অদৃশ্য মানব পর্ব শেষ

#অদৃশ্য_মানব
#পর্ব_০৩

নীলা একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো!!! নীলার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই নীলার রুমে চলে গেল!! গিয়ে দেখলো নীলা অঙ্গেন হয়ে গেছে!! নীলার বাবা তারা তারি ডাক্তার ডেকে আনতে বললো!! ডাক্তার ডাকা হলো!! আর নীলা সুস্থ হয়ে উঠলে!! নীলার বাবা নীলাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছিল মা!!?? নীলা ওর বাবাকে বললো!! ও আবার এসেছিলো!! ও আমাদের এখান থেকে যেতে দেয়নি বাবা!!

ও আমাদের এই খানে আটকে রেখেছে!! নীলার বাবা বললো তুই ভয় পাস না!! আমি জানি ও আমাদের এই খানে আটকে রেখেছে!! আর যে ছেলেটা আজ পানিতে পরে মারা গেলো ওকেও ওই মেরেছে!! এই কথাটা শুনে নীলা আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো!! নীলা ওর বাবাকে বললো বাবা চলো আমরা এখনি এই খান থেকে চলে যাই!! নয়তো ও আমাকে মেরে ফেলবে!!

নীলার বাবা বললো হুম মা!! কাল আমরা এখান থেকে চলে যাবো!! চলে যাওয়ার আগে এই গ্রামের একজন ভাল কবিরাজ আছে ওনার সাথে দেখা করে যাবো!! সেদিন রাতটা ওরা গ্রামে কাটালো!! সেই রাতে আর কোন সমস্যা হয়নি!! নীলা আর তার বাবা আজ বিকালে ফিরে যাবে!! তাই নীলার বাবা নীলাকে বললো চলো এই গ্রামের কবিরাজের সাথে দেখা করে আসি!! নীলা আর তার বাবা কবিরাজের বাড়ি গেলো!!

কিন্তু উদ্ভুত ঘটনা!!! কবিরাজ ও একি কথা বলছে!! বলছে তুমি এই গ্রামে কেন এসেছো??? বাঁচতে চাও তো আজই এই গ্রাম থেকে চলে যাও!! আর কখনো এই গ্রামে এসো না!! নীলার বাবা বললো কবিরাজ সাহেব কিছু একটা করুন দয়া করে!!! কবিরাজ বললো এখানে আমার করার কিছুই নেই!! আপনি জানেন না ও কত শক্তিশালী!! আমি আমার নিজের জীবনটা হারাতে চাই না!!

শুনোন আপনাকে একটাই কথা বলবো যত তারা তারি পারেন আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিন!! হয়তো একমাত্র বিয়েই পারে ওর জীবনকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে!! কবিরাজ ও আমাদের দেখে ভয় পেয়ে গেছে!! কবিরাজ শুধু বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল!! মনে হচ্ছে ওনি দেখছেন কেউ ওনার কথা শুনছে নাতো!! নীলার বাবা বুঝতে পারছে না ওনি এখন কী করবেন??

কি ভাবে এতটুকু সময়ের মধ্যে নীলার বিয়েটা দেবেন!! নীলা আর তার বাবা তাদের গ্রামের বাড়ি এসে গেলো!! এসে তারা রেডি হলো!! শহরে চলে আসার জন্য!! নীলা তার মোবাইল খুজে পাচ্ছিল না!! অনেক খুজলো কিন্তু পেলো না!! নীলার বাবা বুঝতে পারলো এটা ওরই কাজ আবার আমাদের আটকানোর চেষ্টা!! নীলার বাবা নীলাকে বললো খুজতে হবে না মা!! চলে এসো!! নতুন একটা কিনে নিও!!

নীলা ফোন খুজা বন্ধ করলে!! আর গাড়িতে এসে বসে পরলো!! সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো!! নীলার বাবা গাড়িটা চালাচ্ছিলো আর নীলা পিছনে বসে ছিলো!! ঠিক যখন গ্রামের শেষ মাথায় ওরা পৌছেছে তখন নীলার বাবা দেখলো একজন বৃদ্ধ মহিলা গাড়ি থামাতে বলছে!! নীলার বাবা গাড়িটা থামালো!! বৃদ্ধ মহিলাটি বললো ওনি এই সামনেই যাবেন!! ওনাকে একটু সামনে গাড়ি করে নামিয়ে দিলে ভাল হয়!!নীলার বাবা মহিলাটাকে গাড়িতে উঠতে বললেন!!

মহিলাটা গাড়িতে উঠা মাত্রই নীলার কাকার ফোন এলো আর উনি নীলার বাবাকে বললে ভাইজান আপনারা যে কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন ওনি মারা গেছেন!! নীলার বাবা চমকে উঠলো!! মানে?? কি ভাবে মারা গেলো!! ওনার ভাই বললো গ্রামের বট গাছে ওনার মৃত দেহটা ঝুলেছিলো!! নীলা খেয়াল করলো গাড়িতে বসে থাকা বৃদ্ধ মহিলাটি আস্তে আস্তে ওর দিকে চেপে আসছে!!

নীলা খুবাই ভয় পেয়ে গেলো!! মহিলাটি নীলার গা ঘেঁষে বসলো!! একটু পর নীলা শুনতে পেল মহিলাটি তার কানের কাছে এসে বলছে কিরে চলে যাচ্ছিস?? যা!! কিন্তু আমার হাত থেকে কেউ তকে বাচাঁতে পারবে না!! নীলা একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো!! নীলার বাবা পিছন ঘুরে দেখে মহিলাটা উধাও!

নীলার বাবা এবং নীলা দুজনেই খুব ভয় পেয়ে গেছে!! নীলা ভয়ের চুটে কান্না করতে শুরু করে দিয়েছে!!নীলার বাবা গাড়িটা থামালো আর নীলাকে বললো সামনে এসে বসতে!! নীলা গাড়ি থেকে নেমে এলো আর সামনে এসে বসলো!! পুরোটা রাস্তা নীলা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো!!

নীলারা বাড়ি ফিরে এলো সন্ধার ঠিক আগ মুহুর্তে!! নীলার বাবা বাড়ি ফিরেই নীলার মাকে ডাকলো আর বললো গরম পানি করে নীলাকে গোসল করিয়ে দিতে!! নীলার মা জিজ্ঞেস করেছিলো কি হয়েছে?? নীলার বাবা নীলার মাকে সব খুলে বললো!! আর বললো কিছু একটা খুব শিগ্রই করতে হবে!! নয়তো আমার মেয়ের কিছু একটা হয়ে যাবে!! ওনারা দুজনে বসে বসে ভাবছেন!!

কী করবেন এখন?? কার কাছে যাবেন ওনারা?? কিছুই ওনাদের মাথায় ঢুকছে না!!নীলার বাবা নীলার মাকে বললো তার জানামতে নাকি কোন একজন বড় পীর আছে!! ওনার সাথে কথা বললে কেমন হয়?? নীলার মা বললো হ্যা কথা বলে দেখ!! যদি একটা উপায় পাওয়া যায়!!পরের দিন রাতের কথা!! নীলা তার মায়ের সাথে তার মায়ের রোমেই শুয়ে ছিলো!!

মধ্যরাতে আজ নীলা খেয়াল করলো নীলার মা ছটফট করছে!! আর বিছানায় শুধু হাত দিয়ে আঘাত করছে!! নীলা তারা তারি রোমের লাইট জ্বালালো আর দেখতে পেল তার মায়ের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে!! নীলা তারা তারি তার বাবাকে ডাকলো!! নীলার বাবা তারা তারি নীলার মাকে ডাকতে থাকলো!!প্রায় ১০ মিনিট পর নীলার মায়ের হুঁশ হলো!! নীলার মা কান্নার সুরে বললো!!

কেউ একজন ওনার উপর খুব রেগে আছে!! হঠাৎ সে এসে নাকি ওনার গলা চেপে ধরেছিলো!! যার কারনে ওনি নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না!! তাই ওনার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করেছিলো!! নীলার মা খুবই ভয় পেয়ে গেলো!! নীলা ওর বাবাকে বললো বাবা প্রতিদিন তো ও আমার কাছে আসে!! তাহলে আজ মাকে মারার চেষ্টা করলো কেন?? নীলার বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো!!

বুঝতে পারিস নি!! ও তকে একা একা চায়!!! ও চায় না তোর সাথে কেউ থাকুক!! তোর মা তো তোর সাথে শুয়ে ছিলো!! তাই ও তোর মায়ের উপর রেগে গেছে আর তোর মাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে!! নীলার মা মেরে ফেলার কথাটা শুনে খুবই ভয় পেয়ে গেলো!! সেদিন রাতে নীলা ওর মা আর ওর বাবা ওদের মধ্যে কেউ ই একটুর জন্য ও ঘুমই নি!! সারা রাত তারা জেগে ছিলো!!

পরের দিন নীলার বাবা ওই পীরের কাছে গেলো!! আর সমস্ত ঘটনার কথা খুলে বললো!! আর ও বললো ওই সব মৃত্যুর কথা!! পীর নীলার বাবার কথা শুনে বললো তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে এটা কোন অতৃপ্ত আত্যার কাজ!! যে তোমার মেয়ের পিছনে পরে আছে!! নীলার বাবা পীরকে জিজ্ঞেস করলো তাহলে কী করবো আমরা?? তিনি বললেন!! তোমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও!!

আর একটা তাবিজ দিলো বললো যতদিন না বিয়ে হচ্ছে ওকে এই তাবিজটা পরিয়ে দিয়ে রেখো!! অপশক্তি ওর কাছে আসতে পারবে না!! নীলার বাবা নীলাকে ওই তাবিজ পরিয়ে দিলো!! তাবিজ পরার ৩দিন এর মধ্যে আর কোন সমস্যা হয়নি!! নীলার বাবা মা ভাবলো!! সমস্যা বোধ হয় দূর হলো!! কিন্তু ৪র্থ দিন ওনারা,৩জন একসাথে বসে ছিলে!! আর হঠাৎ পুরো ঘরের জিনিস গুলো কাপতে থাকলো!!

আর পুরো ঘর কারো অট্ট হাসিতে ফেটে যাচ্ছে!! আর কেউ একজন চিৎকার করে বলছে কি ভেবেছিস তুই এই সামান্য একটা তাবিজ দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিবি !! পৃথিবীর কোন শক্তি তোর কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না!!!! আমি তকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না!

এ কথা শুনে নীলা ও তার মা বাবা খুব ভয় পেয়ে গেলো!! নীলা ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো!!! নীলা খেয়াল করলো তাদের আয়নাতে বড় বড় করে লেখা উঠছে!! দুনিয়ায় কোন শক্তি তোর থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না!!! আমাদের মাঝখানে যে আসবে তাকে আমি মেরে ফেলবো!! লেখা গুলো রক্ত দিয়ে লেখা
হচ্ছিলো!!!

নীলার বাবা কিছু বুঝতে পারছে না ওনি কী করবেন এখন!!! ওনি তারা তারি ওই বড় পীরের কাছে ছুটে গেলেন!! পীরকে সব খুলে বললেন!” পীর জানালো এই অপশক্তি টা নাকি এখানেও এসেছিলো আমার উপর আক্রমণ করার জন্য!! কিন্তু এই পবিত্র জায়গায় ও খারাপ কিছু করতে পারেনি!! পীর জানালো ও নাকি খুব শক্তিশালী!! ওকে হারানো খুবই কঠিন একটা কাজ!!!

পীর নীলার বাবাকে বললো আপনি গোপনে আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিন!! হতে পারে ও আপনার মেয়ের পিছন ছেড়ে দিতে পারে!!! নীলার বাবা পীরের সাথে দেখা করা শেষ করে সরা সরি তার বন্ধু রহমান সাহেব এর বাড়ি চলে যায়!! আর তার পায়ে ধরে রিকোয়েস্ট করে যেন তার ছেলের সাথে নীলার বিয়েটা দেন!!

রহমান সাহেব নীলার বাবার কথাটা ফেলতে পারলেন না!! ওনি রাজি হয়ে গেলেন!! নীলার বাবা বিয়ের কথাটা সম্পুর্ণ গোপন রাখতে বললেন!! কাউকে বলতে মানা করতে বললেন!! আর বিয়েটা কালকের মধ্যে দিতে হবে!! রহমান সাহেব জিজ্ঞেস করলো এত তারা তারি কেন করছেন?? নীলার বাবা বললো বিয়েটা মিটে গেলে আপনাকে সব খুলে বলবো!! বিয়ের আগে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না!!

নীলার বাবা বাড়ি ফিরে এসে তাদের রুমে চলে গেলো!! আর রুমের দরজা বন্ধ করে নীলার মাকে বললো নীলাকে বাঁচানোর উপায় একটাই!! ওর বিয়ে দিতে হবে!!! বিয়েই পারে ওর জীবন বাঁচা তে!! নীলার মা জিজ্ঞেস করলো এত তারা তারি ছেলে কোথায় পাওয়া যাবে?? নীলার বাবা বললো তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না!!! আমি সব ঠিক করে এসেছি!!

রহমান সাহেব এর ছেলের সাথে নীলার বিয়ে ঠিক করে এলাম!! কাল বিয়ে তুমি শুধু কাল নীলাকে রেডি করে রেখো!! নীলার মা বললো একবার নীলাকে জানানে দরকার ছিলো না!! নীলার বাবা বললো ওকে ওই অশুভ শক্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই তো আমি এই সব করছি!! ওকে কিছু জানাতে হবে না!! তুমি শুধু ওকে সাজানোর ব্যাবস্হাটা করো!! বাকিটা আমি সামলে নেব!!

আজ নীলার বিয়ে!! নীলার বাবা সব রেডি করে বসে আছে!! বিয়ের কিছু সময় আগে রহমান সাহেব এর ফোন এল আর তিনি জানালো তার ছেলের অবস্থা খুব খারাপ!! তার ছেলের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে!! বিয়েটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়!! নীলার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো!! আর বুঝতে পারলো এটা ওরি কাজ!!

একটু পর একটা অদৃশ্য ছায়া নীলার বাবার গলা চেপে ধরলো!! নীলা মা আর নীলা ছাড়নোর চেষ্টা করছে!! কেউ একজন বলছে!! বিয়ে তো দূরের কথা কেউ যদি নীলার বিয়ের কথাও চিন্তা করে তাকে আমি মেরে ফেলবো!!

#অদৃশ্য_মানব
#পর্ব_০৪ ( শেষ পর্ব )

((দুঃখিত দেরি করে গল্প আপলোড দেওয়ার জন্য। এবং গল্পের মাধ্যমে আমার কোন ভুল হয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করবেন।))

আপনাদের সুবিধার্তে আমি পর্ব ৩ এর শেষ দুই লাইন আবারো দিলাম,, একটু পর একটা অদৃশ্য ছায়া নীলার বাবার গলা চেপে ধরলো। নীলার মা ও নীলা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কেউ একজন বলছে বিয়ে তো দূরের কথা কেউ যদি নীলার বিয়ার কথাও চিন্তা করে আমি থাকে মেরে ফেলবো।

যে নীলার বিয়ের কথা ভাববে আমি তাকে মেরে ফেলবো!! এই কথাটা শুনে নীলার বাবা খুব ভয় পেয়ে গেলো!! ওনি মনে মনে বলছে হায়রে কপাল!! নীলাকে বাঁচানোর একটা মাত্র উপায় ই ছিলো!! আর আজ সেটাও শেষ হয়ে গেলো!! আমি এখন কী করে নীলাকে বাঁচাবো!! কার কাছে যাবো!! আমি এখন কী করবো!! নীলার বাবা কান্না করতে শুরু করে দিয়েছে!!!

নীলা ওর বাবার কাছে গেলো আর ওর বাবাকে বললো বাবা তুমি কেদোঁ না দেখো উপর ওয়ালা একটা না একটা ভাল উপায় বের করে দেবেই!! তুমি একটু শান্ত হউ! নীলার মা ও খুব ভয় পেয়ে আছে!! নিজের মেয়ের সাথে এতটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটলে সব বাবা মারই ভয় পাওয়ারি কথা!!! নীলার মা নীলার বাবার পাশে বসে কাদঁতে থাকলো!!

নীলার ওদের কান্না দেখে খুবই খারাপ লাগছিলো! নীলা ভাবছে আজ শুধু আমার জন্য আমার মা বাবাকে কাঁদতে হচ্ছে! আমাকে কিছু একটা করতেই হবে!! পরের দিন সকালে নীলা ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে ভার্সিটিতে গেলো!! ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে একটা ছেলে হাত দিয়ে নীলাকে বাজে ইঙ্গিতে ইশারা করছিলো!! নীলার মনটা এমনিতেই খুব খারাপ ছিলো!! তাই নীলা একটু বিরক্ত বোধ করছিলো!!

নীলা ছেলেটার কাছে গেলো! জিজ্ঞেস করলো তোমার সমস্যা টা কী?? এভাবে ইশারা করার মানে কী?? ছেলেটা নীলার সাথে বাজে ভাষায় কথা বলছিলো!!! নীলা ছেলেটাকে চড় মারার জন্য হাত উঠালো!! আর ছেলেটা নীলার হাতটা ধরে ফেললো!! নীলা খুবই রাগ হলো আর বললো আমি আজই পুলিশের কাছে যাবো!!

ছেলেটা বললো আরে যা যা!! তুই জানিস না তুই কার সাথে ঝামেলা করছিস!! নীলা ওর বান্ধবীর সাথে ছেলেটার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলো!! ওর বান্ধবী নীলাকে বললো এই সব ছেলেদের সাথে ঝামেলা না করাই ভালো নীলা! ওরা বড় লোকের বাজে ছেলে!! ওরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে!! ছেড়ে দে নীলা!! আর কোন ঝামেলার দরকার নেই!! এমনিতেই তুই একটা ঝামেলাই ফেসে আছিস!!

নীলা ওর বাবাকে এই বিষয় টা সম্পর্কে জানালো না!! কারন ওনি এমনিতেই অনেক চিন্তায় আছে!! তার উপর ওনাকে এই সব জানালে আরো বেশি টেনশনে থাকবেন!! নীলা ভার্সিটি থেকে বাড়ি চলে আসে!!! এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পরে!!!আজ রাতে আর কিছু ঘটেনি!! খুব ভোরে মোবাইল এর রিংটনের শব্দে নীলার ঘুম ভাঙ্গলো!!

নীলা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বান্ধুবি ফোন করেছে!! নীলা ফোনটা ধরলো!! নীলার বান্ধবী ভয় এ ভরা কন্ঠে বললো দোস্ত একটা ঘটনা ঘটে গেছে!! নীলা জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে?? নীলার বান্ধবী বললো!! তোকে যে ছেলেটা রাস্তায় বিরক্ত করে ছিলো না!! যাকে তুই থাপ্পড় মারতে গিয়েছিলি!! যে তোর হাতটা ধরে ফেললো!! নীলা বললে কি হয়েছে ওর?? ওর বান্ধবী বললো ওর একটা হাত কে যেন কেটে ফেলেছে”!!!

নীলা এই কথাটা শুনা মাএই ভয়ে চমকে উঠলো!!! নীলার সমস্ত শরীর ভয়ে কাপতে থাকলো!!! নীলা ওর বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলো কী করে হলো এই সব!!! ওর বান্ধবী বললো তা জানি না!! কিন্তু ছেলেটা নাকি হাসপাতালে আছে!! নীলা বুঝতে পারে এটা ওরি কাজ!! ওই ছেলেটা আমার হাত ধরেছে বলে ও ওর হাতটা কেটে দিয়েছে!!

নীলা খেয়াল করলো তার রুমে আবার সেই অট্টহাসি!!! কেউ একজন জোরো জোরে হাসঁছে!! নীলা আজ আর ভয় পেল না!!! নীলা জিজ্ঞেস করলো কে তুমি??? কি চাও আমার কাছে!!? আমাকে এই সব থেকে মুক্তি দাও প্লিজ!!কেউ একজন কান্নার সুরে বলতে লাগলো কে আমি জানতে চাও! আমি কেন তোমার পিছনে পরে আছি? তাহলে শুনো!!! আমি সেই ছেলে যে তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসতো!! জানো আমার নাম কী??? নীলা বললো কী নাম তোমার??? আমার নাম জুনায়েত! নীলা চমকে উঠলো জুনায়েত!? সেই জুনায়েত যে আমাদের ভার্সিটির ফাস্ট বয় ছিলো!! হ্যা আমি সেই জুনায়েত!!!!

কিন্তু তুমি তো হারিয়ে গিয়েছিলে!!! তাহলে তুমি এখানে কী করে এলে?জুনায়েত এর আত্মা বললো আমি হারিয়ে যায়নি আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে!? নীলা বললো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!! তুমি আমকে সব খুলে বলতো!!!নীলা আমি তোমাকে খুব ভালবাসতাম,!! নীলা বললো কিন্তু এই কথাটা তুমি তো আমাকে কখনো বলোনি!!!ও বললো হুম বলিনি!! কিন্তু বলতে গিয়েছিলাম!! তোমাকে যে বড় লোকের ছেলেটা মানে রানা পছন্দ করতো সে বলতে দেয়নি!!!

নীলা বললো কিন্তু রানা তো মারা গিয়েছে!!! ও বললো ও মরেনি আমি ওকে মেরে ফেলেছি!!!আমি যে তোমাকে ভালবাসতাম এই কথাটা তুমি জানার আগেই!!! রানা ওই গুন্ডা ছেলেটা জেনে যাই!!!! দিনটা ছিলো শনিবার!! হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো!!! আমি এক গুচ্ছ ফুল হাতে তোমার কাছেই আসছিলাম!! কিন্তু রানা আমাকে তোমার কাছ পর্যন্ত আসতে দেয়নি!!!ও আমাকে রাস্তায় গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলে!!!

ও এবং ওর বন্ধুরা মিলে ভার্সিটির পাশের জঙ্গলে আমার লাশটাকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে!!!!কথা গুলো শেষ করে জুনায়েত এর আত্মা চিৎকার করে কাদঁতে থাকলো আর বললো কি দোষ করে ছিলাম আমি নীলা??? শুধু তোমাকে ভালবেসে ছিলাম!! তার জন্য আমাকে জীবন দিতে হলো!!! নীলাও কথা গুলো শুনে কাদঁতে থাকলো!!!

নীলা বললো কিন্তু এই সব কিছুতে আমার দোষ কোথায় জুনায়েত?? তুমি কেন আমার সাথে এসব করছো!!তোমার সাথে খুব খারাপ হয়েছে কিন্তু এতে আমার তো কোন হাত নেই!!!জুনায়েত এর আত্মা চিৎকার করে বললো আমি তোমাকে ভালবাসি নীলা!!! ওর চিৎকারের আওয়াজে বাড়ির সমস্ত জিনিস গুলো কাপতে থাকে,!!! নীলার বাবা মা খুব ভয় পেয়ে যায়!!

জুনায়েত এর আত্বা আরো বললো তোমাকে পাওয়ার বাসনা আমার এই অতৃপ্ত আত্বাকে এখনো উৎপীড়ন দেয়!!! আমি তোমাকে ঠিক আগের মতই ভালবাসি নীলা!! নীলা বললো কাউকে জোর করে ভোগ কারাকে কী ভালবাসা বলে জুনায়েত??? তুমি আমার সাথে যেটা করছো এটা ভালবাসা নয়!!! তুমি আমার সাথে জোর করছো!!! জুনায়েত এর আত্বা বললো আমি তোমার সাথে যা করেছি তার সবই তোমাকে পাওয়ার জন্য করেছি!!

জুনায়েত এর আত্মা আরো বললো আজ আমি এই পৃথিবীতে আছি শুধু আমার মা আর তোমার জন্য!! আমি এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর আমার মা খুবই কষ্টে আছে!!! এই দুটি কারনই আমাকে এই পৃথিবী মুক্তি দিচ্ছে না!!নীলা বললো তুমি আমাকে এসব থেকে মুক্তি দাও!!! জুনায়েত এর আত্বা চিৎকার করে বলছে না আমি কোথাও যাবো না!! আমি সব সময় তোমার পাশে অদৃশ্য ছায়া হয়ে থাকবো!! আর তোমাকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবো!! নীলা বুঝতে পরলো একে কোন ভাবেই বুঝাবো সম্ভব নয়!!! একে বুঝানো খুব কঠিন একটা কাজ!!! নীলা মনে মনে বললো একে বুঝাতে হলে অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে!!! নয়তো ও উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলবে!!

নীলার হঠাৎ মনে পারলো জুনায়েত এর মা এর কথা!! একমাত্র ওর মা ই পারে ওকে এখান থেকে মুক্ত করতে!!! নীলা তারা তারি ভার্সিটিতে চলে গেলো!!! ও খান থেকে জুনায়েত এর বাসার ঠিকানা বের করলো!!! নীলা সরাসরি চলে গেলো জুনায়েত এর বাসায়!!! গিয়ে দেখলো জুনায়েত এর মা খুবই কষ্ট আছে!!! নীলা জুনায়েত এর মাকে ওর সাথে ওদের বাড়িতে নিয়ে এলো!!!

নীলা জুনায়েত এর মাকে বললো আপনার আর কোন ভয় নেই!!! আর কোন কষ্ট নেই আপনি আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবেন!!! নীলা জুনায়েত এর মাকে সব খুলে বললো আর বললো আপনার ছেলে আপনার জন্যই এই পৃথিবীতে পরে আছে!!!! আপনি ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলুন!!! জুনায়েত এর মা সব কথা শুনে কাঁদতে থাকলো!!!

আর বললো কোথায় আমার ছেলে!!!! নীলা ওর রুমে আসলো!! আর ডাকলো জুনায়েত জুনায়েত!!!! সঙ্গে সঙ্গে জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্মা এসে হাজির!!! নীলা বললো দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?? নীলা জুনায়েত এর মাকে ভিতরে ডাকলো!! জুনায়েত এর আত্বা ওর মাকে দেখে চিৎকার করে বলছে মা ওরা আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে!! জুনায়েত এর মা বললো বাবা আমি তোকে দেখতে পাচ্ছি না কেন??? জুনায়েত এর আত্বা বললো মা আমি আর বেঁচে নেই!

তুমি আমাকে দেখতে পাবে না!! তুমি কেমন আছো মা??? জুনায়েত এর মা বললো আমি খুব ভাল আছি বাবা!! এই নীলা আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে!! ও খুব ভাল একটা মেয়ে!! তুই ওর জীবন থেকে চলে যা বাবা!! তুই আর ওর সাথে খারাপ কিছু করিস না!! এটা তোর মায়ের আদেশ!! জুনায়েত কখনো ওর মায়ের আদেশ অমান্য করেনি!!!

আজও করলো না!!! জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্মা ওর মাকে কথা দিলো ও আর কখনোই নীলাকে বিরক্ত করবে না!! যখন নীলা কোন বিপদে পরবে আর ও আমাকে ডাকবে আমি তখনই আসবো ওকে সাহায্য করতে!!! জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বা নীলার কাছে গেলো আর বললো আমার মায়ের খেয়াল রেখো!!! আর নীলা একবার বললো না আমাকে তুমি ভালবাস!!! নীলা বললো আমি তোমাকে ভালবাসি!!! এই কথাটা শেষ করে নীলা জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বাকে ডাকলো! কিন্তু এবার আর কোন আওয়াজ আসলো না!! তার মানে জুনায়েত চলে গেছে! জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বা ওর কথা রেখেছে! ওর আর কখনো নীলাকে বিরক্ত করেনি!!!

কিছুদিন পরের কথা নীলা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো!! কয়েকজন ছেলে নীলাকে খুব বিরক্ত করছিলো!! নীলার খুব খারাপ লাগছিলো!! নীলা ওর চোখ বন্ধ করলো আর মনে মনে জুনায়েত কে ডাকলো!! নীলা চোখ খুলে দেখতে পেল একটা উড়ন্ত লাঠি ছেলে গুলোকে মারছে!! নীলা বুঝতে পারলো জুনায়েত ওকে সাহায্য করতে এসে গেছে!!! এর পর থেকে নীলা যখনি কোন বিপদে পরতো জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বা ওকে সাহায্য করতে চলে আসতো!!!! এভাবেই আমি আরো একটা অসমাপ্ত ভালবাসার গল্পের সমাপ্তি ঘটালাম।
……….. সমাপ্ত……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here