প্রেমিকার বিয়ের আসরে এসে তারই হবু বরকে বেদম মা*রছে শুভ্র। শুভ্রের এইরকম ব্যবহারে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যাচ্ছে। লিলি এসে শুভ্রকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।
বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত পাত্রপক্ষের কয়েকজন লোক এগিয়ে এসে এই গণ্ডগোল থামায়। তারা শুভ্রকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। শুভ্র অগ্নিদৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকায়।
লিলির বাবা সবার সামনে লিলি কে থা*প্পড় বসিয়ে দেয়। তিনি বলেন,
-“আজ শুধুমাত্র তোর জন্য এতগুলো মানুষের সামনে আমাকে অপমানিত হতে হলো। অনেক আগেই বলেছিলাম এই ছেলের সাথে ব্রেকআপ করে নিতে। কিন্তু তুই নিজের জেদে অটল ছিলি।”
লিলি তার বাবাকে পাশ কাটিয়ে শুভ্রের সামনে আসে। শুভ্রের মুখে থুথু ছিটিয়ে বলে,
-“কেন এমন করলে তুমি শুভ্র? আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমাকে ভুলে যেতে। আমার বাবা আমার জন্য অনেক ভালো ছেলে জোগাড় করেছে। ছেলে একজন বিসিএস ক্যাডার। তোমার মতো নয় যে বাবার টাকায় ফূর্তি করে বেড়ায়।”
শুভ্র এখন রেগে আছে। যখন সে রেগে থাকে তখন আর সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। শুভ্র চিৎকার করে বলে,
-“কি বললি তুই আমি আমার বাবার টাকায় ফূর্তি করে বেড়াই! তাহলে তুই এতদিন কি করেছিস? আমার সাথে ঘুরে বেড়িয়ে তুইও আমার বাবার টাকায় ফূর্তি করেছিস। আচ্ছা বল না কিসের অভাব ছিল আমার মধ্যে? তুই যখন যা চেয়েছিস তাই দিয়েছি। গাড়ি বাড়ি সব আছে আমার। আমি দেখতেও অনেক হ্যান্ডসাম। তাহলে কিসের জন্য তুই আমাকে ছেড়ে এই ছেলেটাকে বিয়ে করছিস?”
-“কি বললে গাড়ি বাড়ি সব আছে তোমার? মজা পেলাম। ভালো করে ভেবো দেখো তোমার কাছে কিছু নেই। যা আছে সব তোমার বাবার। আর ভবিষ্যতে তোমার বড় ভাই শীতলের হবে। তোমার বাবাই তো তোমাকে যোগ্য মনে করে না। কি যোগ্যতা আছে বলো তোমার? না পড়াশোনায় ভালো আর না বিজনেসের ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞান আছে। তোমার সাথে থাকা মানে ভবিষ্যত অন্ধকার। কোন পাগলও তোমাকে বিয়ে করবে না।”
সবার সামনে লিলির এমন কথা যেন শুভ্রের কা*টা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দেয়। শুভ্রের ইচ্ছা করছিল সবার সামনে লিলি কে গ*লা টিপে মা*রতে।
লিলির বাবার আদেশে শুভ্রকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। শুভ্র বাইরে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসছিল। তার চোখে স্পষ্ট প্রতিশোধের আগুন।
-“এক্সকিউজ মি এটাই কি মিস্টার লিখন হোসেনের বাড়ি?”
শুভ্র পিছনে ফিরে তাকায়। দেখতে পায় বোরকা পরিহিত একটি মেয়েকে। মেয়েটির গলার স্বর খুবই মিষ্টি। শুভ্র রেগে ছিল তাই রেগেই বলে,
-“কেন জানেন না? না জানলে বাইরে গিয়ে জেনে আসুন। আমাকে কেন বলছেন?”
শুভ্রের ব্যবহারে মেয়েটি কিছুটা হচকচিয়ে যায়। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
-“লোকটা কি পাগল নাকি?”
শুভ্র মেয়েটির কথা শুনতে পায়। রাগী চোখে তাকাতেই মেয়েটি চুপচাপ বাড়িতে ঢুকে যায়। শুভ্র আর সেখানে না থেকে চুপচাপ চলে আসে।
___________
-“আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।”
লিলির হবু বরের কথা শুনে মুহুর্তেই পুরো বাড়িতে যেন বিনামেঘে বর্জ্যপাত হয়। সবাই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিল। লিলির বাবা লিখন হোসেন এগিয়ে এসে বলেন,
-“এমন কথা বলো মা বাবা। আমার মেয়েটা সত্যি খুব ভালো। হয়তো একটা ভুল করেছিল কিন্তু….”
-“যেই মেয়ে বিয়ের আগে রিলেশনে ছিল, আবার তার বয়ফ্রেন্ড এসে বিয়ে বাড়িতে আমাকে মা*রধর করে সেই মেয়েকে আমি কিভাবে বিয়ে করব? সমাজে আমার একটা মান সম্মান আসে। আর তাছাড়া ঐ ছেলে যদি আমার কোন ক্ষতি করে দেয় তাহলে তার দায় কে নেবে? আব্বু তুমি চুপ আছো কেন? তুমি তো চেয়েছিলে নিজের বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে। এখন চুপ থাকলে তো চলবে না।”
নিজের ছেলের মুখে এমন কথা শুনে বরকত ইসলামের মাথা নিচু হয়ে যায়। মা-হারা ছেলে-মেয়েকে একা হাতে মানুষ করেছেন তিনি। তাই সবসময় তার ছেলে মেয়েরা তার আদেশ বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছে। কখনও কোন প্রশ্ন করেনি। আজ তার একটা ভুল সিদ্ধান্তে তার ছেলে তার দিকে আঙুল তুলছে। বরকত হোসেন বলেন,
-“তুই এই বিয়েটা করে নে বিহান। এমনিই অনেক নাটক হয়ে গেছে। আর নাটক করিস না।”
বাবার এহেন কথায় বিহান হতবাক হয়ে যায়।সে বলে,
-“এতকিছুর পরেও আমাকে বিয়েটা করতে বলবে তুমি? নিজের ছেলের থেকে বন্ধুর মেয়েই তোমার কাছে বেশি হয়ে গেল!”
-“আমি যা বলছি তাই কর। আমার কথা শুনে কখনো তোর খারাপ হয়েছে বল? তাহলে এখনও হবে না। শোন আমার কথাটা।”
বিহান এবার হাসে, সবার সামনে গগণবিহারী হাসে। আজ বাবার উপর জমানো সব রাগ যেন একেবারে ঢেলে দেয়,
-“ঠিকই বলেছ তুমি। তোমার কথা শুনে আমার কখনো খারাপ হয়নি। যখন যা বলেছ তাই করেছি। আমার গান ভালো লাগল, আমি গায়ক হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার কথায় আমি নিজের স্বপ্ন ভাসিয়ে বিসিএস ক্যাডার হলাম। আমার দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নও তুমি কেড়ে নিয়েছ। এই সব আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু বিয়ের মতো এত বড় একটা ব্যাপারে সেটা হবে না। বিয়ে কোন সাধারণ ব্যাপার নয় বাবা এটা সারাজীবনের ব্যাপার। আমি কিছুতেই মেয়েটাকে বিয়ে করবোনা কিছুতেই না।”
লিলি এবার এগিয়ে আসে। বিহানের কাছে অনুরোধ করে বলে,
-“প্লিজ আমাকে বিয়েটা করে নিন। এই বিয়েটা ভেঙে গেলে আমার বাবা লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। আমি কখনো আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার ফলাতে যাবো না। শুধুমাত্র আমার বাবার সম্মানের রক্ষার জন্য আমাকে বিয়ে করে নিন।”
বিহান বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকায়।
এদিকে আয়াত তখন থেকে দাড়িয়ে এইসব কিছু দেখে চলেছে। আয়াত বিহানের একমাত্র বোন। তখন শুভ্রের সাথে যেই মেয়ের বাইরে কথা হলো সে এই আয়াত।
আয়াত এসেই বিহানকে বলে,
-“ভাইয়া তুমি আব্বুর সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না। আব্বুর সিদ্ধামত তোমার মেনে নেওয়া উচিৎ।”
বিহান আয়াতকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু আজ আয়াতের সাথে একমত হতে পারছে না। বিহান বলে,
-“তুই বুঝবি না এখন আমার ব্যাপারটা৷ যেদিন তোর মতের অমতে গিয়ে কিছু করতে হবে সেদিন বুঝবি।”
-“আব্বু একজন বিচক্ষণ মানুষ। তার কোন সিদ্ধান্ত আজ অব্দি আমাদের জন্য খারাপ হয়নি। তাই তোর উচিৎ আব্বুর কথা শোনা।”
বিহান আর কোন কথা শুনবে না বলে ঠিক করে নিয়েছে। তাই সে বলে,
-“আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এই বিয়ে আমি করব না। আমি যাচ্ছি। তোমরা কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।”
লিখন হোসেনের বুকে হঠাৎ ব্যাথা ওঠে। বরকত ইসলাম ছুটে যান তার বন্ধুর কাছে। লিখন হোসেন অনুরোধ করে বলেন,
-“আমাদের মেয়েটাকে দয়া করে তোর ছেলের বউ করে ঘরে তোল। নাহলে আমি যে আর লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারব না। আজ যা হলো আমার মেয়েটাকে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।”
বরকত ইসলাম বিহানের সামনে আসে। হাত জোর করে বলেন,
-“আমি তোর বাবা হয়ে তোর সামনে হাতজোড় করছি তুই এই বিয়েটা কর৷ আমার অনুরোধটা রাখ।”
-“আব্বু…”
আয়াত এরকম পরিস্থিতি দেখে আতংকিত হয়। বিহানকে এসে বলে,
-“ভাইয়া তুই কিছু একটা কর। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
-“ঠিক আছে আমি বিয়েটা করব।”
বিহানের কথা শুনে সবাই যেন শান্তি পায়। বিহান একপ্রকার বাধ্য হয়ে বসে পড়ে। কাজি সাহেব আবারো বিয়ে পড়ানো শুরু করে।
বিহানকে কবুল বলতে বললে সে অনেক অপেক্ষা করে, অনেক দোটানায় ভোগে। শেষ অব্দি কবুল বলেই দেয়। লিলিও বলে কবুল।
অন্যদিকে, শুভ্র নামক এক ব্যর্থ প্রেমিকের বুকে জ্ব*লছে প্রতিহিংসার আগুন। কি হবে এর পরিণতি?
(চলবে)
#ভালো_থাকুক_ভালোবাসা
#সূচনা_পর্ব
#লেখক_দিগন্ত