ভালো থাকুক ভালোবাসা পর্ব -০২

#ভালো_থাকুক_ভালোবাসা
#পর্ব_২
#লেখক_দিগন্ত
বিহান ও লিলির বিয়েটা হয়ে যায়। বিহান যদিও মন থেকে বিয়ে মেনে নিতে পারেনি কিন্তু এখন লিলি তার স্ত্রী। লিখন হোসেন বিহানের হাত ধরে অনুরোধ করে বলে,
-“আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা। মেয়েটা কিন্তু খারাপ নয়। হয়তো মাঝখানে খারাপ পথে চলে গিয়েছিল।”

বিহান কোন উত্তর দেয় না তার কথায়। বরকত ইসলাম মাথা নিচু করে রেখেছেন। আয়াত তার বাবার কাছে আসে। বলে,
-“আব্বু তুমি মন খারাপ করে থেকো না। আমি জানি তুমি কেন বিয়েটা দিয়েছ। আম্মুর শেষ ইচ্ছে ছিল তার বান্ধবীর(লিলির মা) মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করা। তোমরা সবাই তো সেই স্কুল লাইফ থেকে বন্ধু। তুমি, আম্মু,লিলি ভাবির বাবা-মা। আম্মুকে তুমি কতটা ভালোবাসত্র আমি জানি। আম্মু যেদিন এক্সিডেন্ট করে মারা গেছিল সেদিন কথায় কথায় বলে ফেলেছিল আমাদের বিহানের সাথে লিলির বিয়ে হলে কেমন হয়? এই কারণে তুমি সেটাকে আম্মুর শেষ ইচ্ছে মেনে নিয়েছিলে।”

-“হ্যাঁ রে আয়াত আমি কি কোন ভুল করলাম? নিজের স্ত্রীর কথা রাখতে গিয়ে ছেলেটার জীবন নষ্ট করে দিলাম না তো?”

আয়াত চুপ থাকে। এই অবস্থায় কি বলা উচিৎ সেটা সে জানে না। আয়াত বিহানের দিকে তাকায়। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এই বিয়ের কারণে সে বিন্দুমাত্র খুশি হয়নি। আয়াত মনে মনে বলে,
-“দেখা যাক কি হয়। আশায় আছি ভালো কিছু যাতে হয়।”
________
লিলিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেই বিহান বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে কাউকে কিছু বলে যায়নি। লিলি নীরবে চোখের জল ফেলছে। আয়াত বিহানের রুমে আসে। লিলিকে এভাবে কাঁদতে দেখে বলে,
-“আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন ভাবি? ভাইয়া কি কিছু বলেছে?”

লিলি চোখের কোণে জমা বিন্দুমাত্র অশ্রুকণা সযত্নে মুছে দেয়। মুখে মেকি হাসি এনে বলে,
-“কই নাতো আমি কাঁদছি না। তোমার ভাইয়াও আমাকে কিছু বলেনি। তুমি আমাকে আপনি না বলে তুমি করে ডাকতে পারো।”

-“আমি আপন মানুষকেই তুমি বলে ডাকি।”

কথাটা বলে যেন লিলিকে খোঁচা মা/রে আয়াত। আয়াত নিজেও এই বিয়েতে খুব একটা খুশি নয়। শুধুমাত্র নিজের মায়ের শেষ ইচ্ছে, আর বাবার সিদ্ধান্ত বলে মেনে নিয়েছে। লিলির কর্মকান্ডকে সে সাপোর্ট করেনা।

লিলি মুচকি হেসে বলে,
-“আমাকে পর ভাবার কারণ?”

-“যে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ধোকা দেয় সে কিভাবে অন্য কারো আপন হতে পারে ভাবি? যার কারণে একটা সুখী পরিবারে বাবা-ছেলের সম্পর্ক খারাপ হয়, তাকে কিভাবে আপন করে নেব।”

আয়াতের কথাগুলো তীরের মতো বিধছিল লিলির গায়ে। লিলি চুপচাপ সবকিছু সহ্য করছিল কারণ সে জানে সে এসবেরই যোগ্য। আয়াতের জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো এই একই কথা বলতো।

আয়াত আর বেশিক্ষণ সেখানে থাকে না। এখানে থাকলে হয়তো আরো খারাপ ব্যবহার করে ফেলবে যেটা সে চাইছে না।

নিজের রুমে এসে তখনকার সেই ছেলেটার(শুভ্র) কথাই ভাবতে থাকে আয়াত। ছেলেটা বেশ অন্যরকম ছিল। আয়াতের নিজের ভাবনার উপরই কেনন জেনো লাগে। ঐ ছেলের কথা সে কেন ভাববে? না জানি ছেলেটা কেমন

আয়াতের ফোনে বিহানের কল আসে। কলটা রিসিভ করেই বিহান বলে,
-“আমি আজ রাতে বাড়ি ফিরবো না। ঐ মেয়েটাকে আমি জাস্ট সহ্য করতে পারি না। যাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেইনি তার সাথে বাসরও করতে পারব না। আব্বুকে বলে দিস কথাটা।”

-“ভাইয়া আমার কথাটা শোনো। এভাবে রাগ করে থেকো না। যা হওয়ার হয়ে গেছে।”

-“আমার পরিস্থিতিটা তুই বুঝবি না আয়াত। এখন রাখছি।”

আয়াতকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলটা কে/টে দেয় বিহান। আয়াত বিড়বিড় করে বলে,
-“সব হয়েছে এই মেয়েটার জন্য। আম্মু যে কেন এমন একটা কথা বলে ফেললো মৃত্যুর আগে। যাইহোক আমি শুয়ে পড়ি।”
______
লিলি একা একা বসে আছে রুমে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত ১২ টা বেজে গেছে। লিলির চোখে একদম ঘুম আসছে না। আর থাকতে না পেরে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো। নিজের করা ভুলগুলোর জন্য এখন খুব আফসোস হচ্ছে তার।

লিলি তো চায়নি শুভ্রকে ধোকা দিতে। বিয়ের আগের দিন শুভ্রর কথামতো তার সাথে পালিয়ে যাওয়ার কথাও ভেবে রেখেছিল। শুধুমাত্র নিজের বাবার জন্য সেটা পারে নি। লিখন হোসেন লিলিকে হুমকি দিয়ে বলেছিল,
-“তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে আমার আর তোর মায়ের মরা মুখ দেখবি। এই বাড়ির বাইরে এক পা রাখলে আমাদের লা/শের উপর দিয়ে যেতে হবে।”

এই কারণেই তো লিলি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছিল। শুভ্রকে তখন ওতো কথা শুনিয়েছিল যাতে শুভ্র তাকে ভুলে বোঝে, তার বিরহে কষ্ট না পায়। শুভ্র তাকে খারাপ ভাবার হলেও ভাবুক তাও তাকে মনে করে কষ্ট না পাক। এখন নিজের স্বামীকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখছে সে।

লিলির এখন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই আর নেই। শুভ্রর সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো মনে করে চোখের জল বেরিয়ে আসে। শুভ্রকে কতো পছন্দ করতো লিলি, সেই কলেজ লাইফ থেকে। শুভ্রর পিছু পিছু করত। কিশোরী বয়সের আবেগ বলে কথা।

শুভ্র প্রথম প্রথম তাকে পাত্তা না দিলেও একসময় প্রেমে পড়ে যায়। তারপর থেকে তাদের ৫ বছরের রিলেশন। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। ভাবতেই লিলির ভিতর থেকে চাপা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসে।

এমন সময় তার ফোনে কল আসে। শুভ্র কল করেছে। লিলি যদিও চাইছিল না ফোনটা রিসিভ করতে কিন্তু শেষে নিজের বেহায়া মনের কাছে হেরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করেই ফেলে।

শুভ্রর ক্রোধিত গলার স্বর কানে আসে।

-“হেই সুইটহার্ট। কেমন লাগছে তোমার? নিজের নিউ লাইফ কেমন ইনজয় করছ। হা হা হা। আমাকে লাইফটাকে হেলে পরিণত করে তুমি সুখে থাকবে সেটা তো হতে পারে না। তোমার লাইফটাও আমি হেল করস্র দায়িত্ব নিলাম। ৩৩৪ নং রোডের ৩ নং বাড়ি এটাই না তোমার শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা?”

লিলি কাপা গলায় বলল,
-“হ্যাঁ..তুমি কোথায় পেলে?”

-“আমার কাছে এটা কোন ব্যাপারই না সুইটহার্ট। আমার জন্য ওয়েট করো। কাল তোমার বৌভাতে গেস্ট হয়ে যাব।”

লিলি বলে ওঠে,
-“প্লিজ শুভ্র আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি এমন কিছু করো না। তোমাকে আমাদের ভালোবাসার দোহাই।”

লিলির কথা শুনে অট্টহাসিতে ফে/টে পড়ে শুভ্র। তারপর হাসি থামিয়ে বলে,
-“কিসের ভালোবাসা? তোর মতো মেয়েরা ভালোবাসতে জানে নাকি? তোদের কাছে ভালোবাসার কোন মূল্য নেই। তোদের কাছে টাকাই সব।”

লিলির খুব কষ্ট হয় শুভ্রর কথা শুনে। সে তো এটাই চেয়েছিল শুভ্র তাকে ভুল বুঝুক। কিন্তু এত সহজে যে শুভ্র তাকে অবিশ্বাস করবে সেটা ভাবে নি। লিলি তো শুভ্রকে সত্যি খুব ভালোবাসতো। শুধুমাত্র পরিস্থিতির স্বীকার সে।

ফোনটা কে/টে দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে লিলি। আজ তার চোখের জল কোন বাধ মানতে রাজি হয়। আজ যেন সেই সবথেকে বড় অপরাধী, আবার সেই সবথেকে বড় ভুক্তভোগী।
~~~~
জ্ব/লন্ত সিগারেট পা দিয়ে পি/ষে ফেলে শুভ্র। পাশে পড়ে আছে মদের বোতল। সেখান থেকে মদ ঢেলে ঢলঢল করে খেতে থাকে। শুভ্রর কাছে এটাই তার কষ্ট ভোলার উপায়। অনেকে বলে ভালোবাসা নাকি মানুষকে সুখ দেয়, কিন্তু শুভ্রকে তো দুঃখ ছাড়া কিছু দেয়নি।

ভালোবাসার যেন অসুখ পড়েছে। শুভ্র জানে লিলি তাকে কখনো ঠকাতে পারে না। কিন্তু কালকের বলা লিলির কথাগুলো বারবার তার কানে বাজছে। শুভ্র সবসময় চায় তার ভালোবাসা তার লিলি ভালো থাকুক, কিন্তু লিলির দেওয়া কষ্ট সে ভুলতে পারছে না।

শুভ্র কি পারবে এই জীবনে আর কখনো ভালোবাসতে? হয়তোবা না। ভালোবাসার অনলে আর নিজের মনকে পো/ড়াতে পারবে না সে। ভালোবাসা ভালো থাকুক, কারো জীবনকে নরকে পরিণত না করুক—এটাই তার চাওয়া।

কালকে কি করবে সেই প্ল্যান করছে শুভ্র। লিলি তাকে যে কষ্ট দিয়েছে এটুকু তো সে ডিজার্ভ করেই!
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here