব চরিত্রগুলোকে নিয়েও একটু লেখা প্রয়োজন বলে মনে হলো আমার। যাই হোক, কেউ মন খা*রা*প করিয়েন না। আগামী পর্বে আবরার আরশির আসবে। আর আগামী পর্ব টা দ্রুত দেয়ার চেষ্টা করবো। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)