অতঃপর প্রেমের আগমন পর্ব -০২

#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০২

শাওয়ার নিয়ে একটু রেস্ট নেবে ভাবলো আয়ানা। তার বাহিরে যাওয়া বারণ। এতক্ষনে হয়তো মীরা কে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যে হয়তো কাবিন টাও হয়ে যাবে। আয়ানার খুব ইচ্ছা করছে বোনের বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে। কিন্তু তাকে কড়াকড়ি ভাবে বলা হয়েছে সে যেনো বাহিরে না যায়। তাই আয়ানা ঠিক করলো একটু ঘুমাবে। শরীর টা আর চলছে না এতো কাজ করার পর। সে থাকে ছাদের একটা ছোট্ট রুমে। অন্যান্য মেয়েদের মতো আলিশান রুম বা বেড তার নেই।

আয়ানার মাত্র চোখ টা লেগেছিলো এমন সময় দরজা নক করলো কেউ। ঘুম ঘুম চোখ ডলে দরজা খুলতে গেলো সে। দরজা খোলামাত্র গালে স্বজরে থা’প্প’ড় পড়ায় হতোভম্ব হয়ে গেলো আয়ানা। গালে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই রূহ কেঁ’পে উঠলো তার। দরজায় সৎ বাবা মাহমুদ আর ফুপি সাহেরা বানু কে দেখে ঢোক গিললো সে। দুইজনই অনেক রেগে আছে তা তাদের চেহারা বলে দিচ্ছে।

সাহেরা বানু আয়ানা কে ধা’ক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন সাথে মাহমুদ সাহেব ও। মাহমুদ সাহেব দাঁতে দাঁত পি’ষে বললেন,

— তোকে বলেছিলাম পাত্রপক্ষের কেউ যেনো তোকে না দেখে। কিন্তু তুই ঠিকই নিজের রূপ দেখিয়ে দিলি। পাত্রের চাচী এখন দাবী করছে তার ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিতে হবে। নাহলে তিনি মীরার সাথে আহিলের বিয়ে হতে দিবেন না। আর পাত্রের পরিবারও রাজী আহিলের চাচীর কথায়।

অবাকের উপর অবাক হচ্ছে আয়ানা। সে তো কিছুই করে নি। তাহলে এসব তার সাথে কি হচ্ছে! মাহমুদ সাহেব সাহেরা বানু কে বললেন,

— এই আপু এই মেয়ে কে রেডি কর জলদি। এর কারণে দুইবার আমার মেয়ের বিয়ে ভে’ঙে’ছে। এবার যদি আবার বিয়ে ভা’ঙে তাহলে একে আমি মে’রে’ই ফেলবো।

মাহমুদ সাহেব কথা শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আয়ানা অশ্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। সে কিছু একটা বলতে চাইলো কিন্তু সুযোগ দিলো না সাহেরা বানু। রাগী দৃষ্টি দিয়ে বললেন,

— একটা কথাও বলবি না।একদম আমাদের জ্বা’লি’য়ে খেলি তুই।যখন থেকে এই বাড়িতে এসেছিস তখন থেকে জ্বা’লা’চ্ছি’স আমাদের। এবার বিদায় হ। এখানেই চুপচাপ বসে থাক। আমি শাড়ি নিয়ে আসছি। পড়ে তৈরি হয়ে যাবি।

সাহেরা বানু বের হতেই কান্নায় ভে’ঙে পড়লো আয়ানা। কাঁধে কেউ হাত রাখতেই ঘোলা চোখে তাকালো সে। সামনে মা কে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। জড়িয়ে ধরে হা’উ’মা’উ করে কেঁদে ফেললো। অনামিকা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নিম্ন স্বরে বললেন,

— এই বিয়ে টা তুই করে নে আয়ানা মা। তোর বর যেমনি হোক না কেন, অন্তত এই ন’র’কে যেভাবে থাকিস তারচেয়ে অনেক গুন ভালো থাকবি আমার বিশ্বাস। কাঁদিস না মা। যা হবে ভালো হবে। তুই শুধু ভরসা রাখ সৃষ্টিকর্তার উপর।

আয়ানা চোখ ভর্তি জল নিয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকালো। সে ভেবেছিলো আর কেউ না হোক, অন্তত তার মা তার পক্ষে কথা বলবে। কিন্তু তার মা ও চায় সে এই বিয়ে টা করুক। আয়ানার ভীষণ অভিমান হলো। তার মা কি জানে না, আয়ানা অনেক পড়াশোনা করতে চায়। জীবনে অনেক বড় হতে চায়। আয়ানার স্বপ্ন ছিলো সে বড় একটা চাকরি করে নিজেকে আর তার মা কে এই ন’র’ক থেকে মুক্ত করবে। কিন্তু তার এই আশা টা হয়তো পূরণ হবার নয়। চোখ মুছে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আয়ানা। এরচেয়েও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। এটাকেও মেনে নিতে হবে। এছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।

——-

চমৎকার একটা শাড়ি পড়ানো হয়েছে আয়ানাকে। সাথে সুন্দর সব অলংকার। হয়তো পাত্রপক্ষ আগে থেকেই এসব প্ল্যান করে এসেছিলো, ভাবলো আয়ানা। নাহলে এতো দ্রুত কি করে সব কিছুর জোগাড় হলো। একটা জীবন্ত পুতুলে পরিণত হয়েছে সে। তার সাথে যে যা করছে তাতেই সায় দিচ্ছে।

সাজানো শেষে তাকে মীরার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। মীরা আগে থেকেই তৈরি হয়ে ছিলো। সে যেতেই কাজী এলো বিয়ে পড়াতে। না চিনে, না জেনেও একজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো আয়ানা। হয়ে গেলো বিয়ে সম্পূর্ণ অচেনা একজনের সাথে।

আসার সময় কারোর সাথে একটা কথা বলেনি সে। অবশ্য তার সাথে কথা বলার, তাকে বিদায় দেয়ার মানুষের যে বড়ই অভাব। শুধুমাত্র মাই তো তাকে ভালোবাসে। আর সবার চোখে তো সে বি’ষ। কিন্তু মায়ের সাথেও একটা কথাও বলে নি সে। আসার পথে তার সাথে তার বর ছিলো না। সে হয়তো আগেই চলে গিয়েছিলো। আয়ানার সাথে গাড়িতে একজন ভদ্র মহিলা বসেছিল আর একজন তার সমবয়সী মেয়ে। আয়ানা আন্দাজ করেছিল, মহিলা টা হয়তো তার শাশুড়ি মা আর মেয়ে টা হয়তো আহিলের বোন হবে।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামতে অবাক হয় আয়ানা। বিশাল বড় বাড়ি। হয়তো এরা অনেক বড়লোক বুঝতে পারলো সে। ভিতরে আসার পর তার আন্দাজটাই ঠিক হয়। ওই ভদ্র মহিলা তার শাশুড়ি। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় কেউ নতুন বউদের বিরক্ত করে নি। যারা করতে ইচ্ছুক ছিলো তাদেরও করতে দেন নি ভদ্র মহিলা। সবাইকে রেস্ট নিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নতুন বউরা খেতে লজ্জা পায় বলে নিজ হাতে দুই বউকে খাইয়ে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের নিজেদের রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন রেস্ট নেয়ার জন্য। আয়ানা যতটুকু বুঝতে পেরেছে ভদ্র মহিলা অনেক ভালো। তার চিন্তা ভাবনায় আয়ানা মুগ্ধ হয়েছে। তারপর থেকে অচেনা বরের রুমে বসে ছিলো সে।

——–

সারাদিনের ঘটনাগুলো চিন্তা করতে করতে কখনো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে আয়ানা নিজেও বুঝতে পারে না। সারাদিনের ধকল সামলে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে।

আদ্রিশ একেবারে শাওয়ার নিয়েই বের হলো। এখন একটু শান্তি লাগছে তার। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই বেডে চোখ আটকে গেলো তার। আয়ানা বেডে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মূলত তার শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে। কিছু মুহূর্তের জন্য ঘোরের মাঝে চলে গেলো আদ্রিশ। ধীর পায়ে বেডের কাছে গিয়ে মিনিট দুই এর মতো আয়ানাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। তার কাছে মনে হলো, মেয়ে টা একটা কিউটের ডিব্বা। ফুলো ফুলো গাল দুটোর জন্য আরও বেশি কিউট লাগছে। একটু ছুঁতে পারলে কেমন হতো? পরমুহূর্তে নিজের চিন্তা ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হলো আদ্রিশ। কি সব ভাবছে সে! দ্রুত ঘুরে বেলকনিতে চলে গেলো সে। টাওয়েল মেলে দিয়ে রুমে এসে ভাবতে লাগলো কি করা যায়। তারও তো অনেক ঘুম পেয়েছে। কিন্তু বিছানায় তো আয়ানা ঘুমিয়ে আছে। আয়ানার সাথে সে কি করে ঘুমাবে!

কিছুক্ষন পাইচারী করার পর আদ্রিশ ঠিক করলো সে আয়ানার পাশেই ঘুমাবে। তারই তো বউ হয়। এতো চিন্তা করার কিছুই নেই। হাঁসফাঁস করতে করতে আয়ানার পাশেই কিছু টা দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো আদ্রিশ। তার হার্ট টা কেনো যেনো অনেক জোরে জোরে বিট করছে। মনে হচ্ছে চুরি করতে এসেছে। বড্ড বেশি অস্থিরতা কাজ করায় মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে দিলো আদ্রিশ। এছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। ঘুমাতে হলে এভাবেই ঘুমাতে হবে। কিন্তু এই মেয়ে সকালে উঠে কোনো ঝামেলা না করলেই হলো। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমে তলিয়ে গেলো আদ্রিশ।

হয়তো এখান থেকেই হবে আয়ানার জীবনের নতুন সূচনা।

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here