অগোচরে তুমি পর্ব -২০

#অগোচরে_তুমি
লেখনীতেঃ স্বর্ণালী তালুকদার

২০.

টস রাউন্ডে জিতেছে অর্কের টিম।এখন ওদের টিম থেকে যেকোনো একজন নিজের পছন্দের যেকোনো একটা মুভির গান দিয়ে প্রথম পারফর্ম করার সুযোগ পাবে।আর প্রতিপক্ষ দলকে একটা গান ওরা সিলেক্ট করে দেবে এবং ওই গানেই ওদের নাচতে হবে।এর পর যে গান গুলো প্লে করা হবে সেই গুলো সম্পূর্ণ ডিজে’র ইচ্ছেমতো গান দিবে।

ছেলেপক্ষের টিমের ক্যাপ্টেন হলো অর্ক।আর মেয়েপক্ষের ক্যাপ্টেন হলো মেহেনূর। অর্কের টিমে আছে রশিদ সাহেব(রোশনির বাবা),মেহরাব সাহেব, আকাশ সাহেব, রাওনাফ, দিহাদ, অয়ন, রোশান আর অর্ক।আর মেহেনূরের টিমে আছে আমেনা বেগম, রেনুফা বেগম, সুফিয়া বেগম(রোশনির মা), আয়েশা বেগম, রোশনি, কলি, তনিমা আর মেহেনূর।দুই দলেরই সমান সমান প্রতিদ্বন্দ্বী।

অর্কের টিম থেকে সর্ব প্রথম পারফর্ম করতে গেলো অয়ন।সে তার পছন্দের গান দিয়ে পারফর্ম করেছে।এবার মেহেনূরের টিমের পালা।গান অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।কিন্তু এই গানের কোনো মৌলিক স্টেপ করোরই মনে পড়ছে না।গানটা অবশ্য নব্বই দশকের।”ভালো বাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া করতে হবে এবার বিয়া” এই গানের সাথে নাচ করতে হবে।কিন্তু মেহেনূরের টিম থেকে কেউই এখনো স্টেজে যাচ্ছে না দেখে অর্ক মুখ টিপে হাসছে।ভাবছে, সবে তো শুরু!এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বাকি খেলাটা কিভাবে শেষ করবে!মেহেনূর খুব টেনশনে আছে।ওইদিকে টাইপ-আপ হয়ে যাচ্ছে।এখনো কেউ পারফর্ম করতে স্টেজে যায় নি।

সবাই যখন আশা ছেড়ে দেয় এটা ভেবে যে, মেহেনূরের টিম থেকে কেউই এই গানে পারফর্ম করতে পারবে না।তখন কলি সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্টেজ মাতায়।কলির দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে অর্ক, দিহাদ, অয়ন আর তনিমা।আসলেই কলি খুব ভালো নেচেছে।আর কেউ না জানলেও ওরা খুব ভালো করে জানে কলি নাচতে পারে না।যদিও বন্ধুমহলে কখনো একটু আধটু নাচতো তাহলে ওকে সবাই খেপাত!কলি একটু গুলুমুলু বলে সবাই ওকে চমচম নামে আখ্যায়িত করে!কিন্তু আজ এই চমচমই চিকনাইদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

সবাই যখন কলির প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন আরেক জনের মুখে তৃপ্তির হাসি।মেহেনূর মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে কলির দিকে।মেয়েটা খুব শান্তশিষ্ট, নম্র, ভদ্র, আর বিনয়ী।মেহেনূরের দু মিনিটের ট্রেনিংয়ে কলি এতটা ভালো নাচতে পারবে যেটা তনিমা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করে নি।তবে মেহেনূরের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল কলি পারবে।মেহেনূরের ধারণা ছিল, কলিকে যতটা না অন্তর্মুখী লাগে ও আদৌ ততটা অন্তর্মুখী না।হয়তো কখনো স্টেজ পারফর্ম করে নি বলে নিজের মধ্যে একটু জড়তা-সংকোচ ছিল।

খেলার নিয়ম অনুযায়ী একেক দল থেকে একেক জন এসে পারফর্ম করছে।কলির পর দিহাদ আসে।দিহাদের পর তনিমা।তনিমার পর রোশান।রোশানের পর আমেনা বেগম।তবে আমেনা বেগম সত্তর দশকের গানের সাথে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে বেশ ভালোই টেক্কা দিয়েছেন প্রতিপক্ষ দলের সাথে।উনার পরে আসেন রশিদ সাহেব।তার পরে সুফিয়া বেগম।তাদের পর আকাশ সাহেব আর আয়েশা বেগম ডুয়েট গানে পারফর্ম করেন।”বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না”এই ছবির টাইটেল গানটা দিয়ে ফাটিয়ে নাচ করেছেন দুজনে।যদিও ছেলে মেয়েদের সামনে নাচ করতে একটু লজ্জা পাচ্ছিলেন আয়েশা বেগম।কিন্তু মেহেনূর তাকে জোর করে স্টেজে পাঠিয়েছে।মেহেনূর আয়েশা বেগমের কাছ কোনো এক আলাপচারিতায় জানতে পেরেছিল উনি স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটি লাইফে নাচ করতেন।

আকাশ সাহেব আর আয়েশা বেগমের পর এবার আসেন মেহরাব সাহেব।অর্কের টিম এতক্ষণ ঠিকঠাক ভাবে পারফর্ম করলেও এবার মেহরাব সাহেব এসে গোলমাল পাকিয়ে দিয়েছেন।পারফর্ম করার জন্য তাকে যে গানই দেওয়া হচ্ছে সেই গানের গীতিকার, সুরকার আর শিল্পীর নাম গড়গড় করে বলে যাচ্ছেন!নাচ করার কোনো নমুনাই তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু এইরকম করলে তো অর্কের টিম হেরে যাবে!মেহরাব সাহেবের এই অবস্থা দেখে ডিজে এবার গান প্লে করলো “ঢাকার পোলা ভেরি ভেরি স্মার্ট “।ব্যাস!মেহরাব সাহেব এবার একটু দমে যান।হতভম্ব হয়ে তাকালেন অর্কের দিকে।অর্ক মুখ টিপে হেসে ব্যাক স্টেজ থেকেই নাচের স্টেপ দেখিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু মেহরাব সাহেব তেমন কিছুই পারলেন না।শেষমেশ কোনো রকম হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পারফর্ম করে স্টেজ থেকে নেমে আসেন।রেনুফা বেগম “রূপবানে নাচে কোমড় দুলাইয়া”গানের সাথে সেই লেভেলের নাচ নেচেছেন।

মায়ের দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে মেহেনূর।মায়ের এই গুণ ওর জানা ছিল না।রেনুফা বেগম মেয়ের কাছে এসে বসতেই মেহেনূর অবাক স্বরে বললো,

– মা তুমি যে এত ভালো নাচতে পারো আমাকে তো কোনোদিনও বলো নি।

রেনুফা বেগম স্মিত হেসে বললো,

– কিছু কিছু বিষয় অগোচরে থাকা ভালো!আমি যদি আগে বলে দিতাম তাহলে এই সারপ্রাইজটা পেতিস?

মায়ের কথা শুনে মৃদু হাসলো মেহেনূর।আসলেই বেশ সারপ্রাইজড হয়েছে ও।

এইবার পারফর্ম করার পালা রাওনাফের।কিন্তু রাওনাফকে তো আর একা পারফর্ম করতে দিলে হবে না! বরের সাথে বউকেও তো চাই।তাই রোশনি আর রাওনাফকে বলা হয়েছে একসাথে পারফর্ম করার জন্য।দুজনেই বেশ জমিয়ে দিয়েছে।যদিও রাওনাফের তুলনায় রোশনি একটু বেশিই নেচেছে কিন্তু রাওনাফ সেটা ব্যালেন্স করে নিয়েছে।

এইবার ভাবসাব নিয়ে স্টেজে উঠে মেহেনূরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো অর্ক।তবে সেটা মেহেনূরের অগোচরে। টানা দশ মিনিট একনাগাড়ে তিন তিনটে গানের সাথে পারফর্ম করে অর্ক।অর্কের পারফরম্যান্স শেষ হতেই মেহেনূরকে ঠেলে স্টেজে উঠিয়ে দিলো তনিমা আর কলি।মেহেনূর স্টেজে উঠে পর পর পাঁচটা গানের সাথে ননস্টপ নাচ করে।এখন ছয় নাম্বার গান চলছে।

সবাই অবাক হয়ে মেহেনূরকে দেখছে।মেয়েটা সবসময় একটু বেশিই চুপচাপ থাকে।কারণে অকারণে এত কথা বলে না।এত দৌড়ঝাঁপ করে না।মান্যতা জিনিসটা আয়ত্ত্ব করেছে কঠোরভাবে।মিষ্টি হাসির জাদুতে যে কারোর সাথে মিশে যেতে পারে অনায়াসেই।আয়েশা বেগম মেহেনূরের সুরে মুগ্ধ হয়েছিলেন সেই কবেই!মেহেনূর তাকে মুগ্ধ করলো আরো একবার, ওর নাচের মহিমায়।

মেহেনূরের নাচ দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে অর্ক।মেহেনূর নাচতে পারে?এটা অর্কের কল্পনাতীত ছিল।মেহেনূরকে দেখে যতটা না ভোলা ভালা মনে হয় ও যে ততটাও ভোলা ভালা নয়,অর্ক সেটার প্রমাণ অনেক আগেই পেয়েছে!কিন্তু দিনকে দিন মেহেনূরের এমন নতুন নতুন রূপ অর্কের ঠিক হজম হচ্ছে না!তবে মেহেনূরের এইসব বহুরূপী কার্যকলাপে অর্ক যে অবাক হচ্ছে না,তাও কিন্তু নয়!অর্ক প্রতিদিন মেহেনূরের কোনো না কোনো কাজে বিস্মিত হয়,হচ্ছে!এই তো আজকে সকালে যখন মেহেনূরের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। তখন মেহেনূরকে খুঁজে প্রথমে ওর ঘরেই গিয়েছিল।কিন্তু মেহেনূর ওর ঘরে ছিল না।তাই অর্ক যখন চলে আসছিল তখন হঠাৎ করেই ওর চোখ পড়ে ব্যালকনিতে থাকা ময়লা ফেলার ঝুড়িটায়!প্রথমে কপাল কুঁচকে এলেও ক্ষণকাল পরে সংকুচিত কপাল প্রসারিত হয়।কিছু একটার আঁচ করতে পেরে সম্মুখে এগিয়ে যায়।ঠিক ধরেছে অর্ক!ঝুড়িটায় সুন্দর একটা ইউকুলেলে পড়ে আছে!অর্কের ললাটে ভাঁজ পড়ে আরো একবার।ইউকুলেলে’টা ভাঙা নয়।দেখে মনে হচ্ছে একদম ঠিক আছে ওটা।তবে এটা এখানে কেন?কার এটা? এখানে কে রাখলো?অর্কের মনে অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে।কিন্তু উত্তর কোথায়?

একসময় অর্কের খুব শখ ছিল ইউকুলেলে শিখার।কিন্তু কিছু কারণ বশত আর শেখা হয়ে উঠে নি।যদিও অর্ক ইউকুলেলে বাজাতে পারে না তবুও সামনে থাকা ইউকুলেলে’টা দেখে বড্ড ইচ্ছে করছে একবার হলেও ওটার তারে একটু টুংটাং শব্দ করে দেখতে!ক্ষুদ্র একটা শ্বাস ফেলে ইউকুলেলে’টা হাতে নেয় অর্ক।কৌতূহলী মনকে সায় দিয়ে পা ভাঁজ করে বসে পড়লো নিচে।কিছুক্ষণ তারের মধ্যে আঙুলের সাহায্যে আপ-ডাউন করে।কিন্তু অর্কের বোধহয় আরেকটু রিয়েলিজমের দরকার!তাই ইউকুলেলে’টার পিক’টা কোথায় আছে এধার ওধার তাকিয়ে খুঁজছে।পাশে থাকা ঝুড়িটায় উঁকিও দিয়েছে বার কয়েক।ওটায় অনেক কাগজ পাতা রয়েছে ফলে ওইগুলো ভেদ করে অর্কের দৃষ্টি কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি খুঁজে পেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে!অর্ক ঝুড়িটা মেঝেতে ঠেলে দিয়ে পিক’টা খুঁজতে থাকলো।অর্কের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।পিক’টা পেয়ে গেছে।মেঝেতে পড়ে থাকা কাগজ গুলো পুনরায় ঝুড়িতে উঠানোর সময় চোখ আটকায় হলদেটে মাখনরঙা ক্যাশ মেমো’টায়!ভ্রু বাঁকা করে মেমো’টা হাতে নেয় অর্ক।ক্রেতার জায়গায় জ্বলজ্বল করছে “মেহেনূর হোসেন” নামটা!নির্বাক হয়ে হাতে থাকা মেমো টার দিকে তাকিয়ে আছে অর্ক।কোটির গন্ডি পেরিয়ে দেড় কোটি!টাকাটা ফ্যাক্ট না।কিন্তু মেহেনূরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু সন্দেহ জনক।টাকা তো ওই পরিশোধ করে দিয়েছিল!তবে ওইদিন যে কথাগুলো বললো সেগুলোর মানে কি?ও মিথ্যা কেন বললো?বাবার ভয়ে?কিন্তু ও এত টাকা কোথায় পেলো?

– তুমি এটা ধরলে কেন?

অর্কের ভাবনায় কাঁটা পড়ে।চকিত দৃষ্টিতে তাকায় ব্যালকনির দরজার দিকে।সাত বছরের ছোট্ট জীম কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে অর্কের দিকে।জীম মেহেনূরের ছোট খালার ছেলে।অর্ক ওকে খুব ভালো করেই চেনে।অর্ক জীমের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ওর কথার ভঙ্গিমায় মনে হচ্ছে, না জানি অর্ক কত বড় অন্যায় করে ফেলেছে!অর্ক কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে বললো,

– কি ধরেছি?

– ইউলুকুলে’টা!

ফিক করে হেসে উঠলো অর্ক।বেচারা জীম হা করে তাকিয়ে আছে। হাসার মতো তো ও কিছু বলে নি।পূর্বের ন্যায় গলার স্বর উঁচু করে বললো,

– তুমি হাসছো কেন?

অর্ক হাসি থামিয়ে বললো,

– এটা ইউকুলেলে।নট ইউলুকুলে!

– হ্যাঁ আমি তো এটাই বললাম!ইউলুকুলে!

অর্ক আবার মুখ টিপেটিপে হাসছে।জীম চোখের চশমা ঠিক করে নাক টেনে এগিয়ে যায় অর্কের দিকে।ওর হাত থেকে ইউকুলেলে’টা নিয়ে চাপা স্বরে বললো,

– মেহেনূর দেখতে পেলে আমাকে মেরেই ফেলবে!

অর্ক জীমের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,

– কেন?
– কারণ এটা রকস্টার কিরণ চৌধুরীর!

কিরণ চৌধুরীর নামটা শুনেই অর্কের বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো।তবে জীমের মুখে কিরণের নাম শুনে আশ্চর্য না হয়ে পারলো না।এটা কিরণের ইউকুলেলে মানে?অর্ক উৎকন্ঠার সাথে জীমকে প্রশ্ন করলো,

– তোকে কে বললো এটা কিরণ চৌধুরীর?

– কেউ বলে নি!

– তাহলে তুই কিভাবে জানলি?

– ওইদিন নীল চত্ত্বরে কিরণ চৌধুরী এই ইউলুকুলেকুলে’টা দিয়েই গান গেয়েছে।আমি পাপার ফোনে দেখেছিলাম!কাল রাতে আমি মেহেনূরের সাথে ঘুমিয়েছিলাম।রাতে হঠাৎ করেই আমার ঘুম ভেঙে যায়।তখন আমি দেখেছি মেহেনূর ব্যালকনিতে বসে এটা বাজাচ্ছে।একদম রকস্টার কিরণ চৌধুরীর মতো!

অর্ক বিস্ফোরিত চোখে তাকায় জীমের দিকে।ও এইসব কি বলছে অর্ক কিছুই বুঝতে পারছে না।কিরণ চৌধুরীর ইউকুলেলে মেহেনূরের কাছে আসবে কি করে?মেহেনূর ইউকুলেলে বাজাতে জানে?অর্ক অবাক হয়ে বললো,

– তুই শিওর তো জীম!মেহেনূরকে ইউকুলেলে বাজাতে তুই দেখেছিস?

– আরে আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।আমি……

– কি রে জীম তুই আবার এই ইউকুলেলে নিয়ে পড়েছিস?

মায়ের কথায় জীম ওর পুরো কথা শেষ করতে পারলো না।জেনুফা বেগমের দিকে কপাল কুচকে তাকায় অর্ক।অর্কের জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি দেখে জেনুফা বেগম ফিচেল হেসে বললো,

– আর বলো না অর্ক!কাল রাত থেকে মেহেনূরকে একেবারে জ্বালিয়ে খাচ্ছে!এটা নাকি কোন না কোন রকস্টার কিরণ চৌধুরী না কি?তার ইউকুলেলে!সে তার পাপার ফোনে নাকি দেখেছে।কিন্তু বোকা ছেলেকে সকাল থেকে এটা বুঝাতেই পারলাম না যে,কোম্পানি শুধু এই একটাই ইউকুলেলে তৈরি করে নি!ও রকম দেখতে আরো হাজারটা তৈরি করেছে।ওর জ্ব্বালায় মেয়েটা শান্তি মতো একটু পড়তেও পারছে না।এখন ছাদে গিয়ে পড়তে হচ্ছে ওকে।

এতক্ষণে অর্কের কাছে সবটা ক্লিয়ার হয়েছে।দুটো ইউকুলেলে দেখতে একই রকম।তাই জীম ভাবছে হয়তো এটাই কিরণ চৌধুরীর!কিন্তু মেহেনূর ইউকুলেলে বাজাতে পারে!স্ট্রেইঞ্জ!অর্ক আসলেই খুব অবাক হচ্ছে।সবকিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে।এইসব ভাবনার মাঝেই মেহেনূর ছাদে আছে ,কথাটা স্মরণ হতেই ব্যালকনি থেকে উঠে ছাদের উদ্দেশ্যে চলে যায় অর্ক।

– ভাই এই মেয়ে কি করছে এইসব?

অয়নের কথায় হুশ ফিরে অর্কের।ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে অবুঝ মুখে তাকালো অয়নের দিকে।অয়ন চোখের ইশারায় স্টেজে নৃত্যরত মেহেনূরকে দেখালো।অর্ক নির্বাক,হতভম্ব!তবে এটা যেহেতু কম্পিটিশন সো ওকে এইভাবে বসে থাকলে চলবে না।বিপক্ষ দলের কাছে এতো সহজেই মাথা নোয়াবার ছেলে অর্ক না।

___________________

মেহেনূরের সাথে পাল্লা দিয়ে আধ ঘন্টা ধরে নাচার পরও অর্ক পরাস্ত।শেষ রক্ষা হলো না।জিতে গেছে মেহেনূরের টিম।জিতে গেছে কনেপক্ষ।খেলার নিয়ম অনুযায়ী কথা ছিল,”যেই দল জিততে পারবে সেই দল যা বলবে প্রতিপক্ষ দলকে সেটাই মেনে নিতে হবে”।
মেহেনূর বলেছে আজকে ওরা কিছু বলবে না।কাল,মানে বিয়ের দিন ওরা যা বলবে অর্কের টিমকে তাই করতে হবে।

অর্ক মেহেনূরের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে আছে আর হাঁপাচ্ছে।মেহেনূরের এত এনার্জি!এতক্ষণ নাচার পরও মেয়ের চোখে মুখে বিন্দুমাত্র ক্লান্তির ছাপ নেই।দিব্যি শক্তপোক্ত আছে এখনো!খেলায় জিততে পারলে আনন্দ হয় এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু মেহেনূরের মধ্যে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না।শান্ত হয়ে বসে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে সবার সাথে।

– কি রে কি ভাবছিস?

রাওনাফের প্রশ্নে এক পলক ওর দিকে তাকায় অর্ক।তারপর একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

– তোর বোনের আর কি কি গুণ আছে সেটাই ভাবছি!

– আমি তো আগেই বলেছি,আমার বোনের যে কি কি গুন আছে ওইসব তোদের ধারণার বাইরে।

– ব্যাংক ডাকাতির গুণটাও কি আছে তোর বোনের?

অর্কের প্রশ্নে টাশকি খেয়ে যায় রাওনাফ।বিস্মিত হয়ে বললো,

– মানে?

– না মানে,আমি তো জানি তোর বোন স্টুডেন্ট আবার বেকারও।তাহলে এই বেকার মেয়ে দেড় কোটি টাকার গাড়ি কিনলো কিভাবে?

অর্কের কথায় রাওনাফ বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে বললো,

– বাবার মতো তুইও শুরু করলি!ওইদিন না তুই শুনলি মেহেনূর গাড়িটা কিস্তিতে নিয়েছে।

– আজ্ঞে না।আপনার বোন সবটা টাকা একসাথেই পরিশোধ করে দিয়েছিল।তাহলে ওইদিন মিথ্যে কেন বললো?

অর্ক সন্দিহান চোখে রাওনাফের দিকে তাকিয়ে আবার বললো,

– এই সত্যি করে বল তো, ও এত টাকা কোথায় পেয়েছে?

থমমত খেতে যায় রাওনাফ।অর্ক কিভাবে জানলো এই কথা?মেহেনূরটাও না এত বেখেয়ালি!নিশ্চয়ই গাড়ির ক্যাশ মেমো টা এদিক সেদিক ফেলে রেখেছিল এখন সেটা অর্কের চোখে পড়েছে।এখন অর্ককে কি বলবে?রাওনাফ অর্ককে মিথ্যেও তো বলতে পারবে না।রাওনাফ মেকি হেসে বললো,

– মনে হয়….
– এই অর্ক একটু এইদিকে আয় তো।

আকাশ সাহেব অর্ককে ডাকছে।বাবার ডাক শুনতে পেয়ে অর্ক চলে যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো রাওনাফ।বুকে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলছে।অর্ক যেভাবে চেপে ধরেছিল,বাবা!আরেকটু হলে দম আটকে শেষে অক্কালাভ করতে হতো ওকে!

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here