#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_১৫ (পূর্ণতা ও অপূর্ণতায় ঘেরা ভালোবাসা)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
“শুকতারা! আর ইউ ওকে?”
আরহানের আওয়াজে আমার বন্ধরত চোখ মেললাম। পুনরায় একবার জানালার বাইরে তাকালাম।
কিয়ৎক্ষণ পূর্বে, যেই গাড়িটি আমাদের ফলো করছিলো এবং শুট করছিলো, সেই গাড়িটি খাদে পড়ে যায়। আর বিকট শব্দ হয়। সেই শব্দে চিৎকার করে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলি।
আরহানের দিকে তাকালাম এবার। অস্থির ভঙ্গিতে বার বার শুধিয়েই যাচ্ছেন, আমি ঠিক আছি কি না!
“ঠিক আছি। কিন্তু, কি ছিলো এটা?”
আমার করা প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আরহান বললেন,“তৃষ্ণা বাদে যে তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো, এটা তার লোক। আর যে ছিলো, সে তোমাকে মারতে চাচ্ছিলো।”
“আপনি কি করে বুঝলেন, এটা অন্য কেউ? তৃষ্ণা নয়?”
আরহান হালকা হেসে বললেন,“তৃষ্ণা যা করবে, সবটাই সামনে। আর ও মারতে চাবে না।”
আমি আর কিছু বললাম না। এই তিন মাসে এমনটা প্রায়শই ঘটেছে।
আরহান গাড়ি ঘুরিয়ে নিলেন। মূলত ইচ্ছে করেই আরহান এই পাহাড়ি রাস্তায় এসেছেন। এতো দ্রুত চালিয়েছেন বলে, সেই লোকটা বুঝে উঠতে পারেনি আরহানের পরিকল্পনা। অতঃপর যা হবার হলো।
_______________________
আজ অনেকদিন বাদে তৃষ্ণা তার মামনির কাছে যাবে। রেডি হচ্ছে। তৃষ্ণার দুটো বাড়ি। একটাতে ওর মামনি আর বোন থাকে। আর অন্যটা এটা, যেটাতে তৃষ্ণা দুঃখবিলাস করে।
রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে এলো এবাড়িতে। বাড়িতে ঢুকতেই, কিচেন থেকে তৃষ্ণার মামনি তৃষ্ণাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে বলে উঠলো,“বাবাই! তুই এসেছিস!”
তৃষ্ণা হাসলো। মুচকি হেসে জবাব দিলো, “হ্যাঁ মামনি। ছুটকি কোথায়?”
“আরে! মেয়েটা কে নিয়ে না আর পারি না! দেখ গিয়ে, এখনও ঘুমোচ্ছে।”
তৃষ্ণা উৎকন্ঠিত স্বরে বলে উঠলো,“সেসব বাদ দাও তো! আগে এটা বলো, অফিসে যাওনি কেনো আজ?”
“শরীরটা ভালো লাগছে না রে! তিনদিনের ছুটিতে আছি। সব কাজ ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।”
মামনির কথাটা শেষ হতে না হতেই তৃষ্ণা অস্থির হয়ে গেলো। দ্রুত বেগে মামনির কাছে গিয়ে অগোছালো শব্দে জিজ্ঞেস করলো,“কি হয়েছে তোমার মামনি? বলো নি কেনো? কি হয়েছে?”
মামনি মুচকি হাসলো। মনে মনে ভাবছে, এই ছেলেটা তার কতো খেয়াল রাখে!
“তেমন কিছু না। উইকনেসের জন্যই আর কি। বুঝিসই তো। বয়স হয়ে গিয়েছে। আর বাঁচবোই বা ক’দিন!”
কথাটা শেষ করে সোফায় গিয়ে বসলো মামনি। তৃষ্ণা এগোলো সেদিকে। মামনির সামনে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে, মামনির দুই হাত নিয়ে নিজের দু গালে রেখে বললো,“তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই মামনি। প্লিজ এভাবে বলো না।”
তৃষ্ণার চোখদুটো ছলছল করছে। আসলেই যে তৃষ্ণার আর কেউ নেই। তৃষ্ণা তার মামনির কোলে মাথা রাখলো। মামনি, তৃষ্ণার মাথার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বললো, “এতোদিন পর এলি যে! মন খারাপ তোর?”
তৃষ্ণা মাথা তুলে তার মামনির পানে তাকালো। এই একটা মানুষকে কোনো কিছু বলে বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে না। সব বুঝে যায়। ম্যাজিক এটা!
আলতো কন্ঠে “হুঁ” বললো তৃষ্ণা। মামনি আর এই নিয়ে প্রশ্ন তুললো না। কেনোনা তিনি মন খারাপের কারণগুলো জানেন।
“ভাইয়া! কখন এলি?”
আওয়াজ পেয়ে সিঁড়ির দিকে তাকালো তৃষ্ণা। দীপ্তিকে দেখেই তৃষ্ণা ঠোঁটের কোন ঘেঁষে লম্বা একটা হাসির রেখা টানলো। মামনি আর দীপ্তি! এই তো তৃষ্ণার পরিবার।
দীপ্তি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। অনেকটা কাছাকাছি আসতেই তৃষ্ণা বলে উঠলো,“তুই যখন ব্যাঙের মতো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিলি, তখন এসেছি।”
“ভাইয়া!”
“ইস রে! চিল্লাচ্ছিস কেন? সবাই তোর মতো তো বয়রা না।”
“দেখ ভাইয়া! তুই সবসময় আমার সাথে এরকম করে কথা বলবি না।”
তৃষ্ণা ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললো,“অবশ্যই বলবো।”
দীপ্তি ওর মায়ের কাছে এসে কান্না কান্না ভাবে বললো,“দেখলে মা! তোমার বাবাই সবসময় আমার সাথে কেমন করে কথা বলে!”
মামনি হাসলো। এই দুইটা এখনও বাচ্চা কালের মতোই ঝগড়া করে।
“ধুর!আচ্ছা আমি যাই। ফ্রেশ হয়ে আসি।” —বলেই দীপ্তি চলে গেলো।
“আচ্ছা মামনি! এদিকে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”
তৃষ্ণার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে মামনি বললো,“তোর কাছে আর কি লুকোবো? এতো গুলো বছর পর এই শহরে ফিরেছি তো, এজন্যই আর কি।”
তৃষ্ণার বলার কোনো শব্দ নেই। তবুও কিছু বলতে হবে। এই মুহূর্তে চুপ থাকাটা মানাবে না। তাই বলে উঠলো,“সেসব বাদ দাও। অফিসে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? সিলেটের মতোই মানিয়ে নিতে পেরেছো?”
“হ্যাঁ! প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হয়েছিলো। তবে এই তিনমাসে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছি।”
তিন মাস আগেই তৃষ্ণার মামনি সিলেট থেকে এই ব্যস্ত নগরীতে পুনরায় পা রেখেছেন। যেখানে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন ভাগ্যের নিষ্ঠুর এক ইতিহাস। বিগত আঠারো বছর যাবত তিনি সিলেটে থেকে, তৃষ্ণার বাবার সিলেটের অফিস সামলেছেন। নিজেকে ব্যস্ত রাখার এক প্রয়াস এটা। এই শহরে ফিরে আবার এখানকার অফিসে লেগে গিয়েছেন। খালি হাতে বসে থাকা ভীষণ অপছন্দের লাগে, তার কাছে। এখানে আসার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। অনিচ্ছে মেশানো হাজারো কারণ ছিলো। তবুও আসতে হয়েছে। এসেছে মূলত দীপ্তির জন্য। মেয়ের ইচ্ছে ছিলো এই শহরেই পড়াশোনা করবে। ইচ্ছে ছিলো নাকি জেদ সেটা দীপ্তিই ভালো জানে। অগত্যা মেয়ের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে আবারও ফিরতে হলো এখানে। যেখানে এক কাহিনী অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছিল, হয়তো সেই কাহিনীই সম্পূর্ণ করতে।
_________________
শাওয়ার নিয়ে বেরোতেই বেডে বসে থাকা আরহানকে দেখে, সেদিকেই আমার দৃষ্টি থমকে গেলো। ল্যাপটপ কোলে তুলে কিছু একটা করছেন। পূর্ণ মনোযোগ তার সেদিকেই। আমার নজর উনার গভীর নয়ন জোড়ায়। উনার চোখের অগোচরে আমার চোখের ক্যানভাসে উনাকে আঁকছি। মুগ্ধ এই নজরে দেখে যাচ্ছি আমার সামনে থাকা চাঁদকে। যা একান্তই আমার নিজের। মাথা নিচু করে হালকা হাসলাম।
এখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগিয়ে গেলাম। আমার আরহানের পাশে এসে দাঁড়ানোতে আরহান চোখ তুলে তাকালেন। উনার স্থির দৃষ্টি আমার আপাদমস্তক অবলোকন করে নিলো।
হুট করেই ল্যাপটপটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়ালেন। আমার কাছে এগিয়ে এসে হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে বললেন,“চুলগুলোও ঠিক মতো মুছতে পারো না! নাকি আমাকে দিয়ে চুল মোছানোর ধান্দা!”
কথাটা শেষ করেই হালকা হেসে পুনরায় আবার বললেন,“দেখো! এরকম হলে এতো ভনিতা না করে সরাসরি বলে দিলেই পারো। আমার অবশ্য ভালোই লাগবে।”
আরহানের এহেন কথায় আমার এতক্ষণের লজ্জা, মুগ্ধতার পরিসমাপ্তি ঘটলো। চোখ বড় বড় করে আয়নাতে, পেছনে দাঁড়িয়ে আমার ভেজাচুলগুলো মুছতে থাকা এই লোকটির দিকে তাকালাম। প্রায়শই আরহান এরকম ভাবে কথা বলে আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয়। তবে এখন লজ্জা শরমের ধারের কাছে না গিয়ে মুহূর্তেই আবিষ্কার করে ফেললাম,‘এই লোকটা একটা বিশাল আকারের অসভ্য ও নির্লজ্জ।’ নয়তো কি এভাবে কেউ কথা বলে?
মনের মাঝে আরো একটা কথা এলো,‘লোকটা ইন্ট্রোভার্টই ভালো ছিলো।’
“হয়েছে। এখন, এখানে বসে পড়ুন তো শুকতারা।”
ভেজা টাওয়েলটা পাশে রেখে আমাকে একথা বলে সামনের টুলে বসিয়ে দিলেন আরহান। এক নজর পুনরায় আমাকে দেখে বললেন,“আজ আমার এই মিষ্টি বউকে নিজ হাতে সাজাবো আমি।”
নাহ্! আর পারলাম না। লজ্জা না পেয়ে আর থাকতেই পারলাম না। আরহানের কথাটা শেষ হতে না হতেই আমার গাল দুটো ঈষৎ রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। অজান্তেই ঠোঁট প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে।
আরহান ড্রয়ার থেকে একটা বক্স বের করলেন। এতে ঝুমকো আছে অনেকগুলো। সবগুলোই আরহানের পছন্দের। কানে পরিয়ে দিলেন সেখান থেকে একজোড়া ঝুমকো। দুই হাত ভরে চুড়ি পড়িয়ে দিলেন। এরপর হাঁটু মুড়ে মেঝেতে আমার ঠিক সামনে বসে পড়লেন। আমার পায়ের দিকে হাত বাড়াতেই আমি পিছিয়ে নিলাম।
আরহান একটা শ্বাস ফেললেন। বোধহয় বিরক্ত হলেন। পুনরায় আমার পা এগিয়ে নিয়ে, পায়েল পরিয়ে দিলেন। চির কাঙ্ক্ষিত এই স্পর্শগুলোয় অনুভব করছি, যেনো কেউ আমার বুকে ঢেউ তুলে দিচ্ছে। হৃদপিন্ড অস্বাভাবিক। দম হয়তো গলায় আটকে আছে। আমার উন্মাদের মতো হাসফাঁস করতে থাকা অবস্থায়ই আরহানের সজ্জাকার্য পুরন হলো।
_____________________
দুপুরের কড়া রোদে ছাদে এসেছে রুশী। ভেজা কাপড় গুলো মেলে দিচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে রুশীর হৃদপিন্ড অচল হয়ে আসে। বার বার রুশী মনে করে, এই যেনো তার শেষ নিশ্বাস। রুশী যে আর আগের রুশী নেই। চঞ্চল, প্রাণোচ্ছল, মিষ্টি রুশী আজ যেনো পাথর বনে গিয়েছে। হাসি নেই রুশীর ঠোঁটে। কান্না গুলোও যেনো শুকিয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে রুশীর, এই শরীরকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলতে। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ আছে যে এতে। রুশী ভেতরে ভেতরে মরে গিয়েছে। প্রতি ক্ষণে প্রার্থনা করে, যেনো মাটির এই শরীরটাও মাটিতে মিশে যায়। এই ভারী শরীর বহন করতে পারছে না রুশী।
“কি গো বউ! এতক্ষণ ছাদে কি করো? দুপুরের রান্দুন লাগবো না?”
দাদী শাশুড়ির ডাক পেয়ে রুশী জোরালো আওয়াজে “আসছি” বলেই দ্রুত নিচে চলে গেলো। এই বাড়ির নিয়ম আছে এটা, সব কাজ করার জন্য লোক থাকলেও, রান্নাটা বাড়ির বউকেই করতে হয়। সেই হিসেবেই রান্নায় লেগে গেলো। যদিও তার শাশুড়ি সবকাজেই সাহায্য করে।
রান্না শেষ করতেই তার খেয়ালে এলো, সামনে পরীক্ষা। এই সুযোগে যদি একটাবার ছেলেটাকে দেখা যায়!
দ্রুত পায়ে নিজের রুমে এলো। বন্ধের দিন আজ। তার স্বামী বাড়িতেই আছে। রুমে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো।
“শুনছেন! একটা কথা বলার ছিলো।”
রুশীর আওয়াজ পেয়ে মারুফ ফোন রেখে রুশীর পানে চাইলো। মৃদু স্বরে “বলো” বললো।
অনুমতি পেয়ে রুশী বললো,“দুই সপ্তাহ বাদে আমার পরীক্ষা আছে। আমি কি পরীক্ষা দিতে পারি?”
মারুফ সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রতি উত্তর করলো না। মিনিট পাঁচেক ভেবে, বললো,“আচ্ছা।”
তিনমাসে আজ প্রথম রুশীর ঠোঁটে হাসি এলো। অনেক সূক্ষ্ম হাসি। আগের মতো মিষ্টি হাসতে ভুলে গিয়েছে রুশী। এই হাসিতে কেবল বিষ আছে। না পাওয়ার বিষ।
________________________
সামনে এতগুলো বই দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। মাথা আউলিয়ে যাচ্ছে। আমিতো এই কয়েকমাসে অলসতার দেবী হয়ে গিয়েছি। পড়া লেখা! কিভাবে কি?
পুনরায় বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আরহানের দিকে নিক্ষেপ করলাম। আমার অসহায়ত্ব দেখেও আরহানের বেখেয়ালি ভাব, আমার রাগ উঠাচ্ছে। হ্যাঁ! ভীষণ রকমের রাগ হচ্ছে।
“এগুলো কি?”
আমি তেজী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম আরহানকে। একই ঢং-এ থেকেই আমাকে বললেন,“বই এগুলো। কেনো দেখতে পাচ্ছো না?”
আমার আরেকটু কাছে এসে আমাকে ব্যঙ্গ করে বললেন,“বলি চোখেও কি সমস্যা হয়েছে নাকি? আগে বলবে না? চলো ডক্টর দেখাতে হবে।”
হেসে ফেললেন আরহান। আমার রাগ এখন আকাশচুম্বী। এরকম ভাবে মজা নেয় কেনো এক লোক?
চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,“ইয়ার্কি হচ্ছে এখানে? আমি পড়ালেখা করবো না।”
“আচ্ছা। নিড রোমান্স, না? ওকে! আ’ম রেডি। কাম।”
চোখ দুটো বিশালের চেয়েও বিশালাকার ধারণ করলো। লোকটা আস্ত একটা অসভ্য। নয়তো কেউ এভাবে বলে? ধুর! উনার সাথে রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। রাগকে রাগ হিসেবে নিলে তো!
মুখটা অসহায় করে মিনমিনে কন্ঠে বললাম,“দেখুন না! এখন কিভাবে এতো কিছু পড়বো?”
“সে আমি কিছু জানিনা। অনেক তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে নিশার সাথে নেচে কুঁদে বেড়ালে। সামনে এক্সাম আছে। এখন একটু পড়াশোনা করুন ম্যাম।”
আরহানের কথায় আর কিছু বললাম না। ঠিকই বললেন। এতদিন পড়া হয়নি। এখন পড়তে হবে তো। সামনেও এক্সাম।
মুখটায় বিরক্তির ছাপ নিয়ে পড়তে বসলাম। আরহান আমার এরূপ অবস্থা দেখে মিটমিটিয়ে হাসা শুরু করলেন।
______________________
আরহান কিছু কাজের জন্য রুদ্রকে ডেকেছে বাড়িতে। কিছুক্ষণ আগে একটা কল আসায় রুদ্র ছাদে চলে যায়। এখানে এসেই ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এক অপ্সরীর দিকে নজর থমকে যায়। চাঁদের আলোয় কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে। খোলা চুলগুলো বাতাসের বদৌলতে নেচে উড়ছে। মুখে রয়েছে সেই মোহময় হাসি। হাসার সময় চোখদুটো ছোট ছোট হয়ে যায়। আর বা গালে ডিম্পল পড়ে। আবারো তার দুনিয়া থমকে গেলো এই মায়াবিনীকে দেখে। রুদ্র যেনো হারিয়ে গেলো কোথাও একটা। সেদিনের প্রত্যাখ্যানের কথা ভুলে গিয়ে নিশার দিকে অগ্রসর হলো রুদ্র।
দুই কদম এগোতেই নিশার বলা একটা কথায় রুদ্রের হৃদপিন্ডে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেলো। শ্বাস হঠাৎ যেনো আটকে গেলো।
ফোন কানে নেওয়া নিশা ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটিকে বলছে,“ভালোবাসি। মনের মণিকোঠায় ভালোবাসা নামক শব্দের আগমনের আগে থেকেই ভালোবাসি। হ্যাঁ, ভালোবাসি আমি। ভীষন রকমের ভালোবাসি।”
চ#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_১৬ (রুশীর নতুন জীবন)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
“ভালোবাসি। মনের মণিকোঠায় ভালোবাসা নামক শব্দের আগমনের আগে থেকেই ভালোবাসি। হ্যাঁ, ভালোবাসি আমি। ভীষন রকমের ভালোবাসি।”
নিশার ফোনালাপের এটুকু বক্তব্য শুনতেই রুদ্রের হৃদপিন্ডের স্পন্দন পরপর কয়েকটা মিস করে গেলো। যেনো থমকে গেলো সব। প্রিয় মানুষটির মুখে ভালোবাসার শব্দগুলো ভীষণ সুখময় হয়, তবে তা কেবলমাত্র নিজের ক্ষেত্রে। যখন প্রিয় মানুষটি অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে সেই একই শব্দগুলো বলে, তখন তা থেকে বিষক্রিয়া শুরু হয়। যেমনটা এখন হচ্ছে রুদ্রের মনে। পরবর্তী কোনো কথা কানে এলো না রুদ্রের। এক বুক যন্ত্রণা সহিত অতি দ্রুত প্রস্থান করলো সে। ভালো লাগছে না তার। এই দুনিয়ার কিছুই তার ভালো লাগছে না। ভালোবাসায় যে এতো যন্ত্রণা! এটা আগে জানলে কখনো, কোনো মানুষ, কাউকে ভালোবাসার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতো না।
রুদ্রের যাওয়া আসা কোনোটাই টের পেলো না নিশা। সে তো বিশাল ব্যস্ত তার বেস্ট ফ্রেন্ড, রাহার সাথে কথা বলতে।
“না রে রাহা! রুদ্র ভাইয়া এখনও আমার অনুভূতি বোঝে না। তাকে সত্যি আমি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।”
“তুই ভাইয়াকে বলেছিস তোর মনের কথা?”
“আজব! আমি কেনো বলতে যাবো? আর তাছাড়া উনি তো আমার প্রতি তেমন কিছু ফিলই করে না। যদি ভাইয়াকে বলে দেয় এসব?”
“থাক! বুঝলাম। তোর দ্বারা কিছুই হবে না।”
“দেখ! তুই কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।”
এভাবেই চলতে লাগলো রাহা আর নিশার কথা বার্তা।
_____________________
বেশ কিছুদিন ধরে রুশীর শরীর খারাপ করছে। খাবারে অনীহা আর দুর্বলতা যেনো দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে, রাতের খাবার খেতে পারলো না সে। গা গুলিয়ে এলো। যার দরুন খাবার রেখেই উঠে রুমে চলে আসতে হলো তাকে। শরীরের এমন অবনতি চিন্তায় ফেলছে তাকে। হঠাৎ রুশীর আবার অস্বস্তি লাগা শুরু হলো। বুঝতে পেরেই দ্রুত বেগে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। শরীর চলছে না আর। এভাবেই রাতে খেতে পারেনি। তার উপর যেটুকু খেয়েছিলো তাও বমি করে এলো। আর পারছে না রুশী। চোখ বুজে এলো।
সকালে ঘুম ভাঙতেই রুশীর চোখ যায়, তার পাশে শুয়ে থাকা মারুফের দিকে। একজন স্বামীর ঠিক যেই যেই গুন থাকা লাগে, সব আছে। কিন্তু মেয়েরা তো স্বামীর মধ্যে প্রেমিক খুঁজে। যে যত্ন করবে, ভালোবাসবে। রুশী সেরকম কিছু পায়নি। তার স্বামীর কাছ থেকে যা পেয়েছে, সবটাই দায়িত্ব ও কর্তব্য। ভালোবাসা নামক শব্দ থেকে এই সংসারটা একদম অপরিচিত। খাওয়া-পরার দায়িত্ব নিয়েছে তার স্বামী। কিন্তু সুখ কি এতেই সীমাবদ্ধ? অবশ্য রুশী নিজেও তো এখনও তাকে মেনে নিতে পারেনি। প্রথম রাতের মতো যতবার মারুফ কাছে এসেছে, ততবার রুশীর অস্বস্তি হয়েছে। দমবন্ধ হয়ে এসেছে। বার বার ইচ্ছে হয়েছে, যদি চোখটা বন্ধ করলেই সারাজীবনের মতো চোখ বন্ধ হয়ে যেতো!
চোখ বুজে মনে মনে আওড়ালো,“শরীরের সাথে শরীরের সন্ধি হয়ে কি হবে? যেখানে দুটো মন এখনও দুজনের অজানা আর আলাদা। এটাই তো মুখ্য বিষয়।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো রুশী। এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচা বড্ড কষ্টের। পুনরায় মস্তিষ্কে প্রশ্ন এলো,“আচ্ছা! অয়ন কেমন আছে?”
হয়তো রুশী ভালো নেই বলেই মস্তিষ্কে এমন প্রশ্ন এলো। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রুশী। মাথা ঘুরে এলো। পুনরায় বিছানায় বসে পড়লো। এতো দুর্বল লাগছে কেনো?
_________________
দেখতে দেখতে দু’সপ্তাহ কেটে গেলো। এই দু’সপ্তাহে আরহান আমাকে পড়াশোনার উপরে রেখেছে। সত্যি বলতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। মানে, উনার মনে কি দয়া মায়া নেই নাকি?
সকালে ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে একটা হলুদ থ্রি-পিস পরে নিলাম। আজ অনেক দিন পর শাড়ি বাদে অন্য কিছু পরেছি। তাই নিজেকে কেমন যেনো লাগছে নিজের কাছে।
আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এই আমিকে দেখছি। কতোটা পাল্টে গিয়েছি আমি! আগে শাড়ি পরতেই হিমশিম খেতাম। আর আজ সেই আমিই শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাকে অস্বস্তি বোধ করছি। চেহারায়ও পরিবর্তন এসেছে। হয়তো সুখময় জীবন অতিবাহিত করার পরিণাম এই চেহারায় লক্ষণীয় হয়েছে।
“শুকতারা! হয়েছে তোমার? যেতে হবে তো নাকি। তার আগে খাওয়াটা মাস্ট।”
কথাটা শেষ করেই খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এগিয়ে এলেন আরহান। কাছে এসে আমাকে বসতে বলে, নিজেও আমার সামনে বসে পড়লেন। অতি সন্তর্পনে মুখে তুলে খাওয়াতে লাগলেন।
আরহানের হাতে খেতে খেতেই প্রশ্ন তুললাম,“আপনি খেয়েছেন?”
“পরে।”
“না। পরে কিসের? এখনই খাবেন।”
আমার কথায় আরহান হাসলেন। ঠিক কি কারণে হাসলেন, তা আমার মস্তিষ্কে ধরেনি। একই প্লেট থেকে আরহানও খাওয়া শুরু করলেন।
_________________
আরহান আমার সাথেই ক্যাম্পাসে এসছেন। এখন আমাকে এখানে রেখে চলে যাবেন। আবার এক্সাম শেষ হতেই আমাকে নিতে আসবেন। গাড়ি থেকে আরহান আগে নেমে তারপর আমাকে নামালেন। আমি “বাই” বলে চলে যেতে নিলেই আরহান আমার হাত টেনে ধরলেন। আমি পিছে ফিরলাম। উনি মুচকি হেসে বললেন,“ঠান্ডা মাথায় এক্সাম দিয়ো। যেগুলো পারবে সেগুলো আগে এনসার করবে। কোনো এনসার মনে না পড়লে হাইপার হবে না। অনেক ভালো মতো পড়িয়েছি তোমাকে। সব পারবে তুমি। শুধু মাথা ঠান্ডা রেখো।”
আরহানের কথা শেষ হতেই আমি “আচ্ছা” বলে চলে আসতে নিলেই, পুনরায় আরহান আটকালেন আমাকে। দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন, “খেয়াল রেখো। আমি তোমার মনে আছি বলে আবার এক্সাম পেপারে আমাকে নিয়ে লিখে এসো না।”
লজ্জায় গাল দুটো রক্তিম হয়ে এলো। এই লোকটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। দ্রুত হাত ছাড়িয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে এলাম।
কিছুটা এগোতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই মেয়েটিকে দেখে চোখ থমকে গেলো আমার। পরনে জলপাই রঙের শাড়ি। স্বর্ণের নাকফুল, চুড়ি। কপাল কুঁচকে এলো। এসব পরে ক্যাম্পাসে এসেছে কেনো রুশী? হন্যে হয়ে এদিক সেদিক কিছু একটা খুঁজে যাচ্ছে। আমাকে দেখেনি এখনও।
এগিয়ে গেলাম রুশীর দিকে। পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই কেঁপে উঠলো রুশী। দ্রুত আমার দিকে ফিরতেই আমি প্রশ্ন করে বসলাম,“এতদিন পর? কই ছিলি তুই?”
আমাকে দেখে রুশীর চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলেও, আমার প্রশ্নে ওর ভেতরের চাপা রাগ বেরিয়ে আসছে। রুশী রাগী নয়। রাগের ছিটে ফোঁটাও নেই ওর মাঝে। কিন্তু কষ্টের পরিমাণটা যে এতো বেশি হয়ে গিয়েছে! এই কষ্টময় জীবনের জন্য রুশী নিমিষেই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করলো। সেদিন যদি আমাকে ও পেতো, তবে কখনোই এই বিয়ে করার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না রুশী। অতিরিক্ত কষ্ট, যন্ত্রণায় রুশী হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো। যার দরুন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো। সেই মুহূর্তে আমাকে ওর ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু পায়নি।
চাপা কন্ঠে বলে উঠলো,“আমি তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।”
রুশীর উত্তর আমার কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিলো। কিছুক্ষণ বাদে হেসে ফেললাম।
“দেখ রুশী। এতদিন বাদে দেখা হচ্ছে। মজা নিস না তো। অয়ন কোথায় এটা বল।”
আমার এহেন প্রশ্নে রুশীর কণ্ঠের তেজ বেড়ে গেলো। অনেকটা চিল্লিয়েই বলে উঠলো,“মাথা খাস না। সর এখান থেকে। কাজ আছে আমার।”
চলে গেলো রুশী। এই রুশী একদম আমার অপরিচিত। বিস্মিত, চমকিত আমি চুপচাপ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। রুশী এমন করলো কেনো? আর অয়ন কোথায়? অয়নের নম্বর ডায়াল করলাম। কল দিতেই প্রতিবারের মতো এবারও সুইচ অফ দেখাচ্ছে।
পুরো ক্যাম্পাস খুঁজে নিলাম অয়নকে। পেলাম না।
_____________
এক্সাম দেয়নি অয়ন। নেহার কাছে শুনলাম, আজই নাকি রুশী ক্যাম্পাসে এসেছে। গত তিনমাসে আমার মতো রুশীও আসেনি। আর অয়ন নাকি প্রথম দুইদিন এসেছিলো। এরপর সে ও লাপাত্তা। অনেক কষ্টে অয়নের বাবার নম্বর জোগাড় করলাম।
ক্যাম্পাসের পেছনের এই বকুল গাছ তলায় এসে দাঁড়ালাম। আরহানের আসতে একটু সময় লাগবে বলে আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। একা একা বেরোতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
ফোন বের করে অয়নের বাবার নম্বরে কল লাগলাম। তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ করলেন একজন মহিলা।
আমি সালাম দিলাম। ওপাশের মহিলা সালামের জবাব দিলেন। কন্ঠটা কেমন যেনো শোনাচ্ছে। অসুস্থ হয়তো।
“কাকে চাই?”
“এটা অয়নের বাবার নম্বর!”
মহিলাটি “হ্যাঁ” বলেই পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,“কে বলছো?”
“আমি অয়নের বন্ধু।”
“ওহ্! কি জন্য ফোন দিয়েছো?”
“আসলে। অয়নের খোঁজ নিতে। কোথায় আছে ও?”
কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতায় কাটলো। এরপর তেজী কন্ঠে বললো,“অয়ন তো আমাদের সাথে থাকে না। ওখানেই থাকে। তাহলে তোমরাই তো ভালো জানবে। তাইনা? কলেজে উঠে সেই যে ঝগড়া করে বাড়ি ছাড়লো, এরপর কি আর ফিরেছে? নাকি ফেরাতে পেরেছি আমরা? এই রগচটা ছেলে যে কি করে আমার গর্ভে এলো, জানি না আমি। সত্যি জানিনা। আর তোমাকেও বলছি, এই ছেলের জন্য আর কোনোদিন কল দেবে না।”
অয়নের মা ছিলো! কল কেটে দিলো অয়নের মা। অয়ন কখনো ওর পরিবারের কথা আমাদের কাছে বলেনি। যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেছে। অয়ন যে অনেকদিন আগে থেকেই পরিবারের সাথে থাকে না, এটা বলেনি। একটা শ্বাস ফেললাম। ছেলেটা গেলো কই! আর রুশীরই বা হলো টা কি? চিন্তিত আমি ওভাবেই বকুল গাছের নিচে বসে পড়লাম।
_____________________
দুই ঘণ্টা ধরে হসপিটালের করিডোরে বসে আছে রুশী। কিছুক্ষন আগেই কিছু টেস্ট করিয়েছে। এতদিনের অসুস্থতা ওর কাছে ভালো লক্ষণ লাগছে না। ও নিজেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে। সিউর হবার জন্যই টেস্ট গুলো করালো।
রুশীর সবকিছু এলোমেলো লাগছে। কিছু মাস আগেও তো কত ভালো ছিলো! হাসি খুশি ছিলো! সারাক্ষণ ঠোঁটের কোণায় হাসি লেগেই থাকতো। জীবনের মানে তখন তার কাছে কেবল হাসি,আনন্দ,সুখ ছিলো। কষ্ট লাগতো না তো! ওর সামান্য কষ্টতে যে ওর প্রিয় মানুষের বুকে রক্তক্ষরণ হতো। আজ সেই প্রিয় মানুষ নেই। সব উল্টে গিয়েছে রুশীর। হয়তো ক’দিন বাদে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু না পাবার দীর্ঘশ্বাস নিয়েই আজীবন কাটাতে হবে রুশীর। এক অন্তরীক্ষ কষ্টের সাথে কিছু অপূর্ণতা নিয়েই চলতে হবে বাকিটা জীবন। কান্না পাচ্ছে রুশীর। কিন্তু চোখের জল যে সেই কবেই শুকিয়ে গিয়েছে।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে উচ্চারণ করলো রুশী,“যদি ভাগ্যে তুই না’ই ছিলি, তবে কেনো এলি জীবনে?”
কিছুক্ষণ বাদে একটা নার্স এগিয়ে এসে বললো,“ম্যাম! ডক্টর আপনাকে ডেকেছে।”
রুশী এগিয়ে গিয়ে ডক্টরের কেবিনে ঢুকলো।
_______________
স্তব্ধ, বিমূঢ় রুশী চুপচাপ বসে আছে নিজের ঘরে। হাতে তার রিপোর্ট। মাথায় ঘুরছে ডক্টরের সেই একটা কথাই। রুশীকে দেখে বিন্দুমাত্র ধারণা করার উপায় নেই যে ও অতিরিক্ত খুশিতে কথা হারিয়ে ফেলেছে নাকি তীব্র কষ্টে বাকশক্তিহীন হয়ে গিয়েছে। হয়তো একটাও না। আবার হয়তো দুটোই। একবার পুনরায় রিপোর্টে দেখে নিলো। নিজের পেটের উপর হাত রাখলো। মুচকি হাসলো। তবে বেশিক্ষণ থাকলো না এই হাসি। মুহূর্তেই নিভে গেলো। চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। বুকটা হাহাকার করছে রুশীর। ভাগ্য এতো নির্মম কেনো?
আবারও ডক্টরের কথা মনে পড়লো। যখন সে বলেছিলো, “কংগ্রাচুলেশন মাই ডিয়ার। তুমি মা হতে চলেছো। তোমার প্রেগন্যান্সির আড়াই মাস চলছে।”
চলবে..!লবে কি…?